রক্ষক

রক্ষক

।।১।।

রবি রায় বাংলা-বিহার সীমান্ত শহর বীরপুরের ডাক্তার। বয়স অল্প, কিন্তু পসার বেশ জমিয়ে নিয়েছেন। সেদিন তিনি এক রোগী দেখতে শহরের উপকণ্ঠে গিয়েছিলেন। ফিরতে ফিরতে একটু রাত হয়ে গেল।

সন্ধ্যা হতে না হতেই বীরপুর ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দশটার নির্জন রাস্তায় মারুতিকে টপ গিয়ারে চালিয়ে দিয়েছিলেন ডঃ রায়। আর মিনিট কুড়ির মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা। এমন সময় তেঁতুলমারির মাঠের কাছে এসে অঘটনটা ঘটল। তিনি নিজের চোখে একটা মানুষ খুন হতে দেখলেন।

রাস্তার ধার বরাবর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিল লোকটি। তার নাক থ্যাবড়া, মাথা বেখাপ্পাভাবে বড়ো আর বাঁ-চোখটা ট্যারা। ভয়ের চোটে সেই চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। আর তার পেছন পেছন নেকড়ের মতো ধৈর্যশীল, পেশাদার পদক্ষেপে ধেয়ে আসছিল ঘাতক, হাতে তার উদ্যত ছুরি। হঠাৎ সামনের লোকটি হোঁচট খেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেল আর মুহূর্তে ঘাতকের ছুরি তার পিঠের বাঁদিকে গেঁথে গেল।

ঠাণ্ডার মধ্যেও ডঃ রায়ের সর্বাঙ্গ ঘামে ভিজে গেল, খালি পাকস্থলিটা গলা দিয়ে ঠেলে ওঠার জোগাড় হল। এমন সময় তিনি দেখলেন, খুনি ঘুরে দাঁড়িয়ে সোজা তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে আর হাত নেড়ে গাড়ি থামানোর জন্য ইশারা করছে।

নিজের অজান্তেই কখন গাড়ির স্পীড কমাতে শুরু করেছিলেন ডঃ রায়। কিন্তু হঠাৎ কী হল, এক আচমকা ভয়ের দমকে দিশেহারা হয়ে তিনি অ্যাকসেলারেটরে জোর চাপ দিয়ে ফেললেন। গাড়ি তিরবেগে ছুটে গেল সামনের দিকে। খুনি এর জন্য মোটেই তৈরি ছিল না। অটুট আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাত দেখাতে দেখাতে সে হঠাৎ গাড়ির ধাক্কায় রাস্তার ধারে ছিটকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

ডঃ রায় এতক্ষণে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছেন। এবার তিনি সত্যিই ব্রেক কষলেন। ছি ছি, এ কী হল, লোকটাকে মেরেই ফেললেন নাকি? পরক্ষণেই মনে হল, নইলে তো ও-ই তাঁকে শেষ করে দিত। এই খুনের একমাত্র সাক্ষী যে তিনিই!

তবে খুনি এখন অজ্ঞান। তাছাড়া ডাক্তারের কর্তব্য বলেও একটা ব্যাপার আছে। দু-দুটো লোকের মধ্যে কেউ বেঁচে থাকলেও থাকতে পারে ভেবে ডঃ রায় এবার সত্যিই চরম সাহসের পরিচয় দিয়ে গাড়ি ঘোরালেন।

খুনির বুকে হাত দিয়ে তিনি বুঝলেন, হৃৎপিণ্ড ধীরে ধীরে হলেও চলছে। হয়তো লোকটা কোমায় চলে গেছে। অনেক কষ্টে টেনে-হিঁচড়ে তাকে পেছনের সীটে তুললেন। তারপর খুনির শিকার সেই প্রথম লোকটির কাছে গেলেন।

প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে তার শরীরে জীবনের কোনও লক্ষণ পেলেন না ডঃ রায়। খুনি পেশাদার, ছুরি হয়তো সোজা হার্টেই বিঁধেছে। তবুও তিনি লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। এমন সময় একটা খসখস শব্দ তাঁর কানে এল।

একটু দূরে বেশ কিছুটা ঝোপজঙ্গলমতো জায়গা। শব্দটা সেখান থেকেই আসছে। এবার যেন একটা অস্পষ্ট শিসের আওয়াজ শোনা গেল। ডঃ রায়ের সাহস আবার চুপসে গেল। খুনি একা নয়, নিশ্চয়ই তার দলবল আশেপাশে রয়েছে। এক লাফে তিনি আবার মারুতিতে চড়ে বসলেন; পরমুহূর্তে স্টার্ট দিলেন। লাশটা পথের ধারেই পড়ে রইল।

বীরপুর মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে পৌঁছোতে তাঁর মিনিট দশেক লাগল। পেছনের সীটের লোকটির দেহে চেতনার কোনও লক্ষণ নেই। হাসপাতালে প্রায় সবাই ডঃ রায়কে চেনে। চটপট ঘটনার কথা বলে তিনি আহতকে তক্ষুনি আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সাথে সাথেই পুলিশেও ফোন করা হল।

হাসপাতালের ছোকরা ডাক্তার বিনোদ গুপ্তের ওপর আহতের দেখভালের দায়িত্ব পড়ল। স্ট্রেচারে তোলার সময় বিনোদ লোকটাকে দেখে যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। ডঃ রায়ের সাথে তার ভালোই পরিচয় ছিল। একটু পর তাঁকে এক নিরালা কোণে ডেকে এনে বিনোদ বলল, “করেছেন কী, মশাই!”

একটু অবাক হয়ে ডঃ রায় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই পুলিশ এসে পড়ায় তাঁদের কথাবার্তায় বাধা পড়ল।

ওসি ভবেশ হালদার সদ্য বীরপুরে বদলি হয়ে এসেছেন। ডাকাবুকো লোক, এসেই স্থানীয় কয়লা মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে ঢুকেই তিনি ডঃ রায়কে নিয়ে অচেতন খুনির বেডের পাশে গেলেন আর তারপর হঠাৎ ভয়ানক সক্রিয় হয়ে উঠলেন। তিনজন সশস্ত্র পুলিশকে বেডের পাশে মোতায়েন করা হল, থানা থেকে আরও লোক তলব করা হল। একটা পুলিশি জীপ সাথে সাথে তেঁতুলমারির মাঠের দিকে লাশের খোঁজে চলে গেল।

এবার তিনি ডঃ রায়ের দিকে ফিরে মৃদু হেসে বললেন, “ধন্যবাদ, ডাক্তারবাবু! একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের কাজ করতে গিয়ে আপনি সত্যিই প্রচুর সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি ভবিষ্যতে এই কেস যখন কোর্টে উঠবে তখনও সরকার ও আদালতকে সাহায্য করার ব্যাপারে আপনি এই সাহস অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবেন।”

“নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।” শুকনো হাসি হেসে বললেন ডঃ রায়। কিন্তু একটা চাপা আশঙ্কা তাঁর মনে দানা বাঁধতে লাগল। আর দু-চার কথার পর ওসি ওয়্যারলেসে তলব পেয়ে বাইরে চলে গেলেন।

একটু পরই তিনি ফিরে এলেন। গম্ভীরমুখে বললেন, “আপনার লাশ হাওয়া, ডাক্তারবাবু! সব ঠিকঠাক বলেছেন তো?”

ডাক্তারবাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বললেন, “বিশ্বাস করুন, আমি মৃতের গা ছুঁয়ে দেখে এসেছি। বোধহয় খুনির দলবল আশেপাশে ছিল, লাশ গুম করে দিয়েছে।”

ওসি স্থিরদৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “অন্য কারও কেস হলে ভাবতে পারতাম বেটপকা একটা লোককে চাপা দিয়ে আপনি একখান গালগল্প ফেঁদেছেন। কিন্তু যে মহাপ্রভুকে নিয়ে এসেছেন তাতে… যাক গে, ও-লাশ কোথায় গুম করবে, আমি এক্ষুনি তল্লাসিতে এলাকা ছেঁকে ফেলছি। তবে মনে রাখবেন, আপনার ওপর কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। খুনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী একমাত্র আপনিই। কোনও ভয় নেই, এখন থেকে আপনি চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ এসকর্ট পাবেন। আজ থেকে আপনার জীবনের দায়িত্ব আমার।”

ভরসা দিয়ে ওসি চলে গেলেন। কিন্তু ডঃ রায়ের মুখ দুশ্চিন্তায় শুকিয়ে গেল। কে এই খুনি ছোকরাটি? মুখচোখ, বেশভূষা দেখে তো মনে হয় ভদ্রঘরের ছেলে। কোনও রাজনৈতিক খুন-টুন নয় তো?

মনের আশঙ্কায় অস্থির হয়ে তিনি চট করে আবার বিনোদের কাছে গেলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “বিনোদ, সত্যি করে বলো তো, যাকে নিয়ে এলাম, ঐ খুনি ছেলেটি কে?”

কপাল চাপড়ে বিনোদ বলল, “হায় ভগবান, তাও জানেন না? তাই হবে। নইলে জেনেশুনে কেউ এমন কম্মো করে! বিশুর নাম শুনেছেন?”

ডঃ রায়ের বুক ঠাণ্ডা হয়ে গেল। বললেন, “ওই ক-কোল মাফিয়া সর্দার? কিন্তু সে তো…”

“না না, বিশুর বয়স চল্লিশের কোঠায়। আর ইনি হচ্ছেন তাঁর ডানহাত এবং প্রাণাধিক প্রিয় ছোটো ভাই রাধু।”

ডঃ রায় ধপ করে বসে পড়লেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “কী হবে, বিনোদ?”

শুকনো হাসি হেসে বিনোদ বলল, “বিশু আপনাকে ছাড়বে না, ডাক্তারবাবু। ওর ভাইয়ের জান এখন আপনার হাতের মুঠোয়। না জেনে আপনি এক মহা ফাঁপরে পড়ে গেছেন।”

জোর করে সাহসী সাজার চেষ্টায় ডঃ রায় বললেন, “কিন্তু পুলিশ আমাকে প্রোটেকশন দেবে।”

“কোনও পুলিশের বাবার সাধ্যি নেই আপনাকে বাঁচায়! বিশুকে তো চেনেন না, সব জায়গায় ওর লোক। পুলিশে, আদালতে, এমনকি এই হাসপাতালেও।” বলে বিনোদ একটু গলা নামিয়ে যোগ করল, “হুঁশিয়ার, ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই খবর ওদের কাছে পৌঁছে গেছে।”

“তবে উপায়?” ডঃ রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন।

“উপায়?” একটু ভেবে বিনোদ বলল, “উপায় একটাই। এখনকার মতো শহর ছেড়ে পালান। তারপর কোনওভাবে বিশুর কাছে খবর পাঠান যে যা হবার হয়ে গিয়েছে, এখন সাক্ষী-ফাক্ষি দিয়ে শত্রুতা বাড়ানোর ইচ্ছে আপনার নেই।”

“কিন্তু বিশুর সাথে যোগাযোগ করব কীভাবে?”

মুচকি হেসে বিনোদ বলল, “সেটা কঠিন নয়। তবে ইতিমধ্যে দেখুন কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।”

সে আরও কী যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেই সময় একজন নার্স এসে কিছু বলায় হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল। একটু পর ডঃ রায়ের পুলিশ গার্ড এসে গেল। একরাশ দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই তিনি ঘরের পথ ধরলেন।

রাত গভীর। অস্থির ডঃ রায় আধো ঘুমে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছেন। অবিবাহিত ডাক্তার একাই বাসায় থাকেন। আজ অবশ্য তাঁর সঙ্গী রয়েছে, গেটের আশেপাশে পাহারারত চারজন পুলিশ। খাওয়াদাওয়া কোনওমতে সারা হয়েছে, যদিও বিশেষ কিছুই গলা দিয়ে নামতে চায়নি। শেষ অবধি একসময় যখন ক্লান্ত চোখ ঘুমের সাথে লড়াই করে আত্মসমর্পণ করতে চলেছে, মোবাইলটা বেজে উঠল।

“হ্যালো দাদা, আমি বিনোদ।” ওপাশ থেকে ভেসে এল ফিসফিস কণ্ঠস্বর।

“এত রাতে, কী ব্যাপার? পেশেন্ট কেমন আছে?” ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন ডঃ রায়।

“ঐ… তা, একরকম আছে।” আমতা আমতা করে বলল বিনোদ, “একটা জরুরি ব্যাপারে ফোন করছি। অনেক কষ্টে আমি পেশেন্টের দাদার সাথে আপনার যোগাযোগের একটা ব্যবস্থা করেছি। ও একটা মিটমাট করে নিতে রাজি আছে।”

“বাঁচালে ভাই! তা, আমাকে কী করতে হবে?”

“শ-শ, ফোনে নয়। আপনি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন? হাসপাতালে চলে আসুন না।”

“এত রাতে? কাল সকালে এলে হয় না?”

“হতে পারে। তবে এসব ব্যাপার, কাল বড্ড দেরি হয়ে যেতে পারে। তখন যেন আমায় দুষবেন না।”

“না না, আমি এখনই গাড়ি নিয়ে আসছি।”

“বেশ। কিন্তু…” বিনোদ সতর্ক ভঙ্গীতে বলল, “আপনার সঙ্গের ঐ ওরা, ওদের আবার লেজে বাজিয়ে আনবেন না।”

“তাই কি সম্ভব? ওদের না জানিয়ে গাড়ি বের করব কী করে?”

“তবে থাক।” বিনোদ হাই তুলতে তুলতে বলল, “টিকটিকির গন্ধ পেলে কি আর মহাপ্রভুরা ধারেকাছে ঘেঁষবে ভেবেছেন?”

“না না, বিনোদ।” ডঃ রায় আকুল হয়ে বললেন, “দেখি কী করা যায়। আমি আসছি।”

জনহীন রাস্তায় তিরবেগে ছুটে চলেছে ডঃ রায়ের গাড়ি। হাসপাতাল পৌঁছতে আর বড়জোর পাঁচ মিনিট। উত্তেজনায় বুক ঢিপঢিপ করছে। একবার সন্দেহ হচ্ছিল, কাজটা ঠিক করলেন কি না। কিন্তু শেষ অবধি না এসে থাকতে পারলেন না।

গাড়ি বের করার কাজটা মোটেই সহজ হয়নি। তবে তাঁর বাড়ির পাঁচিলের পেছনেও যে ঝোপেঝাড়ে ঢাকা একটা ছোট্ট গেট আছে তা পুলিশ জানত না। ওরা সামনের দিকেই ঘুরঘুর করছিল। বাথরুমের পেছনের ঝাড়ুদারের দরজা খুলে বেরিয়ে নিঃশব্দে খিড়কি গেট খুলে ঠেলতে ঠেলতে গাড়ি বের করে এনেছেন ডঃ রায়। জংলা পথে শ’তিনেক মিটার অমানুষিক পরিশ্রমে গাড়ি ঠেলার পর যখন নিশ্চিত হয়েছেন যে ওরা স্টার্ট দেবার শব্দ শুনতে পাবে না, তখনই কেবল ইঞ্জিন চালু করেছেন।

বিনোদকে ভালো করে জিজ্ঞেস করার সময় হয়নি, তবুও ডঃ রায় তাড়াহুড়োর মধ্যেও সাথে করে এনেছেন ক্রেডিট কার্ড, চেকবই ও সাধ্যমতো টাকা। কে জানে, যদি কিছু আক্কেল সেলামি দিতে হয় তো তাড়াতাড়ি চুকিয়ে ফেললেই মঙ্গল।

সামনে একটা বাঁক ঘুরলেই হাসপাতাল। এমন সময় হঠাৎ ডঃ রায় একটা শিসের আওয়াজ শুনতে পেলেন। পাশের ঝোপের থেকে আসছে কি? হঠাৎ তাঁর মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। এই আওয়াজ তিনি আগেও শুনেছেন – খুনটা হওয়ার একটু পরে, ঘটনাস্থলের আশেপাশে ঝোপজঙ্গলের মধ্যে। যা শুনে তিনি লাশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন!

দ্রুত অ্যাকসেলারেটরে চাপ দিতে গিয়ে ডঃ রায় দেখলেন, সামনের মোড়ে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে একটা জীপ। চট করে গাড়ি ঘোরাবার চেষ্টায় পেছনে তাকিয়ে সেখানেও দূরে একটা আগুয়ান ভ্যানের আবছা অবয়ব দেখতে পেলেন। ডঃ রায়ের তীক্ষ্ণ উপস্থিতবুদ্ধিতে সাথে সাথে ধরা পড়ল, তিনি ফাঁদে পড়েছেন!

কপাল ভালো, কলেজে থাকতে তিনি চুটিয়ে এনসিসি করেছিলেন। তাই বিপদে হাত-পা-মাথা চটপট খেলে। সাথে সাথে আলো নিভিয়ে দিয়ে ডঃ রায় নিঃসাড়ে দরজা খুলে নেমে এলেন। পাশের ঝোপেও হয়তো শত্রু, তবুও তো গা ঢাকা দেওয়ার একটা সুযোগ আছে। দু’বার বিবেচনা না করে তিনি ঝোপজঙ্গলে ঢুকে পড়লেন।

পেছনের ভ্যানটা ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে। হঠাৎ সেখান থেকে একটা গোলমতো জিনিস তাঁর গাড়ির দিকে উড়ে এসে পড়ল আর প্রায় সাথে সাথে সশব্দে ফাটল। ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ডঃ রায় দেখলেন যেখানে তাঁর গাড়ি ছিল, সেখানে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেঁড়াখোঁড়া, ঝলসানো এক ধাতুর কঙ্কাল।

ভ্যানটা যেতে যেতে এক মুহূর্ত দাঁড়াল। “শাল্লা, ফিনিশ!” পরম উল্লাসে একজন মন্তব্য করল।

“নেমে দেখে গেলে হত না?” শোনা গেল আর একটি কণ্ঠস্বর।

“দরকার নেই, এখন জলদি ফোট। আওয়াজ শুনে মামারা এল বলে।” বলল প্রথম কণ্ঠ।

দেখতে না দেখতে ভ্যান উধাও হয়ে গেল।

অন্ধকার জঙ্গলে একা দিশেহারা পথ চলছেন ডঃ রায়। কোথায় যাবেন জানেন না। বাড়ির কথা খুব মনে হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কীভাবে পৌঁছোবেন জানেন না। আন্দাজে পথ হাতড়ে এগোবার চেষ্টা করছেন।

বরাত ভালো, ওরা তাঁকে মৃত ভেবেছে। কিছুক্ষণ গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারলে হয়তো রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন চট করে বাড়ি ঢুকে পড়া যাবে। তবে রাতের অন্ধকার থাকতে থাকতে কাজটা সারতে পারলেই ভালো।

মাথা ঠিক কাজ করছে না। তবুও বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না, কে তাঁকে এই ফাঁদে টেনে এনেছে। “ওদের লোক হাসপাতালেও আছে,” বলেছিল বিনোদ। সে যে কে, এখন স্পষ্ট। কিন্তু কেন ওরা তাঁকে একটু বিশ্বাস করতে পারল না? তিনি তো সহযোগিতায় রাজী হয়েছিলেন।

বেশ কিছুক্ষণ চলেছেন, ভোর হতে বোধহয় বেশি দেরি নেই। এমন সময় ডঃ রায় বুঝতে পারলেন তিনি বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছেন। বাড়ি মানে পুলিশ, মানে আশ্রয়! খুশির আবেগে তিনি জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় পা দিতে যাচ্ছেন, এমন সময় কে যেন পেছন থেকে ফিসফিসিয়ে বলল, “ওদিকে নয় ডাগদরবাবু, আমার সঙ্গে আসুন।”

ডঃ রায়ের পা যেন জমে গেল। পেছনে ঘুরে তাকাবেন, সে সাহসও নেই। এমন সময় সামনে রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়ালেন। দেখলেন, একটা ভ্যান – সম্ভবতঃ সেই খুনে ভ্যানটা!

ভ্যানটা একটু দাঁড়াল। সামনে পেছনে বিপদের মধ্যে ডঃ রায় ভয়ে পাথর হয়ে একটা ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন সময় কানে এল ভ্যানের থেকে কে যেন বলছে, “মনে হয় ব্যাটা বেঁচে গেছে।”

“হতেই পারে না। গাড়ির যা অবস্থা…”

“কিন্তু পুলিশ থেকে খবর এসেছে, গাড়ির মধ্যে কোনও ঝলসানো লাশ মেলেনি। নিশ্চয়ই লোকটা কোনওভাবে গন্ধ পেয়ে আগেই সটকেছে।”

“তাহলে এখন কী হবে? জানতে পারলে তো বস আমাদের জানে মেরে দেবে।”

“আরে, কদ্দুর পালাবে? এতক্ষণে মনে হয় নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে।”

“চল, তাহলে কাজটা সারা যাক। কিন্তু ওখানে মামারা…”

“চিড়িয়া উড়েছে জানতে পেরে ওরা আশেপাশে খুঁজতে বেরিয়েছে, একটাই শুধু পাহারায়।”

“কোনও ব্যাপার না। চল।”

ডঃ রায়ের হাত-পা ততক্ষণে কাঁপতে আরম্ভ করেছে। এক ভয়ংকর অমঙ্গলের আশঙ্কা বুকে নিয়ে তিনি স্থাণু হয়ে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ পর তাঁর আশঙ্কা সত্যি করে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ আর কিছু দূরে আকাশ আগুনের আভায় লাল হয়ে উঠল। ঝোপের আড়াল থেকে দেখা না গেলেও ডাক্তারবাবুর বুঝতে অসুবিধা হল না, গাড়ির পর এবার তাঁর বাড়ি শেষ হয়ে গেল!

পেছন থেকে কে যেন তাঁর হাত ধরে টানল, সাথে সাথে এক ফিসফিস আওয়াজ, “ডরাবেন না ডাগদরবাবু, আমি আছি! সামনে নয়, এদিকে আসুন।”

অনেক কষ্টে সাহস করে ডঃ রায় ধীরে ধীরে মুখ ফেরালেন। ক্ষীণ আলোয় চোখ সয়ে গেলে বুঝতে পারলেন, তাঁর হাত ধরেছে এক কদাকার লোক। তার হাতটা অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা, নাক থ্যাবড়া আর মাথাটা বেখাপ্পাভাবে বড়ো। কোথায় দেখেছেন অমন মুখ? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে উঠল, চোখের সামনে ধোঁয়া ধোঁয়া। তারপর আর কিছু মনে নেই।

।।২।।
“সারজি, উঠুন।”

একটা বিরাট অন্ধকার সুড়ঙ্গের ওপার থেকে কে যেন তাঁকে ডাকছে। ডঃ রায় ধীরে ধীরে চোখ মেললেন, উঠে বসলেন। তাঁর মুখের ওপর ঝুঁকে এক গোঁফওয়ালা পাগড়িধারী।

“সারজি, মীরগঞ্জের মোড় এসে গেছে। এখানেই আপনাকে নামতে হবে।”

ডঃ রায় এতক্ষণে বুঝলেন, তিনি একটা বদ্ধ ট্রাকের ভেতর শুয়েছিলেন। তাঁর চারপাশে অজস্র বস্তা, নিচে রাশিকৃত খড়। যে তাঁকে ডাকছে, সে সম্ভবত ট্রাক ড্রাইভার।

“মীরগঞ্জ, মানে বিহার? সে তো অনেকদূর! এখানে আমি কী করব?”

“তা তো জানি না। তবে আপনাকে এখানেই নামিয়ে দেওয়ার হুকুম আছে।” ড্রাইভারের কণ্ঠে মৃদু হলেও আদেশের সুর।

অগত্যা ডঃ রায় ট্রাকের পেছন দিয়ে ঝুলে নামলেন; ড্রাইভারের ইশারায় সামনে এলেন। লোকটি এবার তার পাশে রাখা একটা ঝোলা ব্যাগ ডঃ রায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “আর এই নিন আপনার ব্যাগ।”

ডঃ রায় আপত্তি জানানোর আগেই সে ট্রাকে উঠে চটপট স্টার্ট দিয়ে দিল আর দেখতে না দেখতে উধাও হয়ে গেল।

ব্যাগের ভেতর একটা জলের বোতল, একটা কাগজে জড়ানো দুটো শুকনো রুটি আর কিছু অত্যাবশ্যক টুকিটাকি। ডঃ রায়ের মাথা তখনও ভোঁ ভোঁ করছে। বাইরে এখন উজ্জ্বল রোদ্দুর। ঘড়িতে দেখলেন, বেলা এগারোটা। গত বারো-তেরো ঘণ্টা তাঁর জীবন ওলট-পালট করে দিয়েছে। গতকালও তাঁর ছিল কী সুন্দর, স্বস্তির জীবন। কিন্তু এখন তিনি রাতারাতি বলতে গেলে সর্বস্বান্ত। সাথে সাথে এক দিশেহারা আতঙ্ক, প্রতি মুহূর্তে প্রাণ হারাবার আশঙ্কা তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কেন সহযোগিতার সুযোগ না দিয়েই বিশুর দল তাঁর প্রতি এত নৃশংস হয়ে উঠল?

আরেক রহস্য, এর মধ্যে আবার কে যেন তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। জঙ্গলের মধ্য থেকে প্রথমে শিস দিয়ে, তারপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সে তাঁকে ঘাতকের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। তারপর এই ট্রাকে তুলে দিয়ে আপাত-নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছোবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কে সে? কেন সে তাঁকে বাঁচাবার চেষ্টা করছে? হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যেকার কদাকার মুখটা মনে পড়ে তিনি আবার শিউরে উঠলেন। মুখটা যেন ঠিক সেই রাধুর হাতে খুন হওয়া লোকটার!

কিন্তু না। আতঙ্কিত দেহে-মনে, আবছা আলোয় নিশ্চয়ই তিনি ভুল ভেবেছিলেন আর তার ফলে ভিরমি খেয়েছিলেন। এখন উজ্জ্বল দিনের আলোয় চিন্তাটা জোর করে মন থেকে সরিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলেন, এবার কী করণীয়? বেশ খিদে পেয়েছে। এক কাপ কড়া চা দিয়ে রুটিদুটো মেরে দিলে মন্দ হয় না। পকেট হাতড়ে দেখলেন, টাকাপয়সা, কার্ড, চেকবুক অক্ষুণ্ণই আছে। পাশে একটা হোটেল দেখে তিনি সেদিকে এগিয়ে গেলেন।

হোটেলটির নাম ‘বান্টি লজ’। শুধু খাওয়ার নয়, থাকারও ব্যবস্থা আছে। ভেতরে কাউন্টারে বসে এক বিশালবপু ভদ্রলোক। জানালেন, তিনি ম্যানেজার নন, মালিক। তারপর ডঃ রায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।

“আমি মানে, দুয়েকদিনের জন্য একটা ঘর…”

সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর মালিক বললেন, “আইডেন্টিটি আছে?”

ডঃ রায় অনিশ্চিতভাবে পকেট হাতড়াচ্ছেন, এমন সময় কাউন্টারের টেলিফোনটা বেজে উঠল। তুলে নেওয়ার পর মালিকের দৃষ্টিতে সম্ভ্রমের ছাপ ফুটে উঠল। “হ্যাঁ জী, হ্যাঁ জী। আচ্ছা, আমি করে দিচ্ছি।” ফিসফিসিয়ে বলার পর তিনি ডঃ রায়ের দিকে ঘুরে বললেন, “আপনি ডাগদরবাবু?”

“হ্যাঁ। কেন?”

“আপনার রুম সাতদিনের জন্য বুক হয়ে গেছে। এই ছোট্টু, যা, ডাগদরবাবুকে সাত নম্বরে নিয়ে সব দেখিয়ে-শুনিয়ে দে।”

বুক হয়ে গেছে! কে করল? ডাক্তারবাবু অবাক হলেও আর কথা না বাড়িয়ে ছোট্টুর পেছন পেছন চললেন।

রুমটা চলনসই। আর এই প্রায়-ভিখিরি অবস্থায় এর চেয়ে বেশি ভাবাও চলে না। ঘর দেখে হাতমুখ একটু ধুয়ে তিনি নিচে নেমে এলেন কিছু খেতে। সেখানে হিন্দি প্রভাতী সংবাদপত্র রাখা আছে। ডঃ রায় কষ্টেসৃষ্টে হলেও হিন্দি পড়তে পারেন। কাগজটা নিয়ে মনোযোগ সহকারে পাতা ওলটাতে লাগলেন। হঠাৎ একটা খবরে তাঁর চোখ আটকে গেলঃ

‘বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের শহর বীরপুরে তুমুল উত্তেজনা। পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, কাল সন্ধ্যায় এই শহরের অন্যতম মাফিয়া লিডার রাধু খুন করে পালাবার সময় এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যায়। খুনের ঘটনাটি সম্ভবত দুই মাফিয়া গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বের পরিণতি। রাধুর মৃত্যুতে উত্তেজিত তার গ্যাং ইতিমধ্যেই শহরে নানা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাতে শুরু করেছে। তারা আগামীকাল বন্ধের ডাক দিয়েছে।’

ডঃ রায় ঘামতে লাগলেন। এতক্ষণে সব বোঝা গেল। রাধু মারা গেছে আর তাই বিনোদ মারফত তার দল তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল বদলা নেওয়ার জন্য। কপালজোরে আর কোনও অজানা রক্ষকের কল্যাণে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। কিন্তু ক’দিন? এর পর তো আর ওরা তাঁকে কোনওদিনই ক্ষমা করবে না। বীরপুর ফেরার পথ বলতে গেলে বন্ধ। কিন্তু তার বদলে করবেন কী? যাবেন কোথায়? এই মীরগঞ্জেই বা তিনি কদ্দিন নিরাপদ? আর ভাবতে পারছেন না।

তবে বিল তো মেটাতেই হবে। কাউন্টারে যেতেই মালিক তাঁর দিকে চেয়ে হাতজোড় করে বললেন, “লজ্জা দেবেন না। বলেছি তো, সাতদিনের টাকা দেওয়া আছে। আমার বরং আপনার কাছে একটা আর্জি ছিল।”

অবাক হয়ে ডঃ রায় বললেন, “কী আর্জি?”

“আমার এক বোর্ডার অসুস্থ। এখানে তো কাছেপিঠে ডাগদর নেই। আপনি যদি একটু দেখে দেন…”

একটু ভেবে ডঃ রায় বললেন, “তা পারি। কিন্তু আমি আচমকা এসে পড়েছি, সঙ্গে দাওয়াই বা যন্ত্র নেই। তাই কতটা কী করতে পারব জানি না।”

একটু ইতস্তত করে মালিক বললেন, “মনোজের কাছে ওই প্রিশার মাপার আর বুক দেখার যন্তর আছে। এখানে ডাগদর কোথায়, ও-ই ওসব দিয়ে রোগী দেখে। ও খুব ভালো লড়কা, আমি বলে এক্ষুনি ওগুলো উধারে এনে দিচ্ছি। আর দাওয়া আপনি লিখে দেবেন, এক মিল দূরের ইস্টিশনের কাছের দাওয়াখানা থেকে আমি আনিয়ে লিব।”

সুতরাং রাজি না হয়ে উপায় ছিল না। রোগী বছর পঞ্চাশের মিঃ শর্মা, পেটের খুব গোলমাল। পরীক্ষা করার পর ডঃ রায় বললেন, “বোধহয় কোনও পচা খাবার খেয়ে হয়েছে। কিছু মনে পড়ে?”

“আমি একজন সেলসম্যান, অনবরত ঘুরে বেড়াই। হয়তো কোথাও খাবার খারাপ ছিল।”

“বেশ, এই অ্যান্টিবায়োটিকটা লিখে দিচ্ছি, তিনদিন খাবেন। আর হোটেলে খাওয়ার মধ্যেই যথাসাধ্য হালকা খাবার খাবেন। বাড়ি কবে ফিরছেন?”

“দিন সাতেক পর ফেরার কথা। তবে আপনি যদি বলেন…”

“বোধহয় দরকার হবে না। সাবধানে থাকবেন। আর কাল সকালের মধ্যে ভালো না বোধ করলে আমায় ডাকবেন, বাড়তি ভিজিট লাগবে না।”

মিঃ শর্মা চটপটই সুস্থ হয়ে গেলেন। মালিক একসময় ডঃ রায়কে ডেকে বললেন, “একটা কথা ডাগদরবাবু, কিছু মনে করবেন না। আপনার যদ্দিনের পেমেন্ট করা আছে, থাক। কিন্তু তারপরও আপনি ফ্রিতেই থাকুন। শুধু তার বদলে আমার বোর্ডারদের কোনও বিমারি হলে একটু দেখে দেবেন।”

প্রস্তাবটা মন্দ নয়। রাজি হয়ে গেলেন ডঃ রায়। আরও ঠিক হল, মালিক একতলায় একটা ছোট্ট ঘর ডাক্তারবাবুর বসার জন্য দেবেন। মালিক ডঃ রায়ের পরামর্শমতো কিছু অতি ব্যবহৃত ওষুধ এখানে এনে রাখবেন আর মনোজ তার যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করবে। আর হোটেলের বাইরের যেসব পেশেন্ট আসবে, তাদের ভিজিটের টাকা ডাক্তার, মনোজ আর মালিকের মধ্যে ভাগ হবে।

“আমিও যদ্দুর পারি মনোজকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যাব। যখন আমি চলে যাব…”

মালিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তা তো যাবেনই। আপনারা পড়িলিখি মানুষ, এখানে কি চিরদিন পড়ে থাকবেন? তবে যদ্দিন আছেন…”

কিন্তু যাবেনটা কোথায়? বিয়ে করেননি। কলকাতায় নিকটাত্মীয় তেমন কেউ নেই যার কাছে এই দুঃসময়ে আশ্রয় চাইতে পারেন। আর বীরপুরের কথা ভাবলে এখনও হৃৎকম্প হয়। তবুও খোঁজ তো একটা নিতেই হবে। হঠাৎ খেয়াল হল, তাঁর মোবাইলটা পকেটেই রয়ে গেছে। তবে সেই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের রাতে গাড়ি থেকে নামার পর অফ করে দিয়েছিলেন। তারপর কেউ টাওয়ার ট্রেস করে তিনি কোথায় আছেন বুঝে ফেলতে পারে, সেই ভয়ে অন করেননি। কিন্তু এবার রিস্ক নিয়ে অন করতেই হবে।

ব্যাটারি অবশ্য খুব লো। চার্জারও আনা হয়নি, সুতরাং কিনতে হল। অনেকক্ষণ লাগল মোবাইল চার্জ হতে। তারপর তিনি খুঁজে দেখলেন, ওসি ভবেশ হালদারের নম্বর সেভ করা আছে। দুরু দুরু বুকে ডায়াল করলেন।

বার দুয়েক না লাগার পর অবশেষে লাইন পেলেন। ওদিক থেকে শোনা গেল, “ইনস্পেক্টর হালদার স্পীকিং। হু আর ইউ কলিং প্লিজ?”

ডঃ রায় পরিচয় দিতে তিনি অবাক খুশিতে বলে উঠলেন, “আপনি বেঁচে! আমরা তো ধরে নিয়েছিলাম বাড়ির ব্লাস্টেই আপনি… যাক গে, এখন কোথায়?”

“বলছি। কিন্তু ওখানকার খবর কী?”

“খবর খুব খারাপ। প্রথমত, কাগজে দেখেছেন হয়তো ওই রাধু কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেছে আর তার জেরে বিশুর দল সারা শহরে এই ক’দিন তাণ্ডব চালিয়েছে। সেসব কড়া হাতে দমন করতে পারতাম না, তা নয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি, এই অজুহাতে ওপরমহল থেকে আমাকে বদলি করা হয়েছে। আমি কালই চলে যাচ্ছি।”

“তাহলে বীরপুর এখন সম্পূর্ণই বিশুর গ্যাংয়ের দখলে?”

“সম্পূর্ণই। এবার ওরা যথেচ্ছ অত্যাচার করে বেড়াবে। আর আপনি শিগগিরিও ওখানে ফেরার চেষ্টা করবেন না। বরং আমি আমার নতুন পোস্টিংয়ে গিয়ে সেখানকার ঠিকানাপত্তর আপনাকে জানাব। আপনি সেখানে গেলে আপনার আপাতত নিরাপদে থাকার একটা ব্যবস্থা আমি করতে পারব। আর হ্যাঁ, যে লোকটাকে আপনি খুন হতে দেখেছিলেন তার লাশ বোধহয় ওরা পাথর বেঁধে খালের জলে ফেলে দিয়েছিল, ক’দিন পর সেটা ভেসে ওঠে। তবে আপনি না থাকায় শনাক্ত করা যায়নি।”

“মৃত লোকটার মাথাটা কি বেখাপ্পা বড়ো, নাকটা থ্যাবড়া আর একটা চোখ ট্যারা?” ডঃ রায় ফিসফিসিয়ে জিগ্যেস করলেন।

“হতেও পারে। তবে লাশটা ফুলেফেঁপে এমন হয়েছিল! তাছাড়া খুনি নিজেই যখন বেঁচে নেই তখন আর ঐ কেস নিয়ে…”

“তা তো বটেই। এনিওয়ে, আপনার সাহায্যের অফারের জন্য ধন্যবাদ।” ডঃ রায় চিন্তিত মনে ফোন ছেড়ে দিলেন।

।।৩।।

একজন ডাক্তার থাকায় বান্টি লজের ব্যবসা বেড়েছে। ডঃ রায়েরও কিছু রোজগার হচ্ছে। কারণ, বোর্ডার ছাড়াও রোজই বাইরের লোক দেখাতে আসে। সেদিনও এসেছিল। তার মধ্যে একজনকে দেখে ডঃ রায়ের কেমন যেন অস্বস্তি শুরু হল। লোকটার চোয়াড়ে চেহারা, ছুরির মতো শানিত দৃষ্টি আর সে আড়চোখে তাকিয়ে মাঝে মাঝে যেন ডঃ রায়কে মাপছিল। জ্বরের ওষুধ নিতে এসেছিল। কিন্তু তার হাতের একটা পোড়া ঘা দেখে ডঃ রায়ের মনে হল সেটা আগুনে নয়, কোনও বোমার বিস্ফোরণে ঝলসে হয়েছে।

তখন সন্ধ্যাবেলা, হাতে আর রোগী নেই। ডঃ রায়ের খুব অস্বস্তি লাগছে, কী করা উচিত বুঝতে পারছেন না। শেষে মনোজের হাতে ডিসপেনসারি ছেড়ে একটু বেরোলেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিঃশব্দে লোকটার পিছু নিলেন।

লোকটা কিছুটা পথ মূল রাস্তা ধরে চলার পর একটা গলিতে ঢুকল। তারপর অন্ধকার একটা জায়গা বেছে তার মোবাইল অন করল। একটু দূরে গা ঢাকা দিয়ে ডঃ রায় শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন।

“হ্যাঁ বস, আমি শিওর, এটাই ঐ ডাক্তার। ভাগ্যিস এক বন্ধুর বাড়ি এসে জ্বরে পড়ে দাওয়াইয়ের খোঁজে গিয়েছিলাম, তাই হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। হ্যাঁ, মাল জিন্দা আছে। কী করে, সেটাই তাজ্জব। সেঁটকে দিই? একা কিছু করতে বারণ করছ? ঠিক আছে, অপেক্ষা করা যাক। হ্যাঁ, কী করে এখানে আসতে হবে বলছি শোনো…”

ভয়ে কাঠ হয়ে শুনতে শুনতে ডঃ রায় খেয়াল করেননি, তাঁর পেছন থেকে আর একটা ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে সেটা আগের লোকটার সামনে দাঁড়াল। লোকটা কাতর আর্তনাদ করে উঠল। ডঃ রায় ভয়ে চোখ বুজলেন। একটু পরে তাকিয়ে দেখেন, লোকটা মাটিতে পড়ে আর তার গলা দিয়ে একটা ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরোচ্ছে। দেখতে দেখতে তার দেহটা ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে গেল আর ছায়াটা গলিপথে মিলিয়ে গেল। যাবার আগে সে যেন একবার ডঃ রায়ের দিকে চেয়ে হাসল আর ডঃ রায় চমকে উঠলেন – এ সেই থ্যাবড়া নাক, বেঢপ মাথা রাধুর হাতে খুন হয়ে যাওয়া লোকটা!

প্রায় ছুটতে ছুটতে নিজের রুমে এসে ডঃ রায় দরজা বন্ধ করে ঠকঠকিয়ে কাঁপছিলেন। সন্দেহ নেই, প্রথম লোকটা বিশুর দলের। দৈবাৎ তাঁকে দেখে চিনতে পেরে দলে খবর পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে জায়গাটার হদিস জানাবার আগেই দ্বিতীয় লোকটি এসে পড়ে তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে, হয়তো চিরদিনের মতো। অর্থাৎ আবার সে তাঁকে রক্ষা করল!

কিন্তু কে এই লোকটা? নাকি এ আদৌ লোক নয়? অমন অদ্ভুত চেহারা কি পৃথিবীতে দু’জনের হতে পারে? কিন্তু, সে তো মৃত! ওসি হালদারও তো সেটা মোটামুটি কনফার্ম করলেন। তাহলে? রক্ষা পেয়েও ডঃ রায় ভয়ের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

তবে যে-ই হোক, সে ডঃ রায়ের ভালোই চায়। কিন্তু কেন? তিনি ওকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন, শুধু এটুকু কৃতজ্ঞতার বশে? সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে; মাথা কাজ করছে না।

কতক্ষণ এভাবে ছিলেন, কে জানে। এমন সময় হঠাৎ দরজায় জোর ধাক্কা। খুলে দেখেন হোটেল মালিক। হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, “জানেন, একটু আগে যে লোকটা আপনার কাছে দেখাতে এসেছিল সে মরে গেছে।”

“সে কী, কীভাবে!” অবাক হওয়ার ভান করলেন ডঃ রায়।

“একটু দূরে একটা গলির ভেতর তার লাশ পাওয়া গেছে। গলার নলিটা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেছে – কে জানে পড়ে গিয়ে, নাকি কেউ মেরেছে। মীরগঞ্জে অবশ্য ছোটোখাটো ক্রাইম হলেও খুন-টুন আগে কখনও হয়নি।”

“লোকটা বোধহয় ক্রিমিনাল। দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল।” ডঃ রায় ধীরে ধীরে বললেন।

“তবে হয়তো রাইভাল গ্যাংয়ের কেউ মেরে দিয়েছে।” মালিক এবার গলা নামিয়ে বললেন, “কিন্তু পুলিশ খোঁজ করতে এলে আবার বলবেন না যে সে এখানে এসেছিল। তাহলে আমরা সবাই কেসে ফেঁসে যাব। আর এবার থেকে আমাদের একটু দেখেশুনে পেশেন্ট ঢোকাতে হবে।”

“ঠিক বলেছেন।”

মালিক বিদায় নিলে ডঃ রায় দুশ্চিন্তায় ডুবে গেলেন। ঐ লোকটা কি মরার আগে বিশুকে তাঁর হদিশ দিতে পেরেছিল? হয়তো পেরেছে, হয়তো পারেনি। কিন্তু কোনও ঝুঁকি নেওয়া চলে না। ওরা একবার এসে পড়লে কেউ তাঁকে বাঁচাতে পারবে না। এমনকি অতীতে তাঁর ‘রক্ষক’ও শত্রুর দলের মুখোমুখি হওয়ার আগেই তাঁকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে।

কিন্তু তার ভরসায় না থেকে এবার তাঁকে নিজে থেকেই সরে যেতে হবে। প্রথমে খোঁজ নিতে হবে এখান থেকে ট্রেনে-বাসে কীভাবে কলকাতা বা আশেপাশে কোথাও যাওয়া যায়। কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন, এই ক’দিনে আরও কিছু রোজগার হয়েছে। এছাড়া সঙ্গে আছে ক্রেডিট কার্ড আর চেকবই। সেগুলো বিহারের এই মফস্বল শহরে অচল, কিন্তু কলকাতায় ঠিক চলবে। সব মিলিয়ে আবার কোথাও গা ঢাকা দেওয়ার মতো আস্তানা খুঁজে নিতে হবে। তার মধ্যে যদি ইনস্পেক্টর হালদারের ডাক আসে…

।।৪।।

ডঃ রায় যেসব রোগী দেখতেন, তাদের অনেকেই গরিব। প্রায়ই তিনি এমন রোগীর বাড়ি গিয়ে প্রায় বিনামূল্যে চিকিৎসা করতেন। এই রোগীদের কাছে তিনি ছিলেন ভগবান।

এমন এক রোগী ছিল মীনা বলে একটি ছোট্ট মেয়ে। তার বাবা বৈজু রিকশা টানে, মা বাড়ি বাড়ি ধোয়ামোছার কাজ করে। মেয়েটি অপুষ্টি ও কৃমির জন্য কঠিন রক্তাল্পতায় ভুগছিল। দীর্ঘ চিকিৎসায় ডঃ রায় তাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। পয়সাকড়ি বিশেষ নেননি, এমনকি অনেক ওষুধও নিজে কিনে দিয়েছিলেন। পরিবারটি তাই তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ ছিল।

একদিন সন্ধ্যায় ডঃ রায় সবে রোগী দেখা শেষ করেছেন, তাঁর মোবাইল বেজে উঠল। অজানা নম্বর। তুলে শুনতে পেলেন এক সন্ত্রস্ত স্বর, “ডাগদর সাব, আমি বৈজু, টিভির দোকানের মালিকের ফোন থেকে আপনাকে ফোন করছি। বহোত খতরা! ইস্টিশানে টিরেন থেকে কয়েকজন ষণ্ডামতো আদমি নেমেছে। দেখে মনে হয় দাগি আসামী। তারা রিকশাওয়ালাদের কাছে আপনার খোঁজ করছিল।”

ডঃ রায়ের বুক হিম। ওরা কোনওভাবে ঠিক তাঁর হদিশ পেয়ে গেছে। এই দিনটিরই আশঙ্কা তিনি করছিলেন। কিছুটা প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু আর কিছুটা সময় দরকার ছিল। যাই হোক, জিনিসপত্র মোটামুটি গোছানোই ছিল। চটপট কয়েক মিনিটে সেগুলো প্যাক করে তিনি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলেন। হোটেলের কেউ দেখলে প্রশ্ন করবে ভেবে ব্যাগটা ঢেকেঢুকে বেরোলেন।

এবার ঠিক করতে হবে, কোথায় যাবেন। হোটেল মালিককে বলে সাহায্য চাইবেন? কিন্তু তিনি গুণ্ডাদের গ্যাংয়ের কাছ থেকে তাঁকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন, না সেই ঝুঁকি নেবেন? উঁহু, তাঁকে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে হবে। এখনই মীরগঞ্জ ছেড়ে পালাতে হবে। স্টেশনের দিকে যাওয়া নিরাপদ নয়, সুতরাং বাস-স্ট্যান্ড। সেদিকেই রওনা দিলেন ডঃ রায়।

কপাল খারাপ। পুবদিক অর্থাৎ ঝাড়খণ্ড-বাংলার দিকে যাওয়ার বাস একটু আগে ছেড়ে গেছে, আবার রাত এগারোটায়। এতক্ষণ কী করেন? আপাতত কিছু খেয়ে তো নেওয়া যাক। একটা ধাবায় গিয়ে রুটি-তরকারির অর্ডার দিলেন।

হঠাৎ মনে হল, কে যেন আড়ালে থেকে তাঁকে লক্ষ করছে। কিন্তু এদিক ওদিক তাকিয়েও কিছু দেখতে পেলেন না। কে জানে, হয়তো নার্ভাস হয়ে পড়েছেন, তাই উলটোপালটা চিন্তা মনে আসছে।

তবুও তিনি সতর্ক হয়ে গেলেন। খাচ্ছেন আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। এমন সময় দেখলেন, কিছু দূরে বাস-স্ট্যান্ডের কাছে একটা উত্তেজিত জটলা। কারা যেন কীসব জিগ্যেস করছে। তারপর শুনলেন একজন বলছে, “না, ডাক্তারবাবু এদিকে আসেননি। কী করতে আসবেন, এখন তো কোনও বাস নেই।”

একটা গুণ্ডামতো লোক তাকে বলল, “আরে না ভাই, বান্টি হোটেল থেকে ক’জন বলল উনি এদিকেই এসেছেন। একটু দ্যাখো না, আমার একজন আর্জেন্ট পেশেন্ট দেখাতে হবে।”

তখন আরেকজন বলল, “হ্যাঁ, উনি এদিকে এসেছিলেন। হয়তো আছেন আশেপাশে কোথাও।”

শুনেই লোকগুলোর মধ্যে এক বীভৎস উল্লাসধ্বনি জাগল। তারা আশেপাশের দোকানগুলির মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ধাবায় এসে পড়বে। তারপর…

হঠাৎ শুনলেন একটু দূর থেকে কে যেন তাকে ফিসফিসিয়ে বলছে, “বহুত খতরা, ডাগদরবাবু। ওরা পাঁচজন। আপনি ধাবার পেছন দিয়ে বেরিয়ে রাস্তায় উঠে ভাগতে থাকুন।”

চমকে উঠে ডঃ রায় দেখলেন, ধাবার বাইরে একটু দূরে বাস-রাস্তার ওপর সে দাঁড়িয়ে আছে। মিটমিটে আলোয় দেখা যাচ্ছে তার কালো চাদরে ঢাকা আবছা মূর্তি। মাথা বেখাপ্পা রকমের বড়ো, নাক বিরাট আর থ্যাবড়া, আর এবার তিনি দেখতে পেয়েছেন, চোখটাও ট্যারা!

তবে তখন আর সে নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। ডঃ রায় তাঁর ‘রক্ষক’-এর নির্দেশমতো ধাবার পেছন দিয়ে বেরোলেন। সেখানে অন্ধকার, কিছু গাছপালার ঝোপ। তার মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে চলে তিনি একটু দূরে গিয়ে বাস-রাস্তায় পড়লেন। সেখানে মিটমিটে আলোর থেকে যথাসাধ্য গা বাঁচিয়ে পুবের দিকে সাধ্যমতো দ্রুত পা চালালেন।

হঠাৎ পেছনে শোনা গেল একটা হট্টরোল, “ঐ, ঐ যে পালাচ্ছে।” সাথে সাথে একটা দঙ্গল উৎকট উল্লাসধ্বনি তুলে তার পেছন পেছন ধেয়ে আসতে শুরু করল। প্রাণভয়ে ডঃ রায় এবার ছুটতে শুরু করলেন। কিন্তু কতক্ষণ? দূরত্ব ক্রমেই কমে আসছে, ঘাতকদের চিৎকারও ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। “এবার আর শালা ভাগতে পারবে না,” “এখানেই পুঁতে রেখা যাব” এইসব টুকরো টুকরো কথা কানে আসছে। ডঃ রায় বুঝতে পারছেন সময় ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু তবুও আত্মরক্ষার অন্ধ প্রবৃত্তিতে ছুটে চলেছেন।

হঠাৎ যেন পেছনের ঘাতকদের মধ্যে একটা বিস্ময়ের ধ্বনি জাগল। ডঃ রায়ও মুহূর্তের জন্য থমকে পেছন ফিরে দেখেন, সেই কালো চাদর জড়ানো মূর্তিটা রাস্তার পাশ থেকে ক্ষিপ্রগতিতে বেরিয়ে এসে তাঁর ও পশ্চাদ্ধাবকদের মাঝে দাঁড়িয়েছে। এবার একটা চাপা গর্জন করে সে খুনেগুলির দিকে ধেয়ে গেল। ভয়ে দিশেহারা হয়ে তারা ছুটে পেছনে পালাতে গেল। কিন্তু হঠাৎ সেখানে এক বিরাট বিস্ফোরণের আওয়াজ। কাঁপতে কাঁপতে ডঃ রায় দেখলেন, জায়গাটা ধোঁয়া ও বারুদের গন্ধে ভরে গেছে আর ভালো করে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে কিছু মরণাহতের আর্তনাদ।

কী করবেন ভাবার আগেই তাঁর রক্ষক এসে তাঁর হাত ধরল। সে হাত বরফের মতো ঠাণ্ডা। ডঃ রায়ের হাত ধরে সে তাঁকে টেনে নিয়ে ছুটতে লাগল। তার দ্রুত ধাবমান লম্বা লম্বা পায়ের সাথে তাল রাখতে ডঃ রায় হাঁফাচ্ছিলেন। একটু দূরে এসে সে একটা ঝোপের দিকে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করল। ডঃ রায় সবিস্ময়ে দেখলেন, সেখানে একটা মোটর বাইক।

“চালাতে জানেন?” সে ফিসফিসিয়ে বলল। ডঃ রায় ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন।

“তবে তাড়াতাড়ি সরে পড়ুন। আধঘণ্টাটাক পরে একটা বড়ো মোড় আসবে। সেখান থেকে ডাইনে ঘুরে কাউকে জিগ্যেস করে জেনে নেবেন রেল ইস্টিশান কোথায়। রাত দশটায় কলকাত্তার টিরেন আছে, সেটা ধরবেন।”

“কিন্তু তুমি, মানে আপনি?”

“বান্দাকে তুমিই বলুন।” সে হেসে বলল, “আমি আবার ঠিক সময়ে আপনার কাছে পৌঁছে যাব। এখন যান।”

সে আদেশ অমান্য করার শক্তি ডঃ রায়ের ছিল না।

।।৫।।

ডঃ রায় চললেন। বেশ কিছুক্ষণ পর মনে হল একটা ছোটো গঞ্জ, সেখানে এক চৌমাথা। লোককে জিগ্যেস করে জানলেন, ডানদিকে বেঁকে মিনিট কুড়ি গেলে রেল স্টেশন। হাতে কিছুটা সময় আছে। ডঃ রায় একটা দোকানে চা ও কিছু জলখাবার খেয়ে নিলেন। তারপর আবার চলতে শুরু করলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলেন স্টেশনে।

ট্রেন আসতে একটু দেরি আছে। টিকিট কেটে তিনি নিরালায় এক গাছের তলায় বসে চিন্তায় ডুবে গেলেন। তাঁর দুর্ভোগের কি শেষ হল, না আরও বাকি? সে বলেছিল ঠিক সময়ে আবার দেখা হবে। তার মানে কী?

তখনই সামনে তাকিয়ে দেখলেন, আবছায়ার মধ্যে এক চাপবাঁধা অন্ধকারের মতো সে দাঁড়িয়ে। ফিসফিসিয়ে বলল, “এবার কলকাত্তার টিরেনের ঘণ্টি দেবে। ওটা ধরে বাংলা মুলুকে ফিরে যান। তবে খবরদার, এখন বীরপুরে যাবেন না।”

সম্ভবত এতবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর ডঃ রায় ভয়কে অনেকটা জয় করেছেন। তাই তিনি এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, “যাব। কিন্তু ট্রেনে ওঠার আগেই জেনে যেতে চাই, তুমি কে? কেন আমাকে এভাবে রক্ষা করে চলেছ?”

“বান্দার নাম তিলক।” লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আপনি তো আসলে জানতে চান আমি জিন্দা না মুর্দা? ধরে নিন, মুর্দা। কারণ, যেদিন আপনি আমাকে প্রথম দেখলেন, তারপর থেকে সবার চোখেই তো আমি তাই।”

“কিন্তু তুমি তো সত্যিটা জানো?”

“না ডাগদরবাবু, আমি নিজেও ঠিক জানি না আমি কী! সেদিন ঐ ব্যাটা রাধু হঠাৎ একলা পেয়ে আমাকে তো প্রায় সাবড়েই দিয়েছিল। কিন্তু বুলেট ঠেকাবার যে জামাটা আমি পরে থাকি, চাকুটা তাতে লেগে কমজোর হয়ে যাওয়ায় সেটা আমার কলজে ফুটো করতে পারেনি। চোট আর ডরে আমি বোধহয় বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলাম।”

“বেহুঁশ নয়, তোমার কলজের ধুকপুকুনিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই…”

“আপনি টের পেলেন আশেপাশে কেউ আছে। তাই আমাকে ছেড়ে রাধুকে নিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে দিলেন। তা আপনি কী করে জানবেন ওরা সব রাধুর নয়, আমার লোক? তা, সাকরেদরা তো আমাকে জঙ্গলের মধ্যে টেনে নিয়ে গেল আর মুর্দা ভেবে আমার বুক চাপড়ে সর্দার, সর্দার বলে কান্নাকাটি শুরু করল। এই সময় নাকি আমি হঠাৎ উঠে বসলাম।”

“তাই!” অবাক ডঃ রায় বললেন।

“হ্যাঁ। আমাকে ওভাবে উঠে বসতে দেখে ডরের চোটে সাকরেদরা ভাগতে লাগল। আমার শরীর দুবলা। কিন্তু অনেক কষ্টে গলা চড়িয়ে হাঁকলাম, অ্যাই, আমি তিলক সর্দার বলছি, তোরা কেউ পালাবি না। ফিরে আয়। সেই আওয়াজে কী ছিল জানি না, ওরা আবার ফিরে এল। বললাম, আমায় ছুঁয়ে দেখ, আমি জিন্দা। একজন ভয়ে ভয়ে আমায় ছুঁয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, সর্দার, তোমার গা মুর্দার মতো ঠাণ্ডা।”

“তারপর?” ডঃ রায় রুদ্ধ নিঃশ্বাসে বললেন।

“তখন আবার এক ধমকি দিয়ে বললাম, কিন্তু আমি এখনও তোদের সর্দার। আমার সব কথা মেনে চলবি, বুঝলি?”

তিলক একটু থামল। আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ওরা ভয়ে ভয়ে তাই মেনে নিল। কিন্তু তারপর থেকে বলতে পারেন আমি একটা জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে রইলাম। এমনকি বিশের দলের কাছেও খবর চলে গেল, তিলক সর্দার রাধুর চাকুতে মরে আবার জিন্দা হয়ে ফিরে এসেছে বদলা নিতে। তবুও জিন্দা লাশ হলেও জিন্দা তো? তাই এটা একটা পুনর্জনম, কী বলেন? আর একটু সুস্থ হলে সাকরেদদের থেকে জানলাম, সেই পুনর্জনম আপনারই জন্য। আপনি যদি রাধুকে চাপা না দিতেন তবে আমার দলবল পৌঁছবার আগে সে আমার কলজে সত্যি সত্যিই ঝাঁঝরা করে দিত। তারপর যখন খবর পেলাম রাধু মরে গেছে, বুঝলাম এবার বিশুর হাত থেকে আপনার রক্ষা নেই। আমি তখনও কমজোর, তাই কিছু সাথীকে পাঠালাম আপনাকে বাঁচাতে। তারা আপনাকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কী বুঝেছিলেন জানি না, কিন্তু বরাতজোরে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিলেন দেখে আপনি বেঁচে গেলেন। তবে ওই জঙ্গলের রাস্তাঘাট আমিই ভালো চিনি। তাই একটু সুস্থ হতে একটা পেলান করে আমি ওখানে ঢুকে আপনার সাথে মিললাম। কিন্তু আমাকে দেখেই তো আপনি ভিরমি গেলেন। তখন আমি আমাদের একটা ট্রাকে চাপিয়ে আপনাকে ওখান থেকে সরিয়ে আনলাম। আপনাকে মীরগঞ্জে কেন নিয়েছিলাম, জানেন? ওখানেই এখন আমার ডেরা। ঐ ট্রাকে আপনার সঙ্গে আমিও ছিলাম। ভেবেছিলাম তবিয়তটা একটু ঠিক হওয়া অবধি আমি ওখান থেকেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব, সাথে সাথে আপনাকেও রক্ষা করতে পারব। আর এখন অবধি সেটা করেও এসেছি, তাই না ডাগদরবাবু?”

“তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, তিলক। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তুমি এতগুলি মানুষকে মেরে ফেললে?”

দার্শনিক ঔদাসীন্যে হেসে তিলক বলল, “এক মুর্দার সাধ্যি কি জিন্দা আদমিকে মেরে ফেলে! তবে ঐ যে বলে না, ডরনা হ্যায় তো মরনা হ্যায়? আমাকে দেখে তো ওরা ডরকে মারেই শেষ হয়ে গেল। প্রথম যে গুণ্ডাটা আপনার খোঁজ পেয়েছিল আর তার সাঙাতদের সেটা বলে দিতে যাচ্ছিল, সেই সময় আমি সামনে দাঁড়াতে সে তো পা হড়কে পড়ে ঘাড় মটকে মরে গেল। কিন্তু তবুও বিশুর দল জেনে গেল আপনি মীরগঞ্জে আছেন আর তাই একটা মার্ডার স্কোয়াড পাঠাল। তারা ডাক্তারবাবুকে রোগী দেখাবে এই ছল করে আপনার পতা করে নেয়। তারপর আবার একই পিকচার, আমাকে দেখে ভয়ে পালাবার সময় নিজেদের বোমা হাত ফস্কে পড়ে তার ব্লাস্টে নিজেরাই মরল।”

“কিন্তু তোমাদের সঙ্গে বিশুদের কীসের এত শত্রুতা? তোমরা কি রাইভাল গ্যাং?”

“না ডাগদরবাবু, বিশুর দলকে শেষ করা আমার ইরাদা। ও আমার জান কি দুশমন। এ আমাদের গাঁয়ের ফেমিলি-ফেমিলির কাজিয়া। বিশু আর তার বাপ আমার বাপ, মা, ভাইকে মেরে পালিয়ে যায়। অনেকদিন পর যখন ওদের পতা করতে পারলাম, ওর বাপটা মরেছে। কিন্তু বিশু দেখি বীরপুর আর আশেপাশে কয়লা চুরি করে দিব্যি রাজা হয়ে বসেছে। যেদিন রাধুর চাকু খাই, সেদিন আমরা তালাশে গিয়েছিলাম, ঐ আপনারা যাকে বলেন রেকি। মওকায় পেয়ে রাধু আমাকে প্রায় শুইয়ে দিয়েছিল। আপনার কিরিপায় এখনও দাঁড়িয়ে। কিন্তু তখনও আমরা কমজোর, বদলা নেওয়ার শক্তি ছিল না। এই ক’মাসে আমরা সেই শক্তি তৈরি করেছি। রাধু তো আগেই গেছে। তারপর যারা বিশুর বল-ভরসা ছিল, তাদের মধ্যে ক’টাও একটু আগে শেষ হয়েছে। এবার ওর সাথে আমনে সামনে টক্কর। খুব শিগগিরই সেটা হবে। তারপর হয় তিলক, নয় বিশু থাকবে।”

“অমনটা কোরো না।” ডঃ রায় তিলকের হাত চেপে ধরে বললেন, “বিশুর ব্যাপারটা পুলিশের হাতে ছেড়ে দিয়ে তুমি বরং তোমার দেশের বাড়িতে ফিরে যাও।”

“তা আর হয় না, ডাগদরবাবু। এই বদলার চক্কর আমাদের মধ্যে চলতেই থাকবে, কেউ থামাতে পারবে না। আর পুলিশ, সে কী করবে? পুলিশ, নেতা সব বিশুর কেনা। দেখলেন না, ওসি সাবকে কেমন বদলি করে দিল?”

“সবাই অমন নয়। একটু ধৈর্য ধরো, কলকাতা গিয়ে আমি আমার জানাচেনাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। তারপর তোমাকেও নয় কলকাতা নিয়ে যাব।”

তিলক ম্লান হেসে বলল, “একটা মুর্দাকে নিয়ে আপনার কী ফায়দা হবে, বাবু?”

“না তিলক, তুমি মুর্দা নও।” ডঃ রায় ব্যাকুল হয়ে বললেন, “তোমার কলজে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তোমার সাকরেদরা তোমার কান্নাকাটির সময় জোরে তোমার বুকে চাপড় দেওয়ার জন্যই নিশ্চয়ই সেটা আবার চালু হয়ে যায়। এমন চেষ্টা ডাক্তার বা অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীরাও করে থাকে।”

“কিন্তু জিন্দা মানুষের কি হাত-পা এত ঠাণ্ডা হয়?”

“তুমি নেশা করো?”

“হাসালেন। পাত্তা, গুলি, এখন তো ইঞ্জিশান ছাড়া আমার নিঁদ আসে না।”

“তাই তোমার শরীরে খুন ঠিকমতো চলাচল করে না। তারপর ঐদিনের ঘটনার পর কলজেটা আরও কমজোরি হয়ে খুন চলাচল আরও কমে গেছে। তাই তোমার হাত-পা এত ঠাণ্ডা। কিন্তু এর ইলাজ আছে, তিলক। আমি তোমায় সারিয়ে তুলব।”

“অনেক দেরি হয়ে গেছে, ডাগদরবাবু। আপনার টিরেনের ঘণ্টা পড়েছে, যান। আমি দেখে নিয়েছি, এখানে কোনও শালা নেই। তবে পথে চোখকান খোলা রাখবেন।”

লাইনের দিকে তাকালেন ডঃ রায়। একটু দূরে ট্রেনের আলো। আবার পেছনে তাকিয়ে দেখেন, কেউ নেই। মুহূর্তে যেন সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

ট্রেনে উঠে ডঃ রায়ের খেয়াল হল, মোবাইলটা সাইলেন্টে রাখা আছে। তাড়াতাড়ি তাকিয়ে দেখলেন, ভবেশ হালদারের কাছ থেকে তিনটে মিসড কল আর একটা মেসেজ। খুলে দেখলেন, উনি বর্ধমানে পোস্টেড হয়েছেন। তাঁর ঠিকানা দিয়ে সোজা সেখানে চলে যেতে বলেছেন। কলকাতা নয়, বর্ধমানে নামতে হবে, ঠিক করলেন ডঃ রায়।

।।৬।।

“কী কাণ্ড, শুনেছেন ডাক্তারবাবু!” বলছিলেন ইনস্পেক্টর হালদার, “বীরপুরে ধুন্ধুমার। সেখানে কাল কুরুপাণ্ডবের যুদ্ধ হয়ে গেছে বোধহয় বিশে আর তার রাইভাল কোনও গ্যাংয়ের মধ্যে। অনেকগুলো লাশ পড়েছে, তার মধ্যে অন্যতম স্বয়ং বিশে। ওর দল বলতে গেলে শেষ হয়ে গেছে।”

“আচ্ছা, মৃতদের মধ্যে কি বেঢপ বড়ো মাথা, থ্যাবড়া নাক, ট্যারা চোখ কেউ ছিল?” ডঃ রায় আকুল হয়ে জিগ্যেস করলেন।

একটু ভেবে ইনস্পেক্টর বললেন, “কে জানে মশাই, শুনি তো নি। তবে কিছু লাশ গুম হয়ে গেছে, কয়েকটা বোমায় এমনভাবে উড়ে গেছে যে চেনার জো নেই। কিন্তু কেন বলুন তো?”

“না, এমনি।” ডঃ রায় এড়িয়ে গেলেন। তারপর বললেন, “বীরপুর হসপিটালের ঐ বিনোদ ডাক্তার…”

“আপনাকে বলিনি, না?” একগাল হেসে বললেন ইনস্পেক্টর, “ও তো বিশুর স্পাই ছিল। ওকে আমিই জেলে পুরে এসেছিলাম। যাই হোক, এখন সবদিক দিয়েই বীরপুর নিরাপদ। আপনি আবার ওখানে গিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করতে পারবেন। ভাঙা বাড়িটা সারাতে হবে। তবে মনে হয় সরকার কিছু অনুদান দেবে। যান, আবার নতুন করে সব শুরু করুন।”

“হ্যাঁ।” উদাস ভঙ্গীতে বললেন ডঃ রায়। আবার ফিরে যাবেন, সব আগের মতো ছন্দে ফিরবে। শুধু মাঝে মাঝে তার দুঃস্বপ্নে এসে উপস্থিত হবে সেই বেঢপ মাথা, থ্যাবড়া নাক, ট্যারা চোখ মূর্তি, যার হাত বরফের মতো ঠাণ্ডা।

গল্পের বিষয়:
উপন্যাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত