০২. বারান্দার শেষপ্রান্তে
বারান্দার শেষপ্রান্তে পূর্বদিকে বিরাট চওড়া সিঁড়ি উঠে গেছে। সাদা কালো পাথরে বাঁধানো সিঁড়ি। অদ্ভুত স্তব্ধ যেন বাড়িটা। মনে হয় যেন একটা কবরখানা বুঝি!
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কিরীটী প্রশ্ন করে, এ বাড়ির মালিক কে?
বৃদ্ধ নবাব আসগর আলী সাহেব।
আসগর আলী!
হ্যাঁ—এরা লক্ষ্ণৌর নবাব বংশেরই একটা শাখা। মানিক চাটুয্যে বলে।
কি রকম?
তিন পুরুষ আগে লক্ষ্ণৌ থেকে এরা চলে এসে প্রথমে মেটেবুরুজে বসবাস করেছিল কিছুদিন; তারপর এসে এই মতিমঞ্জিল তৈরী করে—মানে ঐ আলী সাহেবের ঠাকুদা—অবশ্য তারও তখন প্রৌঢ় বয়স।
অনেক বছর আগে নিশ্চয়ই? কিরীটী প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ-লর্ড ক্যানিং-এর আমলে সেটা।
হুঁ–তা ঐ নবাব আলী সাহেবের কে কে আছেন?
আপনার বলতে এক ভাগ্নে—আর তিন বেগম—
কোন ছেলেপিলে কিছু নেই? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।
ছেলে এক ছিল।
বেঁচে নেই বুঝি?
আছে তবে বাপের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
সম্পর্ক নেই মানে?
হ্যাঁ—সে বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে বহুদিন পৃথক হয়ে গিয়েছে।
কোথায় থাকে সে? এই শহরেই কি?
হ্যাঁ—এই শহরেই—মেটেবুরুজে।
বয়স কত তার?
তা শুনেছিলাম ত্রিশ-বত্রিশ হবে রোশন আলী নাম—নামটা হয়ত আপনি শুনে থাকবেন বিখ্যাত সেতারিয়া রোশন আলী।
কিরীটী তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, আরে রোশন আলীকে তো আমি খুব ভালভাবে চিনি, অতি চমৎকার সজ্জন ব্যক্তি যেমন চেহারা তেমনি ব্যবহার।
আমি অবিশ্যি তাকে চিনি না।
পরিচয় কোরো—চমৎকার সেতারিয়া। কিরীটী বললে, রোশন সাহেব যাকে বিয়ে করেছেন সেও তো নামকরা শিল্পী
আলী সাহেবের এক বেগমও তো এককালে নামকরা নৃত্যশিল্পী ছিল।
নৃত্যশিল্পী?
হ্যাঁ। নৃত্যশিল্পী মণিকাদেবীর নাম শোনেননি?
হ্যাঁ শুনেছি, কিন্তু সে তো ছিল ব্রাহ্মণের মেয়ে। কিরীটী বলে।
সেই–
ভাল কথা—মণিকাদেবী হঠাৎ বছর কয়েক আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন না?
নিখোঁজ আর কি বম্বেতে পালিয়ে গিয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে ঐ আলী সাহেবকে বিয়ে করে।
বটে! তা বয়সের তো অনেক তফাৎ হবে দুজনের মধ্যে?
তা তো হবেই—তা সেই বেগমও কি
এখানেই আছে।
আর কে আছে এখানে?
কে আর–তিন বেগম, নবাব সাহেব ও তস্য ভাগ্নে ছাড়া আর কেউ নেই এ বাড়িতে আপনার জন বলতে। আছে চাকরবাকর ড্রাইভার—ভাল কথা, ভুলে গিয়েছিলাম, আরো একজন আছে—দাস-দাসী অবিশ্যি—
আরো একজন?
হ্যাঁ। সৌমেন কুণ্ডু নামে এক ভদ্রলোক—ইয়ং ম্যান বয়স ত্রিশ-বত্রিশের মধ্যে হবে।
তিনি এখানে কি করেন? কিরীটী প্রশ্ন করে।
বলতে পারেন আলী সাহেবের সে-ই সব দেখাশোনা করে সেক্রেটারী—পরামর্শদাতা সব কিছু।
ইতিমধ্যে ওরা কথা বলতে বলতে দীর্ঘ সিঁড়ি অতিক্রম করে দোতলায় পৌঁছে গিয়েছিল।
নীচের তলার মত উপরের তলাতেও একটি প্রশস্ত টানা বারান্দা। একটা দিকে ঘর পর পর—অন্য দিকে কাঠের ঝিলিমিলি বাতাস ও আলো আসার বলতে গেলে কোন পথই নেই। বোধ করি নবাবী আব্রুর জন্যই ঐ সাবধানতা।
বারান্দায় কিছু কিছু শ্বেতপাথরের মূর্তি এখানে-ওখানে দাঁড় করানো।
আগের পর্ব :
পরের পর্ব :
০৩. বাইরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
০৪. মানিক চাটুয্যেই প্রথমে কথা বলে
০৫. মোতির চিৎকারে বাড়ির সবাই জেগে উঠে
০৬. প্রয়োজন বুঝলে সবার সঙ্গেই দেখা করব
০৭. তোমার নাম মোতি
০৮. তুমি যে বলছিলে
০৯. কিরীটী একটু থেমে
১০. বারান্দার এক কোণে ফোনটা
১১. বাথরুম দুটির মধ্যে একটি
১২. নবাব সাহেব সেই পদশব্দে
১৩. এখন বুঝতে পারছি
১৪. রোশন আলী আপনার ছেলে
১৫. নবাব সাহেব প্রশ্ন করেন
১৬. মেহেরউন্নিসার দিকে তাকিয়ে
১৭. মোতির কথাটা শেষ হল না