৭. থানা থেকে একজন
থানা থেকে একজন এ. এস. আই. ও জনাতিনেক কনস্টেবলকে অন্নপূর্ণা রেস্তোরাঁয় ভূপতিচরণকে গ্রেপ্তার করতে পাঠিয়ে দিয়ে কিরীটী ও বিকাশ নিজেরা গেল ন্যায়রত্ন লেনের বাসার দিকে সোজা।
রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ বিকাশ ও কিরীটী সাধারণ বেশেই এসে ভিষগরত্নের সদর দরজায় ধাক্কা দিল।
দ্বিপদ এসে দরজা খুলে দিল চোখ মুছতে মুছতে।
কবিরাজ মশাই আছেন?
হ্যাঁ—উপরে ঘুমোচ্ছেন।
যাও, তাঁকে ডেকে নিয়ে এসো গে। বলল এক ভদ্রলোক বিশেষ জরুরী কাজে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
একটু পরেই খড়মের খট খট শব্দ শোনা গেল।
খালিগায়ে কবিরাজ ভিষগরত্ন ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলেন, ব্যাপার কি মশাই!
আপনার ডিসপেনসারী সার্চ করবো। ওয়ারেন্ট আছে, আমি থানা থেকে আসছি। বিকাশ রায়ই বললেন।
কবিরাজ মশাই তখন ফ্যালফ্যাল করে কিরীটীর মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। এবং বিকাশের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে কিরীটীকেই সম্বোধন করে বললেন, আমাদের রায় মশাই না?
আজ্ঞে হ্যাঁ। চিনতে পেরেছেন দেখছি তাহলে!
হ্যাঁ। এসবের মানে কি?
ওঁর মুখেই তো শুনলেন। কিরীটী জবাব দেয়।
কিন্তু কেন, তাই তো জিজ্ঞাসা করছি।
সে-কথাটা ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন না।
জিজ্ঞাসা আর করতে হল না, বিকাশবাবুই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জবাব দিলেন, মুক্তাভস্ম বলে যে মূল্যবান বস্তুটি এখানে আপনার বিক্রি হয়, শুনলাম সেটার অন্য একটি পরিচয়ও আছে—অর্থাৎ আবগারীতে নিষিদ্ধ মাদক-পদার্থের লিস্ট অনুযায়ী যাকে বলা হয় কোকেন।
কোকেন! আমার এখানে? কবিরাজ মশাই যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
হ্যাঁ-কোকেন। কোথায় হে দ্বিজপদ, মুক্তাভস্মর যে প্যাকেটগুলো তোমাদের এখান থেকে চালান যায় সর্বত্র, সেগুলো বের কর তো বাবা!
মশাই কি রাত্রে ঘুম ভাঙিয়ে ডেকে এনে আমার সঙ্গে রসিকতা শুরু করলেন? ভিষগরত্ন বলেন।
অনেক রসিকতাই এই কবছর ধরে করেছেন কবিরাজ মশাই আমাদের সঙ্গে আপনি—এবারে আমরা একটু-আধটু যদি করিই! বিকাশ ব্যঙ্গোক্তি করেন।
জানেন, এ ধরনের অত্যাচার নীরবে আমি সহ্য করব না? কবিরাজ মশাই গর্জে ওঠেন।
হিসাবে একটু ভুল করছেন শশিশেখরবাবু। সুরমা দেবী ইতিপূর্বেই সব আমাদের কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন। এবং তিনি এখনো থানাতেই বসে আছেন।
মানে? কি বলছেন যা-তা?
এবারে কিরীটী কথা বললে, কবিরাজ মশাই, মহাভারতখানা আপনার নিশ্চয়ই পড়া ছিল, তবে এ ভুল করলেন কেন? শকুনির হাড়ের পাশা অমোঘ ছিল সত্য, কিন্তু সেই পাশাই কি শেষ পর্যন্ত শকুনির মৃত্যুর কারণ হয়নি? পাশার সাহায্যে যে কুরুক্ষেত্র রচিত হয়েছিল সেই কুরুক্ষেত্রেই কি শকুনিকেও শেষ নিঃশ্বাস নিতে হয়নি? আপনার সেই হাড়ের পাশা, সুরমা দেবীই সব স্বীকার করেছেন। অমোঘ সে হাড়ের পাশার দান—যখন একবার পড়েছে, আর তো তা ফিরবে না। অনেক দিন ধরে জুয়াখেলায় জিতে আসছিলেন, কিন্তু এবার আপনার হারবার পালা কবিরাজ মশাই!
কিরীটীর কথায় মুহূর্তে শশিশেখরের মুখের সমস্ত রক্ত কেউ যেন ব্লটিংপেপার দিয়ে শুষে নিল। নির্বাক স্থাণুর মত শশিশেখর দাঁড়িয়ে রইলেন।
তা ছাড়া পাঁচটা মাডার–
মার্ডার! কথাটা উচ্চারণ করে চমকে তাকালেন বিকাশ ও কিরীটীর মুখের দিকে।
হ্যাঁ। এ পাড়ার সব কটি মার্ডারের মূলেই কবিরাজ মশাইয়ের মুক্তাভষ্ম। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। যারা প্রাণ দিয়েছে তারাও এই মুক্তাভস্মেরই চোরাকারবারী ও অংশীদার ছিল। তাছাড়া আইন নিশ্চয়ই জানেন, মার্ডার ও abatement of murder দুটোরই শাস্তি পিনালকোডে একই ধারায়।
সত্যি নাকি!
হ্যাঁ, চলুন থানায় সব বুঝিয়ে দেবো।
আগের পর্ব :
১. কিরীটী একটা ঘর খুঁজছিল
২. ন্যায়রত্ন লেনে
৩. দিন পনের হলো
৪. রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা
৫. দুপুরের ট্রেনে
৬. কিরীটী বাসায় ফিরে এলো