৪১-৪৫. নিভৃত কুটীরে ফিনি
একচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
নিভৃত কুটীরে ফিনি এবাদের পার্শ্বে বসিয়াছিল। অসীম আবেগে তাহার প্রণয়ীর মুখে সে চুম্বনের উপর চুম্বন প্রদান করিতেছিল।
সেই আঁধার প্রকোষ্ঠের এক কোণে একটা ম্লান প্রদীপ তাহাদের নির্জন প্রণয়ভরা চাঞ্চল্যকে আরও চঞ্চল করিয়া তুলিতেছিল। বহুমূল্যে একখানি, তদুপরি প্রায় দেড়হস্ত। পরিমিত মোটা গদি কামগন্ধভরা হৃদয়ে বাসনা ও কামনা জাগাইতে অত্যন্ত অনুকূল। অসীম সুখে এবাদ সেই দুগ্ধফেননিভ উপর আপনাকে ছাড়িয়া দিয়াছিল।
সহসা দরজায় আঘাত পড়িল। ফিনির সকল ও উল্লাস, কামনা ও আনন্দ একটা অতি শীতল বিরাট বরফ্যুপের চাপে যেন চৈতন্যহীন হইয়া গেল। অথবা জগতের একটা অতি মধুর সুষমা-ধরার সহিত যদি কাহারো ওষ্ঠের স্পর্শ হইতে থাকে আর ঠিক সেই সময়
পৃথিবীটা পায়ের তল হইতে সহসা সরিষা গিয়া একটা ভীষণ আগুনের সীমাহীন পথে। তাহাকে ফেলিয়া দেয় তখন তাহার মানসিক অবস্থা যেমন হয়, ফিনিরও তেমনি হইল। ওষ্ঠ তাহার নীলবর্ণ হইয়া গেল–ধমনীর প্রবাহ সহসা নিথর হইয়া গেল। তাহার চোখ দুটি সহসা মাথার মধ্যে বসিয়া গেল।
আর একটা প্রচণ্ড আঘাত! এবাদ একটা যন্ত্রণাব্যঞ্জক চিৎকার করিয়া কহিল–“ফিনি, মিস, ফিনি! এই দূরবেশ আসিয়া রমণীর মোহে অবশেষে প্রাণ হারাইতে হইল!”
আর একটা প্রচণ্ড আঘাতে ভিতর দিককার অর্গল ভাঙ্গিয়া গেল।
ফিনির পিতা দেখিলেন তার যুবতী কন্যা ফিনি এক যুবকের পার্শ্বে নিশ্চল পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়াইয়া আছে।
০ ০ ০
বেলা লেমানের শীর্ণ হাতখানি চুম্বন করিয়া কহিল,–“আমার প্রিয় লেমান সতীর সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবের পথ মুক্ত করিয়া দাও। যেদিন তোমাকে ভালবাসিয়াছিলাম, সেইদিন এদিন ও আত্মা তোমার সেবার নিযোগ করিয়াছি। দশ হাজার টাকায় তোমার উত্তম চিকিৎসা হইবে। তোমার সকল রোগ সারিয়া যাইবে। ছেলেগুলির কষ্ট থাকিবে না। পশুর মতো বাঁচিয়া লাভ কী? এই দেহ তোমার সেবায় উৎসর্গ করিবার এমন সুযোগ কোনো সতীর ভাগ্যে ঘটে না।”
লেমান হাউ হাউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল–প্রিয়তমে, কী ভয়ানক বলিতেছ! আমি তোমার এই ভয়ানক আত্মোৎসর্গ সহ্য করতে পারিব না। আমি আরও বেদনা সহ্য করিতে রাজি আছি।”
“না প্রিয় লেমান, অনুমতি দাও–আমাকে চরম সুখে সুখী হইতে দাও। এতকাল কি তোমার বৃথা সেবা করিলাম? আমাকে এই দান দিতে তুমি ইতস্তত করিতেছ? ইহাতে আমার কত সুখ তা তুমি বুঝিতেছ না?” প্রায় তিনঘণ্টা ধরিয়া বাদানুবাদ হইল। লেমন কাঁদিতেছিল।
ছেলেগুলি বিছানার উপর তাদের পবিত্র ও শুভ্র ফুলের পাপড়ীর মতো ওষ্ঠগুলি মুক্ত করিয়া শুইয়াছিল। দেবী বেলা এক এক করিয়া সন্তানের মুখে চুম্বন দান করিল। আঁখিতে তাহার জল নাই। একটি অসীম পুলক তাহার চোখেমুখে প্রতিভাত হচ্ছিল।
বেলা আবার তাহার স্বামীর হাত ধরিয়া কহিল–“সখে! ছেলেগুলি যখন জিজ্ঞাসা করিবে, মা কই? বলিও তোমাদের মা, বেড়াতে গিয়াছে, শীঘ্রই আসিবে।”
লেমানের শীতল ওষ্ঠে বেলা আর একটা চুম্বন মুদ্রিত করিয়া দেবতাদের হাতে স্বামীকে উৎসর্গ করিয়া পেছনের দিকে চাহিতে চাহিতে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
লোহার শৃঙ্খলে বাধা হাত-পা বদ্ধ। রাত্রি বারটার সময় মাটির ভিতর কোমর পর্যন্ত পুঁতিয়া পাথর দিয়া তাহাকে চূর্ণ করা হইবে। ভদ্রলোকের বাড়িতে একজন বিদেশীর এই কাণ্ড করিবার সাহস! অতি গোপনে রাত্রি ৩টার সময় এই ভয়ানক কাণ্ড সংঘটিত হইবে।
ফিনির সম্মুখে এবাদের মাথা চুর্ণ করা হইবে। সে দাঁড়াইয়া দেখিবে, পিতার অনুমতি লইয়া কাহারো সহিত প্রেম করিলে সে প্রেমিকের কি দশা হয়।
মুক্তির আর কোনো আশা নাই। অনুতাপে আর কোনো ফল নাই। নিজ কৃত অপরাধের ফল এবাদকে মাথায় করিয়া লইতে হইবে। কেউ তাহাকে রক্ষা করিবে না। কী সাংঘাতিক!
রাত্রি ১২ টার আর বেশি দেরি নাই। আবাদ সেই নিভৃত গুহায় একাকী ঘড়ির দিকে চাহিয়া, সেকেণ্ডের কাটাটি হনহন করিয়া ঘুরিয়া আসিতেছে, দেখিতেছিল। এ কি আর স্ত্রীর প্রতি অত্যাচার ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রায়শ্চিত্ত?
এবাদ তখন ভাবিতেছিল, যদি একবার সে তার স্ত্রী দেখা পাইত তাহা হইলে জীবনের এই শেষ মুহূর্তে সে তার পায়ে ধরিয়া ক্ষমা চাইয়া লইত।
টং টং করিয়া গাড়িতে ১২টা বাজিল, সঙ্গে সঙ্গে সেই অন্ধকার নিভৃত গুহার লৌহদরজা অতি সহজে খুলিয়া গেল।
সেই অন্ধকারের ভিতর এবাদ দেখিল, যেন একটা মানুষ প্রবেশ করিল। এ কি ঘাতক?
ভয়ে এবাদ চীৎকার করিতে যাইতেছিল হঠাৎ একটা নারীর কোমল স্পর্শে এবাদ চমকিত হইয়া উঠিল। যে আর্তস্বরে অতি ধীরে জিজ্ঞাসা করিল–“কে?”।
বেলা কহিল–“ভয় নেই, এই কাপড় পরুন। আপনাকে মুক্তি দিতে আসিয়াছি। আপনার কাপড় আমাকে দিন। আমি মিস্টার এবাদ হইয়া এখানে বসিয়া থাকিব। এই শান্তি আমি লইব। দেরি করবেন না। রাস্তায় অন্ধকারে গাড়ি দাঁড়াইয়া আছে।”
সহসা এবাদ একটা প্রচণ্ড মানসিক বিবর্তনের আঘাতে পড়িয়া যাইতেছিল। এ কী স্বপ্ন! জাপানে কি এমন রমণী সম্ভব?
কিন্তু তাহার ভাবিবার সময় ছিল না। সে বেলার সহিত কাপড় বদলাইয়া লইল। তারপর বেলার পুরুষ পোষাক-পরা দেবীমূর্তির সম্মুখে সেই নিবিড় আঁধারে একটা অজানিত স্বর্গীয় ভাবাবেগে মাথা অবনত করে সে বাহির হইয়া পড়িল। একটা পুরুষ দরজায় দাঁড়াইয়াছিল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে অতি সন্তর্পণে অন্ধকারের ভিতর দিয়া বেলার পোষাক-পরা মিস্টার এবাদ রাস্তায় যাইয়া অপেক্ষমান গাড়িতে উঠিয়া বসিল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নক্ষত্রবেগে সাগরকূলে জাহাজঘাটে ছুটিল। রাত্রি তিনটার সময় ভারতীয় মেলে মিস্টার এবাদ জাপান ছাড়িয়া দেশ অভিমুখে যাত্রা করিল।
ঠিক সেই সময় মিস্টার, এবাদের পোষাকে আবক্ষ প্রোথিতে মাথায় পাথরের উপর পাথর পড়িতেছিল। চিৎকার নাই, চাঞ্চল্য নাই,–নিশ্চল পাথরের মতো আঘাতের উপর আঘাত সে সহ্য করিতেছিল।
দরিদ্র স্বামীর রোগমুক্তির জন্য সতীসাদ্বী বেলা ১০,০০০ টাকার পরিবর্তে আপনাকে চূর্ণ করিয়া ফেলিল।
পরদিন উষাকালে মিস ফিনি দশ হাজার টাকা নিয়ে যখন লেমানের কাছে উপস্থিত হল তখন লোমন বিছানার উপর নিশ্বাসহীন জড় পদার্থের মতো পড়েছিল। ফিনি লেমানের মৃতদেহ ঠেলিয়া দেখিল তাহার বুকের সঙ্গে দলা করা একটা জামা, সেটা বেলার!
.
দ্বিত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
কলিকাতা ট্রেটি বাজার চর্বির দোকানের সম্মুখে একটা অসামান্য রূপবতী মেয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছিলো।
রমণীটি কে? অনেক মুটে মুজুর ছোটলোক যুবতীর চারি পার্শ্বে দণ্ডায়মান। অনেক ভদ্রলোক সেই পথ দিয়া যাচ্ছিলেন। লোকে কি বলবে, এই ভয়ে তাহারা যুবতীর দিকে একবার মাত্র নজর করে আপন কাজে চলে যাচ্ছিলেন। গঙ্গার-উত্তর ধারের একজন খুঁড়িওয়ালা লোক সাত হাত হুঁকোর নল টানিতে টানিতে অত্যন্ত ঘৃণার সহিত জিজ্ঞাসা করিল, “বাড়ি কোথায় মাগী?”
“বাড়ি আমার ঢাকা।”
“যার সঙ্গে বের হয়ে এসেছিল, সে তোকে ফেলে বুঝি পালিয়েছে?”
কুলসুম আবার হাউ হাউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। সে স্বরে আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িবার উপক্রম হইতেছিল। সকাল বেলা গাড়ি হইতে নামিয়া জনতার মধ্যে সে এবাদকে হারাইয়া ফেলিয়াছে। সারাদিন হাঁটিয়া হাঁটিয়াও সে এবাদের সন্ধান পায় নাই। সন্ধ্যাকালে সে কলুটালা, দিয়া ড্যামজেনলেন দিয়া ট্রেটি বাজার যাইয়া অত্যন্ত দুঃখে অসীম, বেদনায় আত্মকৃত পাপের অনুতাপে হাউ হাউ করিয়া কাঁদিতেছিল।
ছেলেমানুষ এবাদ যৌবনের উদ্দাম বাসনায় মুগ্ধ হয়ে তার ভাবিকে নিয়ে কলিকাতার বুকের উপর এসে যখন দাঁড়ালো, তখন সহসা ক্লান্তিভরা পথের মাঝে অতি ভীষণ অনুতাপ এসে তার কবি বুকখানা জড়িয়ে ধরলো। সে তখন বুঝতে পারলো, কী ভীষণ কাজ সে করেছে। সমস্ত বিশ্ব তাকে মৌন ভাষায় বলেছে, ওরে নরপিশাচ, ওরে শয়তান, কী করেছিস। . সে ভয়ে ভাবিকে রাস্তার ভিতর ফেলে ফেরৎ গাড়িতে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করিল। সে একটুও ভাবলো না, তার ভাবির কি হবে! মুহূর্তের ভুলের ফলে হাসতে হাসতে সে তার ভাবির অতি সুন্দর, অতি পবিত্র, অতি মহান দীর্ঘ জীবনের উপর একটা দীর্ঘ শ্মশান রচনা করা গেল। ওহো! উদ্ধার নাই, পথ নাই, ফিরবার উপায় নাই–একটুখানি দাঁড়াবার জায়গা নাই, সে কি পুরুষ? হাজার পাপে যার দোষ হয় না, যে জীবন ভরে ব্যভিচার করে, বৃদ্ধকালে সে দেশপূজ্য মহাপুরুষ হতে পারে!
অসীম জ্বালায় কুলসুম কাঁদছিলো। তার পদ্মের মতো পা ছিটে রক্ত বেরুচ্ছিলো, কিন্তু তবুও তো কেউ তাকে একটু বসতে দিতে পারে না। কারণ তার তখন জাতি গিয়েছে, সে অস্পৃশ্য, তার সঙ্গে মানুষ কথা বলতে লজ্জা করে।
একজন দয়াদ্ৰহৃদয় মুসলমান ভদ্রলোক বললেন, “আমি তোমাকে টাকা দিতে রাজি আছি। তুমি বাড়ি ফিরে যাও।”
কুলসুম কাঁদিয়া বলিল,–“আমায় কেটে টুকরো টুকরো করে জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে! কোথায় গেলেন।“
ক্রমে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। একটা পথহারা অসহায় রমণীর সহিত কথা না বলিয়া সকলে ঈশ্বর উপাসনায় মন দিলেন। ছোটলোকেরা অশ্লীল ভাষায় বলাবলি করিতেছিল–মাগীর যেমন কামড়।
০ ০ ০ ০
এমন সময় একটা যুবতী আসিয়া কুলসুমের হাত ধরিয়া কহিল–“আয় বোন, আমার সঙ্গে আয়-ভয় কী তোর?” সে ছখিনা পতিতা।
কুলসুম মাথা নত করে তার পেছনে পেছনে চলে গেল।
.
ত্ৰিচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
লেডি ডাক্তার সরযুবালা গাড়িতে চড়ে হ্যারিসন রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। সহসা তাহার দৃষ্টিপথে একটি রমণী পড়িল। একটি বৃহৎ দালানের রকে বসে রমণী একটি শিশুর মুখে বটের পাতার সাহায্যে দুধ দিচ্ছিল। সরযুর বুকখানি ধড়াস করিয়া উঠিল। রমণীর মাথার চুল উঠে গিয়েছিলো, সর্বাঙ্গে ঘা। পরণে অতি মলিন ছিন্ন বসন। শাঁ শাঁ করে শীতল বাতাসে এসে শিশুটিকে কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে তুলছিলো। রমণী তার সেই হেঁড়ে কাপড় দিয়ে শিশুকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিল। জীর্ণ বসনের সকল জায়ঘায় ছেঁড়া। যে দিক সে ধলতে যাচ্ছিল, সেই দিকই ছিঁড়িয়া যাইতেছিল। সরযু কোচোয়ানকে গাড়ি থামাইতে বলিলেন।
কোচোয়ান গাড়ি থামাইলে; গাড়ি সেখানেই রাখিতে বলিয়া সরযু রমণীর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন।
একটা ছোট হাঁড়িতে একটু দুধ। কোথা হতে যে সেই দুধটুকু পেয়েছিলো তা জানি। সহসা হাঁড়িটা বাতাসের আঘাতে নিচ পড়িয়া ভাঙ্গিয়া গেল। শিশু একটু দুধের আশায় তখনও হা করিয়াছিল। সরযু রমণীর সম্মুখে যাইয়া অতি মধুর স্বরে বলিলেন–“তোমার কোনো পাড়ায় বাড়ি, মা?”
কাদম্বিনী একটা মেমসাহেবকে তাহার সম্মুখে উপস্থিত দেখিয়া ভয়ে পলায়ন করিতে যাইতেছিল। পরক্ষণেই সরযুর মুখের অমৃতমাখা বাণী শুনিয়া, কৃতজ্ঞতায় একেবারে চোখের জল ফেলিয়া বলিল,–“আমার বাড়ি নাই মা। আমি ভিখারিনী, মুক্ত আকাশ আমার ঘর, শৃগাল কুকুর আমার আত্মীয়!”
সরযু বলিলেন–“ভয় নাই মা! আমি তোমার আত্মীয়! বল, তোমার বাড়ি কোথায়? এ শোচনীয় অবস্থা তোমার কেন?”
কাদম্বিনী হাউ হাউ করিয়া কাঁদিয়া বলিল, “আমার সঙ্গে বেশি কথা বলিবে না। আপনার সম্মান হানি হইতে পারে। আমি পাপীয়সী-পাপ করেছিলেম। স্বামী আমাকে পথে বার করে দিয়েছেন। আমি অস্পৃশ্যা, আমার ছায়ায় আসলে আপনার পাপ হবে। এই শিশুটি আমার পাপের সাক্ষি আমার কেউ নাই, আমায় কেউ নাই। জ্বালায়, যন্ত্রণায় আমাকে পথে পড়ে মরতে হবে।”
সরযু বলিলেন–“আমি পত্নীকে ভালবাসি, আমি নিজেই পাপী–আমি নিজেই অস্পশ্যা। আমার সঙ্গে যেতে রাজি আছ! তোমার চিকিৎসা হবে। তোমার সুখ ফিরে আসবে। বল, যেতে রাজি আছ। আমি তোমার জননী হলাম।”
কাদম্বিনী শিশুকে ফেলিয়া সরযুর পা জুড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিয়া বলিয়া উঠিল,–“তুমি আমার জননী। তোমার বুকখানি মাতার স্নেহে ভরপুর।”
সরযু দূরে কোচোয়ানকে গাড়ি আনতে বলিলেন।
.
