ফরিয়াদ

ফরিয়াদ

একটা নদী ছিল আমার
বার মাস শ্রাবনের যৌবন গায়ে তার,
আকুলি বিকুলি ছুটে চলা সাগরের টানে।
আমি শুনতাম তার কুল কুল ধ্বনি পাড়ে বসে,
আর দেখতাম থই থই ছুটে চলা।
তুমি কাছে এসে কাঁধে মাথা রেখে বললে,
‘এই পুরো নদীটা আর তার বয়ে চলা আমার চাই!’

নদীর পাড় ঘেঁষা ফুলে ফুলে ছাওয়া একটা কাশবন ছিল
আনমনা মেঘের ভেলা ভাসতে থাকা একটা নীল আকাশ ছিল
আকাশে শাদা শাপলার মত ভেসে থাকা এক ঝাঁক মুক্ত গাঙচিল ছিল
কানের কাছটায় আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে তুমি আলতো করে বললে,
‘এর সব কিছুই আমি আমার করে নিতে চাই!’

বুক পকেটে একটা আধ ফোঁটা গোলাপ ছিল
বুনো মাতাল ঘ্রাণে ভরা,
মিষ্টি হেসে বললে, ‘এই গোলাপটা আর তার ঘ্রাণ আমার চাই!’ বুকে চুমু দিয়ে বুকের ভেতরে থাকা হৃদপিন্ডটা দেখিয়ে বললে, ‘এটাও আমার চাই!’

আমি বাধ্য প্রেমিকের মত সব তুলে দিলাম তোমার হাতে।
তুমি আমার নদী নিলে, আমার কাশবন নিলে, আমার পুরো আকাশটা নিলে,
বুনো গোলাপ নিলে, এতদিন ধরে যত্নে রাখা হৃদয়টাও শেষমেশ নিজের করেই নিলে।

আমি নিঃস্ব হলাম। আমি রিক্ত হলাম। আমি শুন্য হলাম।

আমার সবটুকু নিয়ে তুমি পূর্ণ হলে।
এরপর সময় বয়ে গেল পূর্ব থেকে পশ্চিমে তিরতির করে,
আমরা সময়ের বাঁকে বাঁকে নিজেদের এঁকে দিতে থাকলাম।

ঝড় উঠল। ঝড় উঠল পুরোটা আকাশ জুড়ে।
নদীর কুল ভাঙল, কাশবনের ফুলগুলো ঝড়ে উড়ে গেল,
উড়তে থাকা গাঙচিলেরা পথ হারিয়ে আরেক আকাশে উড়ে চলল।
তুমি অন্য কারো হলে। তোমার হাতের মুঠোয় থাকা আমার হৃদয়
বন্দী থাকল তোমার কাছে। আমি আটকে গেলাম এক ঝড়ো সময়ে। আমি আমি-হীন সময়ে আটকে রইলাম।

তুমি আমার নদীটা রেখে দাও, কাশবন রেখে দাও,
গাঙচিলের ঝাঁক, বুনো গোলাপটা তার সবটুকু ঘ্রাণসহ রেখে দাও।
শুধু আমার আমিটাকে ফেরত চাই তোমার কাছ থেকে।

নিজেকে হারিয়ে, নিজেকে কারোর হাতের মুঠোয় বন্দী রেখে
বেঁচে থাকাটা যে কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবে না।
দিনের আলোয় আমার আঁধারে ডুবে যাওয়া তুমি বুঝবে না,
রাতজুড়ে নিজের ভেতরে গুমরে মরা তুমি বুঝবে না,
বুকভরা হাহাকারের চিৎকার আটকে ধরে বেঁচে থাকা তুমি বুঝবে না,
আমি-হীন একটা আমার ভেতর এক অসহায় আমার বেঁচে থাকা তুমি বুঝবে না।

আমার সবকিছু রেখে শুধু আমার আমিটাকে ফিরিয়ে দাও।

গল্পের বিষয়:
কবিতা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত