-ওগো দরদিয়া
তোমারে ভুলিবে সবে, যাবে সবে তোমারে ত্যজিয়া;
ধরণীর পসরায় তোমারে পাবে না কেহ দিনান্তেও খুঁজে
কে জানে রহিবে কোথা নিশিভারে নেশাখোর আঁখি তব বুজে!
-হয়তো সিন্ধুর পারে শ্বেতশঙ্খ ঝিনুকের পাশে
তোমার কঙ্কালখানা শুয়ে রবে নিদ্রাহারা উর্মির নিশ্বাসে!
চেয়ে রবে নিষ্পলক অতি দূরে লহরীর পানে,
গীতিহারা প্রাণ তবে হয়তো বা তৃপ্তি পাবে তরঙ্গের গানে!
হয়তো বনচ্ছায়া লতাগুল্ম পল্লবের তলে
ঘুমায়ে রহিবে তুমি নীল শষ্পে শিশিরের দলে;
হয়তো বা প্রান্তরের পারে তুমি রবে শুয়ে প্রতিধ্বনিহারা-
তোমারে হেরিবে শুধু হিমানীর শীর্ণাকাশ-নীহারিকা-তারা,
তোমারে চিনিবে শুধু প্রেম জোছনা-বধির জোনাকি!
তোমারে চিনিবে শুধু আঁধারের আলেয়ার আঁখি
তোমারে চিনিবে শুধু আকাশের কালো মেঘ-মৌন-আলোহারা,
তোমারে চিনিয়া নেবে তমিস্রার তরঙ্গের ধারা!
কিংবা কেহ চিনিবে না, হয়তো বা জানিবে না কেহ
কোথায় লুটায়ে আছে হেমন্তের দিবাশেষে ঘুমন্তের দেহ!
-হয়েছিল পরিচয় ধরণীর পান’শালে যাহাদের সনে,
তোমার বিষাদ-হর্ষ গেঁথেছিলে একদিন যাহাদের মনে,
যাহাদের বাতায়নে একদিন গিয়েছিলে পথিক-অতিথি
তোমারে ভুলিবে তারা- ভুলে যাবে সব কথা, সবটুকু স্মৃতি!
নাম তব মুছে যাবে মুসাফের-অঙ্গারের পান্ডুলিপিখানি
নোনা ধরা দেয়ালের বুক থেকে খসে যাবে কখন না জানি!
তোমার পানের পাত্রে নিঃশেষে শুকায়ে যাবে শেষের তলানি,
দন্ড দুই মাছিগুলো করে যাবে মিছে কানাকানি!
তারপর উড়ে যাবে দূরে দূরে জীবনের সুরার তল্লাসে
মৃত এক অলি শুধু পড়ে রবে মাতালের বিছানার পাশে!
পেয়ালা উপুড় করে হয়তো বা রেখে যাবে কোনো একজন,
কোথা গেছে ইয়োসোফ্ জানে না সে, জানে না সে গিয়েছে কখন।
জানে না যে, অজানা সে, আরবার দাবি নিয়ে আসিবে না ফিরে-
জানে না রে চাপা পড়ে গেছে সে যে কবেকার কোথাকার ভিড়ে!
জানিতে চাহে না কিছু-ঘাড় নিচু করে কে বা রাখে আঁখি বুজে
অতীত স্মৃতির ধ্যানে, অন্ধকার গৃহকোণে একখানা শূন্য পাত্র খুঁজে!
যৌবনের কোন্ এক নিশীথে সে কবে
তুমি যে আসিয়াছিলে বনরানি। জীবনের বাসন্তী-উৎসবে
তুমি যে ঢালিয়াছিলে ফাগরাগ-আপনার হাতে মোর সুরাপাত্রখানি
তুমি যে ভরিয়াছিলে-জুড়ায়েছে আজ তার ঝাঁঝ, গেছে ফুরায়ে তলানি।
তবু তুমি আসিলে না, বারেকের তরে দেখা দিলে নাকো হায়!
চুপে চুপে কবে আমি বসুধার বুক থেকে নিয়েছি বিদায়-
তুমি তাহা জানিলে না-চলে গেছে মুসাফের
কবে ফের দেখা হবে আহা
কে বা জানে! কবরের পরে তার পাতা ঝরে, হাওয়া কাঁদে হা হা!