কিছুদিন আগে এক মেয়েকে পরিবার থেকে বলা হল আজ তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে, পরিবারের সকল সদস্য আয়োজনে ব্যস্ত, পারলে আজকেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলে।
.
সন্ধ্যায় ছেলে সমেত তার পুরো পরিবার, মামা,চাচা, মামি,চাচি, পিচকি পাচকা মিলিয়ে ২৬/২৭ জন মানুষ এলেন একজন মাত্র নারী বা বিবাহ যোগ্য পাত্রীর যোগ্যতা যাচাই এর গুরুদায়ীত্ব নিয়ে। ব্যাপারটা এমন যেন, পেশীশক্তির বলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতেই এই যোগাড় যন্ত্র।
.
পরিচয় পর্ব শেষে, ছেলেপক্ষ মেয়ের বাসার ছাদ, পাখার ডানা, দরজার চৌকাঠ, পর্দার রং, ফার্নিচার এর বয়স্কাল, বাসায় মোট রুমের সংখ্যা,ফ্রিজের ব্রান্ড ও তার উচ্চতা, টিভির ইঞ্চি পরিমাপ এবং সিলিং ফ্যানের গতি পরিক্ষা করতে লাগলেন। এরই মধ্যে ছেলে পক্ষের একজন মহিলা সদস্য ওয়াশরুম খুজতে লাগলেন, তিনি ওয়াশরুমের ভ্যান্টিলেটর, টুথ ব্রাশের ব্র্যান্ড ও তার মেয়েদকাল, কতখানি পরিষ্কার, কতখানি নোংরা, টাইলস আছে কি নেই এসব নিরীক্ষার দ্বায়িত্ব নিলেন। এদিকে পাত্রী ভারী গহনা এবং চকচকে শাড়ী পড়ার প্রস্তাব নাকোচ করে দিল, এমনকি স্পষ্ট জানিয়ে দিল সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে ছেলেপক্ষের সামনে যাবেনা, কারন সে কোন প্রজেক্ট নয়,যাকে পরিবেশন করে কন্ট্রাক্ট ফাইনাল করবে, তার যুক্তি…যেহেতু এটা এখনো নিশ্চিত নয় যে এই ছেলেই আমার স্বামী,সুতরাং তাকে অতিরিক্ত সম্মানে আখ্যায়িত করার মানে হয়না।
.
আধাঘণ্টা পর, ডাইনিং টেবিলে ৩৩ রকমের খাবার দেয়ার পরও, তাদের কাছে কমতি মনে হল,খাবার টেবিলে এমন একটা ভাব যেন এমন রাজভোগ তাদের বাসায় সকাল সন্ধায় হয়। কেঊ বলছেন মিষ্টি খাবেন না ডায়াবেটিস প্রবলেম, কেঊ ঝাল খাবেন না গেস্ট্রিক প্রবলেম, কারো টন্সেল প্রবলেম তাই ঠান্ডা খাবেন না, কেঊ আবার গরম খেতে পারেন না।
.
ঘন্টাখানেক পরে মেয়ে দেখানোর পালা শুরু হয়, এর মাঝেই কানাকানি শুরু, একটু ভালো জামা কাপড় পড়ায় নাই, মাথায় কাপড় নাই, গায়ে কোন গয়না নাই…..ঠিক যেন প্রোডাক্ট এ মনমত লেভেল লাগানো হয়নাই। এবার প্রশ্নের পালা শুরু…. পড়াশুনা কতটুকু, হাইট কত,ভাই বোন কজন, এটাকি নিজের বাড়ি নাকি ভাড়া বাসা, আব্বা কি করেন, বংশে কেঊ সরকারি চাকরি করেন কিনা, এমন কি প্রশ্নের ধরন এমন ও ছিলো এ বাসার মহিলারা বাজার করেন কিনা। যাবতীয় প্রশ্নের জবাব শেষে, এবার পাত্রীর প্রশ্নের পালা যা ছিলো এমন…..
.
পাত্রীঃ আপনারা বাসে এসেছেন না ট্রেনে?…
পাত্রঃ কেন?
পাত্রীঃ না অনেক লোকজন তো, তাই, এত লোক তো
গাড়ীতে জায়গা হবার কথা নয়।
যাই হোক গাইতে পারেন?
পাত্রঃ আমার গলা ভালোনা।
পাত্রীঃ কন্ঠনালীর ব্যাপারে জানতে চাইছিলাম, গলার ব্যাপারে নয়।
আচ্ছা গীটার বাজাতে পারেন?
পাত্রঃ আসলে শেখা হয়নি।
পাত্রীঃ আমার আশেপাশের সব ছেলেই তো পারে, তাই
জিজ্ঞাসা করলাম
পাত্রীঃ কবিতা লেখেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ মাউন্টেন ক্লাইম্ব, মানে পাহাড় জয়ের ইচ্ছা আছে?
পাত্রঃ ভাবিনি কখনো।
পাত্রিঃ স্যুটিং করেছেন কখনো, গল্ফ খেলেছেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ পুল খেলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রিঃ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি কখনো? বা ইঞ্জিনিয়ার?
পাত্রঃ আসলে, সুযোগ ছিলো না।
পাত্রীঃ নাচতে পারেন।
পাত্রঃ ( লজ্জায় লাল হয়ে) না।
পাত্রীঃ ফুটবল খেলেন নিশ্চয়, ক্রিকেট?
পাত্রঃ না, সময় হয়না।
পাত্রীঃ রাঁধতে পারেন?
পাত্রঃ এটাতো মেয়েদের কাজ।
পাত্রীঃ তাই নাকি, মেয়েদের হার্ট থ্রব “তাহসান” খুব ভালো
রাধতে পারে, টিভি দেখেন নিশ্চয়, আপনার তো জানার কথা।
পাত্রঃ আসলে টিভি দেখার সময় পাইনা।
পাত্রীঃ হিন্দি বোঝেন, বলতে পারেন?
পাত্রঃ না।
পাত্রীঃ তাহলে তো সমস্যা, আপনি তো তাহলে রোমান্টিক
মুভিও দেখেন না।
পাত্রীঃ দেশের বাইরে ঘুরেছেন কোথায় কোথায়?
পাত্রঃ না, আসলে যাওয়া হয়নি কখনো।
পাত্রীঃ কি সর্বনাশ….. নিজেই কিছুই দেখেন নি, আমাকে
দেখাবেন কি করে?
পাত্রীঃ শিকার করেছেন কখনো, বেয়ার গিল কে চেনেন?
পাত্রঃ না।
.
সবশেষে পাত্রী দাঁড়িয়ে বললো আপনার এক্সট্রা কারিকুলামে বেশ সমস্যা আছে, ঠিকমত প্রস্তুত হয়ে আগামী বছর চেষ্টা করুন, আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন…
.
শুধু একটা কথাই বলতে চাই, মেয়েরা পণ্য না যে তাদের খুটিয়ে খুটিয়ে পরিক্ষা করতে হবে।মেয়ে দেখতে গিয়ে সেই মেয়েটাকে মানসিক ভাবে মেরে ফেলার কোনো মানে হয় না।আশাকরি মেয়েরাও তার যোগ্য জবাব এভাবে দিতে পারবে।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প