৪৬-৪৮. সরযু তার বাসার প্রকোষ্ঠে
ষত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
সরযু তার বাসার প্রকোষ্ঠে বসেছিলেন। মিস্টার আবদুর রহমান তাঁর সম্মুখে। সরযু বলিলেন–“মিস্টার রহমান, আপনাকে আমার সঙ্গে রাণাঘাটে যেতে হবে।”
মিস্টার রহমান বলিলেন,-বেশ, আপনার অনুরোধ আমি পালন করবো। কিন্তু কোথায় থাকবো?” ..
“কোথাও থাকতে হবে না। আমার সঙ্গেই যাবেন।”
“লোক কিছু বলবে না তো?”
“লোকের কথাকে আপনি ভয় করেন? আপনার যদি মনের জোর না থাকে, তবে আপনি হিন্দুর পোশাকে যাবেন।”
“আচ্ছা।”
“আমার শুধু রোগী দেখা নয়, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে আছে।”
“কী উদ্দেশ্যে।”
“সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন।”
“যে রমণীকে সেদিন পথ থেকে তুলে এনেছি, তার শরীর খুব ভালো হয়েছে। তার মেয়েটি দেখতে কার্তিকের মতো। মা ও মেয়ে উভয়ের লেখা পড়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছি।”
“সেই রমণী না হয় চিরজীবন আপনার আশ্রমে থাকলো, কিন্তু এই বালিকার কী হবে?”
“তাকে ভালো করে লেখাপড়া শিখিয়ে, পাঁচশত টাকা যৌতুক দিলে অনেক বর পাওয়া যাবে। রমণীর নাম কাদম্বিনী, বাড়ি তার যশোরে ছিল! আপনাকে বোধ হয় বলেছি।”
“হ্যাঁ,! বলেছেন আপনাকে এই মহৎ কার্যের জন্য কতখানি শ্রদ্ধা করবো তা বুঝতে পারছি। আপনি দেবী। আপনি যে পথ দিয়ে যান সে পথের বাতাস ও ধুলা পবিত্র হয়ে যায়।
সরযু মুখ নত করে বললেন,–“আপনি আমাকে লজ্জিত করেছেন।”
মিস্টার রহমান সরযুর লজ্জানত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন স্বর্গীয় আভা তার মুখে ফুটে উঠছে।. আহা তিনি যদি মুসলমান হতেই মিস্টার রহমান পরক্ষনেই নিজেকে ধিক্কার দিয়ে মনে মনে বললে, “ছিঃ সে কি কথা!”
সরযু আবার বললেন–“এই আশ্রয়ে আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি উইল করবে। যে সব স্ত্রীলোক বিপদে পড়ে সংসার হতে তাড়িত ও ঘটনাক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথে দাঁড়াবে। তাদেরকে আমি এখানে স্থান দেবো। অবিবাহিতা রমণীর বিবাহের জন্য স্বতন্ত্র টাকার উইল করবো। সঙ্গে সঙ্গে একটা শিল্প বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। শিল্পের মধ্যে সেলাই শিক্ষাই বেশি হবে। তা ছাড়া কাঠের কাজও শিখাবো!”
“স্ত্রীলোককে কাঠের কাজ শিখাবেন!”।
“তাতে দোষ কি! মিস্টার রহমান? স্ত্রীলোকের গায়ে জোর নাই? আমার ইচ্ছা তাদের সমস্ত শক্তিকে জাগাইয়া দেওয়া। অনিচ্ছায় যেন তাদেরকে পাপ না করতে হয়। সারাজীবন যাতে তাদেরকে পিশাচ হয়ে না থাকতে হয়। বিধাতার রাজ্যে কেউ সারাজীবন পাপকে জড়িয়ে থাকতে পারে না। উচ্চ বংশের রমণী যারা, তাদেরকে আমি নিজে চিকিৎসা বিদ্যা শেখবো! দেশে অসংখ্য ধাত্রী আবশ্যক!
“শ্রদ্ধায় আপনার সম্মুখে আমার মাথা নত হয়ে আসছে। আমার ইচ্ছা সরাজীবন আপনার কাছে থেকে আপনার এই কাজে সাহায্য করি।”
“ভগবান কি সে সুবিধা করে দেবেন? আপনার ন্যায় দৃষ্টিসম্পন্ন একজন ব্যক্তির সাহায্য পেলে আমি দ্বিগুণ শক্তিতে কাজ করতে পারি।”
রহমান বলিলেন–“আপনার এ গভীর বেদনার মূল কী? কি করে এই বিরাট সহানুভূতি আপনার হৃদয়ে জাগলো? আমি আপনাকে নমস্কার করি।”
সরযুর চোখ অকস্মাৎ জল দেখা দিল। স্বর তাঁর ভারি হয়ে উঠলো। রুমাল দিয়ে অতি কষ্টে চোখের জল সরিয়ে বললেন—”আপনি কি তা শুনবেন? পরে বলবো।”
রাণাঘাটের বহু লোক ফুলারানীর প্রেমে পড়িয়া সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কালীপ্রসন্ন নিজের স্ত্রীকে ফেলে থুয়ে রাত দিন ফুলরানীর দরজার পরে থাকে। সেখানেই সে খায়, সেখানেই।
সে শোয়। লোকে বুঝাইতে চাইলে সে বলে, ফুলরানীকে সে ভুলতে পারে না–তাতে তার অধম হবে।
কুৎসিৎ রোগে ফুলরানী আজ কয় মাস ধরে কষ্ট পাচ্ছে। কোনো চিকিৎসায় ফল হয় না দিন রাত্রি অপরিসীম কষ্ট।
ফুলীর মা কলকাতা যেয়ে শুনে এসেছি। লেডী ডাক্তার সরযু এই সমস্ত চিকিৎসায় খুব পারদর্শী। অসংখ্য টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিলো। ১০০ টাকা ভিজিটে এবার ডাক্তার সরযু ফুলরানীকে দেখতে আসছেন।
রাত্রি আটটার সময় সেভেন-আপে রাণাঘাটে সরযু গাড়ি থেকে নামলেন। বিশেষ কোনো কারণে মিস্টার রহমান আসতে পারেন নাই। অবিলম্বে একখানা গাড়ি ঠিক করে তিনি ফুলানীর বাসা অভিমুখে যাত্রা করলেন। ষ্টেশনে ফুলরানীর চাকর রাধা এসেছিল।
দ্বিতল বাড়ি। উপর তলার প্রকোষ্ঠে একখানা বহুমূল্য পালঙ্কের উপর ফুলরানী শুয়েছিল। নিকটেই একখানা চেয়ারে ফুলীর মা বসেছিল। দরজায় কালীপ্রসন্ন দাঁড়িয়ে।
ফুলীর মা ডাক্তারকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে তাহার হাত ধরে যানাক্লিষ্ট ফুলরানীর বিছানার পার্শ্বে নিয়ে গেল।
কালীপ্রসন্ন তখনও দাঁড়িয়ে। ফুলরানীর মা বিরক্ত হয়ে বললে ”আজ যাও বাপু! রাতদিন এমনি করে বিরক্ত করলে কি করে চলে? দেখতে পাচ্ছো তো, ফুলীর কত অসুখ!”
ফুলরানী যাতনায় অস্থির হয়ে চিৎকার করছিলো। কলিকাতার ডাক্তারকে দেখে সে বিছানায় উঠিয়া সরযুর হাঁটু জড়াইয়া ধরিয়া কহিল,–“মা গো, আর সহ্য হয় না। একটু বিষ দিন বিষ। খেয়ে প্রাণত্যাগ করবো। আর পারি না!”
