আমার বিচরণ তোমাদেরই মাঝে
নয়তো আশেপাশেই,
দেশ নিয়ে সমাজ নিয়ে
মানুষ নিয়ে, জীবন নিয়ে
তোমাদের যে প্রগাঢ় ইচ্ছা, যে শুভ কামনা
জেনে রেখো আমার স্বপ্নগুলোও
নয় ভিন্ন খুব বেশী।
প্রেমিকার উত্তাল আহবানের মত
আমাকে ডাক দিয়ে যায়
যায় শাহবাগ, যায় প্রেসক্লাব, যায় পল্টন।
ভালোবাসি আমি আন্দোলন
ভালবাসি মানুষের পাশে থাকতে।
হয়তো তোমরা জাননা,
তোমাদের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বিশ্বস্ত বাতাসের মতো
আমার বিচরন তোমাদের চতুর্দিকেই।
কি নামে অভিহিত করবো তোমাদের?
সারী সারী জ্বলন্ত তারার মত
উজ্জ্বল একসারী নাম তোমাদের,
তার চেয়েও প্রজ্জ্বল বোধকরি স্বপ্ন তোমাদের।
সেই স্বপ্নের পালে বাতাস দেওয়ার মতো,
কালে ও অকালে পথহারা তোমাদের
রণপোতকে দিকদর্শন দেয়ার মতো
সাধ্য তো আমারই রয়েছে,
এ আমার বাড়বারন্ত অহমিকা নয়
এ আমার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।
অর্কেস্ট্রার কনডাক্টরের মতো ,
তোমাদের সুরে ঐক্যতান দিতে পারি
সে তো আমিই, বন্ধু!
কিন্তু, আমিতো রয়ে গেছি আড়াল
ইট চাপা হলুদ ঘাসের মত,
এখন আমার গ্রহণের সময়
তাইতো লুকানো আমার আলোকচ্ছটা।
আপাত দর্শনের ধনীর দুলাল আমি,
পর্যদুস্ত বাস্তবতার কষাঘাতে,
জীবনের কৃষ্ণ প্রহর,
কেড়ে নিয়েছে আমার উজ্জ্বল প্রভা।
পূর্ণিমার চাদের মতন
মধ্যপ্রহরের সূর্যের মতন
পারছিনা নিজেকে প্রকাশ করতে,
তাইতো হয়ে থাকছি আড়াল
যেন লক্ষ আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র কোন!
কিন্তু হে বন্ধু, হে সারথী, হে স্বপ্নসখা,
হে অর্জুন, হে খালিদ, হে একিলিস,
জেনে রেখো –
বিস্মৃতির অতল থেকেও জেগে উঠতে পারি আমি,
হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে গলাতে পারি
চারপাশে জমে ওঠা হিমরাশি,
যদিও আমাকে ঢেকে রাখতে পারে ঘোরতর নৈশব্দ
শেষ পর্যন্ত আমি ছুয়ে দেব তোমাদের বোধির সীমা।
ক্যাপ্টেন আমেরিকা কি আসেনি ফিরে দেশবাসীর কাছে,
ভেঙ্গে দিয়ে বরফের দেয়াল?
রণক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা কি শেষ পর্যন্ত
আসেনি ফিরে নিয়ে বিজয়ের রণতূর্য?
তেমনি এই আমিই তোমাদের সাথে নিয়েই
গড়ব স্বপ্নের অতীন্দ্রিয় ভূবন।
পাড়ি দেব উষর মরু, বিস্তৃর্ণ পারাবার।
ধাধার ছবি মেলানোর সামর্থ্য তো
আমারই রয়েছে, হে বন্ধু!
আর যদিও থেমে থাকে আমার সূর্যস্বর
জেনো রেখো আমি ছিলাম তোমাদেরই একজন,
টিএসসির চায়ের আড্ডায়
রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশে
শহীদ মিনারের আলোকিত আয়োজনে
অথবা শাহবাগ-পল্টন-প্রেসক্লাবে,
তোমাদের যে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম
যে মরণপণ আন্দোলন
বেচে থাকার যে প্রগাড় ইচ্ছা,
জেনে রেখো আমি আছি সেখানেই।
আমি ছিলাম
আমি আছি
আমি থাকবো,
যোদ্ধার পরাজয় নেই
স্বপ্নের মৃত্যু নেই বলে।