হীরকাঙ্গুরীয়: ১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা

হীরকাঙ্গুরীয়: ১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা

১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা

বারান্দার এক কোণে ফোনটা এমনভাবে এবং এমন জায়গায় রাখা যে চট্ করে কারো চোখে পড়ে না।

ফোনটা কিরীটী পরীক্ষা করে দেখলো—একেবারে ডেড়, কোন শব্দই নেই তখনো।

কিরীটী সৌরীন কুণ্ডুর দিকে তাকাল, কখন আপনি প্রথম জানতে পারেন সৌরীনবাবু। যে ফোনটা আউট অফ অর্ডার?

কাল বিকালেই ছোট বেগম সাহেবা আমাকে জানান এবং বলেন, অফিসে একটা কমপ্লেন করতে।

মানে জাহানারা বেগম?

হ্যাঁ।

আচ্ছা সৌরীনবাবু, এই বাড়িতে পর্দার ব্যাপারটা কি রকম মানা হয়, সবাই পদানশিন কি?

সবাই, তবে—

তবে?

ছোট বেগম সাহেবা পদার ব্যাপারটা তেমন মানতেন না।

সকলের সঙ্গেই বুঝি তিনি কথা বলতেন?

সকলের সঙ্গেই।

খুব স্বাধীনচেতা ছিলেন বোধ হয়?

তাই–হুটহাট করে যখন যেখানে খুশি বেরুতেন, যা এ বাড়ির অন্যান্য বেগমরা আদৌ করেন না।

নবাব সাহেব নিশ্চয়ই খুব রক্ষণশীল মানুষ?

খুবই—তাহলেও ছোট বেগম সাহেবার ব্যাপারে তাঁর খুব একটা কনট্রোল ছিল বলে মনে হয় না।

আচ্ছা কুণ্ডু মশাই, একটা কথা—

বলুন। নবাব সাহেবের ঐ ভাগ্নে মানে আমাদের নাসির হোসেন সাহেব—ওঁর প্রতি নবাব সাহেবের মনোভাবটা ঠিক কেমন জানেন কিছু?

খুব প্রীতির বলব না, তবে—

তবে?

সুলতানা বেগম সাহেবার যে কারণেই হোক তাঁর ভাইয়ের প্রতি একটা হোল্ড আছে যে জন্য ঐ ভাগ্নেটির এ গৃহে বিশেষ একটা প্রতিপত্তি আছে।

হোল্ড থাকার কারণ তাহলে আপনার জানা নেই?

না, তবে মনে হয় নবাব সাহেব তাঁর বোনকে যেন একটু ভয় ও সমীহ করেন।

হুঁ—আচ্ছা নাসির হোসেন সাহেবের সিনেমার ছবি তৈরীর ব্যাপারে নবাব সাহেবের—

সহযোগিতার কথা বলছেন তো-খুব বেশীই আছে— তাই নাকি?

হ্যাঁ।

কিন্তু কেন?

তার কারণ নবাব সাহেবের এ বয়সেও একটা ব্যাধি আছে।

স্ত্রীলোকের উপরে দুর্বলতা বোধ হয়? কিরীটী মৃদুকণ্ঠে বলে কথাটা।

আপনি ধরেছেন ঠিক।

কিরীটী মৃদু হাসল।

ভাল কথা, নবাব সাহেব তো তাঁর ঘরেই আছেন?

হ্যাঁ।

এই দুর্ঘটনার ব্যাপারে খুব upset হয়ে পড়েছেন নাকি?

স্বাভাবিক, কারণ জাহানারা বেগম বলতে তো নবাব সাহেব একেবারে পাগল ছিলেন।

হুঁ–চলুন ঘরে যাওয়া যাক।

দুজনে এসে আগের ঘরে আবার প্রবেশ করল।

মানিক চাটুয্যে একাই ঘরে ছিলেন।

নাসির হোসেন সাহেব কই? কিরীটী প্রশ্ন করে।

তাঁর ঘরে গেছেন।

চলুন, তাহলে একবার নবাব সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আসা যাক।

কিরীটীকে সঙ্গে নিয়ে অতঃপর মানিক চাটুয্যে নবাব সাহেবের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়।

দোতলারই একটা অংশে দুখানা বড় বড় ঘর নিয়ে নবাব সাহেব থাকেন। বাব সাহেবের ঘরের একদিকে লাইব্রেরী-ঘর, অন্যদিকে যে দুখানা পর পর ঘর সেখানেই তিনি থাকেন।

ঘরের সংলগ্ন দুদিকে দুটি বাথরুম।

বড় বেগম সাহেবা নবাব সাহেবের পাশের ঘরেই থাকেন।

আগের পর্ব :

০১. বাইরে ঝম্‌ ঝম্ করে বৃষ্টি
০২. বারান্দার শেষপ্রান্তে
০৩. বাইরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
০৪. মানিক চাটুয্যেই প্রথমে কথা বলে
০৫. মোতির চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠে
০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব
০৭. তোমার নাম মোতি
০৮. তুমি যে বলছিলে
০৯. কিরীটী একটু থেমে
পরের পর্ব :
১১. বাথরুম দুটির মধ্যে একটি
১২. নবাব সাহেব সেই পদশব্দে
১৩. এখন বুঝতে পারছি
১৪. রোশন আলী আপনার ছেলে
১৫. নবাব সাহেব প্রশ্ন করেন
১৬. মেহেরউন্নিসার দিকে তাকিয়ে
১৭. মোতির কথাটা শেষ হল না

গল্পের বিষয়:
উপন্যাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত