শ্রাবণ মাস। মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। লঞ্চ ঘাটে যখন ফিরোজ নামলো তখনও একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। লঞ্চ ঘাটের উল্টোপাশে সুন্দরবন। পৃথিবী বিখ্যাত সেই সুন্দরবন। বৃষ্টিতে ঝাপসা দেখাচ্ছে। গাছগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। একটা পাখি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে উড়ে গেলো গহীন বনের দিকে।
ঘড়িতে চারটা বাজার শব্দ হলো। অফিসে বসে আছে ফিরোজ। হাতে তেমন কাজ নেই। এমন সময় ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টির মনে হয় মানুষকে নস্টালজিক করে দেয়ার একটা ক্ষমতা আছে। এরকম ঝুমঝুম শব্দ তুলে বৃষ্টি হলে ফিরোজের গাঁয়ের পশম খাড়া হয়ে ওঠে, শরীর শিরশির করে, চোখের পাতায় ঘুমের চাদর হাত বুলিয়ে যায়। অফিসে বসে ফিরোজের সেই বৃষ্টিমুখর দিনটির কথা মনে পড়ে গেলো। তখন সে খুলনায় থেকে কলেজে পড়ে। খুলনা পাবলিক কলেজের প্রথম বর্ষ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ২০০৩ সালের কথা। এক দিন হঠাৎ করে তার বাড়ি যেতে ইচ্ছে হলো। বাড়ির কথা মনে হলে সে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ব্যাগ গুছিয়ে রুমমেটকে বলল, ‘বাড়ি যাচ্ছি’।
রুমমেটের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলা, বিএল কলেজে বাংলায় পড়ে। অনার্স থার্ড ইয়ার। সে টেবিলে বসে পরীক্ষার পড়া তৈরী করছে। টেবিলের সামনের দেয়ালে স্বরস্বতীর বড় একটা ছবি টাঙানো। সারা বছর বিদ্যাদেবীর কোন খোঁজখবর না রাখা হলেও পরীক্ষার সময় তার যত্ন আত্তি বেড়ে যায়। ঝেটিয়ে ধূলো দূর করা হয়। প্রতি সন্ধ্যায় আগর বাতি জ্বলে দেবীর পায়ের কাছে। ফিরোজের কথা শুনে তন্ময় বই থেকে মুখ তুলে চাইলো, ‘কি ব্যাপার ফিরোজ! হঠাৎ বাড়ি যাচ্ছো যে, কোন প্রব্লেম?’
‘না দাদা। খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে।’
‘সামনের মাসেই না তোমার ইয়ার ফাইনাল?’
‘দুই তিন দিনের ভেতর ফিরে আসবো। ’
ঘাটে নামার পর বৃষ্টির তোড়জোড় যেন বেড়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে বাতাসের বেগও কিছুটা বেশী। বাড়ির দিকে মন টানছে। ইচ্ছে করছে এক ছুটে বাড়ি চলে যাই। ঘাট থেকে বাড়ি দুই কিলোর মত দূরে। এই বড় বৃষ্টিতে ভিজে এত পথ যাওয়া ঠিক হবেনা। বাধ্য হয়ে ঘাটের ছাউনির নিচে বসতে হলো। ছাউনির নিচে ঢুকতেই ভেতরে বসা মফিজ চাচা বলে উঠলো, ‘কি ফিরোজ বাড়ি আইসলে নাকি?’
এই ধরণের প্রশ্ন শুনলে ফিরোজের হাসি পায়। দেখতেই পাচ্ছে একজন লঞ্চ থেকে নামলো। তাহলে জিজ্ঞেস করার কি আছে। সে মাথা নেড়ে সায় দেয়। ছাউনির নিচে জনা চারেক লোক বসে আছে। মফিজ গ্রাম সম্পর্কের চাচা । হাত দিয়ে বেঞ্চি ঝাড়তে ঝাড়তে ফিরোজকে বলল, ‘এহানে বইসো। দলক এট্টু কমুক। তারপর বাড়ির দিক যাবানে।’
ফিরোজ বসলো। মফিজ চাচা বেশ আলাপী লোক। অল্প সময়ের মধ্যে সারা গাঁয়ের খবর ফিরোজের জানা হয়ে গেলো। সে মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরছে। সাড়ে তিনটের লঞ্চে এখানে নেমেছে। ঐযে প্লেনওয়ালা যে লঞ্চখান খুইল্লে গেলো ঐখানায় করে এসেছে। বৃষ্টির জন্য আটকা পড়ে গেছে।
বৃষ্টির ফোঁটা কমে এলো। এখন টিপির টিপির করে বৃষ্টি হচ্ছে। মফিজ চাচার সাথে ফিরোজ বেরিয়ে পড়লো। জুতা খুলে হাতে নিতে হলো। পুরো রাস্তায় কাঁদা জমে আছে। সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। পা ফসকালেই আছাড় খেতে হবে। মফিজ চাচা কথা বলেই চলেছে।
‘আচ্ছা ভাইপো ‘
‘জ্বি ‘
‘মহফিল নামে নাকি কি এক যন্তর পাওয়া যায় শহরে। টেলিফোনের মত কথা কওয়া যায়। কিন্তুক তার নেই। পকেটে নিয়ে ঘুরা যায়। গেলো মাসে কয়রা সদরে গিলাম। করিম মুক্তারের কাছে মহফিলির গল্প প্রথম শুনলাম। ‘
‘চাচা জিনিসটার নাম মোবাইল। ‘
‘তাহলে সত্যি!’
‘জ্বি।’
‘দাম কিরাম?’
মোবাইল জিনিসটা এখনো সেভাবে খুলনা শহরে চালু হয় নাই। হাতে গোনা কিছু মানুষের হাতে সিটিসেলের এন্টেনা লাগানো মোবাইল দেখা যায়। দাম সম্পর্কে ফিরোজের পরিষ্কার ধারণা নেই। সে বিষয় ঘুরালো।
‘চাচা দোকানের পাশের সাঁকো ঠিক আছে? ‘
‘এই দেহ ভাইপো। ভালো কতা মনে করিচাও। কতা কতি কতি তো আমি আসল কতা ভূইলে গিছি। দুকানঘরের পাশের সাঁকো তো ভাঙা আজ দুই মাস । সবাই মিলে ঠিক করবে কয়, কিন্তুক কোন উদ্যোগ তদবির কিছুই তো দেখতিছি নে। গিরামের মানুষ আর আগের মত নেই। নিজেরা কিছু কত্তি চায় না। সব চ্যারম্যানের আশায় বসে থায়। গেটের বাল্লা দিয়ে যাতি হবে’।
সুইচ গেটের বাঁধ দিয়ে যেতে হলে পথ বেশ খানিকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। সাঁকো ঠিক থাকলে এই পাশ দিয়ে শর্টকার্ট মেরে যাওয়া যেত। গেটের বাল্লার পরে ওয়াপদা বাঁধ থেকে নেমে কেয়ারের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। অনেকটা পথ, কাছাকাছি বাড়ি ঘর নেই। ফাঁকা রাস্তা। কিছুদূর যাওয়ার পরেই বিদ্যুৎ চমকালো, সাথে কান ফাটানো মেঘের গর্জন। এক ঝলক আলো আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে গেলো। কাছাকাছি কোথাও ‘বাজ’ পড়েছে। বজ্রপাতের কথা মনে আসতেই দীর্ঘ কালের অভ্যাষবশত ফিরোজ মনে মনে কলেমা পড়া শুরু করলো। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সঃ)।
এরই মধ্যে বৃষ্টি এসে চেপে ধরলো। ধারে কাছে দাঁড়ানোর মত জায়গা নেই। মফিজ চাচা বলল, ‘ভাইপো হাটতি থাহি নাকি?’
‘জ্বি চাচা। এই ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয় না। সেই যখন ভিজতে হবে, চলেন আগাই’।
মাঠে মাঠে ধানের চারা গলা পানিতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির তোড়ে কিছু কিছু আবার পানির উপর শুয়ে পড়েছে। দোকানঘর পর্যন্ত এসে মফিজ চাচা বিদায় নিলো। সারা গ্রামে এই একটা মাত্র দোকান। দোকানি বৃষ্টির ছাঁট থেকে রক্ষা পেতে ঝাপ ফেলে রেখেছে। এবার দুজনার দুটি পথ দুদিকে গেছে বেঁকে। তার বাড়ি যেতে হবে ডানদিকের রাস্তা দিয়ে। আর অল্প একটু দূরে ফিরোজদের বাড়ি। রাস্তার মাঝখানের তুলনায় সাইডের মাটি শক্ত বলে ফিরোজ সেদিক দিয়ে হাঁটছিলো। হঠাৎ অসাবধানে গু পাড়িয়ে ফেললো। সারা গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। লোকজন যে কেন রাস্তার পাশে পোলাপাইন হাগতে বসায়! ভালো করে কাঁদায় পা মুছে সে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো।
বাড়ির উঠানে একরাশ কাঁদা। চাল বেয়ে বৃষ্টির পানি ‘সাইচে’ গড়িয়ে পড়ছে। সাইচের নিচে দাঁড়িয়ে ফিরোজ ডাক দিলো, ‘মা, ও মা!’
সকাল থেকে কলকলিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। মায়ের হাতে বৃষ্টির দিনে দুপুরের পরে তেমন কাজ থাকেনা। পশ্চিমের জানালার পাশে বসে আপনমনে কাঁথা সেলাই করছিলেন। ফিরোজের ডাক শুনে মা কাঁথা ফেলে ছুটে এলেন। দাদীর ঘরের দিকে মুখ তুলে বললেন, ‘ওমা দেখ কিডা আইছে।’
ওঘর থেকে দাদি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিডা আইছে বউমা?’
ফিরোজ উত্তর দিলো, ‘তোমার জামাই আইছে দাদী। বরন কুলো কই?’
দাদীও বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। হাতে সেই চিরচেনা তসবি খানা। মা বলল, ‘তুই সাইচে দাঁড়ায় বৃষ্টিতে ভিজতেছিস ক্যান? পইঠার পরে উঠে দাঁড়া। আমি লুঙ্গি গামছা আইনে দিতিছি। কাপড় বদলায়ে ফ্যাল’।
‘গামছা দাও। একেবারে গোছল দিয়ে আসি।’
‘সারাপথ তো বৃষ্টিতে ভিজে আইলি। আবার গা ধোয়া লাগবে ক্যান ! গা মুছে ফেল ।’
‘না মা। গা না ধুলি শান্তি পাবো না। ফস করে একটা ডুব দে আসতিছি।’
দাদি তার ঘরের বারান্দায় বসে মিটমিট করে হাসছেন। ফিরোজ জিজ্ঞেস করলো, ‘হাসো কেন?’
‘তুই শহরে গে কিরাম করে কথা কতিছিস! গেরামের ভাষা কতি পারিস না ভূলে গিছিস?’
‘ক্যান পারবো না। খুব কতি পারি। কিন্তু মা যে রাগ করে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে বলে’।
‘ধ্যুর নিজির ভাষায় কতা না কলি কি পরান ভরে। যা্ পরে কতা কবো, এখন গা ধুয়ে আসো। ধাক্কুর করে আইসো ভাই। বেশি কালা লাগাইয়ে না, জ্বর আসতি পারে।’
‘আরে কিচ্ছু হবে না। বৃষ্টিতে কি আমি নতুন ভিজছি। এরকম বর্ষা মাথায় ব্যাড়ের নিচের বিলে কত্ত ফুটবল খেলেছি। মনে নেই!’
ইট বাঁধানো ঘাট। সিমেন্টের পলেস্তরা উঠে গিয়ে ইট বেরিয়ে আছে। ঘাটে বসে ভালো করে সাবান ঘষে নিলো ফিরোজ। ছোট ছোট মাছেরা এসে পানিতে ডুবিয়ে রাখা পায়ে গুতো দিচ্ছে। পুকুরের মাঝখানে মাছে ঘোল দিয়ে গেলো। মাগুর মাছ হবে। মাগুর মাছের ঝোল খেতে চমৎকার লাগে। আগামীকাল খ্যাওলা জাল দিয়ে মাগুর মাছ ধরতে হবে। বৃষ্টির ফোঁটার সাথে সাথে পানিতে বুদবুদ তৈরী হচ্ছে। ফিরোজ পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এতক্ষণ বৃষ্টির পানিতে ভেজার ফলে পুকুরের পানি বেশ গরম মনে হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টির দিনে পুকুরের পানিতে ডুব দিলে চটপট শব্দ হয়। অনেকটা ধানের খই ভাজার মত। অনেক দিন পরে পুকুরে সাঁতার কাটতে ফিরোজের ভালই লাগছিলো। মায়ের ডাকে সংবিত ফিরে পেলো , ‘খোকা এবার ওঠ। ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলবি তো!’
মা কখন কাঠের বাটের ছাতাটা মাথায় দিয়ে ঘাটে এসে দাঁড়িয়েছে ফিরোজ সেটা খেয়াল করে নাই। ছাতার একটা শিক ভাঙা।
‘তুমি আবার বৃষ্টিতে ভিজে আসতে গেলে কেন?’
‘তোর ওঠার নামগন্ধ নেই। বর্ষায় মদ্যি পইরি নামলি তো তোর আর হুঁশ থায় না। পাঁচ মিনিট কয়ে আলি। আর আমি এক হাঁড়ি ভাত রাইন্দে ফ্যাললাম তাও তোর খোঁজ নেই। জলদি ওঠ। পইরি কলাম এবার বড় বড় জোঁক হইছে।’
মা তাকে ছোট বেলার মত জোঁকের ভয় দেখিয়ে পুকুর থেকে তোলার চেষ্টা করে। ফিরোজ হাসে। মায়ের কাছে মনে হয় ফিরোজ এখনো সেই ছোট্টটি আছে। যাকে জোঁকের ভয় দেখালে তিনদিন পুকুরে নামতো না। ফিরোজদের বাড়িতে তিন বেলা রান্না হয়। ফিরোজ আসার পরে মা দৌড়ে গিয়ে ভাত রান্না করে রেখেছে। ডিম ভেজে গরম ভাতের উপর ঘি ছড়িয়ে খেতে দিলেন মা। ফিরোজ খাওয়া শুরু করলো। দাদি পাশে এসে বসেছেন। মা বটি পেতে রাতের রান্নার জন্য তরকারি কুটছেন। ফিরোজ জিজ্ঞেস করলো, ‘আব্বা কই?’
দাদি বড় একটা ফজলি আমের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন, ‘আছরের নামাজ পত্তি মজিদে গেলো। একবারে মগরেবের নামাজ পইড়ে ফেরবে’। খানিকটা খাওয়ার পর আর খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা টিসটিস করছে। হাঁচ্ছো হাঁচ্ছো করে দুইবার কাশি দিলো। শেষপর্যন্ত দাদির পীড়াপিড়িতে আম দুধ দিয়ে আরো এক প্লেট খেতে হলো।
খাওয়া শেষ করে ফিরোজ মায়ের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম ঘুম ভাব। হালকা শীত শীত লাগছে। খানিকক্ষণ গড়িয়ে নেয়া যাক। সে খাঁটের উপরে রাখা কাঁথাটা গায়ের উপর টেনে শুয়ে পড়লো। মা কি একটা জিনিস নিতে বড় ঘরে এলেন। ‘আরে পাগলা ছেলের কান্ড দেখো। এই খ্যাতায় তো সুই ফোটানো আছে। গায়ে ফুঁটে যাবে তো!’ তিনি আলমারি থেকে নতুন একটা কাঁথা বের করে ফিরোজের গাঁয়ে জড়িয়ে দিলেন। ফিরোজের গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখেন গা বেশ গরম।
মা এক বাটি সরিষার তেল গরম করে এনে ফিরোজের হাতে পায়ে মাথায় গলায় মাখাতে লাগলেন। দাদিকে ডেকে বললেন, ‘মা চুলার পরে তরকারিডা দেইখো’।
উত্তম রুপে তেল মালিশ করে মা রান্না ঘরে গেলেন। ফিরোজ কিছুই টের পেলো না। সে ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে। ফিরোজের ঘুম ভাঙলো রাত নয়টার দিকে। বেশ জ্বর এসেছে। কপাল টিসটিস করছে। মা মাথার কাছে বসে ছিলেন। ফিরোজকে নড়তে দেখে কপালে হাত রাখলেন। হাতে জ্বরের উত্তাপ লাগলো। ফিরোজকে বললেন, ‘দুটো খায়ে ওষুধ খায়ে নে। তারপর মাথা টিপে দেবো। দেখবি ঘুম এসে গেছে।’
ফিরোজ উঠে বসতে গেলো। পারলো না। মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠলো। আষাঢ় শ্রাবনে মাঝে মাঝে ঝুপ করে বৃষ্টি নামে। জ্বরটাও ঠিক তেমনি ঝুপ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ফিরোজের গায়ে। নাক দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। খাটের গায়ে হেলান দিয়ে বসলো। মা বালিশটা ফিরোজের পিঠের নিচে দিয়ে দিলো। ফিরোজ কিছুটা আরাম বোধ করলো।
‘ওষুধ কে আনলো’।
‘তোমার আব্বা গিয়ে নিয়ে আসলো।’
‘এই কাদা পানিতে আব্বার যাওয়ার কি দরকার ছিলো’।
আব্বা বারান্দা থেকে ঘরে ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বললেন, ‘কাদা পানির দেশের মানুষ আমরা। কাদা পানিকে আবার ভয় পেলে চলে। তুই যে দুই দিন শহরে গিয়ে বড্ড শহুরে হয়ে গেছিস। এক বেলা বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে বসলি। আর গ্রামের মানুষদের দেখ, সারা দিন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাঠে কাজ করতিছে। সেই জৈষ্ঠি মাসের শেষ থেকে। প্রতিদিন’।
মা খাবার এই ঘরে বয়ে আনলো। ভাত মাখিয়ে এক লোকমা মুখে দিতেই মুখটা তেতো হয়ে গেলো। ভাতের থালা সে সরিয়ে রাখলো। মা উৎকন্ঠিত গলায় বললো, ‘থালা ঠেলতিছিস ক্যান, বাপ আমার এই কটা ভাত খায়ে নে’।
‘না মা। খেতে পারছি না’।
‘আরেকটা ডিম ভেজে এনে দেবো?’
‘না। এই রাত্রিবেলা তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না’।
মা কি বারণ শোনা লোক । ডিম ভাঁজতে চলে গেলেন। কড়াইয়ের গরম তেলে ডিম ফেলার ছ্যাঁৎ করে শব্দ হলো। দাদী সন্ধ্যা হলেই দরজায় খিল দেন। বাদলা হাওয়া লেগে কাশির ধাত হয়েছে। থেকে থেকে খুক খুক করে কাশছেন। গোয়ালের গরু একবার হাম্বা বলে ডেকে চুপ হয়ে গেলো।
ডিম ভাজা দিয়েও খেতে কষ্ট হচ্ছে। মা এত কষ্ট করে ডিম ভেজে আনলেন। কোন মতে দুই মুঠো ভাত গিলে প্যারাসিটামল খেয়ে শুয়ে পড়লো। মা পাশে বসে মাথা টিপে দিতে লাগলেন।
‘যাও মা। তুমি এবার খেয়ে নাও’।
‘এই যাই। একটু পরে গে খাবো’।
শ্রাবনের বৃষ্টি অঝোরে ঝরে চলেছে। ভোর রাতে মনে সব মেঘ গলে নি:শ্বেষ হয়ে গেছে। অবশেষে আকাশ পানি ছিটানো বন্ধ করেছে। ফজরের আজান হয়ে গেছে। আব্বা নামাজ পড়তে মসজিদে যাবে। দরজা হালকা করে চাপানো । ভেতরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জ্বর কেমন?’
‘এখন জ্বর নেই মনে হচ্চে। গা গরম আছে।’
আব্বা ফিরোজের কপালে হাত রেখে জ্বরের উত্তাপ পরীক্ষা করলো। মায়ের দিকে ফিরে বলল, ‘তুমি এত অল্পতে উতলা হয়ে পড়ো ক্যান? জ্বরজারি হইছে। আল্লাহর রহমতে দুদিনেই সুস্থ হয়ে ওঠপে’।
দাদী নামাজ সেরে ফেলেছেন। তার ঘুম অল্প। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে বসে থাকেন। তসবিহ গোনেন। দাদী তসবিহর আমল খুব একটা গোনেন না। তসবিহর দানা টিপে তিনি আল্লাহ আল্লাহ বলেন। সারা দিনে কয়শত বার হলো তার হিসেব থাকে না। রাতে ফিরোজের মাথায় পানি দিতে হয়েছে। পানির বালতি সেটার সাক্ষী বহন করছে। আম্মাকে বললেন, ‘সারা রাইত ধইরে পানি দিতি হিছে? আমারে ডাইকলে না ক্যা? সারা রাইত বইসে আছো। নামাজ পইড়ে এট্টু ঘুমায়ে ন্যাও’।
আম্মা বলল, ‘ব্যান বেলা কি আর ঘুম আসপে’।
‘তোমাগে ব্যাপার স্যাপার আমি বুঝিনে বাপু। আমরাও তো ছাওয়াল পাওয়াল মানুষ করিছি। এত ভাইঙে পড়লি চলে! মাথায় কি আর জলপট্টি দিতি হবে?’
দাদীজান পানের বাটা থেকে পান নিয়ে বাটনায় ফেলে বাটছেন। ঘটর ঘটর শব্দ হচ্ছে। দাদীর বা চোয়ালের দুটো দাঁত দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগের মত আর সুপারি চিবিয়ে নরম করতে পারেন না। ব্যাথা লাগে। দাঁতে কুলায় না তবু পান সুপারি খাওয়ার অভ্যেষটা ছাড়তে পারেন না। আকাশী নীল পুঁথির তসবি খানা খেঁজুর পাতার পাটির উপর রাখা। ফিরোজ পাতলা একটা কাঁথা গায়ে দাদীর পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। বাইরে না আসতে আম্মা বারবার নিষেধ করলো। কিন্তু ফিরোজ শুনলো না। দাদীর বারান্দায় এসে শুয়ে পড়লো।
বাইরে চমৎকার রোদ উঠেছে। উঠোনের কাঁদা বুক পেতে রোদ পোহাচ্ছে। মাটি থেকে সোঁদা সোঁদা একটা গন্ধ বেরুচ্ছে। মা রান্নাঘরে গুড়ের পায়েস রাধছে। বাতাস তারই সুবাস ছড়াচ্ছে। হালকা জ্বর মুখে গুড়ের পায়েস ভালোই লাগবে। দাদীকে ডেকে বললেন, ‘মা একটু চেখে দেখ তো। নুন হইছে কিনা?’
ফিরোজ দাদীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাকে কেন আজ লবন পরীক্ষা করতে ডাকে?’
দাদী হেসে বললো, ‘তোর মায়ের আদিখ্যেতা। রাতে ছেলের গায়ে জ্বর দেইখে মানত করিছে আইজ সে রুজা থাকপে। সেহেরি না খেয়ে রুজা রাখলি কি রুজা হয় নাকি।
মায়ের মুখে ছেলের সামনে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এমন একটা অভিব্যক্তি। লাজুক ভাবে বললেন, ‘সেহেরি খাইছি। গুড় মুড়ি খাইছি’।
ফিরোজ কি একটা বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু গলায় বাষ্প জমলো, হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। সে কাঁথা টেনে মুখ ঢাকলো। দাদী অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা তার নজর এড়ালো না। শান্ত কন্ঠে বললেন, ‘ভাইরে যহন ছাওয়ালের বাপ হবি, তহন বুজতি পারবি ছাওয়াল মাইয়ের জন্যি বাপ মার কিরাম ঠ্যাকে’।
পায়েস রান্না শেষ হওয়ার আগেই আব্বা হাজির। আব্বা লোকটা রাশভারী টাইপের। ফিরোজ আব্বাকে ছোট বেলায় যমের মত ভয় পেত। কিন্তু সময়ে সময়ে আব্বা অনেকটা আমুদে হয়ে ওঠেন। তিনি পূবের বিলে ধানের অবস্থা দেখে ফিরলেন। সিড়ির কাছে কলসে রাখা পানি দিয়ে পা ধুয়ে দাদীর বারান্দায় এসে বসলেন। দাদীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা তোমার কাশের সিরাপ খাইছো?’ দাদী পিচিক করে পানের পিক বাইরে ফেললেন।
‘ঔষুধ তো খাতিছি। পুরো বোতল খ্যায়ে শ্যাষ কইরে ফ্যাললাম প্রায়। তাও কাশ কুমলো না। আইজকাইলকার ঔষুধেও ভ্যাজাল। আগে কোবরেজের পানি পড়া খালি হইয়ে যাইতো’। আব্বা রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে মা কে বললেন, ‘তোমার পায়েস রান্না হইছে? হলি দিয়ে যাও। বাপ বেটা একসাথে বসে পায়েস খাই’।
আব্বা আইয়ে পাশ। কথায় আঞ্চলিক শব্দের টান অনেক কম। আম্মা পায়েস এনে তিন থালায় বাড়তে লাগলে দাদী বাঁধা দিয়ে বললেন, ‘আমার জন্যি এখন বাড়তি হবে না। গো খাতিছি। পরে খাবানে’।
ফিরোজ বলল, ‘কুলি করে ফেলো। এখনি খাও।’
‘গো খাওয়া মুখি খির খাতি ভাল্লাগবেনা ভাই’।
ফিরোজ আব্বার সাথে বসে পায়েস খেতে লাগলো। আর পাশে বসে দুই মা তাদের দুই বয়সের দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছে। বড় প্রশান্তিময় সেই দৃষ্টি।
দুপুরে কৈ মাছ ভাজি সাথে টেংরা মাছ আর কাঁচকলার ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে ফিরোজ ঘুম দিলো। ঘুম ভাঙলো আছরের সময়। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের সুর ভেসে আসছে। সূর্য্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। রোদের মরা তেজ। এরই মধ্যে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। ছেলেবেলায় এরকম একসাথে রোদ আর বৃষ্টি হতে দেখলে মনের মধ্য আনন্দ লাগতো। সেই আনন্দে সমবয়সীদের সাথে সুর মেলাত, ‘রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে, খেঁকশিয়ালির বিয়ে হচ্ছে’। ছোট বেলায় এরকম একটা ধারণা ছিলো যে রোদ আর বৃষ্টি না হলে খেঁকশিয়ালদের বিয়ে হয় না। বেচারারা সারাবছর বিয়ের জন্য রোদ-বৃষ্টি লগ্নের অপেক্ষায় থাকে। জ্বর চলে গেছে। শরীরটা ঝরঝরে মনে হচ্ছে। মা কে ডেকে বলল, ‘ছাতাটা দাও, একটু দোকানঘরের দিক থেকে ঘুরে আসি’।
মায়ের গলায় স্পষ্ট অভিমান ফুঁটে উঠলো, ‘জ্বরডা ভালো করে না সারতি আবার বাইরে যাবি ক্যান। কোথাও যাওয়া হবে না। শুয়ে থাকতি ভালো না লাগলি বারান্দায় আইসে বয়। খই ভাজতিছি। প্রথম খোলা নামুক। তারপর খাইস’।
‘তুমি সারাদিন রোজা থেকে এখন আবার খই ভাজতে বসবা নাকি! কিচ্ছু ভাজতে হবে না এখন’।
মা যদি কোন কথা শোনে। সচরাচর রান্নাঘরে দাদী যান না। চোখে কিছুটা কম দেখেন। লবনের বদলে একদিন তরকারীতে চিনি ঢেলে দিলেন। আজ চুলার পিঠে দাদী বসেছে। বড় একটা মাটির হাঁড়িতে বালি গরম হচ্ছে। বর্ষাকালে কাঠ গুলো কেমন ভিজে ভিজে হয়ে যায়। ঠিকমতো জ্বলেনা। যতটুকু আগুন তৈরী করে তার থেকে কয়েক গুন বেশী ধোঁয়া হয়। রান্নাঘরের খড়ের চালের উপর সতেজ পুইশাকের ডাল বর্ষার নতুন জলে লকলক করছে। সেই পুইশাকের পাতার ফাঁক দিয়ে সাদা সাদা ধোঁয়া ধোয়া উড়ছে। বর্ষা মৌসুমে খই ভাজার জন্য আলাদা ধান রাখা হয়। লম্বা সরু ধানে খই ভালো হয়। বালি যথেষ্ট গরম হয়েছে। দাদী নারিকেলের মালার এক মালা ধান হাঁড়ির মধ্যে ছেড়ে দিয়ে নারিকেলের শলার নাড়ানী দিয়ে নাড়তে লাগলো। চটপট শব্দে ধান ফেঁটে খই হতে লাগলো। মূহূর্তে সাদা খইয়ে ভরে গেলো মাটির কালো হাঁড়িটা। ফিরোজের মনে হতে লাগলো বৃষ্টি বিঘ্নিত বিকেলে খই ফোটার এই মোলায়েম শব্দ মোজাৎসের সুরকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে। শুধু শোনার মত কান থাকা চাই। দাদী কড়াই টা টুকনির উপর ঢেলে দেয়া মাত্র মা টুকে বালি আর খই আলাদা করে ফেললো। দাদী বালিটা হাঁড়িতে ঢেলে দিয়ে আরেক মালা ধান তুলে নিলো।
মা বেতের তৈরী ‘পাইলে’ তে করে খই দিয়ে গেলো। ফিরোজ ধান ছাড়িয়ে খই খাওয়া শুরু করলো। এমন সময়ে ফরিদ এসে হাজির।
‘কি দোস্ত! কাকার কাছে শুনলাম বাড়ি আইসে জ্বরে আটকা পড়িছো? এখন কি অবস্থা শরীলের?’
ফরিদ ফিরোজের সমবয়সী হবে। বছরখানেকের বড় হতেও পারে। গ্রামদেশে বয়সের হিসেব কে খোঁজ রাখে। অমুক ঝড় তমুক বন্যা দিয়ে বয়সের আন্দাজ করা হয়। ফরিদের সাথে সে গ্রামের ইস্কুলে একসাথে পড়াশোনা করেছে। সমবয়সীদের মধ্যে ফিরোজের সাথে ফরিদের সখ্যতাই বেশী। লেখাপড়ার দৌড় ফরিদের হাই স্কুল পর্যন্ত। এখন বাপের মাছের ঘের দেখাশোনা করে। গত বোশেখে বিয়ে করেছে। কয়েকমাসের তার মধ্যে একটা সাংসারিক ভাব চলে এসেছে। দাদীকে উদ্দেশ্য করে ফরিদ বলে, ‘কি দাদী পোতাকে পেয়ে দেখি আজ চুলোর পিঠে বসে গেছো’।
দাদী হাতে কাজ করতে করতে বললো, ‘মানুষ আজকাল সব পাখির মত হয়ে গেছে। ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়। দুদিনের জন্য আসে। আবার চলে যায়। কত কিছু খাওয়াতে মন চায়। কিন্তু সময় কই?’
দুদিনের জন্য বাড়িতে আসা। কিন্তু দেখতে দেখতে সাত দিন পেরিয়ে গেলো। মা এই কয়েকদিন সারাক্ষণ রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত। এটা কোটে, ওটা বাটে। পারলে তো ছেলেকে এক বছরের খাওয়া এক দিনেই খাইয়ে দেয়। ফিরোজকে ফিরতে হবে। সামনে পরীক্ষা। পড়াশোনার কথা উঠলে মা উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। নিজেকে প্রবোধ দেন। ফিরোজকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। তার ফিরোজ অনেক বড় হবে। গ্রামের আর সবার মত চাষী হবে না। চাকরী করবে। মা ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন। ফিরোজ ব্যাগ কাঁধে লঞ্চ ঘাটের পথে রওনা করলো। মা আর দাদী রাস্তা পর্যন্ত এলেন। আব্বা বললেন, ‘পৌঁছে চিঠি দিও’। দাদী মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ভাই ছুটি পালি আবার বাড়ি চইলে আসপা। সামনের বার বাড়ি আলি পিঠে বানাবো।’
‘ভালোভাবে যেও…’ মা কথা শেষ করতে পারলেন না। উচ্ছস্বিত কান্নার বেগ সামাল দিতে চোখে আঁচল চাপা দিলেন। শৈশবে এই আঁচলই ছিলো ফিরোজের সব থেকে বড় নির্ভরতার স্থান। ফিরোজ হেঁটে চলে যাচ্ছে। মাটির দিকে তাকিয়ে সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে। রাস্তা ভরা থিকথিকে কাঁদা। ফিরোজের পেছন ফিরে তাকায় না। সে না তাকিয়েও জানে পেছনে দুটি চোখ তার দিকে অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে আছে। যতক্ষন সে রাস্তার বাঁকে বিলীন হয়ে না যাচ্ছে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে আঁচলে চোখ মুছবে।
মা দিবস এলে প্রতিবছর মাকে নিয়ে অসাধারণ সব লেখা ছাপা হয়। কাগজে, অনলাইনে লেখার হিড়িক পড়ে যায়। ফিরোজও টুকটাক লিখতে পারে। অফিসের কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে ব্লগে লেখে। গল্প ও কবিতা নামের একটি ওয়েব সাইটে এবার মা কে নিয়ে গল্প লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ফিরোজের ইচ্ছে করছিলো মা কে নিয়ে কিছু লেখে। গুগলে সার্চ দিয়ে সে মায়েদের অসাধারণ কোন কাহিনী খুঁজছিলো। যা পাঠককে সহজে নাড়া দিতে সক্ষম হবে। নিজের লেখার প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। নষ্টালজিক বৃষ্টি সেই কলেজ জীবনের কথা মনে করিয়ে দিলো। আমাদের ঘরে ঘরে আছে সাধারণ মা। এই সাধারণ মায়েরা যে আপন মমতায় কতটুকু অসাধারণ হয়ে আছেন তা পেছনে ফিরে না তাকালে বোঝা যাবেনা। ফিরোজ লেখার আইডিয়া পেয়ে গেছে। ল্যাপটপ ওপেন করে নিলো। নিজেকে উত্তম পুরুষে রেখে লেখা শুরু করলো।
শ্রাবণ মাস। মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। লঞ্চ ঘাটে যখন ফিরোজ নামলো তখনও একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। লঞ্চ ঘাটের উল্টোপাশে সুন্দরবন। পৃথিবী বিখ্যাত সেই সুন্দরবন। বৃষ্টির জন্য ঝাপসা দেখাচ্ছে। গাছগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। একটা পাখি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে উড়ে গেলো গহীন বনের দিকে।