“আর কত কাজ করবি একলা!এবারতো বিয়েটা কর”””
উপরের কথাটি আমার আম্মু বলল।আম্মুর কথায় কান না দিয়ে আমি আমার মত রান্না করতে লাগলাম।
:-কিরে চুপ করে আছিস কেনো?(আম্মু)
:-আম্মু এখন ডিস্টার্ব করোনা!রান্না শেষ করে আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে।(আমি)
:-ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা কর।ভেবেছিলাম নাতি নাতনির মুখ দেখে যাবো কিন্তু হলোনা।তবে তুই যতদিন না বিয়ে করছিস ততদিন আমি একফোঁটা পানিও মুখে তুলবোনা।
আম্মু রান্না ঘর থেকে চলে গেলো।আমি আমার মত রান্না করতে লাগলাম।আমি হুসাইন। পড়াশুনা শেষ।এখন একটা ব্যাংকে চাকরি করছি।আমাদের পরিবার বলতে
শুধু আমি আর আম্মু।বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।আম্মু অসুস্থ তাই আম্মুকে কোন কাজ করতে দিইনা।দুজনের রান্না করতে আমার মোটেও সমস্যা হয়না।যেভাবে
আছি ভালোই আছি তাই বিয়ের ঝামেলাই জরাতে চাইনা।তাছাড়া এখনকার যুগের মেয়েরা শাশুড়িদের দেখতে পারেনা এই জন্য বেশি ভয় হয়।বিয়ের পর যদি আম্মুকে না দেখে তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবোনা।কারণ আমি আমার আম্মুকে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে আম্মুর রুমে গেলাম আম্মুকে ডাকতে।আম্মু বসে আছে আব্বুর ছবির দিকে তাঁকিয়ে।
:-আম্মু খেতে চলো।(আমি)
:-আমার খিদে নেই তুই খেয়ে নে।(আম্মু)
:-তোমার কী আবার শরীর বেশি খারাপ করছে?
:-না।
:-তাহলে?
:-কিছুনা।তুই খেয়ে অফিসে যা আমি পরে খেয়ে নিবো।
:-আমি কখনো তোমার সাথে ছাড়া খেয়েছি?
:-এখন থেকে চেষ্টা কর।কারণ আমি আর কয়দিনই বা বাঁচবো।ভেবেছিলাম মরার আগে নানি নাতনির মুখ দেখে যাবো কিন্তু সে আশা মনে হয় পুরণ হবেনা।
:-এইতো আবার শুরু করলে।চলো আমার ক্ষুদা লাগছে।
:-তুই খেয়ে নে গিয়ে।আমি খাবোনা।(চিৎকার করে)
:-আচ্ছা তোমার যা ভালো মনে হয় করো।আমি কোনকিছুতেই আপওি করবোনা।
:-সত্যি বলছিস তুই?আচ্ছা তাড়াতাড়ি অফিস থেকে আসিস এক জায়গায় যেতে হবে।
:-আচ্ছা।এখন চলো খেয়ে নিবে।
:-চল
নাস্তা করে আম্মুকে ওষুধ খাওয়ায়ে দিয়ে অফিসে চলে এলাম।আম্মুর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।আমি মেয়েদের তেমন একটা বিশ্বাস করিনা।কারণ মেয়েরা
স্বার্থপর হয়।আপনারা হয়তো বলতে পারেন একথা কেনো বলছি?আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম।এককথায় নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম।কিন্তু সে আমাকে ধোঁকা দিয়ে আরেকটা ছেলের সাথে রিলেশন করে।তখন থেকে মেয়েদের আর বিশ্বাস করিনা।
বিকেলে অফিস থেকে বাসায় আসতেই দেখি বাসায় অনেক মানুষজন।আমার মামা,খালু,খালা আরো অনেকে।হঠাৎ এত মানুষের আগমনের কারণ আমার মাথায় ঢুকছেনা।আমাকে দেখে মামা বললো
:-তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে।(মামা)
:-কোথাও যাবে নাকি?(আমি)
:-হ্যা। তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।
:ও
ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।ড্রয়িংরুমে এসে দেখি কেউ নেই।এরমধ্যে সবাই কোথায় গেলো।হঠাৎ বাইরে থেকে মামার গলার আওয়াজ পেলাম।বাইরে গিয়ে দেখি সবাই ওখানে।আমি যাওয়ার পর সবাই গাড়িতে ওঠলো।
৪০ মিনিট পর একটা বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো।সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাসার মধ্যে চলে গেলো।আমিও পিছু পিছু গেলাম।এই বাসা আমি চিনি।অনেকবারই এসেছি এখানে।আমার আম্মুর বান্ধবীদের বাসা।আম্মুর বান্ধবির একটা মেয়ে আছে নাম-নীলা।মেয়েটি দেখতে একদম পরীর মত।
আমাদের সবাইকে বসতে দেওয়া হলো।কিছুক্ষণ পরে নীলাকে সামনে আনা হলো।লাল শাড়িতে নীলাকে খুব সুন্দর লাগছে।আমার মতে এমন অবস্থায় যে ছেলে ওকে
দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে।তবে আমার ক্ষেএে ভিন্ন।আমার মনে মেয়েদের প্রতি ঘৃনা জন্নে আছে। আম্মু নীলার হাতে আংটি পড়িয়ে দিলেন।আজই নাকি বিয়ে।আমি
মেনে নিয়েছি।আম্মুকে এখানে এসে হাসতে দেখছি।আম্মুকে শেষ কবে হাসতে দোখেছি ঠিক মনে পড়ছেনা।আমাকে বলা হলো নীলার সাথে অন্য রুমে গিয়ে কথা বলার জন্য কিন্তু আমি গেলাম না।কেনো জানি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা।
ভালো মতই আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।বাসায় আসতে আসতে রাত ১১ টা বেজে গেলো।
আমি রুমে ঢুকলাম ১২ টার দিকে।নীলা খাটের উপর থেকে নেমে এসে আমাকে সালাম করতে গেলো কিন্তু আমি বাঁধা দিলাম।
:-এসবের কোন প্রয়োজন নেই।আমি শুধুমাএ আমার মায়ের মুখের দিকে চেয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।আপনাকে আমার বউ হিসেবে কখনোই মেনে নিতে পারবোনা।(আমি)
আমার কথা শুনে নীলার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।বাসর রাতে স্বামীর মুখ থেকে কোন মেয়েই এমন কথা আশা করেনা।নীলা কোন কথা না খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আমি শুফাতে শুয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর চমকে ওঠলাম।আমার বুকের উপর নীলা শুয়ে আছে।আমি তাড়াতাড়ি নীলাকে সরিয়ে ওঠে বসলাম।নীলাও জেগে ওঠেছে
:-ওই বেয়াদব মেয়ে তুই আমার বুকের উপর শুয়েছিস কোন সাহসে?তোকে না রাতে বললাম তোকে আমার বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।(আমি)
নীলা কোন কথা বলছেনা।চুপচাপ বসো আছে।নীলাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো।
:-তুই যদি আবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো।
আরো কিছু কথা শুনিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি নীলা আগের জায়গাতেই বসে আছে।বসে থাকুক তাতে আমার কী।আমি রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে আসলাম।আম্মু একবার নীলার কথা জিঙ্গেস করেছিলো আমি বলেছি ঘুমিয়ে আছে এখনো।
:-কী হুসাইন সাহেব বাসর রাত কেমন কাটলো?(আমার কলিগ নিরব)
:-জ্বি ভালো।(আমি)
:-তা বিড়াল মেরেছেন নাকি নিজেই বিড়াল হয়ে গেছেন?
আমি এবার লজ্জায় পড়ে গেলাম।কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।
:-আরে এতে লজ্জার কিছু নাই।আমরা আমরাইতো।তা যাইহোক কালকে আমার বাসায় একটা অনুষ্ঠান আছে আপনাকে আর ভাবিকে অব্যশই আসতে হবে।
:-কিন্তু?
:-কোন কিন্তু নয় আপনাদের আসতেই হবে।
:-আচ্ছা যাবো
অনেকদিন হলো একসাথে চাকরী করছি তাই না করতে পারলাম না।তাছাড়া কাল ছুটির দিন গেলে কোন সমস্যা হবেনা।
সন্ধায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসলাম।আজ হঠাৎই বৃষ্টি নেমেছে।ছাতা নিইনি বলে কিছুটা ভিজে গেছি।সব আত্নীয়রা চলে গেছে আমাদের বাসা থেকপ।বাসায়
এসে নীলাকে দেখলাম ড্রয়িংরুমে বসে আম্মুর সাথে গল্প করছে।আমি রুমে এসে অফিসের পোশাক ছেড়ে অন্য পোশাক পড়ে নিলাম।এর ড্রয়িংরুমে চলে আসলাম।
:-আম্মু আজ কী করবো?(আমি)
:-রান্না তোর বউ সেই কখন করে রেখেছে।(আম্মু)
:-ও।
:-তুমি যা ফ্রেশ হয়ে নে।বউমা তুমি টেবিলে খাবার দাও।
আমি আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।বড়লোকের মেয়ে।ভেবেছিলাম রান্নাবাড়া পাড়েনা কিন্তু এতো দেখছি পারে।যাক ভালোই হলে কষ্ট করে আর রান্না করতে হবেনা।
ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসলাম।আম্মু আর নীলা আমার জন্য বসে অপেক্ষা করছে।ইশ কত রকমের খাবার।আমার প্রিয় তরকারিগুলো সুন্দর করে সাঁজানো রয়েছে
দেখেই জিভে জল এসে গেলো।আমি নীলার বিপরীত পাশে বসলাম।নীলা ওপাশ থেকে ওঠে এসে আমার প্লেটে খাবার দিতে গেলো কিন্তু আমি ওর হাত থেকে চামস নিয়ে নিজেই সবকিছু তুলে নিলাম।নীলা অপর পাশে গিয়ে বসে থাকলো।
:-বউমা তুমি খাবেনা?(আম্মু)
:-আপনারা খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।(নীলা).
:-পরে খাবে কেনো তুমিও প্লেট নিয়ে বসো।
:-আমি পরে খাবো।
আম্মুর জোরাজুরিতে ও প্লেট নিয়ে বসলো। আমি কোন কথা না বলে খেয়ে ওঠে চলে আসলাম। রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করতে বসে গেলাম।
নীলা রুমে আসলো ৯টার দিকে।সম্ভবত আম্মুর সাথে বসে গল্প করছিলো।আমার কাজ করতে করতে রাত ১টা বেজে গেলো।ল্যাপটপ রেখে দেখি নীলা বিছানার
একপাশে ঘুমিয়ে পড়েছে।এখনো তেমন একটা শীত পড়েনি তবে আজকে রাতে পড়ছে।নীলা শীতে কাঁপছে।আমি একটা কাঁথা নিয়ে নীলার গায়ের উপর দিলাম।
কীভেবে দিলাম আমি নিজেও জানিনা।মাঝখানে কোলবালিশ রেখে আমি বিছানার অপর পাশে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে কে যেনো আমাকে বারবার ডাকছে কিন্তু ওঠতে পারছিনা বিছানা থেকে।মনে হচ্ছে কে যেনো আমাকে জোর করে আটকে ধরে রেখেছে।কোনরকম চোখ খুলে
দেখি ডাক্তার আঙ্কেল এসেছে।নীলা আর আম্মু ডাক্তার আঙ্কেলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কালকে বৃষ্টির পানি মাথায় পড়াতে জ্বর এসেছে। ডাক্তার আঙ্কেল কিছু ওষুধ
দিয়ে চলে গেলেন।আম্মুও তার রুমে চলে গেলো।ডাক্তার আঙ্কেল যাওয়ার পর নীলা আমার কাছে এসে বললো
:-আপনি কী এখন ওঠতে পারবেন!না আমি হাত মুখ ধোঁয়ার পানি আনবো?(নীলা)
:-ওই তোমাকে কতবার বলেছি আমার কোনকিছুতে নাক গলাবেনা তারপরেও কেনো আসো?(আমি)
কথাগুলো বলে বিছানা ছেড়ে ওঠলাম।যেই ওঠে দরজার দিকে পা বাড়িয়েছি ওমনি পড়ে গেলাম।নীলা দ্রুত এসে আমাকে ওঠিয়ে আবার বিছানায় নিয়ে বসালো।পড়ে
যাওয়াতে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছি।নীলা নিজেই পানি এসে আমার হাত মুখ মুছে দিলো।আমি না করতেও যেয়েও পারলাম না।নীলা খাবার নিয়ে এসে নিজ হাত আমাকে
খাওয়ায়ে দিলো।আমি কেনো জানি কোনকিছুতে আজ না করতে পারছিনা।তবে কী আমি নীলার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি?না এ হতে পারেনা।নীলার থেকে দুরে দুরে থাকতে হবে।
দুপুরের দিকে জ্বর পুরোপুরিভাবে কমে গেলো।আমার জ্বর আসলে খুব তাড়তাড়িই কমে যায়।নিরব সাহেবের বাড়িতে অনুষ্ঠান রাতে।জ্বর যেহেতু কমে গেছে তাই যেতে হবে।না গেলে বেছারা মনে মনে কষ্টা পাবে।
সন্ধার দিকে নীলাকে বললাম রেডি হয়ে নাও একজায়গায় যেতে হবে।নীলাকে দেখে মনে হলো সেই লেভেলের খুশি হলো।আমিও রেডি হয়ে নিলাম।রেডি হয়ে
ড্রয়িংরুমে নীলার জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ও আসছেনা।মেয়েদের একটাই সমস্যা বাইরে যেতে হলে মুখে আটা ময়দা সব মেখে যেতে হবে।আমাকে ২০ মিনিট
বসিয়ে রেখে তারপর আসলো।আমি প্রথমে ঝাড়ি দিতে গেলাম কিন্তু ওর সাথে আম্মুকে দেখে আর কিছু বলা হলো।নীলা মুখে মেকাপ করেনি। শুধু হালকা সেজেছে।
নীলা কালারের একটা শাড়ি পড়েছে তাতেই ওকে পরীর মত লাগছে।আমি বাইক বের করে রাস্তায় দাঁড়ালাম।নীলা এসে আমার পিছনে বসলো।
১৫ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম।গিয়ে দেখি প্রায় সবাই চলে এসেছে।নিরব আমাদের দেখে খুব খুশি হলো।সবার বসার জন্য প্যান্ডেল করা হয়েছে।নীলাকে নিয়ে একপাশে বসে পড়লাম।চারদিক অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
:-আঙ্কেল আব্বু আপনাকে ডেকেছে।(নিরবের মেয়ে)
:-আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।(আমি)
:-আপনাদের দুজনকেই যেতে বলেছে।
:-চলো।
আমি আর নীলা দুজনেই ভিতরে গেলাম।ভিতরে গিয়ে বড় ধরনের একটা শক খেলাম।শিমু! ও এখানে কী করছে?শিমুও আমাকে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছে।শিমু
যার সাথে আমার আগে রিলেশন ছিলো।আমি শিমুকে দেখেও না দেখার ভান করলাম।নিরব আমাকে আর নীলাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।হঠাৎ শিমু বলে ওঠলো
:-তা মি.হুসাইন আপনি নাকি কখনো বিয়ে করবেন না?(শিমু)
শিমুর কথা শুনে বড় ধরনের শক খেলাম।ওখানে উপস্থিত সকলের অবস্থা আমার মতই।আমি জানি শিমু আমাকে সকলের সামনে অপমান করার জন্য এসব বলেছে।
:-জীবন কী কারো জন্য থেমে থাকে?তুমিওতো একাদিন কথা দিয়েছিলে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা কিন্তু ঠিকইতো করেছো। (আমি)
:-আপনি অন্যভাবে বলেছিলেন।
কথায় আছে নিজের প্রিয় মানুষের অপমান কেউ সহ্য করতে পারেনা নীলার ক্ষেএেও তাই হলো।
:-করেছে তাতে আপনার কী?আপনার মত একটা বাজে মেয়ের জন্য কেনো জীবনটাকে নষ্ট করবে।(নীলা)
:-কী বললি তুই?আমি বাজে মেয়ে!তুই বাজে মেয়ে।তোর চৌদ্দ গুষ্টি বাজে।
নীলা এবার এগিয়ে শিমুর গালে ঠাস করে থাপ্পর মেরে দিলো।আমি মোটেও এমন পরিস্থির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।সবকিছু কেমন জানি স্বপ্নের মত লাগছে।আমি তাড়াতাড়ি নীলার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলাম।
:-তুমি এটা কী করলে?আমার মানসম্মানের আর কিছু রাখলেনা।(আমি)
:-আপনাকে কেনো ওই মেয়েটা অপমান করলো।আপনি সবকিছু সহ্য করতে পারেন কিন্তু আমি পারিনা।
:-তাই বলে সবার সামনে ওকে চড় মারতে হবে?(আমি)
:-মেরেছি ঠিক করেছি।প্রয়োজন হলে আরো দুইটা মারবো তবুও আপনার অপমান সহ্য করবোনা।(নীলা)
এত মানুষের সামনে নিজের সম্মানের বারোটা বাঁজবে আগে জানলে কখনোই এখানে আসতাম না।এখানে আর থাকা যাবেনা।নিরব সাহেবকে ডেকে বললাম আমরা
চলে যাচ্ছি।নিরব আমাদের আটকানোর চেষ্টা করলো তবুও চলে আসলাম।এখানে থাকলে শিমুর সাথে নীলা আবার ঝগড়া করতে পারে।নীলাকে নিয়ে বাসায় চলে
আসলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ না হয়েই ছাঁদে চলে গেলাম।শিমুর সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো।পুরাতন স্মৃতিগুলো এক এক চোখের সামনে ভেসে ওঠছে।শিমুর সাথে
কাটানো দিনগুলো অনেক সুন্দর ছিলো।কথায় আছে কাউকে বেশি ভালোবাসলে সেই মানুষ সেটাকে অবহেলা করে আমার বেলায়ও ঠিক তাই হয়েছিলো।রিলেশনের
সারে তিন বছরের মাথায় শিমু আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আমাকে ছেড়ে আরেকটা ছেলের হাত ধরে।
পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শে চমকে ওঠলাম।শিমুর চিন্তায় বিভোর থাকায় এ অবস্থা হয়েছে।মানুষ যখন কোনকিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে তখন সামান্য
শব্দেও চমকে ওঠে।পিছন ফিরে দেখি নীলা দাঁড়িয়ে আছে।একপলক নীলার দিকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাঁকালাম।আকাশে আজ চাঁদের আলো নেই।চারাদিকে ঘোর অন্ধকার।ঠিক আমার জীবনের মত।
:-একটা কথা বলবো?(নীলা)
:-বলো!(আমি)
:-ওই মেয়েটাকে ভুলে যান।
:-কাউকে ভুলতে চাইলেই কী ভুলা যায়?
:-আমি আপনাকে সাহায্য করবো ভুলতে।
নীলার কথার আর কোন জবাব না দিয়ে সামনের দিকে তাঁকিয়ে থাকলাম।বুঝতে পারছিনা নীলার কথায় সম্মতি দিবো কীনা।আজ নীলার প্রতি কেনো জানি কিছুটা মায়া জন্নে গেছে তাই ওর প্রতি কোন রাগ দেখাতে পারছিনা।শিমুর জায়গায় অন্যকাউকে বসানো সম্ভব না আমার পক্ষে।
:-কীহলো চুপ হয়ে গেলেন কেনো?(নীলা)
:-তোমার প্রশ্নের কী উওর দেওয়া উচিত আমি জানিনা তবে শিমুর জায়গায় তোমাকে বসানো সম্ভব না।
নীলা আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে গেলো।আমি পিছন থেকে ডাকলাম কিন্তু আমার কথা শুনলো না।
আমি আরো কিছুক্ষণ ছাঁদে থেকে তারপর রুমে গেলাম।রুমে নীলাকে দেখলাম না।হয়তো আম্মুর রুমে আছে।ক্ষুদা লেগেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।জানিনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছি।
:-না খেয়ে ঘুমিয়েছিস কেনো?(আম্মু)
:-খেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই।(আমি)
:-নীলা চলে গেছে।
:-কী????
নীলা হঠাৎ চলে গেলো কেনো?
:-মেয়েটা তোকে কত ভালোবাসে কিন্তু তুই ওকে একটুও বুঝিস না তাই চলে গেছে।
:-ও।
:-খেতে আয়।
:-আমরাতো বাইরে গিয়েছিলাম রান্না করলো কে?
:-রাইচকুকারে খিচুরী রান্না করেছি।
:-আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
আম্মু চলে গেলো।নীলাকে আসলেই বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।কী করবো আমার মাথায় কিছু আসছেনা।শিমুকে ভুলতে পারছিনা আবার নীলাকেও মেনে নিতে পারছিনা।আমার অবস্থা এখন মাঝি বিহীন নৌকার মত।কোথায় গিয়ে থামবে তার ঠিক ঠিকানা নেই।
তেমন কিছু খাওয়া হলোনা।অল্পকিছু খেয়েই শুয়ে পড়লাম।মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কী করবো আমি?কী করা উচিত আমার?শিমুতো আমাকে ছাড়া
ঠিকই ভালো আছে কিন্তু আমি কেনো পারছিনা।পারবোই কী আমিতো আর শিমুর মত মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করিনি।আচ্ছা সারে তিনটি বছর কী কেউ অভিনয়
করতে পারে?হয়তো পারে হয়তোবা না।নীলা এই ৩দিনেই আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে সেটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি।শিমু চলে যাওয়ার পর থেকে মেয়েদের
শুধু খারাপ চোখেই দেখেছি। আজ নীলাকে দেখে বুঝছি সব মেয়েই এক না।
রাতে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি।সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি নীলার বাবা মা এসেছে,। সাথে নীলাও এসেছে।কাল রাতে নীলা চলে গিয়েছিলো এই জন্যই হয়তো এত সকালে তাদের আগমন।
:-কেমন আছো বাবা?(নীলার বাবা)
:-জ্বি ভালো।আপনি কেমন আছেন?(আমি)
:-ভালো।নীলা আর তোমার কী হয়েছে?
এই কথাটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
:-না মানে—
:-বুঝেছি।শোনো বাবা সংসার জীবনে রাগারাগি হতেই পারে এসব নিয়ে যদি বউ বাড়ি থেকে চলে যায় সেটা কী ভালো দেখায়।আমরা নীলাকে বুঝেয়েছি ওর এভাবে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।
:-আপনি নিচিন্ত থাকতে পারেন বিয়াই এমন আর হবেনা।(আম্মু)
:-সংসার জীবনে দুজনের বুঝাপড়া ঠিক না থাকলে কখনোই সেই সংসার টিকেনা।বিয়েটা কোন ছেলে খেলা না।(নীলার বাবা)
আমি কোন কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।নীলার বাবা মা আমাকে আর নীলাকে অনেক বুঝালেন।নীলাকে রেখে তারা চলে গেলেন।
:-রাতে এভাবে চলে না গেলেও পারতে।(আমি)
আমার কথা শুনে নীলা সোফা থেকে ওঠে রুমের দিকে চলে গেলো।মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে সেটা বুঝতেই পারছি।আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।অফিসের টাইম
হয়ে গেছে।সকালে রান্না হয়নি তাই না খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম।অফিসে যেতে আজ একটুও মন চাইছেনা।কাল রাতে সবার সামনে যে ঘটনা ঘটলো তারপর নিরবের
সামনে কীভাবে যাবো?চাকরী বাঁচানোর জন্য হলেও যেতে হচ্ছে।অফিসে যেতেই বস আমাকে ডেকে পাঠালেন।
:-স্যার আসতে পারি?(আমি)
:-আসো।(স্যার)
আমি গিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়ালাম।
:-কথাটা কীভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।(স্যার)
:-কী হয়েছে স্যার?
আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলেন।চিঠিটা পড়ে বুঝতে পারলাম আমার চাকরী চলে গিয়েছে।
:-আমার হঠাৎ চাকরী চলে যাওয়ার কারণটা বুঝলাম না স্যার!(আমি)
:-উপর থেকে অর্ডার এসেছে।তোমার মত সৎ লোক অফিসের কাজে পাওয়া কষ্টকর কিন্তু আমি চাইলেও তোমাকে রাখতে পারছিনা।(স্যার)
:-আপনার কাছে একটা অনুরোধ করবো?
:-হ্যা করো।
:-আমার চাকরী যাওয়ার পিছনে কার হাত রয়েছে প্লিজ বলুন।আমি তাকে কিছু বলবোনা শুধু চিনে রাখতে চাই।
:-না মানে!কাল রাতে নিরব সাহেবের বাসায় তোমার সাথে একটা মহিলার ঝগড়া বেঁধেছিলো।ওই মহিলা আমাদের থানার জেলা প্রশাসকের বউ।উনিই এসব করেছেন।
:-ধন্যবাদ স্যার।
স্যারের রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।নিজের ডেক্সে এসে ব্যাগ নিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আমার চাকরীচ্যুত হওয়ার খবরটা অফিসের সবাই আগেই জেনে গেছে শুধু আমার জানা বাকি ছিলো।আরেকটা চাকরী জোগার করা আমার পক্ষে কোন ব্যাপার না ।
আস্তে আস্তে বাইক চালাচ্ছি আর ভাবছি “শিমু এতটা খারাপ”আর ওকে নিয়েই এত ভেবেছি?ওর জন্যই নীলাকে এত কষ্ট দিলাম?ছিঁ এখন নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে।নীলাকে আর কষ্ট দিবোনা।নীলা আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে।আজ থেকে শুধু নীলাকেই ভালোবাসবো।
:-কিরে এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলি?
বাসায় ঢুকতেই আম্মু উপরের কথাটি জিঙ্গেস করলো।আমি কোন উওর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম।নীলা আম্মুর সাথে বসে ছিলো।আমাকে রুমে আসতে থেকে ও নিজেও আসলো।
:-অফিসে কিছু হয়েছে?(নীলা)
:-আমার চাকরী চলে গিয়েছে।(আমি)
:-কী?কিসের জন্য চাকরী গেলো?
:-কালকে রাতের ঘটনার জন্য। শিমু এই থানার জেলা প্রশাসকের বউ।ওরাই এটা করেছে।
:-দাঁড়াও আমি আব্বুকে বলে ওর জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থা করছি।
নীলার বাবা একজন বড় ম্যাজিস্ট্রেট। নীলার বাবার কাছে এসব জেলা প্রশাসকের কোন বেল নেই।
:-থাক এসব কিছুর প্রয়োজন নেই।(আমি)
:-ওর এত বড় সাহস আমার বরের চাকরী খেয়েছে।আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।(নীলা)
:-প্লিজ এসব বাদ দাও।কোন ঝামেলা আমার পছন্দ না।আমার ক্ষুদা লেগেছে খেতে দাও।
:-একটা কথা জিঙ্গেস করবো?
:-হু
:-আমাকে আপনি একটুও ভালো বাসেন না?
আবার সেই প্রশ্ন।কী জবাব দিবো আমি।আজ যদি আবার বলি ওকে ভালোবাসিনা তাহলে ও কী ঘটিয়ে বসবে নিজেও জানেনা।
:-তোমাকে নিয়ে কেবল একটু একটু ভাবতে শুরু করেছি।
আমার কথা শুনে নীলা ইয়াহু বলে চিৎকার করে ওঠলো।ওর চিৎকার শুনে আম্মু রুমে চলে আসলো।
:-কী হয়েছে নীলা?(আম্মু)
:-কিছুনা।(লজ্জা পেয়েছে আম্মুকে দেখে)
:-তাহলে এভাবে চিৎকার করলি কেনো?
:-ওসব কিছুনা।আপনার ছেলের ক্ষুদা লেগেছে খেতে দিন।
:-দুজনেই আয়।তুইওতো সকাল থেকে কিছু খাসনি।
আম্মু রুম থেকে চলে গেলে।হঠাৎ নীলা দৌঁড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।আমি মোটেও এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তত ছিলাম না।নীলা আমার কপালে একটা আদর
দিয়ে এক দৌঁড়ে দরজার কাছে চলে গেলে।দরজার কাছে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বাইরে চলে গেলো।আমি রোবটের মত দাঁড়িয়ে শুধু সবকিছু
দেখছি আর ভাবছি “”শুধু ভাবতে শুরু করেছি বলতেই যদি এত খুশি হয় তাহলে যদি বলি ভালোবাসি তাহলে কী করবে?
খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি সব রেডি করে আম্মু আর নীলা বসে আছে।আমি গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।আজ নীলা আমার পাশের চেয়ারটাতে বসলো।
:-কিরে হুসাইন তোর কপালে রং লাগলো কোথা থেকে?(আম্মু)
আম্মুর কথা শুনে কপালে হাত দিলাম।একী!এতো লিপিস্টিকের রং।নীলা ওর শাড়ির আচল দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার কপাল মুছে দিলো।
:-ও কিছু না আম্মা(নীলা)
নীলার কথা শুনে আম্ম মুচকি হাঁসছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুম চলে আসলাম।আজ কোন কাজ নেই তাই ল্যাপটপ নিয়ে চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখতে বসে গেলাম।এভাবে বসে থাকলেতো আর সংসার চলবেনা।নীলা এসে আমার পাশে বসলো।
:-ল্যাপটপ রাখো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।(নীলা)
:-বলো শুনছি?(আমি)
নীলা আমাকে তুমি করে বলছে?বলুক যা খুশি।
নীলা আমার কাছ থেকে ট্যাপটপ কেড়ে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলো।
:-আগে আমার কথা শুনবে তারপর কাজ।(নীলা)
:-ওকে।
:-আমাকে নিয়ে বিকেলে একটু আমাদের বাসায়,যাবে?
:-আমাকে যেতে হবে কেনো?আম্মুর সাথে যাও।
:-না তোমার সাথে যাবো।তুমি যাবে কীনা সেটা বলো?
:-আচ্ছা যাবো।
কেনো জানি না করতে পারলাম না।
এবার নীলা আমার খুব কাছে চলে আসলো।নীলার নিঃশাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।সকালের পরে এখন এই ২বারই কোন মেয়ের এত কাছে এলাম।তাও নিজে থেকে
আসিনি নীলা নিজেই এসেছে।নীলা আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট রাখলো।আমিও কেনো জানি নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না।নীলার মাঝে হারিয়ে গেলাম।
………………………………………………সমাপ্ত………………………………………..