নাম নেই

নাম নেই

ছেলেবেলা ইস্কুল-মোড়ে একটি মুচিকে বসে থাকতে দেখতাম। আমার বাবা, ঠাকুরদা কিংবা লর্ড ক্লাইভের আমল থেকেই সে ওখানে বসে। বৃষ্টির ঝাপটা, রোদে পোড়ানি, শীতের কাঁপুনি সে তোয়াক্কা করে না। ঠায় বসে বসে সে ঠুকঠুক করে গোড়ালি পেটে, চামড়া সেলাই করে, বুরুশ ঘষে। মা বলতেন, কাবুলি চটিটা এরই মধ্যে ফেলে দেবার কী আছে, মুচিকে দিয়ে সারিয়ে আনো । কোনওদিন তার নাম জিজ্ঞেস করিনি। পাড়ার লম্বা-চওড়া লোকেরা এসে বলত, ও মুচি, তাড়াতাড়ি পাম্পশু জোড়া পালিশ করে দাও তো! তার বসে থাকার ভঙ্গি, মুখ, চোখ কোচকানো হাসি, ফাটা বাঁশের মতন গলার আওয়াজ, সব মনে আছে, তার নাম জানি না।

প্রায় প্রত্যেকদিন একটা লোক বাড়ির মধ্যে আসে, বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। সে একজন মানুষ বটে, কিন্তু তার নাম নেই। সত্যেন দত্ত তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, সে অবশ্য তা জানে না। স্কুলে আমরা সেই কবিতা পড়েছি, ব্যাখ্যা লিখেছি, তবু বাড়িতে তার সঙ্গে একটা কথাও বলিনি। খালি পা, কোমরে হাফ লুঙ্গি, সবসময় মুখ নিচু করে থাকে। কাজের মেয়েটিও হাঁক দিয়ে বলে ওই যে মেথর এয়েছে। আমার স্ত্রী নরম করে বলে, জমাদার!

বছর কয়েক আগে আফ্রিকার নাইরোবিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এই তো গত মাসে চিনদেশে। দুজায়গাতেই মেথররা জুতো-মোজা পরে, ফুলপ্যান্টে শার্ট গোঁজা, তাদের প্রত্যেকেরই নাম আছে। আমাদের মুচি-মেথরদের ভোটের সময়ও নামের খোঁজ পড়ে কিনা, আমি জানি না।

গল্পের বিষয়:
কবিতা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত