হীরকাঙ্গুরীয়: ১৩. এখন বুঝতে পারছি

হীরকাঙ্গুরীয়: ১৩. এখন বুঝতে পারছি

১৩. এখন বুঝতে পারছি

এখন বুঝতে পারছি, কিরীটী বলে, বেগম সাহেবা তো তাঁকে অর্থসাহায্য করতেনই এবং আপনিও করতেন।

দিয়েছি, নিশ্চয়ই দিয়েছি কিন্তু ও যে জাহানের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে বা নিচ্ছে, যদি একবারও জানতাম—এখন বুঝতে পারছি

কি বলুন তো!

ও আমার সর্বনাশ করবার জন্য সব দিক দিয়ে বদ্ধপরিকর হয়েছিল—

নবাব সাহেবের কথাটা শেষ হলো না।

বাধা পড়লোবোরখায় আবৃতা মেহের পুনরায় ঘরে এসে প্রবেশ করে নবাব সাহেবের সামনে ট্রে ধরল।

ট্রেতে কাঁচের গ্লাসে পূর্বের মত সোনালী তরল পদার্থ।

কিরীটীর মনে হলো যেন ঠিক ঐ সময়—ঐ মুহূর্তে ঐ পানীয়ের জন্য নবাব সাহেব প্রস্তুত ছিলেন না। ঐ সময় ঐ পানীয় যেন অপ্রত্যাশিত—একটু যেন থতমত খেয়ে গেলেন।

পানীয়া গ্রহণ করবেন কি করবেন না সে কারণে যেন খানিকটা দ্বিধাও প্রকাশ পায়। তারপরই মনে হলো মেহের যেন চাপা স্বরে নবাব সাহেবকে কি ফিস ফিস করে বললে।

নবাব সাহেব বারেকের জন্য একবার আড়চোখে—যেন মনে হলো ঘরের মধ্যে বিশেষ করে প্রশ্নকারী কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন, তারপর হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা তুলে নিয়ে এক চুমুকে পানীয়টা নিঃশেষ করে গ্লাসটা আবার ট্রের উপরে নামিয়ে রাখলেন।

মেহের পুনরায় ধীর পদে ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেল।

ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা।

মিঃ চ্যাটার্জী—মানিকবাবু—

নবাব সাহেবের ডাকে চ্যাটার্জী মুখ তুলে তাকালো।

আমার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন—এবারে যদি আপনারা এ ঘর থেকে যান তো আমি একটু বিশ্রাম নিতে পারি–

নিশ্চয়ই। আপনাকে আমরা আর বেশীক্ষণ বিরক্ত করব না নবাব সাহেব—আর দু-চারটে কথা আমাদের জানবার আছে, জানা হলেই আপাতত আপনাকে আর আমাদের প্রয়োজন হবে না।

কিরীটী কথাগুলো বললে।

নবাব সাহেব কিরীটীর মুখের দিকে পুনরায় তাকালেন।

কাল রাত্রে কখন আপনি হলঘর থেকে বের হয়ে আসেন?

আমি?

হ্যাঁ।

তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম—বোধ হয় তখন রাত দশটা হবে–

আপনি যখন হলঘর থেকে উঠে আসেন ছোট বেগম সাহেবা তখন সে ঘরে তাহলে একাই বসে গান গাইছিলেন?

হ্যাঁ।

গানের মাঝখানে উঠে চলে এলেন, বেগম সাহেবা কিছু বলেননি?

না—সে-ই তো বলেছিল উঠে আসতে–

হুঁ–আচ্ছা বাইরে দাসী মোতিকে আপনি বসে থাকতে দেখেছিলেন কি ঐ সময়?

ঠিক লক্ষ্য করিনি।

ফিরে এসে আপনি কি করলেন?

শুয়ে পড়ি।

সঙ্গে সঙ্গেই?

হ্যাঁ।

মেহের তখন কোথায় ছিল?

মেহের—মেহের আমার ঘরেই ছিল।

রাত্রে বুঝি মেহের আপনার ঘরেই থাকত?

হ্যাঁ—মানে–না, মেহের আমার ঘরে থাকবে কেন?

তবে সে কোথায় থাকত?

মেহের তো নীচের মহলেই একটা ঘরে থাকে।

আচ্ছা নবাব সাহেব—বেগম সাহেবাদের কোন মাসোহারার ব্যবস্থা নেই?

আছে বৈকি।

কত করে পেতেন তাঁরা?

সবাই মাসে হাত-খরচ পাঁচশো টাকা করে পায়—তাছাড়া প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট একটা করে আছে।

জাহানারা বেগমের সেই অ্যাকাউন্টে বোধ হয় সবার চাইতে বেশী টাকা ছিল?

হ্যাঁ।

কত আন্দাজ হবে?

তা লাখ খানেক হবে।

অত টাকা আপনি দিয়েছিলেন?

না–দিয়েছিল আমার ফুপু–আসগরী বেগম–তার ব্যক্তিগত বহু টাকা ছিল পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। মরবার আগে সাত মাস ফুপু প্যারালিসিস হয়ে পড়ে ছিল। সেই সময় জাহান তাকে সেবা করেছিল।

তাতেই বুঝি তিনি ঐ টাকা তাঁকে দিয়ে যান?

হ্যাঁ–তাই তো শুনেছি।

আপনার ব্যাক্তিগত অ্যাকাউন্টে কত টাকা হবে?

কত আর, দশ বিশ হাজার থাকে তো যথেষ্ট–ব্যবসায়ে টাকা খাটে—আসে যায়—

কিসের ব্যবসা আপনার?

প্রধানত কয়লার খনি—

আপনার কয়লার খনি আছে?

হ্যাঁ—দুটো।

আগের পর্ব :

০১. বাইরে ঝম্‌ ঝম্ করে বৃষ্টি
০২. বারান্দার শেষপ্রান্তে
০৩. বাইরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
০৪. মানিক চাটুয্যেই প্রথমে কথা বলে
০৫. মোতির চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠে
০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব
০৭. তোমার নাম মোতি
০৮. তুমি যে বলছিলে
০৯. কিরীটী একটু থেমে
১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা
১১. বাথরুম দুটির মধ্যে একটি
১২. নবাব সাহেব সেই পদশব্দে
পরের পর্ব :
১৪. রোশন আলী আপনার ছেলে
১৫. নবাব সাহেব প্রশ্ন করেন
১৬. মেহেরউন্নিসার দিকে তাকিয়ে
১৭. মোতির কথাটা শেষ হল না

গল্পের বিষয়:
উপন্যাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত