ঘনাদাকে কী করে পেলাম
একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়।
ঘনাদাকে কোথায় পেলেন?
কোথায় আবার? পেয়েছি নিজেরই মধ্যে, আপনাদের সকলের মধ্যেও।
বলাই বাহুল্য, উত্তরটা সকলকে খুশি করে না। কিন্তু কথাটা নির্ভেজাল সত্যি নয় কি?
আজ বলে নয়, মানুষের মুখে যখন থেকে কথা ফুটেছে তখন থেকেই বাহাদুরি নিতে বাড়িয়ে বলা বানিয়ে বলা তার শুরু হয়েছে, সন্দেহ নেই। সেই কোন আদ্যিকালে প্রথম যে গোদা লেজ-খসা গেছে বাঁদর গাছের ডাল ছেড়ে মাটিতে নেমে একটু খাড়া হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করে দু-এক পা হেঁটেই মাটিতে কেতরে পড়েছিল, সেও বোধহয় তার সঙ্গী-সাথীদের কিছু অঙ্গভঙ্গি আর কিচির-মিচির ঘোঁৎঘোঁতানি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল যে চার পায়ের বদলে দু পায়েই সোজা হয়ে দাঁড়ানো আর হাঁটা তার কাছে দাঁত কিড়মিড়ির মতোই সোজা।
ঘনাদাকে পাবার জন্যে খুব বেশি খোঁজাখুঁজির হয়রানি তাই হয়নি। মানুষের চিরকেলে স্বভাবই নতুন কালের ধড়াচূড়া পরে ঘনাদা হয়ে বেরিয়ে এসেছেন।
তা, ঘনাদা তো আসর জমাতে খাস ভূমিকায় নিজেই মুল গায়েন হয়ে বিজ্ঞানের ধোঁয়ায় ফাঁপানো সব গালগল্প শোনান। তারপর আবার তস্য তস্য কী ও কেন?
দুকথায় সহজ করে বলতে চাইলে বলতে হয়, প্রথমটায় বিজ্ঞানের রহস্য যদি প্রধান হয় তাহলে দ্বিতীয়টায় ইতিহাসের।
ঘনাদার নিজের বাহাদুরি গল্প লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে তস্য তস্য নিয়ে মাতবার আসল কারণটাও তাহলে কবুল করি।
আসল কারণ হল এই যে, নিজের যা ভাল লাগে, নিজে যাতে যা আনন্দ পাই স্বাভাবিকভাবে পাঠকদেরও করতে চাই তার ভাগীদার।
আবিষ্কার উদ্ভাবন আর সন্ধানের দুঃসাহসিক বৈচিত্র্যে আমাদের এই শতাব্দীর প্রথম থেকেই বিজ্ঞানের রহস্য রোমাঞ্চ উত্তেজনায় স্পন্দমান।
নিজে যা অনুভব করি বিজ্ঞানের জগতের সেই রহস্য রোমাঞ্চ বিস্ময়ের স্বাদ পাঠকদেরও কিছু দিতে পারি কি না দেখবার জন্যই একটু কৌতুকের সুর মিশিয়ে ঘনাদাকে আসরে নামানো।
বিজ্ঞানের মতো ইতিহাসের রহস্য রোমাঞ্চ উত্তেজনা বড় কম নয়, তার প্রত্যক্ষ স্বাদ নিতে আর দিতে কার শরণ নেব? সত্য যেখানে কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর ও বিশ্বাসের অতীত, পৃথিবীর ইতিহাসের সেই সব আশ্চর্য অধ্যায়ের জীবন্ত পরিচয় পাবার জন্য এবারে ফিরে গেলাম তস্য তস্য অর্থাৎ ঘনাদারই নানা ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষদেরই কাছে।
–প্রেমেন্দ্র মিত্র