সরযু শান্তস্বরে বলিলেন, “তোমার ব্যথা এখনই সেরে যাবে। আমি ঔষধ দিচ্ছি।” সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটু ঔষধ খাইয়া দিলেন।
প্রায় আধ ঘণ্ডার মধ্যে যাতনা কমে গেল। ফুলীর মা সরযুর পা জড়াইয়া ধরিয়া বললে, “আমাদেরকে রক্ষা করুন, আপনার ভালো হবে। আমরা পতিতা, সকলেই আমাদেরকে ঘৃণা করে। টাকা খরচ করিলেও কেউ ঘৃণা করে আমাদেরকে ভালো ঔষধ দেয় না। এ যাবৎ কেউ আমাদের বাড়িতে আসে নাই। আপনি দেবী, তাই আপনার এই দয়া।”
সরযু বলিলেন, আমি ডাক্তার মানুষ, ঘৃণা করলে ব্যবসা চলে না। বিশেষ করে এইসব চিকিৎসা আমি করে থাকি।”
সরযু আর একবার ঔষধ খাওয়াইয়া দিলেন।”
আর একঘণ্টা কেটে গেল। ফুলীর সকল বেদনা যেন কি যাদুমন্ত্রে অকস্মাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেলঃ ফুলরানী কৃতজ্ঞতায় মাটিতে নামিয়া সরযুর পা জড়াইয়া ধরিয়া বললে”মা আপনি দেবী! আপনার ঔষধ অমৃত।”
রাধা চৌকাঠের উপর বসে ঝিমুচ্ছিলো।
সরযু বললেন–“একেবারে নিরাময় লাভ করতে হলে তুমি আর কখনও কোনো পুরুষের স্পর্শে আসতে পারবে না।”
ফুলী হাত জোড় করিয়া বলিল–“আমি প্রতিজ্ঞা করলাম আপনার কাছে। আপনি আমার জননী। আপনি দেবী। আর আমি পাপ করবো না। যখন দারুণ দুঃখে এই পাপ পথ অবলম্বন করি, তখন খোদার কাছে প্রতিজ্ঞা করি, ‘খোদার দুঃখ ঘুচলেই তোমার পথে ফিরে আসবো।’ অনেক অর্থ হয়েছে। তবুও এই প্রলোভন হতে মুক্ত হতে পারি না। আমাদের কি খোদা নাই? আমরা কি শৃগাল-কুকুর অপেক্ষাও অধর্ম? কিন্তু কোথায় যাবো? যে সমস্ত নরপিশাচ আমাকে অনুগ্রহ করে, তাহারা আমাকে স্থান পরিত্যাগ করতে দেখলে শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। মাগো, আমাকে রক্ষা করুন। এই পাপ-পথে আর আমি থাকবো না একটু স্থান কোথাও পেলে, এই বৈভব-এই সম্পত্তি ফেলে শাক খেয়ে থাকবো। মৌলবীদের কাছে পরলোকের কথা শুনেছি কি ভয়ানক, কত পৈশাচিক, আমাদের জীবন। কিন্তু ইচ্ছা করে আমি এই পথে এসে দাঁড়াই নি। সংসার আমাদিগকে এখানে তাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায়, অবহেলায় আমরা এখানে এসেছি। কুকুর অপেক্ষা ঘৃণিত ছিলাম। এক্ষনে আমি রানী হয়েছি, কত ভদ্র ও বড়লোক আমার চরণ লাভ করিবার জন্য ব্যস্ত।”
সাতদিন পরে ফুলী তার মাকে ফেলে মাথা মুড়ে সাদা কাপড় পরে সরযুর আশ্রমে যেয়ে উপস্থিত হয়েছিলো। সরযুও তাঁকে জনননীর স্নেহে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পাঠকের মনে আছে, মহিউদ্দীনের এক শিষ্য ছিল। এই যুবক প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হয়ে পড়ার খরচ সগ্রহের জন্য কলিকাতার রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
দেশের লোক মিস্টার রহমানের পরামর্শে সে সাহাষের জন্য সরযু ডাক্তারের সহিত দেখা করে সরযু এই যুবকের সহিত সগদ ৫০০ টাকা ও ৫০০ টাকার গহনা দিয়ে ফুলরানীকে বিবাহ দেন। সেই টাকায় মহিউদ্দিনের শিষ্য, বি. এ. পাস করেছিলেন।
… জিলায় এই দম্পত্তির সন্তান-সন্ততি এখনও বেঁচে আছেন, তাঁরা এখন দেশের মধ্যে সম্রান্ত ব্যক্তি।
.
সপ্তচত্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
অতি প্রত্যুষে ফুলে-ভরা ছোট বাগানের দিকে তাকিয়ে সরযু গত জীবনের কথা ভাবছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল মিস্টার রহমান তার কাজে সহানুভূতি দেখাবার উপযুক্ত লোক। বহু ভদ্রলোকের সহিত তাঁর আলাপ হয়েছে, কিন্তু এমন ভদ্রলোক তিনি কখনও দেখেন নাই প্রাণের এক কোণে সরযু দেখতে পেলেন–মিস্টার রহমান যেন একগাছা তিনি কখনও দেখেন নাই প্রাণের এক কোণে সরযু দেখতে পেলেন মিস্টার রহমান যেন একগাছা ফুলের মালা হাতে করে তাকে ডাকছেন।
সরযুর লাল মুখ রক্তে ভরে উঠলো। অজ্ঞাতসারে সেই নির্জন কামরায় সে মুখ নত করে ফেললে।
মিস্টার রহমান যদি তাঁকে বিয়ে করেন, তাহলে তাঁর কাজের কি কোনো বাধা হবে? মিস্টার রহমান কি তার সঙ্গী হবেন?
বস্তুত রহমান শ্রদ্ধা ও সহানুভূতিতে সরযু তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে তার আত্মবিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ হচ্ছিল। মিস্টার রহমানকে সারাজীবন সঙ্গে পেলে সে রমণী জাতির স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য কিছু করতে পারে। একা শত বাধার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই বিরাট কাজ কী সে করে উঠতে পারবে! _ মিস্টার রহমান ছাড়া আর কোনোও সঙ্গী পাওয়া কি তার পক্ষে সম্ভব হবে? বাহিরের চাকচিক্যের অন্তরালে সে যে অত্যন্ত ছোট। বিধাতা তাকে ছোট করে রেখেছেন। মিস্টার রহমানের মনুষ্যত্বের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। তিনি সমাজ ও অসত্যকে ভয় করবার লোক নন।
তিনি একটা সঙ্গী পেতে চান কেন? তার কর্মের সাহায্যের জন্য! তাঁর জীবনব্যপী সংগ্রামে ভরসা দিবার জন্য একটা লোক তিনি চান।
.
অষ্টচত্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
যেখানে কলিকাতা বড় লাইব্রেরি, তারই অনতিদুরে দু’টি যুবতী এক জায়গায় বসে পান বিক্রি করে। নীচ জঘন্য স্ত্রীলোকদের মতো তাদের মুখে কথায় চটুলতা ছিল না। ক্রেতার কোনো রসিকতায় তারা উত্তর দিত না।
ভাগ্যের কী মর্ম বিদারক পরিহাস! যে রমা ও নিহার এককালে স্বর্গের পূণ্য নিয়ে বাতাস ও মাটিকে তাদের দেহ ও চরণের স্পর্শ দিয়ে পবিত্র করেছে, আজ দেশের মূর্খতা, অবিচার ও হৃদয়হীনতার ফলে তারা কোথায়? ইহা ভাবিতেও আমাদের চোখ দিয়া জল পড়ে। অশ্লীল ও জঘন্য কথা–এসব না ভাবলেও চলবে না।
উভয়ে তারা এক জায়গায় বসে। সারাদিন বড় বড় জ্ঞানী লোকের কাছে তারা পান বিক্রয় করে। ক্রেতার মুখের দিকে চেয়ে তারা কখনও কথা বলে না। শহরের এক জঘন্য পল্লীতে এক ক্ষুদ্র খাপরার কামরায় তারা বাস করে। একই সঙ্গে তারা খায়। দুঃখে হোক বা প্রেমে হোক তাদের এখন জাতি বিচার নাই।
সেদিন পান বিক্রি করে তাদের দুইজনের আড়াই টাকা লাভ হয়েছিল। এইরূপে তারা পাপের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলো। জঘন্য পল্লীতে থাকলেও তাদের কাছে কোনো বদমায়েসের স্থান হতো না। ভিতরে একটা অস্বাভাবিক উচ্চ প্রবৃত্তি সেই জঘন্য স্থানেও তাদের আত্মার উপরে বসেছিলো।
অনেকদিন থেকে একটা বদমায়েস বক্তা নিহার পানওয়ালীর কাছে প্রেম ভিক্ষা করছিলো। গায়ে তার যেন অসাধারণ শক্তি। দেখতে যমের মতো। নিহার অত্যন্ত ঘৃণায় বলেছিলো, পান বিক্রি করলেও সে শহরের সাধারণ পানওয়ালী নহে। বদমায়েস রাস্তার মধ্যে নিহার ও রমাকে অতি পৈশাচিক ভাষায় বলেছিল–“আমার বাসনা আমি পূর্ণ করবোই করবো। বাজারের পতিতার আবার এত বড়াই কেন?”
সেদিন সন্ধ্যাবেলা নিহার বাসায় ফিরে এসে রান্নার আয়োজন করিতেছিল। রমা পার্শ্বে বসে মাছ ধুইছিল। এমন সময় ও বদমায়েস যুবকটি এসে বললে, “নিহার, আমার কথা তোকে শুনতে হবে। আমি পাঁচ টাকার জায়গায় দশ টাকা দিতে রাজি আছি।”
রাত যখন দশটা তখন সহসা দরজায় আঘাত পড়লো। নিহার রমার কানে কানে ফিস্ ফিস্ করে বললে–“দাখানা, ঠিক করে ধর রমা। আমার কাছে বঁটি আছে।”
নিহার জিজ্ঞাসা করিল, “কে?” অতি রুক্ষ্ম ও পৈশাচিক ভাষায় উত্তরে শোনা গেল, “দরজা খোল মাগী। জানিস না আমি কে! যদি দরজা না খুলবি, আমরা ঘর ভেঙ্গে ভিতরে আসবো। আমি একজন নহি। আমরা দশজন এসেছি।”
একটা ভয়ানক শক্তি রমা ও নিহারের ভিতর জেগে উঠলো। রমণীর স্বাভাবিক ভীরুতার পরিবর্তে একটা রুদ্র ভাব রমা ও নিহারকে মুহূর্তের মধ্যে মাতাল করে ফেললো। নিহার রমার কানে কানে ফিস্ ফিস্ করে আবার বললে–“রমা, হাতের বল যেন ঠিক থাকে।”
নিহার ধীরে ধীরে দরজা খুলে বললে–“এস! ঘরের মধ্যে এস!”
তার পর সেই অন্ধকারে ছোট ঘরে দশ মিনিটের মধ্যে দশটি লোকের মাথা দেহ ছাড়া হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। পুলিশের অপমান ও সাধারণের উপহাসকে ভয় করে সেই রাত্রেই রমা ও নিহার নদীতে যেয়ে আত্মহত্যা করে।
পরদিন দুপুর বেলা নদীর তীরে শতদলপুর থানায় এক চৌকিদার এজাহার দিচ্ছিলো–“কালীবাড়ির ঘাটে দুইটি স্ত্রীলোকের লাশ পাওয়া গিয়াছে। একের আঁচল অন্যের আঁচলের সঙ্গে বাঁধা।”
পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেন ‘বেওয়ারিশ।’