বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশে গড় বিয়ের বয়স প্রায় ত্রিশ। কিন্তু একজন মেয়ে প্রথম সেক্স করে গড়ে সাড়ে ষোল বছর বয়সে।
এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর) হলে লিভ টুগেদারে যায় কিংবা ইচ্ছেমত পছন্দের পার্টনার খুঁজে নেয়। ফলে তাদের জন্য বিয়ের অতটা প্রয়োজন হয় না।
আমাদের দেশেও বর্তমানে পশ্চিমা সমাজকে অনুসরন করতে গিয়ে মেয়েরা এখন লেখাপড়া শেষ করে অর্থাৎ আটাশ বা ত্রিশের কাছাকাছি গিয়ে বিয়ে করতে ইচ্ছুক হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যাটা কোথায় তৈরি হচ্ছে?
এদেশে একটা মেয়ের menarche বা পিরিওড শুরু হয় গড়ে ১২-১৩ বছর বয়সে। সে বিয়ে করছে ৩০ বছর বয়সে। আর menopause বা পিরিওড বন্ধ হচ্ছে গড়ে ৪৯ বছর বয়সে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, কেউ যদি ত্রিশ বছর বয়সে বিয়ে করে, তাহলে তার প্রজননকাল (১৫ থেকে ৪৯ বছর) এর প্রথম অর্ধেক সময়ই সে অবিবাহিত অবস্থায় কাটাচ্ছে। এরপর ত্রিশে গিয়ে বিয়ে করছে, এবং বাকি অর্ধেক প্রজননকাল সে বিবাহিত অবস্থায় কাটাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম অর্ধেক প্রজননকালই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন। এই সময়টাতেই একজন মানুষের শারীরিক চাহিদা ও অনুভুতি সবচেয়ে বেশি থাকে। পশ্চিমারা এসময় বিয়ে না করলেও তাদের শারীরিক চাহিদা ঠিকই মেটাচ্ছে (তাদের ধর্মবোধ প্রায় শুন্য কিংবা পরকাল নিয়ে অতটা চিন্তাবোধও নেই)।
আমাদের দেশে দেশীয় ও ধর্মীয় সংস্কৃতির কারণে সাধারণত বিয়ের আগে কেউ সেক্সও করে না। ফলে এদেশের নারীরা এই গুরুত্বপুর্ন সময়টাতে এ থেকে দূরে থাকছে। এরপর তারা এমন এক সময় বিয়ে করছে, যে সময় থেকে শারীরিক চাহিদা ও অনুভুতিও কমতে থাকে।
পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই বিষয়।
গবেষণায় দেখা গেছে ছেলেদের libido বা যৌনআকাঙ্ক্ষা বিশ বছরে সর্বোচ্চ্য লেভেলে থাকে ও আটাশ বছর পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকে। এরপর চল্লিশ বছর পর্যন্ত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চল্লিশ বছর পর এই কমার হার দ্রুত হয়। একজন পঁয়তাল্লিশ বছরের লোকের অনুভুতি একজন পঁচিশ বছরের লোকের অনুভুতি অপেক্ষা অর্ধেক হয়।
এই কারণে দেখা যায় ,একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হলে অনেকে বাকি জীবন বিয়ে ছাড়াই থেকে যায়।
তাহলে পশ্চিমা চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দেরি করে বিয়ে করার ফলে ক্ষতি কাদের হচ্ছে?
যৌনসম্পর্কের ফ্রিকুয়েন্সি বা পরিমাণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ২০-২৯ বছর বয়সী বিবাহিত মেয়েদের ৭২ ভাগ সপ্তাহে ৪ বার বা এর বেশি সেক্স করে, সেখানে ৩০-৩৯ বয়সীদের সংখ্যা মাত্র ২৮ ভাগ।
একজন মেয়ে যদি ত্রিশ বছরে বিয়ে করে, তার পার্টনারের বয়স কমপক্ষে পঁয়ত্রিশ হবে ধরে নেওয়া যায়। কিংবা তার বেশিও হতে পারে। ফলে, একটা গ্যাপ তৈরি হয় ও একজন আরেকজনের চাহিদা মেটানোর ঘাটতিও তৈরি হয়। এর ফলে এদেশে পরকিয়ার হার বা বহুগামিতার সংখ্যাও বাড়ছে। আমার অনেক পেশেন্টকেই পেয়েছি এই সমস্যা নিয়ে আসতে।
অনেকে একটু সুশীল সেজে বলতে পারে, বিয়ে মানেই কি শুধু সেক্সুয়ালিটি বুঝাতে চাচ্ছি কি না। না, সেটা না। কিন্তু আইনে বিয়ের সংগাতেও এই জিনিসটাকে প্রায়োরিটি দেওয়া আছে, ঠিক তেমনি মেডিকেল সায়েন্সেও তাই। যদি না হত, impotence বিয়ে বিচ্ছেদের একটা অন্যতম কারণ হত না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা।
এবার আসি দ্বিতীয় পয়েন্টে… এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন।
যেসব দেশে বিয়ের বয়স বেশি, তাদের ফার্টিলিটি রেট বা সন্তানধারণ ক্ষমতার হারও অনেক কম। তারা দেরীতে বিয়ে করছে, অন্যদিকে তাদের জনসংখ্যাও কমছে।
এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত, ত্রিশের পর
থেকে মেয়েদের সন্তানধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে। পঁয়ত্রিশের পর থেকে এই ক্ষমতা আরো দ্রুত কমতে থাকে এবং চল্লিশে গিয়ে এই ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমোসোমাল এবনরমাল বাচ্চা হওয়ার হারও বাড়তে থাকে। ত্রিশ বছরে প্রথম বাচ্চা নিলে প্রতি ৩৬৫ টি বাচ্চার মধ্যে একজন ও চল্লিশ বছরে বাচ্চা নিলে প্রতি ৬৩ টি বাচ্চার মধ্যে একজন বাচ্চা ক্রমোসোমাল এবনরমালিটি নিয়ে জন্মগ্রহন করতে পারে।
তাছাড়া ত্রিশের পর প্রথম বাচ্চা নিলে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
ত্রিশের পরে বাচ্চা নিলে মিসক্যারিজ হয়ে বাচ্চা মরে যাওয়ার হার ও বাচ্চার ডাউন সিনড্রোম হওয়ার চান্স বেশি থাকে। এর পেছনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বানু ও শুক্রানুর গুণগত মান কমে যাওয়া দায়ী।
পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর পার হয়ে গেলে বাবা হওয়ার সক্ষমতা বিশ বছরের পুরুষদের চেয়ে পাঁচগুণ কমে যায়।
আমার নিজের অভিজ্ঞতাই বলি… আমার দেখা মতে তরুণী (১৯-২২) বয়সী মায়েরাই সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান বাচ্চার জন্ম দেয়।
এবার আসি, দেরি করে বিয়ের ধারণা এল কিভাবে?
পৃথিবীতে যখন জনসংখ্যা বাড়তে থাকল, তখন বিজ্ঞানীরা এর পেছনে কারণ খুঁজতে লাগলো।
ডেভিস এবং ব্লেক এর ফ্রেমওয়ার্ক থেকে জনসংখ্যা বিজ্ঞানী জন বোনগার্টস (আমি নিজেও উনাকে গুরু মানি) একটা ফর্মুলা দেন। সেখানে তিনি দেখান, মেয়েরা দেরি করে বিয়ে করলে ফার্টিলিটি (সন্তানধারণের) হার কমে যায়। অন্যদিকে জনসংখ্যা বিজ্ঞানীরা আরেকটি ফর্মুলা দেন, মেয়েদের আয় বাড়লে ফার্টিলিটি কমে।
মেয়েদের দেরীতে বিয়ের উৎসাহ ও তাদের আয় বৃদ্ধি কিভাবে করা যায়, এর পেছনে গবেষণায় দুটো জিনিস বের হয়ে আসে। একটা হল, নারী শিক্ষা বৃদ্ধি, আরেকটি হল নারীর ক্ষমতায়ন।
এই দুটো বিষয় নিয়ে প্রচার হতে হতে পৃথিবীর জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণে আসছে বটে, কিন্তু একসময় এর মূল অর্থই পাল্টে যেতে থাকে।
দেরীতে বিয়ের ফলে একদিকে পরকিয়া, ডিভোর্স বাড়ছে, অন্যদিকে সন্তানধারণ ক্ষমতাও কমছে। জাপানের কোন মেয়ে এখন চল্লিশের আগে বিয়ে করতে চায় না, অথচ জাপানের জনসংখ্যা এখন নেগেটিভ দিকে যাচ্ছে… কানাডায় প্রতি বছর পাঁচ লক্ষ অভিবাসী নিতে হচ্ছে তাদের জনসংখ্যার সংখ্যা ঠিক রাখার জন্য, রাশিয়াতে বাচ্চা হলে ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে, তবুও কেউ তেমন বাচ্চা নিতে আগ্রহী নয়।
যারা দেরীতে বিয়ে করতে আগ্রহী, তারা ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখতে পারেন। এর পাশাপাশি নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য পুরুষদের নারীদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়াতে হবে, তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। তবেই একটা ব্যালান্স তৈরি হবে।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প