স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৩. দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হোন

স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৩. দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হোন

২৩. দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হোন

দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়ার মতো আনন্দময়, সুখময় কাজ আর পৃথিবীতে নেই। একজনের হাসির আর আনন্দের অংশীদার হওয়ার মানেই হল মানুষের জীবনের সুখ আনার চাবিকাঠি। এই ব্যাপার গবেষণা করার জন্য সি. জি. ওডহাইস নামে একজন ব্যক্তি ২৫০ জন দম্পতির এক সমীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর মতে, দাম্পত্য জীবনের সাফল্যের মূল কথাই হল পরস্পরের সান্নিধ্য লাভ। আসল কাজ হল পরস্পরের গভীর ভালবাসা, ছোট ছোট স্বার্থ ত্যাগ, আর সুন্দর ধারণা গড়ে তোলা। সুলভ সস্তা আবেগ আর স্বার্থপরতা ত্যাগ সবচেয়ে ভালো কাজ একথা সকলেরই স্মরণে রাখা উচিত। যে স্ত্রী স্বামীর প্রিয় কাজে অংশ নেয় তার সান্নিধ্য হয় অনেক প্রবল আর জোরালো।

হ্যারি সি. এই স্টেনমেজ তার পত্রিকা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’তে লিখেছিলেন, একজন সঙ্গীর পছন্দ প্রবন্ধ সম্পর্কে। তাতে তিনি বলেন, যে কোনো বিবাহিত জীবনের সাফল্য সঙ্গীর সঙ্গে তার পছন্দ-অপছন্দ আর অভ্যাসের মিলের উপরেই নির্ভর করে।

অতীতের মিশরের ভুবন বিখ্যাত সুন্দরী ক্লিনিক্যাল মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে সম্ভবত কোনো রকম ধারণা ছিল না। ক্লিওপেট্রা শুধু সুন্দরীরই ছিলেন, আনন্দে অংশ গ্রহণ করার ক্ষমতা তার একেবারেই ছিল না। তার রূপ শুধু পুরুষকে আকর্ষণ করে পতঙ্গের মতো পুড়িয়ে মারত। ক্লিওপেট্রার শেষ দিকের প্রেমিক রোমান বীর মার্ক অ্যান্টনী মাছ ধরতে ভালবাসতেন। এই ক্লিওপেট্রা একবার মাছ ধরার উৎসবের ব্যবস্থা করে অ্যান্টনীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অ্যান্টনী অনেক সময় ধরে চেষ্টা করেও বঁড়শীতে মাছ গাঁথতে পারলেন না। ক্লিওপেট্রার আদেশে তাঁরই একজন ক্রীতদাস পানিতে ডুবে বঁড়শীতে বড় একটা মাছ আটকে দিয়েছিল। আসল উদ্দেশ্য ছিল স্বামীর মনোরঞ্জন করা। মাঝে মাঝে ক্লিওপেট্রা অ্যান্টনীর আনন্দের ভাগীদার হওয়ার জন্য সাধারণ পোশাক পরতেন। একবার ভেবে দেখুন তো; ক্লিওপেট্রার মতো ক’জন স্বামীর বঁড়শীতে মাছ গেঁথে দিতে পারবেন? স্বামীর মন রাঙানোর জন্য সাধারণ পোশাক পরতে পারেন। এই ধরণের কিছু অসুখী, গলফ খেলতে অভ্যস্ত, স্বামীদের স্ত্রীর কথা আমার জানা আছে। সেই সব স্ত্রীর অভিযোগ তাদের স্বামীর বাকি সপ্তাহ শেষের ছুটির দিনগুলো গলফ খেলার মাঠেই কাটান।

এটা প্রমাণিত সত্য যে, যে সব স্ত্রীরা স্বামীদের অবনত আর অলস মুহূর্তকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারেন, তাঁরা নিজেরা কখনও অবহেলার শিকার হন না।

মিসেস ফ্রান্সিস শট, ৫০৮ রোল্যান্ড স্ট্রীট, নিউইয়র্কের বাসিন্দা। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় তিনি কিছুটা অসুখী ছিলেন। কারণ তার স্বামী বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতেন আর মিসেস শট চাইতেন তার স্বামী যেন বাড়িতেই থাকেন। শেষ পর্যন্ত মিসেস শট তার স্বামীর মতের বিরুদ্ধ কিছুই করতেন না।

মি. শট হৈ-হল্লা ভালবাসতেন। মিসেস শট তাই ঘরকে চমৎকার করে সাজিয়ে রাখতেন যাতে তার স্বামী বাইরে কাটানোর সময় লোকজনদের নিয়ে ঘরে সময় কাটাতে পারেন। এই কৌশল বেশ কাজে লাগে।

মি. শট বিনোদনের জন্য ঘরমুখো হয়ে পড়েন। এরপর অবস্থা হয় যে, মিসেস শট শত চেষ্টা করেও ঘরের বাইরে স্বামীকে পাঠাতে পারতেন না। মিসেস শট তার নিজের প্রচেষ্টা দিয়ে স্বামীর অন্যতম সঙ্গিনী আর পরিচালিকা হয়ে ওঠেন। আপনিও চেষ্টা করুন, আপনার স্বামীর সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে ওঠার।

আসলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে সমব্যথী আর সমদর্শী হতে পারলে দাম্পত্য জীবনের বহু সমস্যারই সমাধান সম্ভব হয়।

গল্পের বিষয়:
উপন্যাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত