আমার সব আপনজন

আমার সব আপনজন

হিমালয় পর্বতকে পিতামহের সঙ্গে তুলনা দেবার কোনও
মানে হয় না
সে আমার অনেকদিন না-দেখা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতন
সকলেই জানে, গঙ্গা নদী আমার আপন বউদি
তাঁর বোন পদ্মার সঙ্গে ছিল আমার বাল্যপ্রেম
আমার দিলদরিয়া শৌখিন ছোট মামার সঙ্গে দার্জিলিং-এর
কী মিল
তাঁর ছেলের নাম রাখা হয়েছে পাগলাঝোড়া
আর রূপসী ছোট মামিটি ঠিক যেন কালিম্পং, তাঁর
আঁচলের সুগন্ধ নিয়েছি কতবার
যে দিকে তাকাই আমাদের পরিবারের লোকজন ছড়ানো
সন্ধেবেলা বঙ্গোপসাগরের হুহু বাতাস আমার বাউণ্ডুলে ভাই
আমার গান-পাগলা জ্যাঠামশাইয়ের বসতি বীরভূমে, তাঁর অনেক
সাকরেদ জুটেছে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায়
দুই পিসিমার অনেক ছেলেমেয়ে, তারা সব চব্বিশ পরগণা
বড়দি মেদিনীপুরে, দুই মেয়ে দিনাজপুরের দক্ষিণী আর উত্তরা
জলপাইগুড়িতে সেবার বন্যা হল, এক বুক
জল ঠেলে গেলাম রাঙাকাকাদের বাড়ি
বকফুল গাছে বসেছিল সত্যিকারের বকের ঝাঁক
আর ভয়ে কুঁকড়ে ছিল একটা মস্ত বড় সাপ
শিলিগুড়ি থেকে ছুটে এল মাসতুতো ভাই বোনেরা,
ফেরার পথে সেখানে আমার জ্বর।
হল, আর জীবনের
প্রথম চুম্বন
রূপনারায়ণ নদীর পাশে কতবার ঘুমিয়েছি, জেগে উঠেছি আমি
আর দামোদর ঠিক যেন আমার স্বদেশি আমলের জেল-খাটা জ্যাঠামশাই
বড় মাসিমা আছেন মুর্শিদাবাদে, ছোট মাসি অভিমানিনী সুন্দরবন
কত আত্মীয়স্বজন সরে গেছে ঢাকা, মৈমনসিং, পাবনায়
কতকাল দেখা হয় না, কুচবিহারের বড়দি জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে,
বগুড়া, রংপুরের খবর জানিস?
মালদার টিয়া পাখির ঝাঁক আমার ছোট বোনের বন্ধুদের মতন গল্প
করতে করতে উড়ে যায় ওদিকে
রেললাইনের পাশের জলায় ফুটে আছে শালুক, তাদের ছোট ছোট
চুমু দিয়ে যায় কয়েকটা ফড়িং
হাওড়া-হুগলিতে মাটি কাটছে, লোহা পিটছে খুড়তুতো ভাইয়েরা
শান্তিপুর থেকে কেষ্টনগর যাবার পথে একটু একটু মন খারাপ দুপুর
বর্ধমানের আকাশের মেঘ দেখলে বাবার কথা মনে পড়ে
হাইওয়ে দিয়ে ছুটছে ট্রাক, দুধারের আদিগন্ত ধান খেতের
সবুজ ঢেউ আমার মা
মা, তোমার পাশে একটু বসি
আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও মা!

গল্পের বিষয়:
কবিতা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত