ওলো সোনার বরণী,
তোমার সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
রাঙা তোমার ঠোঁটরে কন্যা, রাঙা তোমার গাল,
কপালখানি রাঙা নইলে লোকে পাড়বে গালরে;
তোমার সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
সাঁঝের কোলে মেঘরে-তাতে রঙের চূড়া,
সেই মেঘে ঘষিয়া সিন্দুর করছি গুঁড়া গুঁড়ারে,
তোমরা সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
এই না সিন্দুর পরিয়া নামে আহাশেতে আড়া,
এই সিন্দুরের বেসাতি করতে হইছি ঘর-ছাড়ারে;
তোমরা সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
কাণা দেয়ায় ঝিলিক মারে কালা মেঘায় ফাঁড়ি,
তোমার জন্য আনছি কন্যা মেঘ-ডম্বুর শাড়ীরে;
তোমরা সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
শাড়ীখানি পর কন্যা, সিন্দুর খানি পর,
আঙ্খের পলক দেইখা আমি যাই হাপনার ঘররে;
তোমরা সিন্দুর নি নিবারে সজনি!
থাক থাক বানিয়ারে নিরালে বসিয়া
মা-ধনের আগে আমি আসি জিজ্ঞাসিয়া।
শোন শোন ওহে মা-ধন! শুনিয়া ল তোর কানে,
আমি তো যাব মা-ধন বানিয়ার দোকানে।
এক ধামা দাও ধান আমি কিনিব পুঁতির মালা
আরো ধামা দাও ধান আমি কিনিব হাতের বালা।
বিদেশী বানিয়ারে! বোঝা তোমার মাথে,
দেখাও দেখি কি কি জিনিস আছে তোমার সাথে?
আমার কাছে সিন্দুর আছে ওই না ভালের শোভা,
তোমার রাঙা-ঠোঁটের মত দেখতে মন-লোভা।
আমরা তো জানি না সিন্দুর কেমনে পরে,
আমরা তো দেখি নাই সিন্দুর কাহারো ঘরে।
সোনার বরণ কন্যারে! দীঘল মাথার ক্যাশ,
সিন্দুর পরাইতে পারি যাও যদি মোর দ্যাশ।
ঘরে আছে ভাইয়ের বৌ লক্ষ্মীর সমান,
তোমার মাথায় সিন্দুর দিয়া জুড়াইব প্রাণ।
শোন শোন বানিয়ারে কই তোমার আগে,
তোমার না সিন্দুর লইতে কত দাম লাগে?
আমার না সিন্দুর লইতে লাগে হাসিমুখ,
আমার না সিন্দুর লইতে লাগে খুশীবুক।
নিলাম নিলাম, সিন্দুর নিলাম হাসি-মুখে কিনি,
আরো কি ধন আছে তোমার আমরা নি তা চিনি?
আরো আছে হাতের শাঁখা, আছে গলার হার,
নাকের বেশর নথও আছে সোনার বাঁধা তার।
আমরা তো নাহি জানি বানিয়া শাঁখা বলে কারে,
দেখি নাই তো নথের শোভা সোনাবান্ধা তারে।
সোনার বরণ কন্যা, তোমার সোনার হাত পাও,
শাঁখা যদি না পরিলে কিসের সুখ পাও?
সাতো ভাইয়ের সাতো বউ সাতো নথ নাকে,
পূব-দুয়াইয়া বাড়ি মোদের উজ্জল কইরা থাকে।
শোন শোন বানিয়ারে কই তোমার আগে,
তোমার না নথ ও শাঁখায় কত দাম লাগে?
আমার না শাঁখা লইতে লাগে হাসিমুখ,
আমার না নথ লইতে লাগে খুশীবুক।
নিলাম, নিলাম, নথও নিলাম, নিলাম, তোমার শাঁখা,
তোমার কথা বানিয়ারে রিদ্রে রইলো আঁকা।
ওই বিদেশী বানিয়া মোরে
পাগল করিয়া গেছে,
আমার মন কাড়িয়া নেছেরে সজনি!
শাঁখা না কিনিতে আমি হাতে বাঁধলাম ডোর;
সিঁথার সিন্দুর কিনে চক্ষে দেখি ঘোর!
নথ না কিনিয়া আমি পন্থে করনু বাসা,
একেলা কান্দিয়া ফিরি লয়ে তারি আশা।