আজকাল ভীষণ মনে পড়ে শৈশবের দিনগুলোর কথা,
মনে পড়ে শৈশবের গ্রামের স্বর্গীয় সে চৌচালা ঘরটির কথা,
যেখানে দিনভর শত শাসন উপেক্ষা করে মাতিয়ে রাখতাম ভাই বোনেরা,
মনে পড়ে পৌষের শীতে মায়ের বুকের ওমে ভাইবোনের সাথে মারামারি করে ঘুমিয়ে পড়তাম অশ্রু চোখে,
সেই দিনগুলো ভীষণ রকম আবেগী করে দেয় আজকাল |
আজ সময়ের সাথে হারিয়েছি সবই,
ভাই বোন আজ কত দূরে, দেখা হয় কালে ভদ্রে,
ব্যস্ত নগরীতে আমি উন্মাদের মতো আজও খুঁজে ফিরি শৈশব,
কান পাতলেই যোজন যোজন দূর থেকে আজও মসজিদ যাবার সময় শুনি বাবার দরাজ কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত,
আম্মার হাত থেকে মুড়ি খৈ নিয়ে ছুটে চলা মসজিদে যাওয়ার দিনগুলো ভীষণ মনে পড়ছে,
আজ কোথাও কেউ নেই, মা নেই , বাবা নেই, দাদা দাদী ,নানা নানী কোথাও কেউ নেই,
অথচ তাদের সাথে কাটানো শৈশবের স্মৃতি বার বার উঁকি দিচ্ছে মনে |
প্রতিদিন এই ব্যস্ত নগর পথে হারিয়ে যাই জীবন যুদ্ধের মিছিলে, তবু শত ব্যস্ততায় মনে পড়ে শৈশব, স্মৃতির মিছিলে ক্রমাগত হারিয়ে যাই,
দীর্ঘশ্বাসগুলো বুকের মাঝখানে প্রচন্ড শব্দ করে জানান দেয়, আমি ভালো নেই,
ভীষণ একা লাগে, খুব নিঃসঙ্গতায় ভুগি,
চারপাশে কি যে জীবনের দৌঁড় প্রতিযোগীতা আশেপাশের মানুষের,
একটা মানুষের সময় নেই দুদন্ড কথা বলার, সবাই ব্যস্ত এই ব্যস্ত নগরীতে,
সবাই ভুগছে এই অসুখের শহরে, একটা মানুষ ও সুখী নেই,
কেবল সুখের তরে কি সুন্দর নিঁখুত অভিনয় করে যাচ্ছে,
অথচ দিন শেষে মধ্যরাতে সবাই কী ভীষণ একা,
তখন ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় শৈশবে,
আহা ! কি সুন্দর দিন ছিলো |
ক্রমশ মানুষ আপন মানুষ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কি এক সুখের নেশায় উন্মুত্ত সবাই,
মোবাইল ফেসবুক টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম নামের আধুনিকায় একাকিত্ব ভোলার চেষ্টা করছে,
আমি সেসময় চোখ বুঝে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে সুখ খুঁজি,
আমি চোখ বুঁজে বাবার কোলে বসে কোরআনের সুমুধুর কন্ঠ শোনার চেষ্টায় থাকি |
সন্ধ্যা হলেই শহরের অলিগলিতে কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠে,
আমি কান পাতলেই শুনতে পাই মায়ের আওয়াজ,
সারা বিকেল ফুটবল মাঠে খেলা শেষে সন্ধ্যায় মায়ের বকুনি,
হারিকেনের আলোয় মায়ের সন্ধ্যাকালিন ব্যস্ততা চোখে লেগে আছে,
আমি আজও নিয়নের আলোয় মায়ের চাঁদ মুখখানা খুঁজে ফিরি পাগলের মতো,
বাবার পড়তে বসার তাগাদা, একসাথে খেতে বসলে মাছের কাঁটা বেছে দেয়ার দৃশ্য মনে পড়ে,
সেই বাবা আর সেই মাকে আমি আজও খুঁজি নিঃসীম শূন্যতায় অগণিত নক্ষত্রদের ভিড়ে।
আজ আমি পারফিউমের সুগন্ধে মাতাল হই না,
আমার মায়ের সেই শৈশবের গায়ের গন্ধে আজও বিভোর আমি,
মায়ের সেই চুলের তেলের গন্ধ, ফেরিওয়ালা থেকে বাবার কিনে দেয়া,মায়ের সেই রেশমি চুড়ির শব্দ আমি আজও কান পাতলেই শুনতে পাই,
সকালের চায়ের লগ্নে বাবার খবরের কাগজে নিমগ্ন থাকা
শিশির ভেজা ঘাসে বাবার হাত ধরে ধান ক্ষেত দেখতে যাওয়া আজ ও আমাকে নষ্টালজিক করে দেয় |
ভীষণ ভীষণ মনে পড়ে বাবা মা আর সোনাঝরা শৈশব |
মাঝ রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে এখন আর ঘুম হয় না,
শৈশবের স্মৃতির করাঘাতে এখন মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি,
তখনও মায়ের কোমল হাতের ওম খুঁজে ফিরি, বাবার করুণ চেহারা ভেসে উঠে,
জগতের সব গল্প থামে, কেবল শৈশবে জড়িয়ে থাকা বাবা মায়ের গল্প কখনোই থামে না,
ইট পাথরের এই শহরে আমি বার বার সেই গল্পে বিভোর থাকি |