- ~ lসাদিয়া আক্তার রিমি
- ~ গল্পের নামঃ চমকপ্রদ নিমন্ত্রন পত্র!!
- হরিপুর গ্রামে গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে সুজন আলী এসে উপস্থিত হয় তার চাচাতো ভাই মৃত আব্দুল আজিজের বাড়িতে । সুজন আলীর পরিবার হরিপুর গ্রামের অন্যতম ধনী পরিবার হলে ও পরিবারের সদস্যরা ছিল কৃপণ । বসতবাড়ির জায়গা , পৈতৃক আবাদি কৃষি জমির সংখ্যার দিক দিয়ে উত্তর পাড়ার অন্যদের তুলনায় এরা ঈর্ষনীয় স্থানে রয়েছে । কিন্তু কিপ্টেমির জন্য প্রায়ই তাদের সমালোচনা পুরো গ্রামে ভেসে বেড়ায় । যাই হোক , এবার মুল ঘটনায় ফেরা যাক । সুজন আলী তার ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে দাওয়াত দিতে এসেছেন । ৩ বছর আগে হার্ট অ্যাটাকে তার চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজ মারা যান । তাই সুজন আলী এসেছে ভাবিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাও আবার খালি হাতে ; সঙ্গে কোন ফল বা মিষ্টি কিছুই আনেনি । সৌজন্যতার খাতিরে নিকটাত্নীয় হিসেবে তো সঙ্গে করে কিছু একটা নিয়ে আসতে পারতো । কিন্তু কী আর করা ! এখন দেখা যাক কী হয় । ……………………
সুজন আলীঃ- ( হাসি মুখে ) “ ভাবি , মে মাসের ৫ তারিখ আমার ছোট ভাই সিয়ামের বৌভাত । এসে দুটো ডাল – ভাত খেয়ে যাবেন । ছোট্ট করে বাড়িতেই বৌভাতের অনুষ্ঠান করব ভাবছি । ”
ভাবিঃ- ( অবাক হয়ে ) “ সেকি ! কবে বিয়ে ঠিক হলো ? বিয়ের অনুষ্ঠান কি হয়ে গেছে নাকি হবে ? আচ্ছা , মেয়ের নাম কি ? বাড়ি কোথায় ? মেয়ের বাবা কী করে ? কই আমরা ত এতদিন কোন খবর পাইনি । তা বিয়ের কার্ড কেমন ছাপিয়েছ দেখি । বউমা ,চা- নাস্তা আনো সুজনের জন্য ।”
সুজন আলীঃ- (আতঁকে ওঠে অপ্রস্তুত হয়ে ) “ ইয়ে , মানে , হঠাৎ করেই সব ঠিক হয়ে গেল । এইতো ১০ দিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছে। পরশুদিন বিয়ে । তার ২ দিন পর মানে ৫ মে বৌভাত । আর পাত্রীর নাম শারমিন , বাড়ি বদরপুরের পূর্ব পাড়ায় । মেয়ের বাবার একটা কাপড়ের দোকান আছে নিউমার্কেটে । আমি আজ এখানে এসেছি বৌভাতের দাওয়াত দেওয়ার জন্যে । কিন্তু ভাবি , চাইলে আপনি আমাদের সাথে চলনে (বিয়ের দিন ) যেতে পারেন ! কোন সমস্যা হবে না । আমরা সবাই একসাথে এক গাড়িতে সেখানে যাব । আরে ভাবি , আমরা তো বিয়ের কার্ড ছাপাইনি; আসলে কার্ড বানাতে দোকানে অর্ডারই দেইনি । অযথা টাকা নষ্ট করার কি দরকার বলুন তো ! এমনিতে এই কড়া রোদের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছে নেই ! যা গরম পড়েছে ; কড়া রোদের মধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে জ্বরটর উঠলে আরেক ঝামেলা ! এমনিতেই তো কত টাকা খরচ হচ্ছে ! ছোট করে বৌভাতের অনুষ্ঠান করব তাতেও তো কম টাকা খরচ হবে না ! এই নিকটাত্নীয়রা আর গ্রামের মুরব্বিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত দিচ্ছি আর বাকীদের রাস্তায়, বাজারে দেখা হলে নয়তো মোবাইলে ফোন করে দাওয়াত দিয়ে দিব ভাবছি , কয়েকজনকে এরই মধ্যে এভাবে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছি । ”
এমন সময়ে বড় বউ এসে ড্রয়িং রুমে চা – নাস্তা দিয়ে গেল ।
সুজন আলীঃ- “ এসবের কি দরকার ছিল , ভাবি । ”
ভাবিঃ- ( হাসি মুখে ) “ আরে না , কি যে বলো কতদিন পর তুমি আমাদের বাড়িতে এলে তাও আবার বিয়ের মতো এত বড় একটা খুশির খবর নিয়ে খালি মুখে কি আর তোমায় যেতে দিতে পারি! নাও ,নাও , খেয়ে নাও । ”
সুজন লজ্জা পেয়ে ম্লান মুখে করুণ হাসি হেসে চা খেতে খেতে ভাবলো , “ ইস ! কি ভুলটাই না করলাম । টাকা বাঁচানোর চক্করে খালি হাতে দাওয়াত দিতে চলে আসলাম । ফল / মিষ্টি কিছুই আনলাম না । ধুর ছাই ! টাকা বাঁচাতে গিয়ে উল্টো শরম পেতে হল ! ইস ! যাক গে !! যা হবার হয়েছে ! ভালোয় ভালোয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে কেটে পড়তে হবে ! না হলে আরো শরম পেতে হবে ! ”
সুজন যখন এসব ভাবছে তখন ভাবি বলে উঠল , “ কিন্তু আমি তো যেতে পারব না । আমি তো গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ । তুমি বরং আমার ছেলে মাসুমকে বলে দিও । মাসুম তো এখন বাড়িতে নেই , পরে রাস্তা – ঘাটে দেখা হলে মাসুম কে বৌভাতে যেতে বল । সময় সুযোগ বুঝে না হয় মাসুম যাবে । ”
সুজন আলিঃ- ( হাসি মুখে ) “ আলাদা করে বলার কী দরকার ? পাঠিয়ে দিবেন দুটো ডাল – ভাত না হয় খেয়ে যাবে । আজ তাহলে আসি , ভাবি । অনেক কাজ আছে । কত লোকজন কে দাওয়াত দিতে হবে । চলনের দাওয়াত, বৌভাতের দাওয়াত সেকি কম কথা ! আর সম্ভব হলে মাসুমকে পাঠিয়ে দিবেন চলনের দিন । আমাদের সাথে গিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসবে আর বৌভাতের দিনও যাতে আসে সেকথা মনে করিয়ে দিবেন । ঠিক আছে , ভাবি আসি তাহলে , ভালো থাকবেন । ” এ কথা শুনে ভাবি থ বনে গেল । এ কথা বলে উওরের অপেক্ষা না করে সুজন আলী দ্রুতপায়ে হেঁটে ভাবির ঘর থেকে বের হয়ে গেল এবং মুর্হুতের মধ্যে পাড়ার এক মুরুব্বির বাড়িতে ঢুকে পড়লো ।
সুজন আলী সাথে করে কিছুই আনলো না তবুও নিমন্ত্রণ পেয়ে গৃহকর্ত্রীর চোখ দুটি হয়ে গেল ছানাবড়া । ড্রয়িং রুমের দরজার বাইরে পর্দার আড়াল থেকে সব শুনে বড় বউ মনে মনে বললো , “ না ফল , না মিষ্টি , তবু ঘটলো হায় ! এমন অনাসৃষ্টি ! ”
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প