— তিন দিন আগে না আপনার বিয়ে হয়েছে? তাহলে আজ আপনি কলেজে আসলেন কি করে? নিহা চুপ করে রইল,, মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাচ্ছে।
— হ্যালো, আমি আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চেয়েছি। (নিহার সামনে হাত নাড়া দিয়ে বললাম)
— নাহ, হয়নি। (নিহা)
— অদ্ভুদ, বিয়ে হয়নি মানে? বিয়ে দিন বিয়ে ভেঙ্গে গেছে?
— বিয়ে ভাঙ্গবে কেন? আমি চায়নি তাই হয়নি।
— তাই বলে বিয়ের দিন?
— হুম,, আমি জানতাম না যে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের আগের দিন আমাকে জানানো হয়েছিল। আর আমি বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
— বাবা-মায়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত আপনি এক মুহূর্ত অমান্য করে দিলেন?
— আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চায় না। কথা বলে নিহা আমার পাশ থেকে উঠে অন্য একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল। কিছুটা দূরে…
— কিরে দোস্ত ঐ মেয়েটার সাথে এতক্ষণ কি বলল? (নয়ন)
— আরে কি আর বলব,, ওর তো গত পরশু বিয়ে ছিল কিন্তু আজ ক্লাসে আসল কি করে সেটাই জানতে চেয়েছিলাম।
— আর বলিস না ওর কথা,, পুরো পাগল একটা। (নয়ন)
— কেন তুই কিছু জানিস নাকি?
— আমি সবই জানি।
— সত্যি?
— হুম,, বিয়ের দিন ভোরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আর মাঝ রাতে বাড়ি আসছে। বাবা-মায়ের মুখে ভালো ভাবেই চুন কালি মেখেছে। নিহার মা তো কয়েক বার জ্ঞানও হারিয়েছে। নিহার বাবা-মা এখন তার কাছ থেকে সব আশা ছেড়ে দিয়েছে।
— শুনছি,, বিয়ে নাকি ভালো পরিবারের সাথেই হচ্ছিল,, তাহলে পালালো কেন?
— না, পালানোর কোন কারনই ছিল না।
— মানে?
— মানে আর কি? আমাদের ক্লাসের সুজনকে চিনিস না? স্ট্যাইলিস বয়.. ওর সাথে তিন মাসের সম্পর্ক। শুনছি এ কারনেই নাকি পালিয়ে ছিল।
— আরে বলিস কি? ওর মতো একটা নির্লজ্জের সাথে সম্পর্ক ! নিহা কি সুজনের সম্পর্কে কিছু জানে না?
— এত কিছু আমি কি করে বলল,, আমি যতটুকু জানি তোকে বলে দিয়েছি,, শুনছি এখনও নাকি ছেলেটা নিহাকে বিয়ে করতে রাজি আছে কিন্তু আমার মনে হয় না সে বাবা-মায়ের পছন্দ রাখবে। ক্লাস শেষে নিহা গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে,, দেখে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে… — আপনি কি কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন? (আমি)
— হুম,, সুজনের জন্য কোথায় যেন গেল,, (নিহা)
— এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবেন না। অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে। তার চেয়ে ভালো গাছটার নিচে গিয়ে বসেন। (আমি)
— না, আমি ঠিক আছি,, আপনি আসতে পারেন। বলতে না বলতেই সুজন চলে আসল আর নিহা একটু হেসে হাত ধরে রিক্সা করে চলে গেল। দু’জনকে দেখে মনে হলো তাদের সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ত্রুটি নেই,, নিহা যেন সঠিক একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে আর বিয়ে না করে পালিয়ে এসে তেমন বড় কোন ভুল করেনি। তবে আমি জানি নিহা পালিয়ে এসে একটুও ঠিক করেনি। সুজন ছেলে হিসেবে কেমন আমি তা ভালো করেই জানি। আমার উচিৎ নিহাকে সব কিছু জানানো। তবে নিহা কি বিশ্বাস করবে? পরদিন ক্লাসের সময় আমি নিহার পাশে গিয়ে বসলাম…
— তোমার সাথে কিছু কথা ছিল,, প্যারসনাল ব্যাপারে। (আমি)
— হুম, বলতে পারেন।(নিহা)
— আপনি কি সুজনকে সত্যিই ভালবাসেন? আর সুজনও আপনাকে… আর কিছু বলার আগেই নিহা আমাকে থামিয়ে দিল।
— আমি বোঝছি আপনি কি বলবেন আর বলতে হবে না। সব ছেলেদের একই কথা এই ছেলে ভালো না, ঐ ছেলে ভালো না,, যত সব আজাইরা পাবলিক। (নিহা)
— না, মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম আপনি কি সুজকে পুরোপুরি চিনেন? তার সম্পর্কে সব জানেন?
