৫ই মে ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতাপপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সাইফুল সেখ ও মাতা মেনুকা বিবি।তিনি ২০১৯ সালে বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের জন্য সাহিত্য রত্না উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি বর্তমান পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক ও লেখক। উল্লেখযোগ্য লেখাগুলি হল, অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড,আশ্চর্য ব্যাঙের বাচ্চা, প্রাচীণ বাড়ি,প্রেমের ছ্যাঁকা ইত্যাদি। ও তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল,আনন্দ পথ,থমথমপুর,আকাশ ছোঁয়া মন,ভালোবাসার পরশ ছোঁয়া ইত্যাদি। তাহাকে সাহিত্যের পাতায় নিয়ে আসেন বাংলার কাব্যরত্ন ওয়াশিম রাকিব। তিনি অত্যান্ত নিজের ছোট ভাই মনে করে সাহিত্যের পাতায় নাম লিখিয়ে দেন।
আনন্দ,বিলু,কমল ও সেলিম অল্পবয়সের তারা এখন রুকুনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি দেবে। সবাই একই ক্লাসে পড়াশোনা করে ছাত্রছাত্রী হিসেবে খারাপ না ভালো। গ্রামের ছেলে এর থেকে আর কি করবে মাঠে, ঘাটে খাটতে হয় বাবা কাকার সঙ্গে। অবশ্য বিলু মেয়ে মানুষ তাই সে ওদের থেকে রেজাল্ট ভালো করে প্রতিবছর। কারো মধ্য বিবাদ নেই যাকে বলে একে অপরের অন্তরঙ্গ কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না। বিকেল বেলায় সবাই খেলছে মল্লিক বাগাানে আছে অনেক ছেলেমেয়ে ও অভিজ্ঞ ব্যাক্তিরা কারণ গরমের সময়। এবং এখন তাদের স্কুল ছুটি আছে। এমন সময় বিলুু আসলো বাগানে ওদের কাছে। বিলু মনে মনে কমল কে ভালোবাসে তাই কমলের কাছে আগে গেলো কিন্তু কমল সহ কেউই জানে না যে বিলু কমল কে ভালোবাসে। চেহারাখানিও ভালো কমলের সুন্দর ও হিষ্ট পিষ্ট ছেলে। যাই হোক ওদিকের কথা বাদ দিই। বিলুু কমল কে ডেকে বলল এই শুনছিস এখন তো গরমে স্কুল ছুটি আছে তো বলছি কোথাও বেড়িয়ে আসি। বাবাকে বুুুঝিয়ে দেব। কমল বলল তো কোথায় যাবি। বিলু বলল সেটা না হয় সবাই বসে একদিন ঠিক করে নেব, হবে না। কমল বলল ঠিক আছে ওদের ডাকছি ওরা যদি যায় তবে না হয় সবাই মিলে যাওয়া যাবে। আনন্দ ও সেলিম খেলছিলো বাগানে ওদের ডাক দিতেই চলে আসলো। তখন কমল বলল এই শোন তোরা আজ বিকেলে আড্ডায় চলে আসিস কিছু জরুরী কথা আছে । ওদের আড্ডাখানা হল রানিদের একটা পড়ে থাকা ঘর। ওটা ওরা কোনো কোনো কাজ করে না তাই ওরা আড্ডাখানা বানিয়েছে। এই বলে কমল চলে গেলো বাড়ি, সঙ্গগে বিলুও।আর আনন্দ ও সেলিম খেলাধুলা শেষমেশ করে পরে বাড়ি গেলো।
বিকেল চারটা বাজে তখন যে যেখানে থাকুক না কেনো আড্ডায় আসবেই। তাতে করে আজ বিশেষ কথা আছে বলেছে কমল। বিলু আসলো, কমল আসলো ও শেষে আনন্দ,সেলিম ও রানি আসলো। রানি অবশ্য ওদের সঙ্গে বেশী সময় দিতে পারে না শুধু বিকেলের আড্ডায় আসে এবং নানান আলোচনা শোনে। প্রথমেই আনন্দ প্রশ্ন করলো কমল কে, কি বলবি বলছিলে বল।কমল বলল হ্যাঁ আমি বলছিলাম যে এখন তো গরমের ছুটি আছে স্কুলের সময় তো ফাঁকা। তাই বলছিলাম যে কোথাও বেড়িয়ে আসি তাতে আমাদের মনটা ভালো হয়ে যাবে। সেলিম বলল এতো ভালো কথা আমিও বলব বলব ভাবছিলাম কিন্তু সবাই যদি না যাই তার জন্য কাউকে বলিনি। রানি বলল ভালো সংবাদে তো মিষ্টিমুখ করতে হয় তাই না। বিলু বলে উঠল সে না হয় এক সময় মিষ্টিমুখ করা যাবে কিন্তু এখন তো আমাদের আলাপ আলোচনা করতে হবে।যে কোথায় যাব এবং বাবা মা পারমেশন দেবে কি না সেটাও তো দেখতে হবে তাই না। আনন্দ বলে উঠলো, তো কোথায় যাবি কিছু কি।ঠিক করলি নাকি। কমল বলল না না তোরা সবাই মিলে ডিসাইট কর কোথায় যাবি। কেউ কেউ বলল সুন্দরবনে যাব,আবার কেউ বলল মুর্শিদাবাদের লালাবাগ যাব, সেখানে অনেক ঐতিহাসিক জায়গা আছে। সেখানে নবাবদের নানান জিনিস আছে দেখা যাবে। তার সঙ্গে বিখ্যাত পার্ক মতিঝিল আছে বেড়ানো যাবে এবং আরো কত কি আছে একদিন দুদিনে ঘুরে দেখা যাবে না। কমল বলল ওটা তো প্রায় সবারই দেখা আছে একটা নতুন জায়গার নাম কর যাতে করে মন ফ্রী হবে প্লাস মজা হবে। তারা ভাবতে শুরু করল কিন্তু এমন কোনো জায়গা খুঁজে পেলো না। এবং কিছুক্ষণ পরে সেলিম বলল যাক ওসব বাদ দে। সে না হয় পরে ভাবা যাবে কিন্তু বাবা মায়ের কাছে কথাটা বলতে হবে তো নাকি তাঁরা যেতে দিচ্ছে কিনা সেটা আবার দেখতে হবে তো। এই বলে আড্ডাখানা থেকে সবাই বাড়ি ফিরে গেলো।
সবাই তো আপন আপন বাড়ি চলে গেলো এদিকে বিলুদের বাড়িতে বিলুর মাসির ছেলে বেড়াতে এসেছে। তার বয়স হবে প্রায় চল্লিশ। মাসির ছেলে বিলুর বাবার সঙ্গে ছাদে গল্প করছে এবং চায়ে চুমুক দিচ্ছে।এদিকে বিলু বাবা কে গিয়ে আদর করছে বাবার নানান কথা শুনছে। বিলুর বাবা বিলুকে বলল মা কিছু বলবে নাকি। বিলু অমনি বলে উঠলো বাবা আমাদের সকল বন্ধুরা বেড়াতে যাচ্ছে আমি যেতে চাই। বিলুর বাবা বলল না মা যেতে হবে না তুই এখন বড় হয়েছিস কোথাও কিছু হয়ে গেলে আমায় যে লোকে অনেক কটুকথা শুনাবে।তার থেকে তুমি তোমার মামাবাড়ি বেড়াতে যাও মায়ের সঙ্গে ভালো লাগবে।বিলু অনেক জেদ করার পর বিলুর বাবা বলল ঠিক আছে যাও তাহলে।কিন্তু কোথায় যাবে তা কি তোমরা ঠিক করেছো বিলু বলল না বাবা ঠিক করা হয় নি। আনন্দরা ঠিক করবে বলেছে। বিলুর বাবা বলল ঠিক আছে মা কোথায় যাবে সঠিক সিন্ধান্ত নাও তারপর আমায় জানিও কেমন। ঠিক আছে বাবা তাহলে আমি আসি। হ্যাঁ এসো। পরেরদিন বিকেলে আবার আড্ডায় বসল সকলে মিলে। সেলিম বলল কমল কে হ্যা রে বেড়াতে যাওয়ার কি হল। কমল বলল ঠিকঠাক করতে হবে সময় লাগবে তো নাকি। তো তোরা কিছু সিন্ধান্ত নিলি কোন যায়গায় যাবি। আনন্দ বলল গতকাল কাকার কাছে পরামর্শ নিয়েছি। রানি বলল কি পরামর্শ রে। আনন্দ বলল, কাকা বলেছে ঝাড়খন্ড যেতে সেখানে তার শ্যালিকার বাড়ি। বাড়ির কাছেই আছে পাহাড়, নদী,বন, ও রোমাঞ্চকর দেখার জিনিস আছে। তোদের অনেক ভালো লাগবে। অবশ্য যেতে হলে তোদের ট্রেনে করে যেতে হবে। সবাই বলল ঠিক আছে ওখানেই যেতে হবে। কিন্তু ওখানে যেতে হলে চিনতে হবে তো নাকি, জায়গা না চিনে যাওয়া যাবে কিভাবে। আনন্দ বলল ওসব চিন্তা করিস না ছোটো কাকা কে বলে কয়ে রাজি করাব। সবাই মিলে কাকার কাছে চল। কাকার কাছে এসে বলল কমল কাকাবাবু কাকাবাবু আপনাকে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। কাকা অর্থাৎ সোমনাথ চক্রবর্তী,সেও খুব ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। সোমনাথ কাকা কে একটু বেশিকরে চাপ দিতেই সেও রাজি হয়ে গেলো। সোমনাথ কাকা বলল ঠিক আছে আগামী পনেরো তারিখে রওনা দিব কেমন,তোরা এখন আয়। আর হ্যা সন্ধায় চলে আসিস আলোচনা করতে হবে। সবাই মিলে বেড়িয়ে আসলো কাকাবাবুর ঘর থেকে এবং আনন্দকে কমল বলল যাইহোক কাকা রাজি তো হলো। আর তা ছাড়া একজন বড় অভিজ্ঞ ব্যাক্তিও লাগতো তাই না। যাইহোক সন্ধায় কাকাবাবুুর বাড়িতে চলে আসবি কেমন। আর এই বেড়ানোর পুরো কৃতিত্বটাই হচ্ছে বিলুর তার জন্য বিলুকে আমরা অনেক অনেক আন্তরিক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই। বিলু বলল নে নে হয়েছে আর ধন্যবাদ দিতে হবে না এবার বাড়ি যা। বিকেলে সবার বাবা মায়ের কাছে অনুমতি নেওয়া হয়ে গেছে।সন্ধায় সোমনাথ কাকার বাড়িতে এসে সবাই উপস্থিত।
সোমনাথ দেখে বলে ওহ সন্ধে না হতেই তোরা হাজির বাহ বাহ ভালো।শোন তোদের কাকিমা একথা শুনতেই সেও বায়না করেছে যে সেও যাবে। সেলিম বলল সেতো খুব ভালো কথা কাকাবাবু। ঠিক আছে তোরা আমার বৈঠকখানায় যা, আমি তোদের কাকিমাকে চা দেবার জন্য বলে আসছি। এই বলে চলে গেলেন কাকাবাবু। কাকা গিয়ে কাকিমাকে বলে এই শুনছো বিলুরা এসেছে ওদের জন্য কয়েক কাপ চা করে দিও তো এবং তুমিও এসো আলোচনা চলবে। কাকিমা বলে ঠিক আছে তুমি যাও আমি চা করে নিয়ে আসছি এই বলে কাকিমা কিচেনে চলে গেলেন।এবং কাকাবাবু চলে আসলেন বৈঠকে। এমন সময় আনন্দ বলে উঠলো ওই যে কাকাবাবু চলে এসেছেন। সেলিম বলল কাকাবাবু কি বলবেন বলেন। সোমনাথ কাকা বলেন ভ্রমণ করতে যাবি তার জন্য আলোচনা করতে হবে না, রুট করতে হবে কোনদিক দিয়ে যাব সেটাও তো ভাবতে হবে। তাছাড়া ওখানে কোথায় থাকব,কি কি করব সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এখন। কমল বলে সে তো করতেই হবে কাকাবাবু। তা না হলে কিভাবে যাব।
এমন সময় কাকিমা এলো চা নিয়ে কাকিমা বলতে সোমনাথ কাকার স্ত্রী তথা অনামিকা চক্রবর্তী।কাকিমা বলল তোমাদের আলোচনার কি হচ্ছে। সোমনাথ বলল হবে হবে আগে চা তো খাই। আর হ্যা তুমি বরং এক কাজ করো আমার ঘরে টেবিলে খাতা কলম আছে নিয়ে এসো। কাকিমা খাতা কলম আনতে চলে গেলেন। বিলু বলল কাকা আমরা এবার মূল আলোচনায় আসি। সোমনাথ বলল হ্যাঁ, তোরা এককাজ কর খাতা কলম নিয়ে লিখে ফেল কোথায় কোথায় কি করবি। প্রথমে এক নাম্বার দিয়ে লেখা শুরু কর। প্রথমে একটা টাটাসুমো ভাড়া করতে হবে। তারপর দুই নম্বরে লেখো বাবুচি নিতে হবে, তারপর রান্নার নানা আয়োজন করতে হবে।এমন সময় সেলিম বলে উঠল কাকা আপনি এসব কি আবোলতাবোল বলছেন আমরা এসব কেন করব আমরা তো বেড়াতে যাচ্ছি টেনে যাব আর খাওয়ার কথা তো হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে হবে এই তোরা কি বলিস। সবাই বলে উঠল তাই তো আমরা ওইভাবেই যাব। ও তাই, ঠিক আছে তাই হবে তাহলে তোদের লাগেজ ঠিকঠাক করে নে আমরা আগামীকাল রওনা দেব। ঠিক আছে। যে যার বাড়ি চলে গেলো। এদিকে বিলুর রাত্রে আর ঘুম আসছে না শুধুই ভেবে চলেছে কখন সকাল হবে, এবং তার সঙ্গে নানান কুচিন্তা মাথায় বারবার আসছে কমলকে নিয়ে স্বপ্ন। সে বেড়ানোর সময় কমলকে নিয়ে কি কি করবে তার একটা ফঁন্দির লিস্ট বানাচ্ছে, এরপর কিছুক্ষণ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় এবং সকাল হতেই সে আনন্দে মাতোয়ারা, তার যেনো আর খুশি ধরে না। খুশি তো হবেই তারা একটা নতুন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছে তাতে আবার কমলকে নিয়ে তার সঙ্গে ব্যাক্তিগত নানান আলোচনা আছে। এই বলে সে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। ওদিকে কমল,রানি,আনন্দ, সেলিম একসঙ্গে সোমনাথ কাকার বাড়িতে আসছে কারণ সোমনাথ কাকাই নিয়ে যাবে তাই ওখানে যাচ্ছে অবশ্য আপন আপন চলে আসার কথা ছিল। কেউ কাউকে ডাকবে না সকাল সকাল যেন হাজির হয়ে যায় সোমনাথ কাকার বাড়ি। এদিকে বিলুর ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে কারণ গতকাল সে ভুলভাল চিন্তা করেছিল। সে এখন ওয়াশরুম থেকে কাজ কমপ্লিট করার পর নাস্তা করছে অবশ্য নাস্তা শেষ হলেই সেও রওনা দেবে সোমনাথ কাকার বাড়ি। আর লাগেজ তো গতকালকেই নিয়ে নিয়েছে ওদিকে ঠিকঠাক আছে। বিলু রাস্তায় কাউকেই দেখতে না পেয়ে সে দৌড় লাগায় এবং অবশেষে তা সোমানাথ কাকার বাড়ি পৌচ্ছেছে।সোমনাথ কাকা বলল ওই যে বিলু মা এসে গেছে চল চল আর দেরি করা যাবে না। টাটাসুমো আগেই ভাড়া করা ছিল সেও অগ্রিম এসে বসে আছে। সবাইমিলে তাড়াতাড়ি উঠে বসল সুমোতে। বিলু ও সোমনাথ কাকা বসল সামনে ড্রাইভারের পাশে, কমল,সেলিম কাকিমা ও আনন্দ বসল মিডিলের সিটে এবং লাগেজ গুলি রাখল পিছনের সিটগুলিতে। এবার ওরা রওনা হয়ে গেল। খানিক্ষন বাদেই কমল বলল বিলু খুব ভিতু মানুষ ওতো ভয় পাবেই কারণ যেখানে যাচ্ছি সেখানে পাহাড়, বন জঙ্গল, পশু-পাখি আছে দেখেই হাত ফেল করবে।বিলু বলে উঠলো আমি হাতফেল করলে তোরা আছিস কি করতে তোরা আমায় গাইড দিবি। এই বলে কথাকাটি করতে করতে বহরমপুর স্টেশনে পৌঁছালো। এই সময় সোমনাথ কাকা বলল আর দেরি করে লাভ নেই।চল বহরমপুর থেকে কিছু খেয়ে আসি টেন আসতে এখনো অনেক বাকি আছে টিকিট তো চারদিন আগে ভি আই পি রুমে কাটা আছে ওদিকে চিন্তা নেই। এই বলে বহরমপুরের হোয়াইট হাউসে খেতে গেলো।
খাওয়া দাওয়া সেরে এবার রওনা করবে গন্তব্যের দিকে। কিছুক্ষণ ওয়েট করার পরে ট্রেন আসল। ট্রেন কিছুক্ষণ থামবে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে রেল অফিস। সেক্ষেত্রে আরামে আরামে উঠা গেলো।রেল কর্তৃপক্ষ জানালো আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই ছাড়বে। খুশিতে ডগমগ করছে আনন্দ, বিলু , সেলিম, কমল ও রানী। কেন না তারা এক নতুন জায়গায় অতিবাহিত করতে যাচ্ছে। বিলু কমলের সিটেই বসেছে ঠিক পাশাপাশি।কারণ তাকে সে অনেক বেশী ভালোবাসে। আর সেই সুজোগ নেওয়ার জন্যই পাশের সিটে বসা। মতলবটা ঠিক সুবিধার নয় মনে হচ্ছে। ঠিকা জানালার পাশে।পিছনে আছে আনন্দ,রানী,ও সেলিম। সামনে কাকা ও কাকিমা। বিলু কিছু বলতে চাই কমলকে কিন্তু বলা তো আর সহজ নয়। সামনে পিছনে সবাই আছে বেশ কস্টকর লাগছে বিলুর।কারণ যে আশাতে বসেছিল কমলের পাশে সেটা হচ্ছে না। তাতে করে কিলুর মনে খচখচানিটা বেড়েই চলেছে। যে কাউকে উঠতে বলবে না নিজে উঠে যাবে। যদি নিজেই উঠে যায় তবে কমল তো উঠবে না কারণ জানতে চাইবে। কি আর করা যাবে। সেলিম বলল কাকাবাবু জায়গাটা কেমন হবে যদি কিছু বলেন তো মনে মনে কিছু প্লান করা যায় আর কি। কিসের প্লান রে।না মানে কাকাবাবু অগ্রিম ওখানে গিয়ে কি করব না করব। কাকাবাবু উত্তর দেয় ওসব তোকে কিছু জানতে হবে না। এটা জেনেরাখ যে তোদের কাকাবাবু অতোটা বুদ্ধিহীন নয়। যে জায়গাটায় যাব সেটা অবশ্য সবাই তেমন চেনে না।কিন্তু সুন্দর মনোরম পরিবেশ যা দেখলে মন মুগ্ধকর হয়ে যাবে।সেতো বুঝলাম কাকাবাবু কিন্তু ওখানে কি কি আছে মানে আগে থেকেই জানতে চাই তাহলে এনার্জি আসে। ওখানে আর কি থাকবে ছোট্ট গ্রাম হলেও অনেক কিছু আছে। যেমন শর্টকাটে বলা যায়। পাহাড়,নদী,পার্ক,মিউজিয়াম, জমিদার বাড়ি, ও নানান কিছু দেখলে তোর আসতে মন চাইবে না দেখিস।কমল বলে উঠল তাহলে তো মাসখানেক কাটাচ্ছি না কি কাকাবাবু। হ্যাঁ তোর পড়াশোনাটা তো করতে হচ্ছে না ভালোই লাগবে তোদের। কিছুক্ষণ পরে রেল থামল রেলস্টেশনে এবং সেখানে মিনিট পনেরো থামবে। সবাই আপন আপন নামল, উঠলো।কেউ কেউ খেতে গেলো কেউ আবার জল বা ঝালমুড়ি আনতে যাচ্ছে। রানি বলল সেলিমকে হ্যাঁ ঘুগনী কিনে এনে দেনা বা ফুচকা।ফুচকার কথা শুনতেই বিলু সামনে সিটে বসেছিল সেও আবদার করল যে ঘুগনী খাবে। একটু আদর করতে ই কমল এনে দিল। বিলু মিষ্টিস্বরে কমল কে ধন্যবাদ জানাই এবং কমলেরও অনেক ভালো লাগে ধন্যবাদ জানানোর জন্য।আবার আসতে আসতে ঝিকঝিক করে রেল ছাড়লো। আনন্দ,কাকাবাবু ও কাকিমা তো অনেক্ক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে। রানিও ঘুগনী খাচ্ছে সেও মাঝে মাঝে হাই তুলছে। কমল তো ঘুম থেকেই উঠে আমায় ঘুগনি এনে দিয়েছে।সে এখন আর মন হয় ঘুমাবে না। শুধুমাত্র রানি ঘুমালেই হয় কিছু কথা বলবে কমল কে।সেই আশাতেই আছে বিলু।
কিন্তু রানি যে কখন ঘুমোতে যাবে তা আর বোঝা যাচ্ছে না।এদিকে কমল হাই তুলছে বার বার এক্ষুনি ঘুমাবে মন হয়। শেয়ালদহ স্টেশনে গাড়ি আসলো। যাত্রিরা নামছে। ওরাও নামল।তারপর কি করবে ভাবছে এমন সময় সেলিম বলে কাকাবাবু একটিবার খেয়ে আসলে কেমন হয় আমার বড্ড খিদে পেয়েছে।সেলিম আসলে একটু বেশি বেশি খায়।কাকাবাবু বলল কি রে তোরাও কি কিছু খাবি নাকি যদি কিছু খাস তবে না হয় যাব।আমার খিদে নেয় আমি খাব না।রানি বলল কাকাবাবু কিছু খেয়ে নেওয়ায় বেটার হবে কেননা আমরা সেই বহরমপুরে খেয়েছি। খিদে তো লাগবেই তাই না।আনন্দ উত্তর দেয় হ্যাঁ তোদের শুধু খাওয়া খাওয়া, তুই আর বিলু তো কৃষ্ণনগরে ঘুগনি খেলি আবার খেতে ইচ্ছা করছে।তোদের পেট না একটা আস্ত মাটির জালা। বিলু কিন্তু বসে থাকার পাত্রী নয় সে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়।এই বেশি বেশি বকবি না কানের কাছে নইলে মারামারি লেগে যাবে কিন্তু। কাকাবাবু ওদের চুপ করতে বলে। ওরা চুপ করে যাই।কাকিমা বলে নাও চল চল অনেক হয়েছে এবার এগাও।আমারও খিদে পেয়েছে হালকা কিছু খেতে হবে, কেন না আবার কোথায় খেতে পাব কি পাব না বলা যাচ্ছে না।কাকাবাবু বলল তাহলে চল কোনো হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে কিছু তো খেয়ে আসি তারপর না হয় দেখা যাবে।কি বল।স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসলাম সামনে টোটোগাড়ি,ভ্যানগাড়ি,রিস্কা,ইত্যাদি নিয়ে রাস্তাটা একেবারে জাম্প করে রেখেছে।কি আর বলব প্রশাসনের পুলিশ এতবার বারণ করার পরেও একই অবস্থা রয়েছে । যাইহোক আস্তে আস্তে এগোলাম। এসে পৌছালাম জর্জকোর্টের কাছে।কি করা যায় চেনা পরিচয়ের ভালো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে যেতে হলে আবার এককিলো মিটার দূরে যেতে হবে।কি আর করা যায়। কাছে যেসব হোটেল বা রেস্টুরেন্ট আছে সেগুলিতে তো আর খাওয়া যাচ্ছে না। আর তাছাড়া ফুটপাতে তো আজকাল প্রচুুর দোকান রয়েছে ওগুলিতেে তো যাওয়ায় যাবে না। শেষমেশ পরিচিত হোটেলে গেলাম ট্যাক্সি করে।
পাঁচতারা হোটেলে যেতেই সু স্বাগতম জানালো হোটেল কতৃপক্ষ।বেশ ভালোই লাগলো। ও হ্যাঁ বলতে তো ভুলেই গেছি পরিচিত হোটেল মালিক আবার আমার ছোটবেলার বন্ধু রমেশ। অনেকদিন পর দেখা হল। রমেশ এক দেখাতেই চিনে ফেললো। কারণ অন্য ব্যাক্তিদের মতো রমেশ নয়।তাঁর চরিত্রটা অনেক সুন্দর আর অনেক বড় মনের অধিকারী। সে যথেষ্ট বন্ধুর খাতির করল।অবশেষে ওর কথাগুলি বলল আমারও শুনলো। রমেশকে বললাম যে ভাই আমাদের এবার যেতে হবে রে আবার আসার সময় দেখা হবে। ঠিক আছে। ও হ্যাঁ ভুলেই গেছি তোর বিল কাউন্টারটা কোথায় রে। রমেশ।রেগেমেগে একশা। সে বলল বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখার মনে করিস না নাকি। আরে কি বলিস। তাহলে তো তোর ব্যাবসার লস হবে।সে কোনোমতেই না ছাড় বান্দা। অবশেষে কি আর করা যায় টাকাগুলি পকেটেই রেখে দিলাম। রমেশ আমাদের কারে করে স্টেশনে এগিয়ে দিয়ে গেলো।আমি তো ভাবতাম যে গ্রামের ছেলেমেয়ে শহরে আসলে অমানুষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রমেশ একদম আগের মতোই আছে।আমরা ওকে বিদায় দিয়ে আবার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে গেলাম।টিকিট কেটে বসে পড়লাম অফিসিয়াল কামারায় অবশ্য বেশি টাকা লেগেছিল প্রতিটিকিট পিছু দুইশো টাকা করে। তবুও নিলাম কারণ ভালো কামারায় যাব কোনোরকম ঝামেলা নেই। সুস্থভাবে যাওয়া যাবে আর কি। কামারায় একজন উল্টো করে নিউজ পেপার পড়ছে আমার চোখ যেতেই বললাম।এই যে মশাই আপনি তো উল্টো করে পেপার পড়ছেন।ভদ্রলোক বলেন, যে ব্যাক্তি পড়তে জানে সে সোজা বা উল্টো যাইহোক না কেন পড়তে পারবে। আমি আমার বক্তব্য ওখানেই ইতি টানলাম।কিছুক্ষণ পরে টি.টি. প্রবেশ করেছে। টিকিট দিন, টিকিট দিন। পরে সবার কাছে টিকিট থাকায় চলে গেলেন কিছুক্ষণ পরে আবার আরেকজন আসলেন।প্রথমেই ওই ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে টিকিট চাইতেই টিকিট তো নেই। টিকিট চেকাপ ম্যান বলে পেপার কিনতে পয়সা লাগে না বুঝি। ভদ্রলোক বলেন এটা আমার নয় আর আমি পেপার পড়তেও জানি না। এটা সিটে রাখা ছিল। তাই পেপারের ছবিগুলি দেখছিলাম।আর ট্রেনের সবাই হা হা করে হেসে উঠল।তখন সেলিম বলল আমাদের যে আপনি বললেন যে পড়তে জানে সোজা বা উল্টো করেও পড়তে পারে। তখন সবকিছু বুঝতে পেরে টিকিট চেকাপ ম্যান তার ফাইন করে।
শেষমেশ নামলাম ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাচীতে।নেমেই তো আর সোজাসুজি যাওয়া যাবে না তাই আবার ট্রেনে উঠতে হবে।আবার রেলস্টেশনে টিকিট কাটা।আবার ট্রেনে যাতায়াত। অবশেষে পৌছালাম শ্যালিকার বাড়ি। শ্যালিকা আমাদের দেখে তো কি খুশি।খুশি তো আর ধরে রাখা যায় না। শ্যালিকা সবাইকে ওয়াসরুম দেখিয়ে দিল। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসলাম অতিথি সেবায়ন কক্ষে।সেখানেই আনন্দ,বিলু,কমল,সেলিম ও রানি আছে। অবশ্য আমার সহধর্মিনী শ্যালিকার কাছে আছে। অতিথি সেবায়ন কক্ষটা এমন জায়গায় তৈরী করা হয়েছে যে পুরো দক্ষিণের বাতাসটা সম্পুর্ণ কক্ষে প্রবেশ করছে। তাই বেশ আরাম বোধ করছি।এমনিতেই কক্ষে শিলিং ফ্যান আছে তাতে আবার এয়ারকন্ডিশন রুম।বেশ ভালোই লাগছে। বিলুরাও ভালো বোধ করছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বিকেলের দিকে বেড়াতে শুরু করবে।বিকেলের দিকে সোমনাথ কাকা নিয়ে যাবে সুদর্শন পার্কে। বিকেল বেলায় শ্যালুকার গাড়িতে পার্কে এসেছে। টিকিট কেটে নিয়ে এসে প্রবেশ করল বাঁদিকের চিড়িয়াখানার দিকে। সেখানে নানান ধরনের পশুপাখি, জীবজন্তু ও আরো নানান কিছু দেখাল। আরেকটু অন্যদিকে গিয়ে পুকুরে নানান রঙ্গের মাছ দেখা হল। হঠাৎ করে বিলু সোমনাথ কাকাকে বলল। কাকাবাবু আমি আর কমল একটু ওইদিক থেকে ঘুরে আসি। ওইদিকে কোথায় যাবি। একটু পার্কের ভিতরের দিকে যাব।ঠিক আছে কিন্তু বেশি দেরি করিস না। কমল কে টেনে নিয়ে গেল। কমল যেতে চাইছিল না অবশ্য। ওরা একটি গাছের নীচে চেয়ারে বসল।দুজনে সামনা সামনি ভাবে। মহুর্তের মধ্যে বিলু কমলের হাত ধরে বলে ফেলল “আই লাভ ইউ কমল” আমি তোকে ছাড়া আর বাঁচতে পারব না।অনেক কস্টের সঙ্গে চেপে ছিলাম। আর পারছি নারে আটকাতে তাই বলে ফেললাম।অনেকদিন ধরেই বলব বলব করে বলা হচ্ছেলনা। কমল মাথায় হাত দিয়ে আর কোনো কথা বিলুকে বলল না।কিছুক্ষণ পরে কমল বলল তোর এরকম ইচ্ছে হল কেন।আমি জানি না রে কিভাবে কি যে হয়ে গেলো।কিন্তু তুই যাই বল না কেন আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি।তুই।শুধু একবার হ্যাঁ করে দ্যাখ।সে পরে দ্যাখা যাবে বলে চলে আসে সোমনাথ কাকাদের কাছে।
বিলুও কমলের পিছুপিছু গেলো।কাকাবাবু ওদেরকে আরেকটি নতুন জায়গায় নিয়ে গেলো। জায়গাটি ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাব। সেলিম পিছনে যাচ্ছেলো তাই পা পিছলে পড়ে গেলো একটি গর্তের মুখে । গর্তটি বেশ বড়সড় ছিল।কিন্তু ঝোপঝাড়ের জন্য খেয়াল করা হয় নি। যাইহোক বাড়িতে কেউ একটা যায় না। বিলু সোমনাথ কাকাকে বলল। কাকা ওখানে যেতে হবে না। বিলুর সুরে সুর মিলিয়ে কাকিমা ও রানি বলল ওখানে যাওয়া যাবে না।কারণ বাড়িটা কি ভুতুড়ে ভুতুড়ে মনে হচ্ছে আর জঙ্গলে ভর্তি আছে।কে যানে কোথায় সাপ খোপ আছে।কিন্তু আনন্দ,কমল ও সেলিমের সাহস আছে ওখানে যেতে চাই।কিন্তু কাকা অবাধ্য হয় না। তাই কাকা নিষেধ করার ফলে আর যাওয়া হল না। ওদের ইচ্ছে ছিল যে ভুতুড়ে জায়গায় অনেক এনার্জি আসে। বাড়িটার আসেপাশে কেউ নেয়।আর ওখানে তেমন একটা কেউ যায় না।তাই সোমনাথ কাকা সবাইকে নিয়ে চলে এলেন জমিদারবাড়ি দেখার জন্য। সেখানে তো অনেক লোকের সমাগম রয়েছে। কিন্তু সেলিমদের মন পড়ে রয়েছে প্রাচীণ বাড়িটার দিকে। কিন্তু কি আর করা যায়।কাকার কথা তো মানতেই হবে। জমিদারবাড়ির প্রধান ফটকেই টিকিট কাউন্টার রয়েছে। টিকিট কাউন্টারে কাকা গিয়ে টিকিট নিয়ে আসলো সবার জন্য।একে একে প্রবেশ করল প্রধান গেট দিয়ে।বাড়িটি চারতলা।পুরাতন হলেও অনেক পুরাতন নয়। তাই লোহার সিড়ি রয়েছে। প্রথমতলা ঘুরে ঘুরে দেখল। জমিদারের নানান আসবাবপত্র রয়েছে।যন্ত্রপাতি, কামান,আলমারি,চেয়ার,টেবিল,খাট ইত্যাদিতে ভরপুর করা।দ্বিতীয় তলায় লোহার সিড়ি দিয়ে উঠে গেলো। দেখে তো অবাক। কি কারুকার্য করা বাড়িটির ভিতরের দেওয়ালগুলি। ঝিকঝিক করছে।আসবাবপত্র তেমন একটা নেই। বেশিরভাগ ছবি,মুর্তি,ব্যাবহার করা কিছু জিনিস, নথিপত্র ইত্যাদি রয়েছে। নথিপত্রগুলি বড়বড় লেখায় পরিণত আছে।যেগুলি জমিদারবাড়ির ইতিহাস। যা পড়লে সবকিছু বোঝা যাবে। কিছু কিছু পড়ল কেউ কেউ। তারপর তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখলো যে। পালঙ্ক রয়েছে সোনা রুপার নকশা করা কিছু কাজ রয়েছে।দেওয়ালে কাঁচ টাইপের কিছু লাগানো আছে।তাতে সবাই সবাইকে দেখতে পাচ্ছে।কিন্তু সবাইকে জিরাফের মত বড় লাগছে।আবার কাউকে ছাগলের ছেয়ে ছোট লাগছে।কি।তাজ্জব ব্যাপার।সি সি ক্যামেরার আওতায় আছে সবাই। অবশ্য পুলিশ আছে ওখানে।
আরেকটু গিয়ে দেখা গেলো এক আশ্চর্যজনক জিনিস দেখতে পেলো।ভেলকির মতো সবকিছু দেখে চারতলার জন্য রেডি হয়েছে এমন সময় গার্ড বাধা প্রদান করে। যে চার তলায় যাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। কেন না জমিদার মশায়ের বংশধরেরা আসে মাঝেমধ্যে তাই ওটা বন্ধ থাকে।পরের দিন সকালে চা নাস্তা খেয়ে আনন্দ, কমল ও সেলিম একটু বাইরে বেরিয়ে আসি বলে সোমনাথ কাকাকে রাজি করিয়ে বেড়াতে আসে।অবশ্য সোমনাথ কাকা প্রথমে ছাড়তে রাজি হচ্ছিলনা। আনন্দরা এবার বাইরে বেরিয়ে আসে।এবং তারা ঠিক করে যে ও-ই প্রাচীণ বাড়িটাতে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।গল্প করতে করতে হাটতে থাকে।এমন সময় একজন স্থানীয় বাসিন্দা জিজ্ঞেস করে। খোকারা কোথায় থেকে আসছ।কোথায় যাবে। সেলিম উত্তর দেয়।আজ্ঞে আমরা অনেকদূর থেকে এসেছি। ঠাকুরপাড়াতে। তো কোথায় যাবে। আমরা একটু, ওই যে পুরাতন বাড়িটা আছে না ওইখানে যাব। বাড়িটা দেখতে আর কি। অহ বল কি ওইখানে তো কেউ যায় না।কারণ ভূতের আড্ডাখানা। দিনে বা রাত্রে নানান ভূতের উপদ্রব শোনা যায়। এবং অনেকে গিয়ে ফিরে আসতে পারেনি। তোমরা ভালো চাও যেও না। সাক্ষাৎ ভূতের ডেরা।ওরা লোকটির কথায় কান না দিয়ে চলে গেলো বাড়িটির দিকে।বাড়িটির গেটের সামনে আসতেই নানান হইচই শোনা গেলো। ওরা তো অবাক।আজকালের যুগেও নাকি ভূত প্রেত আছে।এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে।আনন্দ বলল চল ভাই এখান থেকে কেটে পড়ি পড়ে দেখা যাবে। কথামতো চলে আসলো।কিন্তু পরে অবশ্য আসবেই আসবে।বাড়ি ফিরতেই নানান খাবার সাজিয়ে রেখেছে ডাইনিং টেবিলে। খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে তবেই বিকেল হলে বেড়াতে যাবে।কারণ বেড়ানটা বিকেলের সময় ছাড়া ভালো লাগবে না তার জন্য। বিকেলে নতুন নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা আছে। এমন সময় বিলু ডাকতে আসে কমলদের। এই উঠ উঠ বিকেল তো হয়ে গেছে। কাকাবাবু ডাকছে তোদের।চল চল।আর কমল তোর আজকে আমার উত্তর দেওয়ার আছে। তোর কিন্তু ছাড় নেই। হ্যাঁ দেব তবে ধরে নে ৯০% তোর দিকেই টানছে আমাকে বারে বারে।আর ১০% টে আটকে আছি। তবে যতসম্ভব হ্যাঁ উত্তর হবে। তাহলে তো আমি ধন্য। ঠিক আছে চল চল।নাহলে সেলিমরা কি ভাববে যে ওরা দুজনে কি করছে।এখন সবাই উপস্থিত।গাড়ি ছাড়ল পাহাড় দেখাতে। ঠিক সেই প্রাচীণ বাড়ির পিছন দিকে। এক কথায় পাহাড় লাগোয়া প্রাসাদটি অবস্থিত।
গিয়ে গাড়ি থামল পাহাড়ের নীচে।পাহাড়ের নীচে লোকাল ছেলেরা ছোটখাটো ব্যাবসা করছে।কেউ ঝালমুড়ির দোকান,মিষ্টির দোকান,আবার ঠান্ডা জলের দোকান রয়েছে। ওখানে টুর করতে আসে নদী,পাহাড়, বন, পার্ক ইত্যাদি দেখতে। ওখান থেকে পাহাড় বাড়টি একটু দুরেই সেখানে কেউ একটা যায় না। কারণ ওই পাহাড়টি বন জঙ্গলে ভর্তি রয়েছে। আর ওখানে আরো পাহাড় আছে সেগুলি সবাই দেখে এবং তা পরিস্কার পাহাড়। আনন্দ বলল কাকাবাবু আমরা দুটো পাহারই দেখব। ঠিক আছে তাই হবে। প্রথমে পরিস্কারজনক পাহাড়টিতে গেলো। সেখানে নানান মানুষের সমাগম রয়েছে।উঠতে উঠতে তো হাঁপিয়ে গেছে। আর বিলুরা তো আধখানা উঠেই আর উঠতে পারল না।অবশেষে কমল,সেলিম,আনন্দ ও কাকাবাবু উঠতে সক্ষম হয়েছে। পাহাড়ে উঠেই দেখল যে মাটির নীচে যেসব জিনিস দেখা যাচ্ছে তা একটা খুব বড় আকারের মনে হচ্ছে না। কিন্তু ওঠার সময় যে ভালো লেগেছিল।কিন্তু নামার সময় সেই মজাটা আর নেই। কারণ একটু এদিক কিম্বা ওদিক হলেই পা হড়কানোর সম্ভবনা বেশি। আস্তে আস্তে নেমে আসলো।তারপর পার্কে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখা হল।কিন্তু আজ কোনো সময় পেল না বিলু। যে একটু কথা বলবে কমলের সঙ্গে।সে সুজোগ নেয়। ভীষন ইচ্ছা করছে ওর মুখ থেকে উত্তরটা শুনতে। কিন্তু কই হচ্ছে। এরপর বনের দিকে যাবে বলে ঠিক করল।সেখানে সবাই আসছে যাচ্ছে। বনের পশুপাখি দেখছে। গাড়িতে করেই যাওয়া যাচ্ছে।গাড়ি থেকেই দেখতে পাচ্ছে।কি সুন্দর পাখি আর সুন্দর সুন্দর পশুও আছে। দেখে সবার মন ভরে গেলো।বন দেখার পর নীচের ভালো একটা ফুটপাতের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার বাসনা জাগায়। খেতে প্রবেশ করল কাকাবাবু। খাওয়া শেষমেশ করে গাড়ি টান দিতেই বলল সেলিম। কাকাবাবু কাকাবাবু ওই পুরাতন পাহাড়টিতে যাবেন না।ওই পাহাড়টি তো দেখা হল না। কাকাবাবু উত্তরে বলে একি তো পাহাড় ওর আবার কি দেখবি।তাতে আবার বনে ভরপুর।দেখতে হলে তোরা আগামীকাল গিয়ে দেখে আসিস। ঠিক আছে কাকাবাবু। আমরা তিনজনেই যাব।আনন্দ বলে এই এই রানি তোরা কি যাবি নাকি। না না আমরা ওই বনে যাব না। আর একেই তো পাহাড়। তাছাড়া পাহাড়ে উঠতে পারছি না গিয়ে লাভ নেই।বরং তোরা যা।
আমরা তো যাবই রে।তোরা গেলে যেতে পারতিস তাই বললাম আর কি। কাকিমা বলল না না গেলে তোরাই যা বনে মেয়েদের যেতে নেই।ঠিক আছে তাই হবে। পরদিন সকালে চা নাস্তা খেয়ে কাকাবাবুর অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আনন্দ, সেলিম ও কমল তারা ভীষণ খুশি পাহাড় দেখার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটাও দেখবে।তাই। প্রথমে পাহাড় দেখবে। পাহাড়ের নীচে গাড়ি রেখেই ছুটছে। কমল বলে উঠলো। আরে দাঁড়া দাঁড়া আজ পাহাড়ে উঠব পাল্লা দিয়ে।কে আগে উঠতে পারে আর যে জিতবে তাঁকে দুজন মিলে একশো টাকা দেবে। ঠিক আছে। সেলিম, কমল ও আনন্দ রেডি হয়ে উঠতে লাগলো। তরতর করে এগিয়ে গেলো আনন্দ। কারণ সে পাতলা ছেলে।কিন্তু কিছুটা উঠার পর সে ফসফস করে হাঁপিয়ে উঠল। এবং রেস্ট নিতে লাগল। সেলিম কমল আস্তে আস্তে উঠছিল তাই আনন্দকে ফেলে রেখে ওরা এগিয়ে গেলো।আনন্দর বাদিকে কিছুটা সমান জায়গা উঠার মতো ছিল তাই সে ওখান দিয়ে উঠবে। এই মনে ভেবে উঠতে লাগলো।কিছুটা উঠার পর পা হড়কে গর্তের মধ্যে পড়ে গেলো। পড়ল তো পড়ল একটা মোটা লোকের মাথায় পড়ল।আনন্দ ভাবতেই পারল না।লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো। এই কেরে কেরে। আরে ব্যাটা তোর এতো সাহস আমার ঘাড়ে পড়া। আঞ্জে হুজুর আমি আসিনি।আমরা পাহাড়ে উঠতে প্রতিযোগিতা করছিলাম এমন সময় উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ি। তারপর একটা সমান্তরাল রাস্তা পেয়ে ওখান দিয়ে উঠতে থাকি।তারপর হঠাৎ করে গর্তে পড়ে যায়।কিন্তু আপনি কে আর এখানে কি করছেন।আনন্দকে কোনো জবাব না দিয়ে গর্তের ভিতরে বড় বাড়ির মতো জায়গা আছে।সেখানে আরামে খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো,স্নান সারা সবকিছু আছে। পুরো ফ্যামিলির মতো। সেখানে তাকে একটা ঘরের মতো জায়গা আছে সেখানে আটক করে রাখে।এদিকে সেলিম কমলকে পিছনে ফেলে পাহাড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তার যে খুশি আর ধরে রাখা যায় না। কারণ প্রতিযোগিতায় সে জিতে গেছে।কিছুক্ষণ পরে কমল উঠলো।উঠেই দুজনে হাঁপাচ্ছে। বসে আরাম নেওয়ার জন্য গাছের তলায় বসল।সঙ্গে জলের বোতল ছিল তাই জল খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় দশটার কাছাকাছি হয়ে গেছে।আর তাছাড়া প্রচুর খিদেও লেগেছে।কিন্তু এইমহুর্তে নামার উপাই নেই।কারণ এইমাত্র উঠলো। আধঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর।
আধঘণ্টা হয়ে গেছে। এখনও আনন্দ আসছে না। কি ব্যাপার রে সেলিম আনন্দ আসছে না।আসবে আসবে। হয়ত লুকিয়ে টুকিয়ে আসছে। কি যে বলিস লুকিয়ে আসবে কেন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ তো চলে আসার কথা ছিল।তাহলে কিছু হল নাতো। চল চল তাড়াতাড়ি। দেখতে হবে। কিন্তু নামা অতোই সহজ কথা। আস্তে আস্তে পাহাড়ের গায়ে বনের গাছ ধরে ধরে নামতে হবে। কিছুটা আসার পর পাত্তা পাওয়া গেলো না আনন্দর। হ্যাঁ রে সেলিম কই রে আনন্দ। পাহাড়ে উঠতে গিয়ে পড়ে যায়নি তো। হলে হতেও পারে।বলা তো যায় না।পাহাড়ের মাঝখানে ঘুরে ঘুরে খুঁজতে লাগল।কিন্তু কই আনন্দ।কোথাও নেই।সেলিম বলল বাগে টাগে খেয়ে নিল নাতো। কি উল্টা পাল্টা বকছিস। এখানে বাগ কোথায় থেকে আসবে। তাহলে কোথায় গেলো। হয়ত বাড়ি ফিরে গেছে।হতেও পারে চল তাহলে। কিন্তু সে কিভাবে যাবে গাড়ির চাবি তো তোর কাছে আছে তাই না। হ্যাঁ তা তো ঠিক।তাহলে কি করবি।কাকাবাবুকে কি জবাব দিবি।তাহলে এককাজ কর পাহাড়ের নীচে চল। পাহাড়ে উঠতে পারেনি বলে গাড়ির কাছে থাকতে পারে। তাও থাকতে পারে। চল চল।নীচে নেমে দেখে কই আনন্দ। চারিদিকে খোজাখুজি শুরু করল।কিন্তু সব বিফলে গেলো। সকালে এসেছিল এখন প্রায় বিকেল হতে চলল।কারো কিছু খাওয়া দাওয়া নেই।হন্যেহয়ে খুঁজতে চলেছে। অবশেষে বাড়ি ফিরে গেলো। এবং কাকাকে সব ঘটনা খুলে বলল।
ঘটনা খুলে বলার পর কাকাবাবু তো ওদের অপর রাগে ফেটে পড়ল।কিন্তু কি করা যায়।তাহলে কি আর করা যায়। সোমনাথ কাকার ভায়রা অর্থাৎ শ্যালিকার বর বলল দাদা চলুন বসে থেকে তো লাভ নেই। খুঁজতে হবে। তাই গাড়ি বার করে চলে এলো পাহাড়ের কাছে। পাহাড়ে চারিদিকে খোজাখুজি করছে।আবার জোরে জোরে ডাক দিচ্ছে।কিন্তু কোথায় কি।কো খবর নেই।নাওয়া খাওয়া সেরে খোজাখুজি করার পরেও পাওয়া গেলো না।তখন কি আর করবে। বাড়ি চলে আসে।বাড়িতে এসে নানান আলোচনা পরামর্শ করতে থাকে। যে কোথায় যেতে পারে।কি ব্যাপার।কি করা যায়।ছেলেটি কোথায় গেলো।একবার ভাবছে পুলিশ কে ইনফর্ম করব।কিন্তু আবার ভাবছে তখন তো আমাদেরই জেরার মুখে ফেলবে।আবার ভাবে মা বাবাকে কি ভাবে জবাব দিব। কাকাবাবু ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছে। সেলিম ও কমল কাকার অবাধ্য হয়ে চলে গেল খুজতে। আজকে আমরা না খুজে আসবই না।আমাদের জেদের বসে হয়ছে আমরাই দেখছি।কাকাবাবু রেগে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ তোদেরকেই আনতে হবে।নইলে পিঠের ছাল রাখব না।
তোরা যেখান থেকে পারিস নিয়ে আসবি।কোথায় পাবি তা আমি জানি না। আর
যদি খালিহাতে আসিস তবে মজা দেখে নিবি। ঠাকুর মশাই বলল কি যে বলছ দাদা।ওদের কি দোষ। একসঙ্গে গিয়েছিল পাহাড়ে উঠতে। ওরা দুজনে উঠে পড়েছে।আনন্দ উঠতে পারে নি।তাই বলে ওদের ঘাড়ে দোষ দেওয়া ঠিক নয়।আর বল না ভায়া। ওরা বেড়াতে এসেছে তাই বলে জঙ্গলের পাহাড়ে উঠতে হবে। কি যে বলেন দাদা। ওদের মন চেয়েছিল তাই গিয়েছিলো।কিন্তু ওসব কথা বাদ দিন।আনন্দকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায় তাই এখন ভাবতে হবে।কমল ও সেলিম চলে গেলো।বিলুর প্রেমটা সদ্য জমে উঠছিল। কিন্তু তাও বারোটা বেজে গেলো।এই ঝামেলার মধ্যে তো আর প্রেম করা যাবে না।আর আনন্দকেও এই সময় হারাতে হল।ব্যাটা আমাদের ধোকা দিচ্ছে না তো। কে জানি। সেলিম ও আনন্দ চলে আসলো পাহাড়ের গায়ে হাতে ঠাকুর মশায়ের লাইসেন্স ওয়ালা গাদা বন্দুক নিয়ে।আনন্দ কে আটকে রাখা হয়েছে।সে এখন নজরবন্দি হয়েছে। কিন্তু সে বহাল তবিয়তে আছে। ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে দাচ্ছে,ঘুমাচ্ছে। আনন্দ এমনিতেই খেতে খুব ভালোবাসে।চেহারাখানি কয়েকদিন থাকায় বড় ভালো লাগছে। ঠিক ঠিক টাইমমতো খাবার পাচ্ছে।কোনো অসুবিধে নেই।এদিকে সেলিম ও কমল পাহাড়ের বনে জঙ্গলে খুঁজে খুঁজে অস্থির।চারিদিক খোজা হয়ে গেছে। পাহাড়ে বা কোনো জঙ্গলে নেই। সেলিম ও কমল গাছের তলায় বসে পড়ল।মনের দু:খে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না।কারণ আনন্দকে তারা হারিয়েছে।প্রাণ প্রিয় বন্ধু।কি যে হল কি ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারছি না। কমল এমন সময় ছোট ছোট পাথর নিয়ে ফেলছে আর মুখ বুঝে মনে মনে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছে।কি করবে কোথায় খুঁজবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হটাৎ করে এমন সময় ছুড়া পাথর গিয়ে পড়ল একটা গর্তের মুখে। গর্তটি বেশি বড় আকারের হবে না।তবে সাধারণ মানুষের প্রবেশ করা যাবে। কমল, সেলিম তাড়াতাড়ি গর্তের মুখের কাছে যায়।জায়গাটি ছিল পাহাড়ের মধ্যে সমান্তরাল।যেখানে আনন্দ হাটতে চেয়েছিল।কমল ও সেলিমের ভয় হতে থাকে পাহাড়ের গায়ে সমান্তরাল জায়গা এবং তাতে করে বড় গর্ত।প্রথমে গর্তছিল তা বোঝা যাচ্ছিল না কারণ বিভিন্ন গাছগাছালি এবং লতাপাতায় ঢাকা ছিল।সেলিম বলে ভাই কমল নেমে দেখবি গর্তের ভিতর কি আছে। তুই খেপেছিস নাকি। সাপ খোপ থাকলেও থাকতে পারে তো নাকি।কিন্তু দ্যাখ এখানে আনন্দও থাকতে পারে। আর তাছাড়া আমরা গর্তটা।কিসের তা দেখেই চলে আসব।
না না আমি নামতে চাই না তুই নামলে নামতে পারিস।ঠিক আছে আমি নামছি। কিন্তু আমার কিছু অসুবিধে হলে ডাক দিব। যাবি বলছিস যা।তবে না যাওয়াটায় ভালো হবে।সেলিম নেমে গেলো।আস্তে আস্তেে করে।
কিছুটা যাওয়ার পর দেখতে পেলো একটি সিমেন্টের তৈরি রাস্তা।হাটতে থাকে। রাস্তার দুইধারে মশালের আলো আছে।সেলিম ছোট থেকেই সাহসি ছিল তাই তেমন একটা ভয় আসছে না।সিড়ির শেষে এসে পৌঁছালে দেখে যে পাহাড়ের নীচে এক বিশাল দোতলা বাড়ি আছে।তেমন একটা লোকজন নেই। বাড়িটিতে অনেকগুলি কক্ষ আছে।হটাৎ করে একা যাওয়া ঠিক হবে না মন হচ্ছে।তাই আবার কমলের কাছে ফিরে আসে। তারপর সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।কমল সবকিছু শোনার পর।দুজনেই নেমে যায় গর্ত দিয়ে। হ্যাঁ ঠিক, সেলিম যা যা বলেছে সবই আছে। কিন্তু আনন্দ পড়েছিল এখানেই তার কি প্রমান আছে। আরে ভাই প্রমানের সঙ্গে সাথ কি। কি ব্যাপার এখানে বাড়ি তা আবার পাহাড়ের নীচে। যা আজব ব্যাপার।মাটির তলে ঘর থাকে জানা আছে।কিন্তু পাহাড়ের নীচে বাড়ি থাকে জানা ছিল না। ওসব বাদ দে এখন। ব্যাপারটা কি জানতে হবে চল।কমল বলল চল তাহলে। আস্তে আস্তে গিয়ে প্রথমে প্রথমতলায় এক একটা করে কক্ষ খুঁজতে শুরু করল। দোতলায় প্রবেশ করতে দেখা গেলো। অনেক সোনা,রুপা,টাকা ছড়িয়ে টিটিয়ে আছে।যেনো কেউ এক্ষুনি ঘাস বস্তায় পুরেছে আর কিছু পড়ে আছে।এমন মনে হচ্ছে। ধীরেধীরে গিয়ে দেখে ছোট একটা ঘরে আনন্দ শুয়ে আছে।আনন্দকে ডেকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গলো। ও তোরা। আয় বস। সেলিম বলল এখানে তুই কি করছিস।আর বলিস না। আমি তো পাহাড়ে উঠতে উঠতে হাপিয়ে গেলাম। তাই কিছুক্ষণ পরে একটি সমান্তরাল রাস্তা পেয়ে হাটছিলাম। আর হাটতে গিয়ে এখানে পড়ে গেছি। আর এখানে কয়েকজন লোক থাকে। কি যেন খুট খুট করে কাজ করে।আর জানিস পাশের ঘরে অনেক সোনা দানায় ভর্তি করা আছে। এই বাড়ির পিছনদিকে একটা ছোট্ট ভালো কক্ষ আছে সেখানে ওরা থাকে। এখানে আসে মাঝে মধ্যে। দিনে তিন থেকে পাঁচবার অন্তত হবে।কিন্তু তুই পালাস নি কেন।আরে তুই কি বলিস সুন্দর সুন্দর খাউন দাউন ছেড়ে কি যেতে ভালো লাগে। তাই দুদিন পরেই যাব তাই ভেবে আছি। ওহ খাউন দাউন না।আমাদের নাওয়া খাওয়া শেষ করে এখন আমাদের খাউন দাউন শেখাচ্ছে। এদিকে সোমনাথ কাকা কমলদের কাজে ভরসা না করে।যা হয় হোক পুলিশ কে জানানো দরকার।তাই পুলিশকে জানিয়ে পাহাড়ের দিকে আসছে। সঙ্গে পুলিশের জিপ আর সোমনাথ কাকা এবং তার সহযাত্রীরা। কমল বলল চলতো কোন ঘরে সোনা দানা আছে দেখব। চল তাহলে। ঘরে যেতেই দেখা যায় যে কিছু মাল আছে।কিন্তু লোক কোথায়।লোকজন তো কেউই নেই।তাহলে হয়তো ওদের ঘরে আছে সেখানেই চল। ওদেরও দেখা হয়ে যাবে। ঘরে যেতেই দেখে সোনা,রুপা,নকল বা জাল টাকা ছাপানো মেশিন রয়েছে। কমলদের দেখতেই ওদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো।ওরা দুজন ছিল। তাই ওদের হাতাহাতি করার পর তাড়াতাড়ি টাকাসুমো নিয়ে পালাচ্ছিল।এবং কমল ও সেলিম পিছুপিছু টাটাসুমো পাস ধরে ওদের সঙ্গে যাচ্ছিল। রাস্তায় সোমনাথ কাকা ও পুলিশের গাড়ি দেখেই। কমল ও সেলিম হাঁক দেয়। কাকা এদের ধরুন। ধরুন।এরা স্মাগলার। এরা আনন্দকে আটকিয়ে রেখেছিল। পুলিশ শোনামাত্রই ধাওয়া করে।এবং পাহাড়ের রাস্তার মাঝখানে গিয়ে ধরে ফেলে।দুজন ছিল তারমধ্য একজন ব্যাক্তি বিখ্যাত সাধু মহারাজ।তাকে অধিক মানুষেই চিনে বা ভক্তি শ্রদ্ধা করে। কিন্তু ব্যাটারা যে এতবড় অসামাজিক কাজ করে তা আমাদের জানা ছিলো না। থানার বড়বাবু ওদের হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে লকাপে পুরে দেয়। এবং এই দু:সাহসিক কাজ করার জন্য।তোমাদের বড় পুরস্কৃত করা। আর আজকে আমার বাংলোতে সন্ধাবেলায় চলে আসবে ডিনারের জন্য নিমন্ত্রন রইল।কমল ও সেলিমকে জেলা পুলিশ কর্মকর্তা ওদের সোনার মেডেল দিয়ে বীরসন্তান উপাধিতে ভূষিত করেন।এবং বলেন তোমরা পড়াশোনা করে এগিয়ে যাও তোমাদের আমি আমার ডিপার্টমেন্টেই চাকরি দেব।আর এখন থেকেই সিবিআই এর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করার জন্য আমি তোমাদেরকে কাজে লাগাতে চাই।ওরা আনন্দে আত্মহারা। পুরস্কার পেয়ে খুব খুশি তাই সোমনাথ কাকার শ্যালিকার বাড়ি ফিরে আসে।কাকা বলল। এবার বুঝেছি যে প্রাচীণ জমিদার বাড়িটতে ওরাই ভূতের আচরণ করত।যাতে করে কেউ সেখানে না যায়।কারণ বাড়িটির কাছেই ছিল ওদের আস্তানা।তারা কোনোভাবেই চাইত না। বাড়িটিতে কেউ আসুক। শেষমেশ করে এবার বাড়ি ফেরার পালা।তাই আজকের রাত্রিটুকু থাকবে।শোয়ার আগে দোতলার ছাদে কমল খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু শান্তিতে বাতাস খাচ্ছে। আর এমন সময় বিলু আসলো ছাদে। কমলের ঠিক পাশেই দাঁড়ালো। এখন একটা রোমাঞ্চকর সময়। তাই কমল পকেট থেকে একটি সুন্দর গোলাপ নিয়ে হাটু গেড়ে বসে বিলুকে বলল।আই লাভ ইউ। আমি তোকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি। কয়েক মিনিট কথা বলার পর। দুজন দুজনে মিলে জড়িয়ে ধরল। আর আকাশ থেকে এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে বৃষ্টি নামল।এমন সময় রানি দেখে নিল। এবং সেলিম, আনন্দ কে বলল। এবং সকলে ছাদে এসে কমল ও বিলুকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানালো। ফের পরের দিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ল নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।কমল ও বিলুর প্রেম অক্ষয় থাকুক এটাই আশা করি।