চতুশ্চত্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি বহিতেছিল। রানীগঞ্জের পুলিশ সাহেব মিস্টার হাছান কামরায় বসে অফিসের খাতা দেখছিলেন আর পার্শ্বে চেয়ারে উপবিষ্টা স্ত্রী আমেনার সহিত কথা বলছিলেন। তখন রাত্রি নয়টা। বাহিরে প্রলয়ের ভয়ে সকল মানুষ রাস্তা-ঘাট ছেড়ে যে যার মতো আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
মিস্টার হাছান বলিলেন,–“প্রিয় আমেনা তোমার এমন ভাব কেন? সকল সময়ই তোমার মুখ ভার। এতে আমার অত্যন্ত কষ্ট হয়। বিবাহিতা জীবন পুস্তকেই শুধু পড়েছি বড় সুখের। শুনিয়াছি, প্রেমিকা ধারায় স্বর্গ রচনা করেন! তাদের প্রেম মুনি-ঋষির জিনিস। পুস্তকেই পড়িয়াছি, জীবনে তাহার সন্ধান পাই না কেন!”
আমেনা কথা বলিলে না।
মিস্টার হাছান আবার কহিতে লাগিলেন,–“যখন কলেজে পড়িতাম তখন কবিদের রঙ্গিন কল্পনা বাস্তবে পরিণত করিবার বাসনা ছিল। কিন্তু একজনের ইচ্ছায় কী তা সম্ভব! তুমি এমন করিয়া দূরে দূরে থাকিলে আমাদের জীবন কত বিষময় হবে, তা কি তুমি বুঝতে পার না? কি তোমার বেদনা, আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি তুমি খুলে বল, আমি তার জন্য ক্ষমা চাহিব–আমি তার প্রতিবিধান করবো। খাওয়া একদিনও ভালো হয় না। চাকরানীর যা ইচ্ছে তাই রান্না করে রাখে। তুমি যদি একটু দয়া করে দেখ, তাহলে তো কোনো দোষ হয় না। তুমিও তা খাবে। আর দয়া করে যদি আমাকে স্বামী বলে মানো। তাহলে আমিও তো খাবো। এতে কি অপমান বিবেচনা করো? কাজে কি অপমান আছে? অপমান হয় পাপে ও নীচতায়। কাপড়, জিনিসপত্রের কিছুরই ঠিক থাকে না। যেখানে সেখানে জিনিসপত্র পড়ে থাকে। প্রত্যহ একখানা রুমাল বাজার থেকে আসে, অথচ একখানাও ঠিক থাকে না। এসব কে দেখবে, বল? আমার কি আপন আর কেউ আছে? কত শিশি গন্ধতেল সেফের উপর সাজানো। তুমি স্পর্শ করবে না। বিধবার বেশে মলিন কাপড়ে রুক্ষ কেশে কাল কাটাও। চোর ডাকাতকে জব্দ করতে পারি কিন্তু বিদ্রোহী আত্মাকে আমি দমন করদে পারি না। তোমার এমন ভাব কেন? এ বেদনা আমার কাছে অসহ্য হয়ে পড়েছে। জীবনে কিছুমাত্র সুখ নাই।”
আমেনা কথা কহিলেন না। বিবাহের পর ছয় মাস সুখে কাটিয়াছিল। তারপর আমেনা নিত্য নূতন কল্পিত অপমান ও উপহাসে কাল্পনিক দীনতা ও হীনতায় নিজেকে স্বতন্ত্র করিয়া রাখে। সে সব সময়ই মনে করে, সে ছোট-তার স্বামী তাকে মনে মনে ঘৃণা করেন। শথ চেষ্টাতেও সে তার মর্যাদা বাড়াইতে পারে না। বিধাতা তাকে ছোট করিয়াছেন, মিস্টার হাছানের স্তুতিবাক্যে সে বড় হইতে পারে না। সে তাতে আরও বিরক্ত হয়। সে দিনে দিনে আপনাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাছানের পার্শ্ব হইতে সরাইয়া লইতে চেষ্টা করিতেছিল। হাছান তাহার দিকে হাসিলে সে মনে করে, এ তীব্র উপহাস কেন? যদি হাছান স্ত্রীকে নমস্কার করেন, আমেনা ভাবে তাহার হীন ব্যক্তিত্বকে আরও হীন করিয়া ফেলা হইল। সারাদিন সে চিন্তা করে। প্রতি কাজে সে নিজেকে অপমানিত মনে করে। চাকরাণীরা হাসিতে থাকিলে
আমেনা মনে করে, তাহারি হীনতা লইয়া তাহারা কানাকানি করতেছে।
যদি বেশি মূল্যের কাপড় আনিয়া দেওয়া হয় আমেনা বিরক্তির সহিত ভাবে আমার হীনতাকে ঢাকিবার জন্য বাহিরের আঁকজমকপূর্ণ পোশাকের ব্যবস্থা হইতেছে। আমি ছোট তাই দামী পোশাক পরিয়া মর্যাদা বাড়াইয়া তুলিতে হইবে। যদি কাছে আসিয়া রসিবার জন্য হাছান ডাকেন, আমেনা ভাবে–আমাকে না ডাকিয়া আমার কাছে আসিলেই তো হয়। যদি হাছান তাহার বিছানায় যাইয়া বসেন, আমেনা মনে করে–যেন অতিথি! একটু আলাপ করিয়া তাহাকে আনন্দ দেওয়া হইতেছে মাত্র।
রান্না যদি বেলা হয়ে যায়, আমেনা মনে করে সে ছোট ঘরের মেয়ে বলে তার প্রতি এই অবহেলা। ঘৃণায় সে চাকরানীদের সহিত কথা বলে না। সে সর্বদা মনে সন্দেহ করে–চাকরানীরা মনে করে, সাহেবের বউ ছোট। আমেনা তাহাদেরকে কোনো আদেশ দিতে ভয় ও সঙ্কোচ অনুভব করে।
বাহির হইতে কে যেন দরজায় আঘাত করিল। এই ঝড়ের মধ্যে কে পুলিশ সুপারিন্টেণ্ডেন্টের ঘরে, আঘাত করিতে সাহস করে? ঝড়ের শব্দকে উপেক্ষা করিয়া সে শব্দ মিস্টার হাছানকে বিস্মিত করিল।
মিস্টার হাছান রিভলভারটি ঠিক করিয়া দরজার কাঠে উপস্থিত হইয়া ধীরে ধীরে দরজা খুলিয়া দিলেন।
অতি ক্ষিগ্রবেগে একটি রমণীমূর্তি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। এ কি? এ যে ললিতা!
সর্বাঙ্গ তার সিক্ত। সে কাঁদিতেছিল। অত্যন্ত শ্রদ্ধায়, অতি পুরাতন উদ্বেলিত স্নেহ-স্মৃতিতে মিস্টার হাছান ভাই এর মতো অত্যন্ত বিস্ময়ে অত্যন্ত আবেগে ললিতাকে জড়াইয়া ধরিলেন।
আমেনা এই পৈশাচিক দৃশ্য দেখিল। তার চোখের সম্মুখে স্ত্রীর প্রতি এই অবমাননা! অত্যন্ত ঘৃণায় অত্যন্ত লজ্জায় একটা মূৰ্ছাকে অতি কষ্টে সংবরণ করিয়া আমেনা অন্ধকারে নিজের বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়িল।
মিস্টার হাছান স্ত্রীর দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “আমেনা বিবি! ইনি তোমার একজন। বোন! শীঘ্র একখানা শাল আনিয়া দাও।” কিন্তু আমেনা তখন সেখানে ছিল না।
হাছান নিজেই কাপড় আনিয়া ললিতাকে পরিতে দিলেন।
হাছান, বলিলেন–“ললিতা, তোমাকে দেখে আমার কত আনন্দ হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। সেদিন যে পত্র লিখছো তাতে তো কিছুই লেখা নাই! ভালো করিয়া সকল কথা খুলিয়া বল।” প্রথম দর্শনের উদ্বেল আনন্দ সহসা ললিতার মুখে অদৃশ্য হইল।
ললিতা বলিলেন—”আমার জীবন অত্যন্ত অসহনীয় হয়ে পড়েছিলো। আমার চোখের সামনে সারা সংসারটা মরুময় হয়ে উঠেছিলো আত্মা সেখানে প্রতিধ্বনি পায় না সেখানে কারো বেঁচে থাকা কঠিন। সে পিতাই হোক, আর মাতাই হোক। স্নেহ-মায়া ছাড়া জগতে কে বেঁচে থাকতে পারে? আমার জন্য একটু শান্তিও ছিল না। অসহায় আত্মার চারদিকে দিবারাত্র আগুন জ্বলতো। তাই আপনার কাছে এসেছিল অন্নের জন্য নয়ম, সহানুভূতি ও স্নেহের জন্য।”
হাছান চেয়ারে বসিয়াছিলেন। সহসা চেয়ার ছাড়িয়া হাছান অত্যন্ত স্নেহে ললিতার হাত ধরিয়া বলিলেন–“তোমার এই বিশ্বাসকে আমি প্রাণের আবেগ নিয়ে সার্থক করতে চেষ্টা করবো। আজ হতে আবার আমি তোমাকে নূতন করিয়া মানিয়া লইলাম।”
ললিতা বলিলেন–“আজ হতে আবার আমাকে নূতন করিয়া মানিয়া লইতে হইবে কেন? আমি আপনার কে, এ কথা হুগলীর বোর্ডিং ঘরেই তো আপনি আমাকে বলেছেন।”
গভীর স্নেহে হাছান বলিলেন–“ক্ষমা কর ললিতা। তুমি আমার চিরজীবনের বোন। কিন্তু তোমার যে আজ হতে জাতি গেল?”
ললিতা ঘৃণায় সহিত বলিলেন, “আমার জাতি গেল? কী ভয়ানক কথা! এমন কথা বললে যে পাপ হয়। আপনার স্পর্শে এসে আমার জাতি যাবে? আপনি ব্রাহ্মণের চেয়ে অনেক বড়। বিধাতা কাহারো কপালে ব্রাহ্মণের ছাপ মারিয়া দেয় নাই। আমার বিশ্বাস আমার কাছে। আমার জাতি যাইবে ও কথা যদি কেউ বলে, তাহা হইলে বুঝিবে সে আমার মনুষ্যত্বের প্রতি ঘোর অবমাননা করিল। পাপীকে ঘৃণা করা নিতান্ত অযৌক্তিক না বলেও পূণ্যবানকে যে ঘৃণা করিবে, বিধাতার বজ তাহাকে অস্তিত্বহীন করিয়া দিবে। স্বাতন্ত্রের দ্বারা জাতিকে বাঁচাতে চেষ্টা না করিয়া মনুষ্যত্বের পাথর দিয়া জাতির জীবন গঠন করিতে হইবে। আমি ঐ সব মানি না। বিশ্বাসে মানুষের মুক্তি নাই, মুক্তি কর্মে। কমেই মানুষের মহত্ত্ব। মহত্ত্বের প্রাণ মানুষের সেবায়, আর্তের রক্ষায়, পতিতের উদ্বারে গভীর সহানুভূতিও বেদনাবোধ, ঘৃণায় নহে।”
আমেনার দৃঢ় বিশ্বাস হইল, এই মেয়েটি নরপিশাচ হাছানের প্রণয়িনী। দিবারাত্র ললিতার সহিত গল্প করে। মানুষ যেখানে প্রাণের প্রতিধ্বনি পায় সেখানেই সে যায়; কেহ তাহাকে বাধা দিতে পারে না। যে বাধা দিতে চায় সে ভুল করে।
ললিতার কিছুমাত্র সঙ্কোচ নাই। হাছান বৈকাল বেলায় বাড়ি আসিলেই সে তার স্বাভাবিক স্নেহে অনুপ্রাণিত হইয়া হাছানকে বাতাস করে। তাহার খাইবার বন্দোবস্ত সে-ই করে। তাহাদের আসার পরদিন হইতে মিস্টার হাছানের আহারের পরিবর্তন হইয়াছে। সে সব জিনিসে অনভ্যাসবশত বা সংস্কারফলে ললিতার ঘৃণা উপস্থিত হইতে পারে, সে-সব দ্রব্য তিনি সেই দিন হইতে পরিত্যাগ করিলেন।
দারুণ ঘৃণায় একটি দীর্ঘ ভুল বুকে লইয়া আমেনা একদিন বাপের বাড়ি চলিয়া গেলেন। মিস্টার হাছান আমেনার হাত জড়াইয়া ধরিয়া তাহার অপরাধ প্রকাশ করিতে বলিলেন। আমেনা কোনো কথা বলিলেন না। সারা জীবন আর তিনি হাছানের কাছে ফিরিয়া আসেন নাই।
দুটি অতি দুঃখী আত্মার সঙ্গে সারা জীবন কাটিয়া গেল। যদি তাদের পরিচয় না হইতো, তা হলে বোধহয় তারা কেউ বাচিত না।
জিজ্ঞাসা করি–বিবাহ জিনিসটা কী? বিবাহ কি সহানুভূতির আদান প্রদান নহে?
ললিতা শেষ জীবনে মহাপুরুষ মোহাম্মদের মহামানবতাকে বিশ্বাস করে ছিলেন। সারাজীবন হাছান ললিতার বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন।
.
পঞ্চচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
স্টীমারের উপর রমা ও নিহার বসেছিল। নইম শেখের সঙ্গে পালিয়ে তারা রাইপুরে যাচ্ছে।
এমন সময় টিকিট কালেক্টর এসে টিকিট চাইলে। তখন নইম শেখ নিচে গিয়েছিল। রমা কহিল–“টিকিটি তাদের কাছে নাই।”
‘টিকিটওয়ালা জিজ্ঞাসা করিল–“কোথায় যাবে তোমরা?”
একটু ভীত হইয়া রমা কহিল–“তাতো জানি না!”
বাবু একটু সন্দিগ্ধ হইয়া উঁচু গলায় জিজ্ঞাসা করিল–কোথায় যাবে জান না। কী জাতি তোমরা?”
নিহারকে দেখাইয়া রমা বলিল–“উনি ব্রাহ্মণ, আমি শূদ্র।”
বাবু আরও বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল–“তোমাদের সঙ্গে কে?”
রমা ইতস্তত করিতে লাগিল। বাবু সন্দিগ্ধ হইয়া আরও উঁচু গলায় বলিল–“তোমাদের সঙ্গে কে যাচ্ছে বল।”
রমা বলিল–“নইমুদ্দীন শেখ!”
বিস্ময়ে বাবু আবার বলিল–“নইশ শেখ! তোমরা হিন্দু একজন বামুনের মেয়ে, আর একজন শূদ্র। যাচ্ছো কোথায় জান না! যে নিয়ে যাচ্ছে সে মুসলমান!”
চিৎকার করিয়া বাবু ডাকিল–“পুলিশ পুলিশ!”
অবিলম্বে দুইজন সিপাহী এসে সেখানে উপস্থিত হল। মূর্তি তাদের অতি ভয়ানক। অন্তর তাহাদের কত কাল তা কে জানে।
অনেক লোক রমা ও নিহারের চারিদিকে দাঁড়াইয়া গেল। এমন সময় নইমুদ্দীন এসে সেখানে উপস্থিত। সিপাই রাহেন কহিল–“শালা, দুই দুইটি মেয়েকে বের করে নিয়ে পালাচ্ছে!”
নইমুদ্দীন থতমত খাইয়া গেল। কে কি উত্তর দিবে, বুঝিতেছিল না। রমা ও নিহার কাদিতেছিল। অবিলম্বে একখানা কাপড়ে নইমের হাত বাঁধা হয়ে গেল।
কমলাপুরের সাব-ইন্সপেক্টর সুরেন বাবু রাগে জ্বলে গেলেন। মুসলমানেরা এত বড় স্পর্ধা! তিনি হুকুম দিলেন, “গারদ-ঘরে শালার দাড়ি ধরে একেবারে হাড় ভেঙ্গে দাও। বিচারে, যা হয় হবে! চাকরির পরোয়া সে করে না।“
সুরেন নিজ ব্যয়ে রমা ও নিহারের বাড়িতে তার করে দিলেন। জাতি যাবার ভয়ে তারা কেউ এলেন না! বাড়ি হতে যে মেয়ে বেরিয়ে যায়, তার সন্ধান নেওয়া ঘোর অপমানের কথা, তা সুরেন বাবু ভুলে গিয়েছিলেন।
শ্রীঘ্র রমা ও নিহারকে সাক্ষী, করে নইমুদ্দীনকে সুরেন বাবু চালান দিলেন।
হাকিমের সম্মুখে রমা ও নিহার বলিল, “তারা স্ব-ইচ্ছায় নইমুদ্দীনকে সঙ্গে যাচ্ছে। তাতে কাহারো বাধা দিবার ক্ষমতা নাই।” হাকিম পরদিন নইমদ্দীনকে মুক্তি দিলেন। আইনে তাকে বাধা দিবার ক্ষমতা ছিল না। রাত্রিতে গারদ–ঘরে রমা ও নিহারের সকল গৌরব ও সকল মর্যাদা চুরি হয়ে গিয়েছিল।
নইমুদ্দীনের চোখের সম্মুখে এই ভয়ানক অত্যাচার হয়ে গেল। হিন্দু হলেও তারা যে নইমুদ্দীনের নাতিনী! একটা অতি ভয়ানক মানসিক বেদনাময়, পুলিশের ভীষণ প্রহারে ও অপমানে নইমুদ্দীনের সেই দিন মনের অবস্থা অত্যান্ত খারাপ ছিল।
সে ক্ষিপ্ত শৃগালের মতো নদীর কূল দিয়ে রমা ও নিহারকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। অমাবস্যার রাত্রি। বনপথে গভীর নিবিড় আঁধার। তারা স্টীমারঘাটে যাচ্ছিল। হঠাৎ নইমুদ্দীনের মাথায় এক প্রচণ্ড আঘাত পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে দুইটি বলবান হিন্দু যুবক রমা ও নিহারের হাত ধরে আঁধারের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।