— দেখেন আমার প্যারসনাল ব্যাপারে নাক গলাবেন না,, আমি যা করেছি বোঝে শুনেই করেছি,, অন্য কোন কথা আছে? থাকলে বলতে পারেন, না হলে আসতে পারেন। (নিহা) মনে হচ্ছে নিহা খুব রাগী, তাই বলতে পারলাম না। একটু পরেই সুজন ক্লাসে আসল আর নিহার পাশে গিয়ে বসল। তাদের মধ্যে হাসি ঠাট্টা চলতে থাকে। এ কারনেই হয়তো নিহা সুজনকে চেনায় সুযোগই পায়নি,, নিহা পুরোপুরি অন্ধ ভালবাসায় ডুবে আছে। হয়তো নিহা ভাবে সুজনই এক মাত্র ছেলে যে, নিহাকে এতটা ভালবাসতে পারে। এভাবে তাদের সময় কাটতে থাকে,,, প্রায় এক মাস পর… আজ নিহা কলেজের কোনায় গাছে নিচে বসে আছে। আমি প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ খেয়াল করছি। তারপর আমি চুপি চুপি নিহান দিকে হাটতে থাকি।
— এভাবে বসে আছেন,, কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন?
— আচ্ছা ভাই আমি একটা কথা বলব? (নিহা)
— হুম, অবশ্যই।
— আপনি সব সময় শুধু আমার পেছনে গেলে থাকেন কেন? আপনার কি কোন কাজ নেই? দয়া করে আর আমাকে ফলো করবেন না,, প্লিজ। (নিহা) — আমার যে একটা কথা বলার ছিল।
— আরে ভাই, আপনি এখান থেকে যান তো। বিরক্ত করবেন না।(নিহা) আর কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসলাম।
— আমি বলেছিলাম না মেয়েটা তোর কোন কথা শুনবে না,, তবে কেন তুই বার বার কথা বলতে যাস? (নয়ন)
— আরে দোস্ত তুই এখানে? (আমি) নয়ন আমার পেছনে দাড়িয়ে ছিল,, আমি দেখতেই পায়নি। নয়ন আমাকে সব সময় নিষেধ করে যেন আমি নিহাকে সুজনের সম্পর্কে কিছু না বলি। তার মতে এ ধরনের মেয়েদের শিক্ষা পাওয়া উচিৎ।
— হুম, আমি তোর সব কথা শুনেছি,, তুই আর নিহাকে কিছু বলতে আসবি না। তুই দেখিস না নিহা তোর কথা একবারেই পছন্দ করে না? কেন বার বার অপমানিত হতে আসিস? (নয়ন)
— নিহার জন্য খারাপ লাগে,, যেদিন জানতে পারবে,, সেদিন খুব কষ্ট পাবে। আর যদি আত্নহত্যা করে? এ জন্যই তো বার বার নির্লজ্জের মতো বলতে আসি।
— আজ থেকে আর আসবি না। আর মাত্র ৫ দিন অপেক্ষা কর,, ২৮ শে মার্চ পর্যন্ত।(নয়ন) — কেন? কি হবে হবে ২৮ শে মার্চ? অবাক হয়ে নয়নের কাছে জানতে চায়লাম।
— বিয়ে। (নয়ন)
— বিয়ে? কার বিয়ে নিহার?
— না, সুজনের। তাও আবার বড় লোক মেয়ের সাথে। শুনছি ২৮ তারিখ বিয়ে হলে ২৯ তারিখই সুজন আর তার বউ আমেরিকা চলে যাবে আর ঐখানেই থাকবে। মেয়ের বাবার নাকি সব ব্যবসা-বানিজ্য আমেরিকায়। (নয়ন) নয়নের কথা শুনে মাথা পুরো ঘুররে গেছে বোঝতে পারছি না কি করব। — তাহলে তো নিহাকে সব বলতেই হয়।
— খবরদার তুই নিহাকে কিছুই বলবি না,, নিহা এই কথা কখনো বিশ্বাস করবে না,, উল্টো তোকে অপমান করবে। (নয়ন) আমি বাসার উদ্দ্যেশে হাটছি আর ভাবছি। নিহা হয়তো সব কিছু জানার পর বেচে থাকার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলবে। এক তরফা ভালবাসা খুবই যন্ত্রনাদায়ক। কোন কিছু না জেনেই সম্পর্ক বানিয়ে ফেলে। ২৭ তারিখ… নিহা ক্লাসে মন মরা হয়ে বসে আছে,, তার দিকে তাকিয়ে বোজতে পারলাম তার চোখে যেন কিসের ভয়,,, গত দুই দিন সুজন কলেজে আসেনি। হয়তো এ কারনেই। আমি আরেক বার নিহার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবার যে করেই হোক নিহাকে সব বলবই। অপমানিত হলে হবো তবুও তো সত্যটা জানতে পারবে। ক্লাস শেষে নিহা আজ আর কারোর জন্য অপেক্ষা করছে না। সোজা রাস্তায় হাটতে লাগল। আমি একটু তাড়াতাড়ি হাটে নিহার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
— আপনার সাথে খুব জরুরি একটা কথা আছে আর আজ তা আপনাকে শুনতেই হবে। চলেন ঐ গাছটার নিচে গিয়ে দাড়ায়,, প্লিজ। নিহা রাজি হলো আর সে আমার সাথে ঐ গাছটার নিচে গিয়ে দাড়ালো।
— কি বলবেন, তাড়াতাড়ি বলেন।(নিহা) আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বললাম–
— এই মেয়টাকে চিনেন?
— না। আরেকটা ছবি বের করে বললাম–
–ওনাকে চিনেন? এভাবে পর পর তিনটা ছবি দেখালাম কিন্তু নিহা কাউকে চিনল না,,, ছবিগুলো গতকাল আমার বন্ধু নয়নের কাছ থেকে এনেছি। — না, চেনাটাই স্বাভাবিক। জানেন ওরা কে?
— আজব তো,, আমি চিনিই না। তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন? (নিহা)
— কারন, এরা সবাই আপনার সুজনের অতিতের গার্লফেন্ড। (আমি) — দেখুন,, আমার সাথে একদম ফাইজলামি করবেন না,, (নিহা প্রচন্ড রেগে গেল)
— আমি সত্যি বলছি। নিহা আমাকে জোরে একটা থাপ্পর দিল। সাথে সাথেই নয়ন উপস্থিত হলো…
— নিহা, তুমি ওকে থাপ্পর দিছো কেন? তুমি জানো যে, কাজটা একদম টিক করনি। ওর কাছে ক্ষমা চাও। (নয়ন)
— না, দোস্ত এসবের দরকার নেই। বাদ দে,, ও হয়তো বোঝতে পারেনি।
— আজকে এর শেষ দেখেই ছাড়ব,, সি এন জি -তে উঠেন,, (নয়ন)
— কেন? সি এন জি -তে উঠব কেন? (নিহা)
— আগে উঠেন,, বলতেছি। (নয়ন) তারপর সি এন জি করে সোজা সুজনদের বাসার সামনে গেলাম।
— এখানে নিয়ে আসলেন কেন? (নিহা)
— আসুন বলছি। গেইটে তালা ঝুলছে… দাড়োয়ানকে ডেকে বললা–
— মামা, বাসার লোকজন কোথায়? আমরা সুজনের ক্লাস ফ্রেন্ড।
— ক্লাস ফ্রেন্ড আর তোমরা জানো না?(দাড়োয়ান)
— না, মামা। কি হয়েছে?
— কাল সুজনের বিয়ে আজ ওরা শপিং করতে মার্কেটে গেছে,, কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। তোমরা ভেতরে এসে বসো।
— না, মামা থাক,,অন্য দিন আসব। নিহা ইতিমধ্যে সি এন জির মধ্যে বসে জোরে জোরে কাঁদছে। সি এন জি করে বাসা থেকে একটু দূরে গেলাম। নিহার কান্না কিছুতেই থামছে না। কান্না করলে আর কিছুই হবে না,, যা হবার তা হয়েই গেছে। আমি আপনাকে অনেক আগে থেকেই বলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু শোনেন নি। মাত্র কয়েক মাসের সম্পর্ক ছিল,,
আর আপনি তার কথা ভেবে মা-বাবার মুখে চুন-কালি মেখে দিলেন,, একটুও ভাবেননি। মানুষ বছরের পর বছর সম্পর্ক করেই বিশ্বাস ঠিক রাখতে পারেন না। আর আপনি কয়েক মাসেই একটা প্রতারককে এতটা বিশ্বাস করছেন যে, তার জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এখনও সময় আছে বাবা-মায়ের কাচে ক্ষমা চেয়ে নিন আর সুজনকে ভুলে যান। সে তো আপনার কথা একটুও ভাবেনি,, আপনি কেন তার জন্য নিজের জীবন নষ্ট করবেন। সম্পর্ক করেছেন ভালো কথা কিন্তু তার সম্পর্কে সব কিছু জেনে নেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু নিহার কান্না কিছুতেই থামছে না।