এক বাদশার সাত ছেলে ছিল। অনেক আগের কথা। ছয় ছেলে ছিল এক মায়ের সন্তান। বাকি এক সন্তান ছিল অন্য মায়ের। বাদশা ওই ছেলের নাম রাখলো মালেক মুহাম্মাদ। এক রাতে বাদশা তাঁর প্রাসাদে আরামে ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমের ভেতর চমৎকার এক স্বপ্ন দেখেন তিনি।
স্বপ্নটা হলো: বাদশার মাথার ওপরে ঝুলছে একটি সোনার খাঁচা। খাঁচার ভেতর বসে আছে চমৎকার একটা তোতা পাখি। ঘুম ভেঙে যাবার পর বাদশা চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবছিলো এই সোনার খাঁচার মানে কী কিংবা ওই তোতা পাখিরই বা কী অর্থ। অর্থ যা-ই হোক বাদশা কিন্তু ওই তোতা পাখির প্রেমে পড়ে গেছে। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকেই ভাবতে শুরু করেছে কী করে ওই তোতা পাখি আর সোনার খাঁচা হাতে পাওয়া যায়।
অপরদিকে বাদশা কিছুদিন থেকেই ভাবছিল বাদশাহির দায়িত্ব কোনো এক ছেলের হাতে সোপর্দ করবে যাতে তার অবর্তমানে বাদশাহি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না দেখা দেয়। স্বপ্ন দেখার পর বাদশা ভাবলো:ভালোই হলো। এবার সাত সন্তানকেই পরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। সাত সন্তানের মধ্যে যে সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তার হাতে বাদশাহীর দায়িত্ব দিয়ে দেবে। বাদশা তাই তাঁর সাত সন্তানকেই ডেকে পাঠালো। সন্তানরা সবাই এসে পৌঁছলে বাদশা তাদের উদ্দেশে বললো: তোমরা সবাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের সবাইকেই এক দৃষ্টিতে মানে সমানে চোখে দেখি। আমি বুঝতে পারছি না তোমাদের মধ্য থেকে কার হাতে এই বাদশাহির দায়িত্ব হস্তান্তর করবো। সেজন্যে তোমাদের সবাইকে একটা কাজ দেবো আমি। ওই কাজটা যে সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেবে তাকেই আমি আমার স্থলাভিষিক্ত করবো।
সবাই জানতে চাইলো: কাজটা কী!
বাদশা বললো: তোমরা আমার জন্য সোনার খাঁচায় বসে থাকা একটা তোতা পাখি নিয়ে আসবে। যে আনতে পারবে সে-ই হবে আমার পরবর্তী বাদশা।
একই স্ত্রীর পেটের ছয় ভাই বাদশার কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো এবং একসাথে বেরিয়ে পড়লো সোনার খাঁচা আর তোতা পাখির সন্ধানে। অনেক দূর-দূরান্তে গেল তারা। শহর নগর গ্রাম গঞ্জ সবখানেই খুঁজলো। এমনকি নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্য দেশেও গেল। কত মানুষের কাছে যে জানতে চেয়েছে পথ কিংবা সোনার খাঁচা আর তোতা পাখির সন্ধান, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কোনো কাজেই আসে নি সেসব। অবশেষে খালি হাতেই ফিরতে হলো তাদের। ফিরে এসে বাদশাকে বললো: ‘হে বাদশা! আমরা সারা পৃথিবী ঘুরেছি,কিন্তু তুমি যে জিনিস চেয়েছো তা খুঁজে পাই নি’।
বলছিলাম ছয় ছেলে ফিরে এসে বাদশাকে তাদের অপারগতার কথা বললো। আর বাদশা মনে মনে ভাবলো: আমি কি এমনই কঠিন কোনো কাজ দিলাম ছেলেদেরকে যা করা তাদের জন্য অসম্ভব! এ রকম ভাবনার মাঝেই মালেক মুহাম্মাদ উঠে দাঁড়ালো এবং বললো: হে শ্রদ্ধেয় পিতা আমার! আপনি অনুমতি দিলে আমি ওই তোতা পাখি আর সোনার খাঁচার সন্ধানে যেতে চাই।
বাদশা বললো: ওরা ছয় জনই তোমার চেয়ে বড়। তারা একসাথে গিয়েও তোতা পাখি আর সোনার খাঁচা আনতে পারলো না আর তুমি একা গিয়ে কী করবে?
মালেক মুহাম্মাদ বললো: আল্লাহ চাইলে আনতেও তো পারি!
বাদশা বললো: ঠিক যেতে চাচ্ছো যখন যাও! যদি আনতে পারো, তাহলে বাদশাহি তোমার হাতে সোপর্দ করবো।
মালেক মুহাম্মাদ সফরের প্রস্তুতি নিয়ে কটি মণিমুক্তা সঙ্গে নিলো। এরপর দ্রুতগামী একটি ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ছয় ভাইয়ের মধ্যে যে বড় সে ছিল ভীষণ হিংসুক। সে তার বাকি পাঁচ ভাইকে ডেকে বললো: আমি জানি মালেক মুহাম্মাদ তোতা পাখি আর সোনার খাঁচা আনতে পারবে। তাই চলো, ওর পেছনে পেছনে আমরাও যাই। বলা তো যায় না ও যদি আমাদের টেক্কা দিয়ে বসে! পাঁচ ভাই কথাটা মেনে নিলো এবং সবাই ঘোড়ায় চড়লো। যেতে যেতে একটা নির্জন প্রান্তরে গিয়ে মালেক মুহাম্মাদের নাগাল পেল। মালেক মুহাম্মাদকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে ছয় ভাই মিলে মারলো। মারতে মারতে মালেক ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মণিমুক্তাময় জিনটা তার মাথার পাশে রেখে দিলো যাতে মারা গেলে দাফন কাফনের ব্যবস্থা হয়। তারপর ছয় ভাইয়ের সবাই ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত পালিয়ে গেল যাতে কেউ তাদের দেখতে না পায়। মালেক মুহাম্মাদ সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটিতেই পড়ে ছিল। সে ঘুমের ভেতর হযরত আলি (আ) কে স্বপ্নে দেখতে পেল।
আলী (আ) তাকে বলছিলো: হে যুবক! জেগে ওঠো! ভালো করে কোমর বাঁধো।
এতোক্ষণ পর্যন্ত মালেকের গোংরানোরও শক্তি ছিল না। অথচ স্বপ্ন দেখার পর সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো দাঁড়িয়ে গেল সে। স্বপ্নের ভেতরেই একরাশ বিস্ময় চোখে মেখে হযরতের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো। হযরত আলি (আ) তাকে বললো: এর পর থেকে যখনই কোনো সমস্যায় পড়বে তখনই বলবে: ‘ইয়া আলি’! তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ বলেই আলি (আ) অদৃশ্য হয়ে গেল।
মালেক মুহাম্মাদের ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখলো তার শরীরে কোনোরকম ব্যথা-বেদনা নেই। পুরোপুরি সুস্থ সে। এদিক সেদিক তাকালো। দেখলো তার ঘোড়া এবং জিন সব কিছুই ঠিক আছে। প্রশান্ত মনে দৃঢ় বিশ্বাস বুকে নিয়ে ঘোড়ায় চড়লো এবং সতেজভাবে ঘোড়া ছুটালো।#
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (২)
২৮ জানুয়ারি(রেডিও তেহরান): হযরত আলি (আ) স্বপ্নের ভেতর মালেক মুহাম্মদকে বলেছিল: এর পর থেকে যখনই কোনো সমস্যায় পড়বে তখনই বলবে: ‘ইয়া আলি’! তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ বলেই আলি (আ) অদৃশ্য হয়ে গেল। মালিক মুহাম্মদের ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখলো তার শরীরে কোনোরকম ব্যথা-বেদনা নেই। পুরোপুরি সুস্থ সে।
এদিক সেদিক তাকালো। দেখলো তার ঘোড়া এবং জিন সব কিছুই ঠিক আছে। প্রশান্ত মনে দৃঢ় বিশ্বাস বুকে নিয়ে ঘোড়ায় চড়লো এবং সতেজভাবে ঘোড়া ছুটালো।
এদিকে তার ছয় ভাই যারা তাকে মেরেছিল তারা যেতে যেতে এক শহরে গিয়ে পৌঁছলো। ওই শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে তারা ঘুরতে লাগলো। ঘুরতে ঘুরতে তারা গিয়ে পড়লো এক জুয়ার গলিতে। ওই গলিতে জুয়া খেলা হয় বলে এরকম নাম। এমনিতেই তারা জুয়া খেলতে পছন্দ করতো। মালেককে মারার পর মাথার ভেতর যে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল সেই দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য তারা জুয়ার আড্ডায় বসতে চাইলো। সবাই মিলে তাই করলো। জুয়া খেলার আস্তানায় ঢুকে পড়লো তারা এবং শুরু করে দিলো জুয়া খেলা। খেলতে খেলতে সর্বস্বান্ত হয়ে গেল তারা। যা কিছুই ছিল সব হারিয়ে বসলো। এমনকি রাতের খরচটুকুও অবশিষ্ট রইলো না। পকেট শূন্য হয়ে যাবার পর উপায়ন্তর না দেখে তাদের তিন জন গেল ভিক্ষা করতে। বাকি তিনজনের একজন গেল নেহারির দোকানে কাজ করতে, আরেকজন গেল গোসলখানার কাজে আর তৃতীয়জন গেল রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে।
অপরদিকে মালিক মুহাম্মাদ যেতে যেতে সামনে দেখলো একটা শহর। ওই শহরেই উঠলো সে। ঘটনাক্রমে তার যে তিনভাই ভিক্ষা করার জন্য এক শহরে গিয়েছিল এটা ছিল সেই শহর। তখন ছিল রাত। মালিক কিছুই চিনে উঠতে পারছিল না। সকালের অপেক্ষায় রাতটা সেখানেই কাটাতে চাইলো। কিন্তু কোথায় থাকবে! ভেবে ভেবে শেষ পর্যন্ত এক বুড়ির বাসার দরোজায় আঘাত করলো। বুড়ি ঘরের দরোজা খুলতেই মালিক বললো: ‘হে মা আমার! আমি একজন মুসাফির। অপরিচিত এই শহরে থাকার কোনো জায়গা পাচ্ছি না। অনুমতি দিলে আমি আপনার ঘরে রাতটা কাটিয়ে সকাল হলেই আমার কাজে বেরিয়ে যাবো’।
বুড়ি খুব ভালো করে মালেককে দেখলো। বুড়ির মনে হলো মালিক যে সে কোনো লোক নয়, ওকে বাদশাহ কিংবা রাজপুত্রের মতো লাগে। বুড়ি মালেককে বললো: ‘হে যুবক! তোমার যদি রুচিতে না বাধে, যদি গরিবের প্রতি তোমার সুদৃষ্টি থেকে থাকে তাহলে সুস্বাগত তোমাকে’!
মালিক ঘরে ঢুকলো। বুড়ি তার এক মেয়েকে নিয়ে ওই ঘরে বাস করতো। ঘরে ঢুকেই মালিক চারদিকে তাকিয়ে দেখলো বর্ণনা করার মতো তেমন কিছুই নেই। খোরজিন থেকে একটা মুক্তা বের করে বুড়ির হাতে দিয়ে বললো: ‘এটা বিক্রি করে রাতের জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করুন’।
মালেকের দেওয়া মুক্তাটি বিক্রি করে বুড়ি ওই রাতের খাবারের আয়োজন করলো। খাওয়া শেষে মালিক লক্ষ্য করলো বুড়ি কাঁদছে।
মালিক বললো: মা! কাঁদছো কেন?
বুড়ি বললো: রাজকন্যার কথা ভেবে কাঁদছি। ওর জন্য আমার মনটা কাঁদে।
মালিক বললো: কেন কী হয়েছে রাজকন্যার!
বুড়ি বললো: সম্প্রতি একটা দৈত্য কোত্থেকে যেন আসে। প্রতি মাসে একবার আসে। এসে একটা মেয়ে, চুয়ান্ন কিলো ওজনের এক ঝুড়ি খুরমা এবং ত্রিশ কিলো হালুয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে নিচ্ছে। সবার কাছ থেকেই নেয়া হয়েছে,আজ বাদশার দেওয়ার পালা। সে কারণেই বাদশার মেয়ের জন্য মনটা পুড়ছে। আমি ওর ধাইমা হই কিনা।
এসব শুনে মালিক মুহাম্মদ হযরত আলি (আ) এর কথা স্মরণ করলো। তলোয়ার কোমরে বাঁধলো। বুড়ি যখন দেখলো মালিক মুহাম্মদ যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে,বললো: হে প্রিয় সন্তান আমার! কী করতে চাচ্ছো তুমি?
মালিক বললো: ভাবছি যাবো, দৈত্যের অত্যাচার থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বুড়ি বললো: হে যুবক! তোমার যৌবনের কসম,রহম করো! বাদশা এ পর্যন্ত কয়েক দল সৈন্য পাঠিয়েছে ওই দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য, কিন্তু কেউই জিততে পারেনি, মারাত্মকভাবে পরাজিত হয়েছে। এখন তুমিও যদি যাও,নির্ঘাত মারা যাবে।
মালিক বললো: হে বুড়ো মা! আমার রক্ত ওই রাজকন্যার রক্তের চেয়ে বেশি রঙিন নয়। আল্লাহ চাহে তো আমি যাবো। তুমি শুধু আমাকে ওই দৈত্যটার জায়গা দেখিয়ে দাও!
বুড়ি যখন দেখলো মালিক একেবারেই নাছোড়বান্দা, যাবেই সে, অগত্যা বললো: দরোজা দিয়ে বাইরে গেলে একটা গম্বুজ দেখতে পাবে। ওই গম্বুজের নীচে দেখবে রাজকন্যা বসে আছে খুরমার ঝুড়ি আর হালুয়া নিয়ে।
মালিক মুহাম্মদ বাসার বাইরে এসে আবারও হযরত আলী (আ) কে স্মরণ করলো। এরপর ঘোড়ার পিঠে চড়ে দরোজার বাইরে গিয়ে দেখলো সত্যিই একটা গম্বুজ দেখা যাচ্ছে। গম্বুজের দিকে গেল। রাজকন্যা দেখলো মালিক তার দিকে আসছে। কাছাকাছি যেতেই মালিক রাজকন্যাকে বললো: এই বাদশার মেয়ে! এই গম্বুজের কাছে বসে বসে কী করছো তুমি!
রাজকন্যা মালিকের দিকে তাকিয়ে ভাবলো লোকটাকে তো মন্দ বলে মনে হচ্ছে না।
মালিক মুহাম্মদ আবারো বললো: এই রাজকন্যা! আমি এসেছি তোমাকে মুক্ত করতে।
একথা শুনে রাজকন্যা অঝোরে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৩)
২ ফেব্রুয়ারি (রেডিও তেহরান): বলছিলাম বাদশা তার মেয়ের দু:খে ঘুমাতে পারছিল না। মুয়াজ্জিনের ভুল আজানের ধ্বনি তার কানে যেতেই মুয়াজ্জিনকে ডেকে পাঠালো। বাদশার পাইক পেয়াদারা যথারীতি মুয়াজ্জিনকে ধরে নিয়ে এলো। বাদশাহ মুয়াজ্জিনের ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করলো: কী হয়েছে?
মুয়াজ্জিন বললো: হে বাদশা নামদার! জানি না কী হয়ে গেল! মনে হচ্ছে দৈত্যের ক্ষুধা মেটে নি। ও গম্বুজের কাছে ঘুমিয়ে আছে। আমার মনে হয় ও এই শহরেই থেকে যেতে চাচ্ছে।
মুয়াজ্জিনের কথা শুনে বাদশাহ এক বুড়োকে ডেকে পাঠালো এবং তাকে প্রচুর টাকা পয়সা দিয়ে গম্বুজের খোজ খবর নিয়ে আসতে বললো। বুড়ো লোকটার তো করার কিছুই নেই। কাঁপতে কাঁপতে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে টাকাগুলো গ্রহণ করলো এবং ভয়ে ভয়ে পা বাড়ালো গম্বুজের দিকে।
আস্তে আস্তে পা ফেলে চোখ কান খোলা রেখে সতর্কতার সাথে গেল গম্বুজের কাছে। গম্বুজের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে রাতের আঁধার কেটে গিয়ে সকাল হয়ে গেল। চারদিক ফর্সা হয়ে গেল তখন। বুড়ো তখন দেখলো দৈত্যটা গম্বুজের কাছে ঘুমায় নি বরং মাটিতে পড়ে ছিল দৈত্যের কাটা পা। বুড়োর মনে হলো সে বুঝি স্বপ্ন দেখছে। চোখ কচলাতে কচলাতে গম্বুজের আরও কাছে গেল। কাছে গিয়ে দেখলো: নাতো, সে স্বপ্ন দেখছে না, সত্যই দেখছে,বাস্তবই দেখছে। কৌতূহলী হয়ে উঠলো বৃদ্ধ। পা টিপে টিপে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় কাঁপতে কাঁপতে উপরের দিকে গেল এবং গম্বুজের ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরে ঢুকে তো বৃদ্ধের চোখ ছানাবড়া। সে দেখলো বাদশার সুন্দরী কন্যা আর এক সুদর্শন যুবক গম্বুজের ভেতর ফ্লোরে শুয়ে আছে। বুড়ো বুঝতে পারছিল না সে কি সত্যি দেখছে নাকি স্বপ্ন। সে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলো সত্যিই তারা মানুষ এবং বেঁচে আছে। খুশিতে আটখানা হয়ে গেল বৃদ্ধ। দেরি না করে দ্রুত ছুটে গেল বাদশার কাছে। বাদশাকে বললো: ‘হে বাদশা! গম্বুজের দরোজায় তো দৈত্য ঘুমোয় নি। বরং দৈত্যের একটা কাটা পা সেখানে পড়ে আছে। বিশাল ওই পা পুরো জায়গা জুড়ে নিয়েছে। আর তোমার কন্যা গম্বুজের ভেতরে নিরাপদে আছে, বেঁচে আছে। এক সুদর্শন যুবকও আছে ভেতরে তোমার কন্যার সাথে’। একথা শোনার পর বাদশার কী প্রতিক্রিয়া হলো তা শুনবো খানিক বিরতির পর। আপনারাও ভাবুন।
কী বন্ধুরা! ভেবেছেন তো! দেখুন আপনাদের চিন্তার সঙ্গে মেলে কিনা। বাদশা তার কন্যার বেঁচে থাকার সংবাদ শুনেই খুশিতে নেচে উঠলো। কী যে করবে আর বলবে ভেবে কুল পাচ্ছিল না। আনন্দের সাথে বলে উঠলো: ‘এ কাজ নিশ্চয়ই ওই যুবকের। হ্যাঁ,নিশ্চয়ই ওই যুবকের। আমি চাচ্ছি তোমরা কেউ গম্বুজের ভেতর যাও এবং তারা দুজন যেভাবে শুয়ে আছে ঠিক সেভাবে রেখেই অর্থাৎ সে অবস্থাতেই তাদেরকে নিয়ে এসে আমার পালঙ্কের পাশে তাদের রেখে দাও’!
এদিকে ঘটলো আরেক ঘটনা। বাদশার এক মন্ত্রীর ছেলে ছিল। সে বাদশার মেয়েকে ভালবাসতো। ওই মন্ত্রী যখন শুনতে পেলো বাদশার মেয়ে মরে নি বরং বেঁচে আছে, তখন মনে মনে বললো:যাক বাবা! শেষ পর্যন্ত আমার ছেলের ইচ্ছে তাহলে পূর্ণ হতে যাচ্ছে, সে রাজকন্যাকে পেতে যাচ্ছে। এই ভেবেচিন্তে মন্ত্রী বাদশার দিকে তাকিয়ে বললো: “বাদশা মহাশয়! ওদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় এখানে নিয়ে আসার কী দরকার! অপেক্ষা করুন! ভোর তো মাত্র হলো! সূর্য ভালো করে উঠুক।ওদের ঘুমও ভাঙুক। তারপর না হয় কাউকে পাঠিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো এবং ওই ছেলেকে অভিযুক্ত করে তার গর্দান নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর আমার ছেলের সঙ্গে আপনার কন্যার বিয়ের আয়োজন করবো”।
বাদশাহ তার মন্ত্রীর কথা শুনে ভীষণ বিরক্ত হলো। বললো: ‘জল্লাদ! মন্ত্রীর জিহ্বা কেটে ফেল’!
জল্লাদের তো কাজই হলো বাদশার আদেশ পালন করা। সে দাঁড়িয়েই ছিল আদেশের অপেক্ষায়। যখন যে আদেশ পাবে তাই করবে। সে মন্ত্রীর জিহ্বা কেটে ফেলল।
এরপর বাদশাহ আদেশ দিলো তাড়াতাড়ি গিয়ে তার কন্যা আর ওই যুবকটাকে নিয়ে আসতে। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন চলে গেল এবং তাদের দুজনকে নিয়ে হাজির হয়ে গেল প্রাসাদে। প্রাসাদে বাদশার পালঙ্কের পাশেই তাদের ঘুমোনোর ব্যবস্থা করলো। কিছুই টের পেল না তারা। কিছুক্ষণ পর মালেক মুহাম্মাদের ঘুম ভেঙে গেল। সে ঘুম থেকে জেগেই দেখলো বাদশার প্রাসাদে তারই পালঙ্কের পাশে সে।
তার বিস্ময় ভাঙিয়ে দিয়ে বাদশাহ বললো: ‘এই যুবক! তুমি যে-ই হও না কেন আমার জানার দরকার নেই। তুমি আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছো এবং আমাকে ও এই মুলুকের জনগণকে ওই দৈত্যের অত্যাচার থেকে বাঁচিয়েছো’! বাদশাহ এটুকু বলতেই তার মেয়েও জেগে উঠলো ঘুম থেকে। রাতে দৈত্যের সাথে ওই গম্বুজে যা যা ঘটেছিল সব খুলে বললো পিতাকে। বাদশাহ যুবকের বীরত্ব ও সাহসিকতার কথা শুনে বললো: ‘হে যুবক! তুমি এবার আমার কন্যাকে তোমার স্ত্রী হিসেবে কবুল করো! আমি তোমার সাথে ওর বিয়ের আয়োজন করবো এবং তোমার হাতে তার হাত সঁপে দেবো’।
মালেক মুহাম্মাদ রাজি হলো এবং বাদশা আদেশ দিলো পুরো শহরকে যেন ঝলমলে করে সাজানো হয়। সাতরাত সাতদিন উৎসব হলো। সপ্তম রাতে আকদ অনুষ্ঠান হলো। রাতে মালেক মুহাম্মাদ স্ত্রীকে বললো: ‘আমার অনেক কাজ পড়ে আছে,যেতে হবে। পথ খুবই বিপদ সংকুল।যদি ফিরে আসি তাহলে তুমি তো আমার স্ত্রীই থাকবে। আর যদি ফিরে না আসি তবে তুমি আবার বিয়ে করে নিও’! রাজকন্যা মালেক মুহাম্মাদকে ‘বীর’ বলে প্রশংসা করলো।
সকালবেলা মালেক মুহাম্মাদ গেল বাদশাহর দরবারে। বললো: হে বাদশাহ! আমি আজ পার্শ্ববর্তী শহরের উজিরের কাছে যেতে চাই। ওই শহরটা দেখতে চাই!
বাদশাহ আদেশ দিলো মন্ত্রীর শহরকে যেন সাজানো হয়। তারপর মালেক মুহাম্মাদ দরবারের কতিপয় অভিজাত ব্যক্তিকে নিয়ে মন্ত্রীর শহরের দিকে রওনা দেয়।#
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৪)
মালেক মুহাম্মাদ যখন বললো ‘হে রাজকন্যা! আমি এসেছি তোমাকে দৈত্যের হাত থেকে বাঁচাতে’। অমনি রাজকন্যা কাঁদতে কাঁদতে মালেককে বললো: ‘হে যুবক! তুমি তোমার নিজের জীবনের জন্য একটু ভাবো। এই দৈত্য ভয়ংকর। তোমাকে দেখামাত্রই তোমার ওপর হামলা করবে এবং তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে। তোমার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলবে। তুমি তোমার ওই যৌবনের প্রতি সদয় হও, নিজের প্রাণ রক্ষা করো!’
মালেক বললো: যার মওলা হচ্ছে হযরত আলি (আ),দৈত্য-দানবে তার আর ভয় কী! আমি কোনো পরোয়া করি না। আল্লাহর ইচ্ছায় এবং মওলা আলির সাহায্যে এসেছি তোমাকে ওই দৈত্যের হাত থেকে রক্ষা করতে। তুমি বেঁচে গেলে তোমার পিতা মাতাও খুশি হবে,আনন্দিত হবে।
রাজকন্যা মালেক মুহাম্মাদের কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলো এবং কান্নাকাটি বন্ধ করে প্রশান্ত হলো কিছুটা। একটু পরে সে মালেক মুহাম্মাদকে বললো: ‘ঠিক আছে! তুমি যা ভালো মনে কর,করো’!
রাজকন্যার কথা আর সম্মতি পেয়ে মালেক মুহাম্মাদ তার পাশে গিয়ে বসলো। মালেককে পাশে পেয়ে রাজকন্যার একটু সাহস হলো। অন্তত মুখ ফুটে কারও সাথে কথা বলার মতো অবস্থা হলো তার। বললো: ‘হে যুবক! তুমি তো দেখছি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছো। শোনো! এই দৈত্য আসার তিনটা লক্ষণ আছে। সে যখন ভূমি থেকে আকাশে উড়তে যায় বাতাস তখন একটু গরম হয়ে ওঠে। যখন সে উড়তে থাকে আবহাওয়া তখন ভীষণ গরম হয়ে যায়। এমন গরম যে মনে হয় গা পুড়ে যাবে। তৃতীয় লক্ষণ হলো যখন সে কাছাকাছি চলে আসে বিশ্রি গন্ধে চারদিকের পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে। ওই গন্ধে জনগণের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়।
রাজকন্যার কথা শুনে মালেক মুহাম্মাদ বললো: হে রাজকন্যা! আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। যদি ঘুম এসেই যায় তাহলে ওই প্রথম আলামত পেয়েই তুমি আমাকে জাগিয়ে তুলবে।
রাজকন্যা বললো: ঠিক আছে।
কিন্তু মালেক ঘুমাতে না ঘুমাতেই প্রথম নিদর্শনটা উপলব্ধি করলো রাজকন্যা। সে মালেক মুহাম্মাদের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকালো। কী গভীর ঘুমে সে। কী করে তাকে এই চমৎকার ঘুম থেকে উঠাবে সে,বুঝে উঠতে পারছিল না। বিস্ময় বিহ্বল হয়ে পড়ে রইলো রাজকন্যা। এমন সময় দ্বিতীয় লক্ষণও দেখা দিলো। এবারও রাজকন্যার মন চাইলো না কাঁচা ঘুম থেকে মালেক মুহাম্মাদকে জাগাতে। কিন্তু একটু পরেই বিশ্রি গন্ধটা নাকে আসতে লাগলো। বোঝা যাচ্ছিলো দৈত্যটা কাছাকাছি এসে গেছে। শ্রোতাবন্ধুরা! গন্ধটা নাক থেকে সরানোর জন্য একটু বিরতিতে যাচ্ছি।
কী আশ্চর্য! গন্ধ তো গেলোই না বরং আরও বেড়ে গেল। অথচ রাজকন্যা মালেক মুহাম্মাদকে এবারও ঘুম থেকে জাগাতে চাইলো না। এদিকে ভয়ে কষ্টে তার চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। ওই অশ্রুরই একটা ফোঁটা পড়লো ঘুমন্ত মালেকের চোখেমুখে। পড়তেই মালেকের ঘুম ভেঙে গেল এবং এক লাফে সে উঠে দাঁড়ালো। রাজকন্যাকে কাঁদতে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে কাঁদছো কেন?
রাজকন্যা বললো: হে যুবক! দৈত্যের আসার সকল আলামত ফুটে উঠেছে। কিন্তু তুমি যেভাবে ঘুমুচ্ছিলে আমার মন চাচ্ছিল না তোমাকে জাগাই। এক্ষুণি কিন্তু দৈত্য এসে পড়বে।
মালেক মুহাম্মাদ দ্রুত তার গেলাফ থেকে তলোয়ারটা বের করে দাঁড়ালো। রাজকন্যা তলোয়ার দেখে ভয় পেয়ে এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মালেক মুহাম্মাদ আলী (আ) কে স্মরণ করলো। দৈত্যের চীৎকার তার কানে ভেসে এলো। বিশ্রি গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে গেল। যেন মরে যাবার উপক্রম। দৈত্য এরিমাঝে এসে পড়লো। এসেই তার নজর পড়লো মালেক মুহাম্মাদের ওপর। দৈত্য বিশ্রি এক হাসি দিয়ে বললো: মানুষের জাত নাকি ভয় পায় যে সে কাজে হাত দিতে। কিন্তু এখন দেখছি রাজকন্যার পালা যখন এলো একটা যুবক আর একটা ঘোড়াও বোনাস হিসেবে এসেছে আমার জন্য হা হা হা….।
মালেক মুহাম্মাদ চীৎকার করে বললো: মুখ বন্ধ কর তুই! আমি এসেছি তোকে হত্যা করার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছায় আমিই হবো তোর হত্যাকারী।
দৈত্য মালেকের কথা শুনে বিরক্ত হলো। তার হাতের গদা ছুঁড়ে মারলো মালেকের মাথা লক্ষ্য করে। মালেক মাথা সরিয়ে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করলো। এরপর দৈত্যকে লক্ষ্য করে তলোয়ার চালালো। দৈত্যও সরে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলো কিন্তু পারলো না, তার উরুতে তলোয়ার গিয়ে আঘাত করলো। ধারালো তলোয়ারের আঘাতে দৈত্যের এক পা কেটে পড়ে গেল মাটিতে। দৈত্য মালেক মুহাম্মাদের বীরত্ব দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং এক খণ্ড মেঘ হয়ে হাওয়ায় মিশে গেল।
রাজকন্যা আর মালেক মুহাম্মাদ একে অপরের দিকে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে তাকাতে লাগলো। দৈত্যের গায়ের গন্ধ মিলে গেলে দুজনেই আল্লাহর শোকর আদায় করলো।
সকালবেলা মুয়াজ্জিন যখন মসজিদের ছাদে উঠে আজান দিতে গেল সামনের গম্বুজের নীচের দিকে তাকাতেই তার সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। বিশাল কী যেন একটা তার নজরে পড়লো। ময়লার ওপর পড়ে আছে ওই বস্তুটা। ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো মুয়াজ্জিন। কাঁপতে কাঁপতে আজান দিতে গিয়ে গোলমাল করে ফেললো সে। মুয়াজ্জিনের ভুল আজানের ধ্বনি কানে গেল বাদশার।
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৫)
জামাই শহর দেখতে যাবে তাই বাদশাহ আদেশ দিলো সংশ্লিষ্ট শহরকে যেন সাজানো হয়। তারপর মালেক মুহাম্মাদ দরবারের কতিপয় অভিজাত ব্যক্তিকে নিয়ে মন্ত্রীর শহরের দিকে রওনা দেয়। মালেক মুহাম্মাদের ছয় ভাইয়ের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের।
তারা এই শহরেই কেউ ভিক্ষা করে খায়, কেউবা টুকটাক চাকর বাকরের কাজ করে। তারা যখন শুনলো যে বাদশার মেয়ের জামাই যাবে ওই শহর দেখতে,তারা প্রস্তুত হলো শহরে যেতে এবং রাজকন্যার জামাইকে দেখতে। তাদের যে তিন ভাই ভিক্ষা করতো তারা বললো যে এই শহরের তো তিনটা প্রবেশদ্বার রয়েছে। সুতরাং তিন দ্বারে তিনজন যাবো এবং হুক্কা সাজাবো জামাইর জন্য। বাদশার জামাই যদি খুশি হয় তাহলে নিশ্চয়ই কিছু দেবে।
যেই কথা সেই কাজ। তিন ভাই লেগে গেল হুক্কা সাজানোর কাজে। হুক্কা সাজিয়ে পরিকল্পনামতো বিভিন্ন গেইটে তারা দাঁড়ালো। মালেক মুহাম্মাদ প্রথম প্রবেশদ্বারে যেতেই হুক্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে দেখতে পেল। ওই যুবক মালেকের কাছাকাছি যেতেই মালেক তাকে চিনতে পারলো। যুবক মালেকের হাতে হুক্কাটা দিলো। দু’এক টান দিয়ে মালেক হুক্কাটা যুবকের হাতে ফেরত দিয়ে সামনে অগ্রসর হলো। বাকি দুই গেইটেও অন্য দু’ভাইকে হুক্কা হাতে পেল এবং এক-দুই টান দিয়ে তাদেরকেও হুক্কা ফেরত দিয়ে অগ্রসর হয়ে গেল নিজের পথে। এই দুই ভাইও মালেক মুহাম্মাদকে চিনতে পারলো না।
এদিকে মালেক মুহাম্মাদ গিয়ে পৌঁছলো উৎসব অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে ঘোড়া থেকে নেমে তার জন্য সাজানো রাজকীয় আসনে বসলো। হঠাৎ দেখ পেল হাম্মামের রক্ষণাবেক্ষণকারী তার চাকরকে বলছে: বাদশার জামাই হাম্মামে আনছে। তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস! কোনো কাজ করছিস না! যা,হাম্মামের উষ্ণতা আরও বাড়িয়ে দে। মালেক মুহাম্মাদের দৃষ্টি পড়লো ওই চাকরের ওপর। দেখেই চিনতে পারলো এ-ও তার আরেক ভাই। অপরপ্রান্তেও তাকিয়ে দেখলো বাবুর্চি তার চাকরকে বলছে: দুপুর হয়ে গেছে, এখন বাদশার জামাই খাবার খেতে আসবে। অথচ তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস!
হাতের ওপর হাত রেখে আরাম করছিস! মালেক মুহাম্মাদের দৃষ্টি গেল সেদিকে। দেখলো ওই চাকরও তার আরেক ভাই। মালেক মুহাম্মাদ ঘাড় ফেরালো অন্যদিকে। দেখলো ঠিক সেই মুহূর্তেই নেহারির বাবুর্চি তার চাকরকে বলছে: কাল সকালে বাদশার জামাই আমার কাছ থেকে নেহারি খেতে চাইবে। অথচ তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিস! মালেকের দৃষ্টি গেল ওই চাকরের দিকে। দেখলো এই চাকরও তারই আরেক ভাই।
মালেক মুহাম্মাদ তার সকল ভাইকেই ঠিকঠাকমতো চিনতে পারলো। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে চিনতে পারলো না। মালেক মুহাম্মাদের আর সহ্য হচ্ছিল না। তার সঙ্গে আসা বাহিনীকে আদেশ দিলো মন্ত্রীর শহরে যেন হামলা চালায়। কিন্তু জিহ্বাকাটা মন্ত্রী আদেশ শুনে মালেক মুহাম্মাদের হাত পা জড়িয়ে ধরলো। অনুনয় বিনয় করে বোঝালো সে যেন তার সেনাদেরকে ফেরায়। মালেক মুহাম্মাদ বললো: এক শর্তে আমি তাদের থামাতে পারি। শর্তটা হলো এক্ষুণি তোমার বাবুর্চি, হাম্মামের ওস্তাদ এবং নেহারি প্রস্তুতকারী ওস্তাদকে আমার সামনে হাজির করবে।
জিহ্বাকাটা মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাদের তিনজনকেই ডেকে পাঠালো। তিনজনই যখন জামাইর সামনে এলো জামাই আদেশ দিলো তিনজনকেই যেন হালকা চড় দেওয়া হয়। তাই করা হলো এবং বুঝিয়ে দিলো তারা যেন আর কখনো তাদের চাকরদের চড়-থাপ্পড় না মারে।
মালেক মুহাম্মাদ ভাইদের সবাইকে চিনতে পেরে মনে মনে বললো: এরা তো সবাই জুয়াড়ি। সম্ভবত জুয়া খেলে ভাইয়েরা তাদের সব টাকা পয়সা হারিয়ে বসেছে। সে কারণেই তাদের আজ এই দশা। এই ভেবেচিন্তে মালেক আদেশ দিলো সকল জুয়াড়িকে যেন তার সামনে হাজির করা হয়। সবাইকে হাজির করা হলে মুহাম্মাদ তাদের থাপ্পড় মেরে তিরষ্কার করে। তারপর জুয়াড়িদেরকে তার ভাইদের দেখিয়ে বলে: এদের কাছ থেকে যত টাকা তোরা জুয়া খেলে নিয়েছিস,সব টাকা ফেরত দে! জুয়াড়িরা ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিলো এবং অচেনাদের কাছ থেকে যা কিছু নিয়েছিল সব ফেরত দিলো।
মালেক মুহাম্মাদ এবার আদেশ দিলো: তিন প্রবেশদ্বারে যে তিনজন হুক্কা সাজিয়ে তাকে দিয়েছিল তাদেরকে যেন হাজির করা হয়। আদেশ দেয়ামাত্র তাদের হাজির করা হলো। মালেক মুহাম্মাদ ছয় ভাইকে নিয়ে আড়ালে গেল। এরপর ছয় ভাইকে বললো: “খুব ভালো করে আমার দিকে তাকাও!…আমি তোমাদেরই ভাই”। সবাই তাকালো এবং মালেক মুহাম্মাদকে চিনতে পারলো। লজ্জায় ছয় ভাই তাদের মাথা নীচু করে রাখলো। মালেক মুহাম্মাদ হেসে দিয়ে বললো: যা হবার তো হয়েই গেছে! এখন আর লজ্জা পেয়ে কাজ নেই। সবাই আমার সঙ্গে চলো রাজপ্রাসাদে। তাদেরকে রাজকীয় পোশাক পরানো হলো। ওই পোশাক পরেই তারা প্রাসাদে ঢুকলো।
মালেক মুহাম্মাদ বাদশার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো: হে বাদশাহ! আমার ভাইয়েরা আমাদের দেশ থেকে এসেছে। আমাকে তাদের সাথে যেতে হবে এবং সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি নিয়ে আসতে হবে। বাদশাহ মালেক মুহাম্মাদকে সফরে যাবার অনুমতি দিলো এবং সকল প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হলো ঘোড়ায় চড়ে।
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৬)
মালেক মুহাম্মাদ যেতে যেতে গিয়ে পৌঁছলো একটি শহরের কাছে। ওই শহরের বাদশাহ কী কাজে যেন প্রাসাদের ছাদের ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাদশা দেখতে পাচ্ছিল দূর থেকে সাতজন ঘোড় সওয়ার শহরের দিকে আসছে।
বাদশাহ মনে মনে বলছিল: ‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে যুবকেরা অভিজাত এবং সম্ভ্রান্তই হবে। ভালোই হলো,আমার সাত কন্যাকে ওই সাত যুবকের হাতে সঁপে দেব’। এই ভেবে বাদশাহ ওই যুবকদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য কয়েকজন কর্মকর্তা পাঠিয়ে দিলেন। তারা যখন শহরে প্রবেশ করলো সোজা নিয়ে আসা হলো প্রাসাদে।
বাদশাহ যখন জানতে পেল সাত ভাই-ই শাহজাদা,ভীষণ খুশি হলো এবং ভালোমতো তাদের আদর আপ্যায়ন করলো। অবশেষে বললো: শাহজাদাগণ! আমার সাতটি মেয়ে আছে। তোমাদের সাতজনের সাথে তাদের আক্দ করতে চাই। মালেক মুহাম্মাদ এবং তার ভাইয়েরা বাদশার প্রস্তাব গ্রহণ করলো। বাদশার আদেশে পুরো শহরকে জাঁকজমকপূর্ণ করে সাজানো হলো। সাত দিন সাত রাত্রি ধরে শহরের লোকজন উৎসবের আমেজে মেতে রইলো এবং সপ্তম রাতে ঘটা করে আকদ অনুষ্ঠান পালন করা হলো। বাদশার সবচেয়ে ছোট মেয়েটি হলো মালেক মুহাম্মাদের স্ত্রী। মালেক মুহাম্মাদ তাকে বললো: একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। সংসার ধর্ম পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যে সফরে যাচ্ছি সেটা খুবই ভয়ংকর পথ। যদি ফিরে আসি তো ভালো আর যদি না আসি তাহলে তুমি আবার বিয়ে করে নিও।
মালেকের ভাইয়েরা বেশ কটা দিন তাদের স্ত্রীদের নিয়ে ভালোভাবেই কাটালো। তারপর বাদশার অনুমতি নিয়ে আপনাপন স্ত্রীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সফরে বের হয়ে গেল। দিন রাত তারা ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে লাগলো। চতুর্থ দিন দুপুরের খানিক আগে তারা গিয়ে পৌঁছলো একটা দূর্গের কাছে। মালেক মুহাম্মাদ দূর্গের উঁচু দেয়ালের উপর দিয়ে নোঙর নিক্ষেপ করে উঠে হযরত আলিকে স্মরণ করলো এবং দেয়াল টপকে কেল্লায় ঢুকে পড়লো। দরোজা খুলে দিলে ভাইয়েরাও ভেতরে ঢুকলো। কেল্লার ভেতর সাতটি কক্ষে সাতটি ভাতের পাতিল রাখা ছিল। কিন্তু কাউকেই দেখতে পাওয়া গেল না। মালেক মুহাম্মাদ ভাইদের বললো: আল্লাহর ওপর ভরসা করে চলো একেকজন একেক রুমে যাই। সবাই তাই করলো। কিন্তু দুপুর হতে না হতেই ঘটলো আশ্চর্য এক ঘটনা।
মালেক মুহাম্মাদ ভাইদের নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিল। ওই উৎকণ্ঠার ভেতরেই মালেক দেখলো তার রুমের দরোজা খুলে অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ে ঢুকছে। মেয়েটির মুখে ছিল হাসি। বেশ প্রাণবন্তই লাগছিল তাকে। রুমের এক কোণে গিয়ে বসে মেয়েটি হঠাৎ কেঁদে উঠলো। মালেক মুহাম্মাদ অবাক হয়ে ভাবলো: ওই প্রাণবন্ত হাসিই বা কেন আর এই কান্নাই বা কেন! সে উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে গেল মেয়েটির কাছে। বললো: তুমি কাঁদছো কেন?
মেয়েটি বললো: হে শাহজাদা মালেক মুহাম্মাদ! আমরা সাত বোন! আমি সবার ছোট। আমরা পরী হবার কারণে সবকিছুর খবর জানি। সে কারণে আমরা সাতবোনই জানি তুমি ময়না পাখি আর সোনার খাঁচার সন্ধানে যাচ্ছো। তুমি জেনে রাখো যে আমি হলাম তোমার স্ত্রী। সে কারণে আমার অন্য ছয় বোন আমাকে নিয়ে হিংসা করছে এবং তোমার আগমনের অপেক্ষায় আছে, তোমাকে মারার জন্য।
পরী আরও বললো: এক কাজ করো! আমার বোনেরা এসে পৌঁছার আগেই তুমি এবং তোমার ছয় ভাই লুকিয়ে পড়। মালেক মুহাম্মাদ তাই করলো। তাড়াতাড়ি ভাইদের নিয়ে লুকিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ ওই ছয় পরী এসে নিজ নিজ রুমে ঢুকে বুঝতে পারলো এখানে কারও হাত পড়েছে। সবাই গিয়ে ছোট বোনকে জিজ্ঞেস করলো: ঘরে কেউ এসেছে নাকি! তুমি যেহেতু আগেভাগে এসেছো নিশ্চয়ই দেখেছো কে এসেছে। সত্যি করে বলো নৈলে কিন্তু মেরে ফেলবো। পরীদের ছোট্ট বোন বললো: আমি তাদেরকে দেখাতে পারি এক শর্তে। শর্তটা হলো তোমরা তাদের কোনো ক্ষতি করবে না। যদি কথা দাও তাহলে আমরা শিকারে না গিয়ে প্রতিদিন ওদেরকে পাঠাবো আর আমরা নিশ্চিন্তে আরামে বসবাস করতে পারবো।
বোনেরা মেনে নিলো। ছোট পরী এবার মালেক মুহাম্মাদসহ তার সব ভাইকে সামনে হাজির করলো। ছোট পরী বললো: আমি শিকারের বিনিময়ে তোমাদের জীবন ভিক্ষা নিয়েছি। তোমরা এক্ষুণি শিকারে যাও! বলার সঙ্গে সঙ্গে মালেক মুহাম্মাদ তার ভাইদের নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসলো। ছোট্ট পরী মালেকের কানে কানে বললো: প্রাণে বাঁচতে চাইলে তাড়াতাড়ি ভাগো! এদিক দিয়ে গেলে সামনে একটা নদী পড়বে। নদী পর্যন্ত যেতে পারলে আর ভয় নেই। আমার বোনেরা আর তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। এই বলে মাথা থেকে এক গোছা চুল ছিঁড়ে মালেকের হাতে দিয়ে বললো: কখনো যদি আমার কথা মনে পড়ে কিংবা যদি কোনো বিপদে পড়ো এই চুলের গোছার ওপর হাত রাখবে,আমি হাজির হয়ে যাবো।
সাত ভাই শিকারের অজুহাত দেখিয়ে পালালো নদীর দিকে। এদিকে সাত পরী বসে পড়লো খোশগল্পে। কিছুক্ষণ পর ছোট বোন দূরবীন নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখলো কদ্দুর গেছে সাত ভাই। দেখলো নদীর কাছে যেতে এখনো বাকি আছে। ছাদ থেকে ফিরে এসে পরীদের বললো: সাত ভাই মিলে শিকারে ব্যস্ত। বোনেরা আবার মশগুল হয়ে পড়লো নিজেদের গল্পে। কিছু সময় পর বোনেরা আবারও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক বোন ছাদে যেতে চাইলে ছোট বোন তাড়াতাড়ি দূরবীন হাতে নিয়ে আগেআগে চলে গেল এবং দেখলো এখনো নদীর কাছে পৌঁছায় নি তারা। ফিরে এসে বললো: ওরা ফিরছে। বোনেরা আবারও মজে উঠলো গল্পে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই এবার বড় বোন নিজেই গেল ছাদে এবং দেখলো সাত ভাই নদীর দিকে যাচ্ছে। চীৎকার করে উঠলো সে এবং দ্রুত ঘোড়ায় চড়ে সাত ভাইয়ের পেছনে ছুটলো। ছোট বোনও বড় বোনের সাথে সাথে গেল।
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৭)
মালেক মুহাম্মাদের হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল ছোট পরীর কথা। আনমনে তাই পেছনে তাকালো। তাকাতেই তার চোখ তো ছানাবড়া। পরীদের সাত বোন তাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে একেবারে। মালেক ছয় সহোদর ভাইকে নদীর দিকে পাঠিয়ে নিজে তাদের পেছনে রয়ে গেল। ওই ছয় ভাই বলছিল: তুমি কেন পেছনে থাকছো? ওরা তো এসে গেল বলে…!
মালেক মুহাম্মাদ বলল: তোমরা যাও! আমি মারা গেলে তো সমস্যা নেই। কেননা আমি তো তোমাদের কেউ নই। কিন্তু তোমাদের ছয় ভাইয়ের কোনো একজনের ক্ষতি হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরকম সংশয় উৎকণ্ঠার মধ্যেই তারা গিয়ে পৌঁছে গেল নদীতে। কিন্তু মালেক মুহাম্মাদ নদীতে পা বাড়াতেই পরীদের বড় বোন তার ঘোড়ার লেজ টেনে ধরে ফেললো। এ অবস্থা দেখে ছোট পরীও তার হাতের তলোয়ার দিয়ে এক কোপে ঘোড়ার লেজ কেটে দিল।
ব্যাস্ … মালেক মুহাম্মাদ নিশ্চিন্তে গিয়ে পৌঁছল নদীতে। পরীদের বড় বোন ছোট বোনকে বলল: তুই কী করলি এটা!
ছোট পরী বলল: আমি তো ওর মাথাটাকে দুই টুকরা করে ফেলতে চেয়েছি কিন্তু আল্লাহ বোধ হয় ওদেরকে আমাদের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছেন, নৈলে ঘোড়ার লেজে কেন লাগবে! যাকগে, এখন দুঃখ করে আর কী হবে!
পরীদের নদী পার হবার অনুমতি নেই। অগত্যা তারা ফিরে গেল আপনগৃহে। এদিকে নদী পেরিয়ে মালেক মুহাম্মাদ তার ভাইদের বলল: ভীষণ এক বিপদ থেকে বাঁচা গেল। যাক। তোমরা এখন যার যার পরিবারের কাছে ফিরে যাও! আমি যাচ্ছি সোনার খাঁচা আর ময়না পাখির সন্ধানে। যদি ভালোয় ভালোয় ফিরে আসি তাহলে একসাথে যাব। তাই হলো। ছয় ভাই ফিরে গেল শহরে আর মালেক মুহাম্মাদ গেল মরুপ্রান্তরের দিকে।
যেতে যেতে অনেকদূর পেরিয়ে যাবার পর মালেক দেখল এক দরবেশ তার দিকে আসছে। কাছে এসে ওই দরবেশ তাকে বলল: হে যুবক! এসো! আমরা একটা বিষয়ে চুক্তি করি।
মালেক বলল: কীসের চুক্তি!
দরবেশ বলল: তুমি তোমার তলোয়ার আর ঘোড়াটা আমার কাছে দেবে আর আমি আমার এই পাত্র, দস্তরখান আর লম্বা লাঠিটা তোমাকে দেব।
মালেক বলল: এগুলোর বৈশিষ্ট্য কী?
দরবেশ বলল: পাত্রটা হাতে নিয়ে যত মেহমানই তোমার আসে শুধু ভেতরে হাত রেখে বলবে: হে সোলায়মান নবী! আমার মেহমান আছে। এরপর পাত্র থেকে যতই খাবার নেবে কমবে না। দস্তরখানের বৈশিষ্ট্য হলো এটা বিছিয়ে সোলায়মান নবীকে স্মরণ করে বলবে আমার মেহমান আছে। তারপর যতই রুটি নেবে শেষ হবে না। আর লাঠিটা হাতে নিয়ে বলবে: আমি অমুকের মাথাটা চাই। অমনি মাথাটা লাউয়ের মতো কাটা হয়ে যাবে।
পাঠক! আপনাদের কী মনে হয়, মালেক মুহাম্মাদ কি দরবেশের প্রস্তাবে রাজি হবে? হ্যাঁ! রাজি হয়ে গেছে সে এবং নিজের ঘোড়া আর তলোয়ার দরবেশ দিয়ে পাত্র, দস্তরখান আর লাঠিটা নিয়ে দিল। আর দরবেশ তলোয়ারটা কোমরে ঝুলিয়ে ঘোড়ায় চড়ে চলে গেল। মালেক মুহাম্মাদ দরবেশের দেয়া জিনিসগুলোকে একবার পরীক্ষা করে দেখতে চাইলো। লাঠিটা হাতে নিয়ে বলল: হে সুলায়মান নবী! এই দরবেশের মাথাটা ফেলে দিতে চাই। বলতে না বলতেই দরবেশের মাথা কেটে গেল। মালেক ভেবেছিল দরবেশ হয়তো ওই তলোয়ার দিয়ে কাউকে অন্যায়ভাবে খুন করবে। সেজন্য পরীক্ষার শুরুতেই বেছে নিয়েছিল লাঠিটাকে।
মালেক মুহাম্মাদ এবার ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ারটা কোমরে ঝুলিয়ে ফিরে চললো পরীদের কেল্লার দিকে। ছোট পরী মালেককে দেখে বলল: তোমার কি জীবনের ভয় নেই। আমার বোনেরা তোমাকে দেখলে জীবিত রাখবে না। মালেক বলল: আল্লাহ মহান।
ছোট পরী বলল: যদি আমার বোনেরা না থাকতো তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে কাটাতে পারতাম। কোনোরকম টেনশন থাকতো না।
মালেক বলল: তুমি কিছু মনে না করলে বলি.. এদের হত্যা করা আমার কাছে পানি খাবার মতোই সহজ।
ছোট পরী রাজি হয়ে গেল এবং মালেক তার হাতের লাঠিটা তুলে বলল: হে সোলায়মান নবী! আমি চাই ওই ছয় বোনের মাথা লাউয়ের মতো কেটে ফেলতে।
এই বলে মালেক পরীকে বলল: যাও গিয়ে দেখো তোমার বোনদের কী অবস্থা!
পরী ভেতরে গিয়ে দেখলো ছয় বোনেরই মাথা কেটে পড়ে আছে। খুশিতে সে নাচতে নাচতে ফিরে এসে মালেককে বলল: হ্যা! বোনেরা মারা গেছে। এখন আমরা নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারব।
মালেক মুহাম্মাদ বলল: কিন্তু আমার তো দূরের সফর আছে, চলে যেতে হবে।
পরী বলল: আমি জানি! তুমি সোনার খাঁচা আর ময়না পাখির সন্ধানে আছো। কিন্তু তুমি আমার সাহায্য ছাড়া এ কাজে যেতে পারবে না।
মালেক বলল: কেন?
পরী বলল: কারণ যেখানে এই খাঁচা আর ময়না রয়েছে সে স্থানটি এখান থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে। তার ১২০ কিলোমিটার জুড়ে চিতাবাঘের বাস। ১২০ কিলোমিটার জুড়ে বাঘ সিংহের বাস আর ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দৈত্যদানবের বাস।
তুমি যেই সোনার খাঁচা আর ময়নার খোঁজ করছো সেই খাঁচা পরীদের বাদশার মেয়ের মাথার উপরে রাখা। শহর থেকে ওই মেয়ের প্রাসাদে যেতে সাতটি দরোজা আছে। প্রতিটি দরোজার পাহারায় রয়েছে দৈত্যরা। সপ্তম দরোজার প্রহরী সাত মাথার দৈত্য। কী করে তুমি এগুলো পেরুবে, আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, মনোযোগ দিয়ে শোনো।#
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৮)
পরী মালেককে সেইসব বলে ঘুরে ঘুরে পায়চারী করতে লাগল এবং হঠাৎ করেই সে একটা বড় মুরগিতে পরিবর্তিত হয়ে গেল। মুরগি তার পাখা বিস্তার করে দিল এবং মালেক মুহাম্মাদ ওই বিস্তারিত পাখার ওপর চড়ে বসলো। মুরগি উড়াল দিল। ২৪০ কিলোমিটার আকাশপথ মানে চিতাবাঘ আর সিংহদের এলাকা পেরিয়ে গেল।
শেষের ভূখণ্ডটা যেহেতু দৈত্যদের ছিল সেজন্য পরী তার আসল রূপ ধারণ করল আর মালেক মুহাম্মাদকে একটা সুঁইয়ের রূপ দিয়ে তার গলার নীচে পুঁতে রাখল। এভাবে বাকি পথও পার হলো। এক সময় তারা গিয়ে পৌঁছলো শহরে এবং তারপর প্রথম দরোজায় গিয়ে উপস্থিত হলো। পরী এবার মালেক মুহাম্মাদকে তার আসলে রূপে পরিবর্তন করে দিল এবং সে নিজেও পরিণত হলো একটা কবুতরে। পরীদের বাদশার মেয়ের প্রাসাদের একটা খাঁজে গিয়ে বসে সে এবার দেখতে চাইলো দৈত্যগুলোর সাথে কী করে মালেক মুহাম্মাদ।
মালেক যখন প্রথম দরোজায় পৌঁছলো, দেখলো সেই এক পা-ওয়ালা খোঁড়া দৈত্যটাই এই দ্বাররক্ষী। দৈত্যটার নজর মালেক মুহাম্মাদের ওপর পড়তেই সে কাঁপতে শুরু করল। মালেক দৈত্যকে বলল ভয় পেও না, তোমার সাথে আমার কোনো কাজ নেই। তুমি শুধু আমাকে ওই ছয়টি দরোজা পেরুবার ব্যবস্থা করে দাও। দৈত্য বলল: তুমি পাঁচটা দরোজা পেরুতে পারবে কিন্তু শেষ দরোজা পেরুতে হলে কিছু গিফ্ট বা নজরানা নিয়ে যেতে হবে। ওই দরোজা পাহারা দেয় আমার ভাই। মালেক মুহাম্মাদ বলল: ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি করো! যেসব খোরমা আর হালুয়া নজরানা হিসেবে পেশ করো সেরকম কয়েক ট্রে ভর্তি করে নিয়ে আসো এবং গেইটগুলো পার হবার পাস বা গেইটপাস নিয়ে আসো।
দৈত্য ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি সবকিছু আঞ্জাম দিল। দৈত্য ওই গেইটপাস দেখিয়ে দেখিয়ে পাঁচ পাঁচটি দরোজা পার হয়ে গেল। সর্বশেষ দরোজায় গিয়ে গেইটপাস দেখালেও প্রহরী দৈত্য বলল: মিষ্টি ছাড়া গেইট পার হওয়া সম্ভব না। মালেক মুহাম্মাদ দৈত্যকে বলল: মুখ খোলো। দৈত্য মুখ হা করতেই মালেক তার সঙ্গে নিয়ে আসা হালুয়া আর খোরমাহগুলো মুখের ভেতর ঢেলে দিল। দৈত্য বলল: তোমার মিষ্টিগুলো তো মন্দ না। ঠিক আছে,যাও। মালেক মুহাম্মাদ অনুমতি পেয়েই সোজা ঢুকে গেল পরীদের বাদশাহর মেয়ের রুমে।
রুমে ঢুকে মালেক এদিক ওদিক তাকালো। খাটের ওপর নজর পড়তেই দেখলো পরীরাজ কন্যা ঘুমিয়ে আছে। আর তার মাথার উপরে ঝুলানো আছে সোনার খাঁচা। আর খাঁচার ভেতর বসে আছে সুন্দর ময়না পাখিটা। চারপাশে চারটি চেরাগ মানে টেবিল ল্যাম্প জ্বালানো আছে। প্রত্যেকটা ল্যাম্পের জায়গা পাল্টিয়ে দেওয়া হলো। এরপর একটা চিঠি লিখলো মালেক মুহাম্মাদ। চিঠিটা সে পরীরাজ কন্যার মাথার ওপর রাখল। চিঠিতে লেখা ছিল: হে পরীরাজ কন্যা! আমি মালেক মুহাম্মাদ, সোনার খাঁচা আর ময়না পাখিটা নিয়ে গেলাম। তুমি যদি চাও তাহলে কষ্ট করে এসো এই ঠিকানায়। ঠিকানায় তার দেশের নাম এবং রাজ প্রাসাদের কথা লিখে দিল। এরপর মালেক মুহাম্মাদ রওনা হয়ে গেল তার গন্তব্যে।
যেতে যেতে মালেক একেবারে শহরের বাইরে পৌঁছে গেল। তার সঙ্গে আসা কবুতররূপি পরীও এলো তার সঙ্গে সঙ্গে। পরী যখন দেখলো মালেকের হাতে সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি, ভীষণ খুশি হয়ে গেল সে। এবার পরী পুনরায় বিরাট একটা পাখিতে পরিণত হলো এবং তার পাখায় চড়ে বসলো মালেক মুহাম্মাদ। পাখি আবার উড়াল দিল। উড়তে উড়তে গিয়ে পৌঁছলো পরীদের কেল্লায়। সেখানে মালেক মুহাম্মাদ রেখে এসেছিল দরবেশের দেওয়া লাঠি, দস্তরখান এবং তার ঘোড়া। সেসব নিয়ে পরীসহ ফিরে গেল সেই বাদশার শহরে যে বাদশাহর সাত কন্যাকে বিয়ে করেছিল তারা সাত ভাই। সেখানে দেখা হলো তার ছয় ভাইয়ের সঙ্গে। তাদের নিয়ে এবার মালেক মুহাম্মাদ যাত্রা শুরু করল।
যেতে যেতে গিয়ে পৌঁছলো ওই সেই শহরে যে শহরে ছিল এক পা-ওয়ালা দৈত্য, যে কিনা মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিত। সেই শহরের বাদশার প্রাসাদে গেল। পরদিন তার বৌসহ ছয় ভাই এবং তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে পা বাড়ালো। কিন্তু ছয় ভাই যখন দেখলো মালেক মুহাম্মাদের হাতে সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি,ভাবলো মালেক যদি এই পাখি আর খাঁচা নিয়ে প্রাসাদে ফিরে যায় এবং তার বাবার হাতে দেয় তাহলে তো সে-ই হবে বাদশা। আর মালেকের বাদশা হওয়া মানে তার অধীনেই সারা জীবন কাটাতে হবে। কী করা যায় চিন্তায় পড়ে গেল ছয় ভাই। কোনো বুদ্ধি করতে না পারলেও মোটামুটি এই সিদ্ধান্ত নিলো যে কিছু না কিছু একটা করতেই হবে। মালেকের কাছ থেকে ওই খাঁচা আর পাখি কেড়ে নিয়ে তারাই তাদের বাবার হাতে দেবে যাতে তারাই হতে পারে পরবর্তী বাদশা।
যাই হোক ছয় ভাই ভাবতে ভাবতে মালেক মুহাম্মাদের সঙ্গে চলল এবং একসময় তারা গিয়ে পৌঁছলো একটা কুপের তীরে। ভাইদের একজন বলল: কেউ একজন যাও পানি নিয়ে আসো। মালেক বলল: ঠিক আছে,আমি যেহেতু সবার ছোট,সুতরাং আমিই যাচ্ছি পানি আনতে। এই বলেই সে চলে গেল কুপের ভেতর এবং পানির বালতি পূর্ণ করে উপরে পাঠালো। মানুষেরাও পানি খেল এবং ঘোড়াগুলোকেও খাওয়ানো হলো। সবার পানি খাওয়া হলে মালেক মুহাম্মাদ বালতিতে চড়ে বসলো যাতে তাকে টেনে উপরে তোলা হয়। কিন্তু তখনই ঘটলো দুর্ঘটনা। (ক্রমশ..)
‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৯)
হ্যাঁ ভাইয়েরা ঠিকই বালতি উপরে তোলার জন্য সূতা ধরে টানতে লাগলো। কূপের প্রায় অর্ধেকটায় আসার পর তারা দড়িটা কেটে দিল এবং মালেক মুহাম্মাদ নীচে পড়ে গেল। ভাইয়েরা এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল এবং নিজ নিজ স্ত্রীকে নিয়ে তারা নিজেদের শহরের দিকে রওনা হলো। স্ত্রীদের হুমকি দিয়ে বলল: কেউ যদি এই ঘটনা কোনোক্রমে অন্য কারো কাছে ফাঁস করে তাহলে তাকে মেরে ফেলা হবে। মহিলারা ভয়ে নিজেদের মুখে কুলুপ আঁটলো। সবাই সবাইকে সতর্ক করে দিল: খবরদার একদম চুপ, টু শব্দটিও করবে না।
মালেক মুহাম্মাদ কূপের ভেতর পড়ে বেহুশ হয়ে যায়। যখন তার হুশ ফিরে আসে সারা শরীর তারা ব্যথা করতে শুরু করে। সে উপরে কূপের মুখের দিকে তাকায়। দেখতে পায় একটা লোক কূপের মুখে দাঁড়িয়ে আছে এবং থেকে থেকে তার দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা বালতি ভেতরে ফেলল পানি তুলতে। মালেক মুহাম্মাদ এই সুযোগে বালতির ভেতর বসে পড়তে চাইলো যাতে উপরে উঠে যেতে পারে। কিন্তু লোকটা যখন মুহাম্মাদকে দেখলো বলল: তোকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি বল্ কে তুই? আমাকে পানি দে। তুই বিনিময়ে যা চাস তাই পাবি। মালেক বলল: আমি কিছুই চাই না,শুধু কূপ থেকে আমাকে উপরে তোলো! লোকটা মেনে নিল এবং মালেকও লোকটার জন্য পানি পাঠাল।
কূপের ভেতর থেকে উপরে উঠে এসে মালেক লোকটার দিকে তাকাল। জিজ্ঞেস করলো: কে তুমি!
লোকটি বলল: আমি একজন ব্যবসায়ী। ভারতে গিয়েছিলাম এখন ফিরে যাচ্ছি নিজ শহরের দিকে। তুমিও চলো আমার সাথে। তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য। মালেক মুহাম্মাদ রাজি হয়ে গেল এবং লোকটার সঙ্গে যেতে উদ্যত হলো। পা বাড়াবার আগে কূপের চারপাশে একবার নজর বুলাতেই দেখলো তার দস্তরখান, পাত্র আর লাঠি পড়ে আছে কূপের পাশে। ভাইয়েরা যেহেতু এগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতো না সে জন্য ভাবছিল পুরোণো জিনিসগুলো হয়ত মূল্যহীন। সেজন্য তারা জিনিসগুলোকে সেখানেই ফেলে রেখে চলে গেছে। মালেক মুহাম্মাদ সেগুলোকে একত্রিত করে ব্যবসায়ী লোকটার সঙ্গে রওনা হয়ে গেল।
পাঠক! আপনাদের কি মনে আছে দরবেশের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে মালেক মুহাম্মাদ এই জিনিসগুলো মানে দস্তরখান, লাঠি এবং একটি পাত্র নিয়েছিল তার ঘোড়া আর তলোয়ারের বিনিময়ে।
মালেক মুহাম্মাদ তখন জিজ্ঞেস করেছিল: এগুলোর বৈশিষ্ট্য কী?
দরবেশ বলেছিল: পাত্রটা হাতে নিয়ে যত মেহমানই তোমার আসে শুধু ভেতরে হাত রেখে বলবে: হে সোলায়মান নবী! আমার মেহমান আছে। এরপর পাত্র থেকে যতই খাবার নেবে কমবে না। দস্তরখানের বৈশিষ্ট্য হলো এটা বিছিয়ে সোলায়মান নবীকে স্মরণ করে বলবে আমার মেহমান আছে। তারপর যতই রুটি নেবে শেষ হবে না। আর লাঠিটা হাতে নিয়ে বলবে: আমি অমুকের মাথাটা চাই। অমনি মাথাটা লাউয়ের মতো কাটা হয়ে যাবে।
কিন্তু মালেক মুহাম্মাদের ভাইয়েরা এসব জিনিসের বৈশিষ্ট্য না জানার কারণে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই ফেলে রেখে চলে যায়। আর মজার ব্যাপার হলো এইসব জিনিস দিয়েই মালেক মুহাম্মাদ সকল বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। ভাইদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায় এবং তার পিতাও সেসব বুঝতে পারে। অবশেষে যে যার মতো পরিণতি আর পুরস্কার লাভ করে। বাদশা যে স্বপ্ন দেখেছিল সে স্বপ্নের কথাটা নিশ্চয়ই মনে আছে! স্বপ্নটা ছিল এরকম: বাদশার মাথার ওপরে ঝুলছে একটি সোনার খাঁচা। খাঁচার ভেতর বসে আছে চমৎকার একটা তোতা পাখি। ঘুম ভেঙে যাবার পর বাদশা চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবছিল এই সোনার খাঁচার মানে কী কিংবা ওই তোতা পাখিরই বা কী অর্থ। অর্থ যা-ই হোক বাদশা কিন্তু ওই তোতা পাখির প্রেমে পড়ে গেছে। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকেই ভাবতে শুরু করেছে কী করে ওই তোতা পাখি আর সোনার খাঁচা হাতে পাওয়া যায়।
অপরদিকে বাদশাও কিছুদিন থেকেই ভাবছিল বাদশাহির দায়িত্ব কোনো এক ছেলের হাতে সোপর্দ করবে যাতে তার অবর্তমানে বাদশাহি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না দেখা দেয়। স্বপ্ন দেখার পর বাদশা ভাবলো:ভালোই হলো। এবার সাত সন্তানকেই পরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হলো। সাত সন্তানের মধ্যে যে সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তার হাতে বাদশাহীর দায়িত্ব দিয়ে দেবে। মালেক মুহাম্মাদ সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি ছয় ভাই নিয়ে এলেও পরক্ষণেই ভাইদের সকল অপকর্মের কথা জানতে পেরে বাদশা। তাই বাদশা শেষ পর্যন্ত মালেক মুহাম্মাদকেই তাঁর পরবর্তী বাদশা ঘোষণা করেন আর ছয় ভাইকে করেন তিরস্কার।