হীরকাঙ্গুরীয়: ০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব

হীরকাঙ্গুরীয়: ০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব

০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব

প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব—শুধু আলী কেন?

সকলে এসে দোতলাতেই আলী সাহেবের সোবার ঘরের পাশে বসবার ঘরে ঢুকল।

এ ঘরটি কিন্তু আধুনিক আসবাবপত্রে সজ্জিত। রুচি ও পরিচ্ছন্নতার প্রকাশ সর্বত্র যেন।

মানিকবাবু—

কিরীটীর ডাকে নানিক চাটুয্যে ওর মুখের দিকে তাকাল।

কিছু বলছেন?

হ্যাঁ।

কি বলুন?

একবার আপনাদের দাসী কুলসমকে ডাকবেন?

কুলসম?

হ্যাঁ।

মানিক চাটুয্যে বাইরে গিয়ে ঘরের একজনকে ডেকে কুলসমকে ঐ ঘরে পাঠিয়ে দিতে বলে দিয়ে এল।

একটা বড় সোফায় কিরীটী বসে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছিল।

এ বাড়ি—এর ঐতিহ্য ও সব কিছুর সঙ্গে যেন এ ঘরের কিছুরই খাপ খায় না—যেন স্বতন্ত্র রীতিমত একটা পার্থক্য আছে।

মিঃ রায়—

বলুন।

আমার কিন্তু মনে হয়—এ হত্যার ব্যাপারটা বাইরের কারোর দ্বারা সংঘটিত হয়নি।

আপনি বলতে চান বাড়ির মধ্যে কেউ—

হ্যাঁ—আপনার কি মনে হয়?

সম্ভবত তাই। মৃদুকণ্ঠে কিরীটী কথাটা বলে।

নচেৎ কাল সারাটা রাত ধরে যে ঝড় চলেছে—ঐ দুর্যোগের মধ্যেও কারও—মানে কোন বাইরের কারও এখানে এসে–

কিরীটী কথাটা শেষ করে, হত্যা করে যাওয়াটা তো অসুবিধা নয় বরং আরো সুবিধাই ছিল। মনে করুন—ঐ দুর্যোগের মধ্যে কেউ এসে হত্যা করে গেলে তার আসা-যাওয়ার সময় চট করে কারো নজরে পড়ত না।

কিন্তু–

তাছাড়া বাইরে থেকে জলসাঘরের যে জানলাটা খোলা আছে দেখে এলাম—সেই জানলা পথে ভেতরে প্রবেশ করাটাও খুব সহজ। বাইরে ঐ সময় পদশব্দ শোনা গেল। বৃদ্ধ ভৃত্য দেলোয়ারের সঙ্গে কুলসম এসেছে। মানিক চাটুয্যে ঘরের বাইরে গিয়ে কুলসমকে ভিতরে নিয়ে এল সঙ্গে করে। কিরীটী তাকাল। বোরখা নেই মুখে।

মেয়েটি সুন্দরী সন্দেহ নেই কিন্তু আরশিতে দেখা চকিত সেই মুখখানি নয়। চোখের তারা দুটোতে বুদ্ধির দীপ্তি।

তোমার নাম কুলসম? কিরীটী প্রশ্ন করে।

জী হাঁ।

মাণিক বেগমের দাসী তুমি?

জী হাঁ।

জাহানারা বেগমের ফাইফরমাস কখনও তুমি খাটতে না?

জী না তো! কেন?

ছোট বেগম সাহেবারও দাসী আছে একজন—

কে সে? কি নাম তার?

কেন মোতি!

হুঁ—আচ্ছা কুলসম, এ বাড়িতে তুমি কতদিন কাজ করছ?

কমসে কম দশ সাল তো হবেই।

তবে তো অনেক দিন!

জী হাঁ—

তোমার মনিবান মানে মাণিক বেগম সাহেবাকে ছাড়া এ বাড়িতে সব চাইতে বেশী কাকে তোমার ভালো লাগত?

সে যদি বলেন তোজাহানারা বেগম সাহেবাকেই কথাটা বলতে বলতে গলার স্বরটা যেন কুলসমের রুদ্ধ হয়ে আসে। খুব ভালো ছিলেন বুঝি বেগম সাহেবা?

জী—অমন দিলদরিয়া মানুষ বড় একটা চোখে পড়ে না—তাকে যে কোন্ দুশমন এমন করে খুন করল!

এ বাড়ির সবাই তাকে ভালোবাসত, তাই না?

জী, তাকে ভাল না বেসে কেউ থাকতে পারত না। যেমন দিলদরিয়া তেমনি হাসিখুশি ছিল মানুষটা। কাউকে কখনো একটা চোখ রাঙিয়ে কথাও বলেনি হাসি যেন সর্বক্ষণ বেগম সাহেবার মুখে লেগেই থাকত।

কতদিন হল আলী সাহেব তাঁকে সাদী করেছেন? সেও তো দু সাল হয়ে গেল। বেগম সাহেবার বাপের বাড়িতে কে কে আছেন জান?

এক বুড়ী মা—আর একটা মাতাল গাই—গরীব-ভীষণ গরীবনবাব সাহেবই তো বরাবর তাদের সাহায্য করে আসছেন।

কোথায় তারা থাকে?

শুনেছি মেটিয়াবুরুজ।

আচ্ছা কুলসম?

জী–

এ বাসায় বেশ সুন্দর দেখতে অল্পবয়েসী আর কোন মেয়েছেলে আছে?

জী–মনে হল কুলসম কী বলতে গিয়েও নিজেকে যেন সামলে নিল এবং সঙ্গে সঙ্গে বললে, না—আর কে থাকবেনবাব সাহেবের তিন বেগম সাহেবা আর আমরা দাস-দাসী-আর–

আর—আর কে আছে?

কুণ্ডু বাবু–সিরিটারী বাবু—

তাহলে আর কেউ নেই?

না।

কিরীটীর মনে হল কুলসম যেন না কথাটা বলতে গিয়ে একটু কেমন দ্বিধা করল।

আচ্ছা, তুমি যেতে পারমোতিকে একবার পাঠিয়ে দাও–

সেলাম সা—

কুলসম চলে গেল।

অতঃপর জাহানারা বেগমের খাস দাসী মোতি এল।

মোতির বয়স ত্রিশের নীচে নয়। রোগা পাতলা চেহারা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। চোখেমুখে একটা বোকা-বোকা ভাব।

আগের পর্ব :

০১. বাইরে ঝম্‌ ঝম্ করে বৃষ্টি
০২. বারান্দার শেষপ্রান্তে
০৩. বাইরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
০৪. মানিক চাটুয্যেই প্রথমে কথা বলে
০৫. মোতির চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠে

পরের পর্ব :
০৭. তোমার নাম মোতি
০৮. তুমি যে বলছিলে
০৯. কিরীটী একটু থেমে
১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা
১১. বাথরুম দুটির মধ্যে একটি
১২. নবাব সাহেব সেই পদশব্দে
১৩. এখন বুঝতে পারছি
১৪. রোশন আলী আপনার ছেলে
১৫. নবাব সাহেব প্রশ্ন করেন
১৬. মেহেরউন্নিসার দিকে তাকিয়ে
১৭. মোতির কথাটা শেষ হল না

গল্পের বিষয়:
উপন্যাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত