রাজপুত্রের গতিপথ রাজার সিংহাসন

রাজপুত্রের গতিপথ রাজার সিংহাসন

একজন সাহসী বীর যোদ্ধা তার সৈন্যদল নিয়ে ছুটে চললেন তার বীরত্ব প্রমাণের উদ্দেশ্য।
শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে ভিড় জমালেন এক খরস্রোতা নদীর তীরে।

সহযোগীকে আদেশ দিলেন নদীর পানি পরখ করে দেখার জন্য কোথায় স্রোতের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

সহযোগী কথা মত নেমে পড়লেন সেই জলে এবং খুঁজে বের করলেন নদীর গভীরতম স্রোতের অংশ।

যোদ্ধা তার প্রয়োজনীয় সরন্জাম এবং বীরত্ব দেখার সাক্ষী হিসেবে একজন সৈন্যকে নিয়ে আক্রমণ করে বসলেন সেই খরস্রোতাকে।
তার উদ্দেশ্যে স্রোতরাণী যতক্ষন না পর্যন্ত তার কাছে মাথা নত করবেন তিনি ততক্ষন পর্যন্ত লড়ে যাবেন।

একাধারে সব বাধা বিপত্তি খুব নিখুঁতভাবে পার করে যাচ্ছিলেন রাজপুত্র।
কিন্তু বিপদ হানা দিলো তার পরিধানের বস্ত্র প্রাধান্যে।

রাজপুত্র তার শরীরে রাজকোর্ট থেকে শুরু করে তলোয়ার এবং অন্যান্য সরন্জাম সাথে রাখায় শারীরিক ভারসাম্য হারাতে লাগলো।
তারপরও তার তীব্র ইচ্ছাশক্তি এবং জয়ের নেশায় সে আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে লাগলো।
হঠাৎ করে শু শু শব্দে তীব্র বেগে ছুটে আসা পানির জলকণার সাথে আবির্ভাব ঘটালেন এক সুন্দরী রাজকন্যা।

হাতে তার রুপের মতোই চাকচিক্যকর এক তলোয়ার।
পা দুটো মিশে আছে স্রোতের মধ্যতলে।
স্বর্ণালংকারের কোনো আধিক্যতা নেই কিন্তু রয়েছে জলকণার তৈরি হাজারো রাজ সাজ্যতা।

রাজপুত্র যখন রাজকন্যার বর্ণনাময়ী সৌন্দর্য্যে বিমুহীত ছিলেন রাজকন্যা তখন তার তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে উপস্থিত শক্তি জানান দিলেন।

রাজপুত্র কখনো কল্পনাও করতে পারেননি যে তাকে এরকম কোনো মহীয়সি রমণীর সাথে তলোয়ারের ঝর্ণপাত ঘটাতে হবে।

রুপের মোহ কাটিয়ে সেও প্রস্তুত হলেন শত্রুর তলোয়ার মঞ্চে।
কেননা সাক্ষী হিসেবে রাজপুত্রের সাথে পাঠানো হয়েছে এক রাজসেনা।
যিনি প্রতিটি মুহূর্তে শুধু রাজপুত্রের কৃতকর্ম গুলো নিরপেক্ষ ভাবে লেখে যাচ্ছেন। এমনকি রাজপুত্রের বিপদেও পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি নেই।

তলোয়ারের অপ্রতিরোধ্য প্রতিটি শব্দ জানান দিচ্ছিলো তারা কেউ হারতে রাজি নন।
দীর্ঘ সময় লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে রাজকন্যা রাজপুত্রের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়।
জয়ের ধ্বনিতে রাজপুত্র পরিকল্পনাও শুরু করে দিলেন যে সে এই রাজকন্যাকে তার রাজ্যে নিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন কেননা তার বীরত্ব প্রমান যে হয়ে গেছে।

কিন্তু পরক্ষনেই ছুটে আসলো এক টিয়া পাখি।
যার ঠোঁট এবং পায়ের নগরে ছিলো কিছু রাজচিঠি।

পাখিটি মোটেও অপরিচিত নয় কারন পাখিটি রাজপুত্রের প্রিয় পাখি এবং আদর করে তাকে টি ডাকতো।
কারন মনোমুগ্ধকর চায়ের সঙ্গি হিসেবে এই টি বা টিয়া পাখি না থাকলে রাজপুত্রের চা পান করাটা অপ্রাসঙ্গিক লাগতো।
টি এসে নিজ দায়িত্বে কিছু চিঠি তার সাথে আসা সৈন্যের কাছে জমা রাখলো এবং একটি চিঠি রাজপুত্রের হাতে দিলো।

রাজপুত্র চিঠি খুলে পড়তে শুরু করলেন এবং কিছুটা অবাক হলেন।
চিঠিতে লেখা ছিলো রাজকন্যাকে পরাজিত করার পর তার কাছে তার রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে এবং রাজকন্যাকে সাথে নিয়ে রাজকন্যার রাজ্যে যেতে হবে।

রাজপুত্র রাজার দেয়া আদেশ মানতে প্রস্তুত ছিলো কারণ রাজপুত্র বের হওয়ার সময় বলা ছিলো যে রাজার সন্তুষ্টি অর্জন পর্যন্ত তাকে তার বীরত্বের প্রমান দেখিয়ে যেতে হবে।


এদিকে রাজার এমন শর্তে রাণী চিন্তিত হয়ে রাজাকে প্রশ্ন করে বসলেন তার এমন শর্তের রহস্য কী।
উত্তরে রাজা বলেন আমাদের রাজপুত্র শক্তি কিংবা বুদ্ধির জোড়ে যে কোন রাজ্য দখল করার ক্ষমতা বা নিজের রাজ্যকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে কিন্তু তার মাঝে কোনো প্রকার ধৈর্যশীলতা নেই অথচ জীবন সংগ্রামে চলতে হলে প্রধান হাতিয়ার হলো ধৈর্য এবং তার মাঝে অহংকারের কিছু প্রভাব রয়েছে যার কারনে আমার রাজ্যের প্রজারা ভবিষ্যতে যে কোন ধরনের বিপদে পড়তে পারে। কারণ রাজা এবং প্রজাদের মধ্যে দূরুত্ব যত বাড়বে সম্পর্ক তত জটিল হবে। একটা সময় রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

জ্বি মহারাজ। আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত তবে আমার খুব ভয় হচ্ছে কারন শুনেছি স্রোতের রাণী নাকি খুব ভয়ঙ্কর সব আচরণ করে বেড়ায়। তারা জলে বাস করে বলে স্থলের যে কাউকে তার মৃত্যুঘাতে আক্রমণ করে।

ভয় পাবার কোন দরকার নেই রাণী কারন রাজপুত্রের বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তিমত্তা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারনা এবং বিশ্বাস আছে।

রাজপুত্র তার বাবার দেয়া আদেশ অনুযায়ী রাজকন্যার সাথে স্রোত রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি নেন এবং তার সাথে রাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন।

রাজকন্যা তার হাতের বৃদ্ধাঙ্গলি কিঞ্চিৎ বাঁকা করে অপর হাতের তালুর সাথে সংস্পর্শ ঘটিয়ে অদ্ভুত রকম এক শব্দ করলেন এবং সাথে সাথেই একটা রাজ ঘোড়া এসে হাজির হলো।
তবে এটা কোন সাধারন ঘোড়া না। হয়তো মনে হতে পারে ডানাওয়ালা কিন্তু তাও না
এই ঘোড়ার বিশেষত্ব আগে থেকে আচ করা দূরুহ। তাই রাজকন্যার কথা মতো উঠে বসলাম ঘোড়ার পিঠে।
পূর্বেকার মত রাণী আরো একটা শব্দ করতেই ঘোড়ার পায়ের দিক থেকে দুইটা পানির নল উন্মুক্ত হয়ে গেল যেমনটা সাধারনত আমরা রকেটের পিছনে ধোঁযার শারি দেখতে পারি ঠিক সেরকম।
নলদ্বয় থেকে পানি ছুটে আসছে পিছনের দিকে আর আমরা হঠাৎ চড়কার মতো স্রোতের সাথে তাল মিলিয় ঘুরে ঘুরে গভীর তলদেশে পৌঁছাতে লাগলাম।

অবিশ্বাস্য হলেও ভালো লাগছিলো হরেক রকমের মাছ এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শামুকের পাশ দিয়ে ছুটে যেত।

কিছুদূর যেতেই রাণীর সতর্কবার্তা আমরা যেন ভুলেও পিছনের দিকে না তাকাই।
কৌতুহল প্রিয় রাজপুত্র তার কৌতুহল মিটাতে পিছনে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করলেন কিন্তু তার আগেই চারদিক থেকে অদ্ভুত রকম সব মৎস রাজ হানা দিয়ে বসলো।

তাদের সুতীক্ষ্ন দৃষ্টি বলে দিচ্ছিলো তারা যে কোনো সময় আমাদের উপর আক্রমণ করতে প্রস্তুত।
সম্ভবত এই কারণেই রাজকন্যা পিছনে তাকাতে মানা করেছিলো।

রাজপুত্র তার তলোয়ার নিয়ে যুক্ত হলেন রাজকন্যার সাথে নিজেদের শত্রুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে।
কঠোর দক্ষতা এবং সাহসীকতায় জয় অবশেষে তাদেরই মিললো এবং সামনে যাবার পথ ধরলেন।
কিন্তু রাজকন্যা মুখে না বললেও রাজপুত্রের উপর প্রচন্ড রাগান্বিত দৃষ্টি প্রজ্বলন করলো।
রাজপুত্র তার ভুল বুঝতে পেরে চুপটি মেরে রাজান্যার পিছনে বসে রইলো।

ঘোড়া তার নিজস্ব গতিতে আবারো ছুটে চললো দিগন্ত জল রাশির পথ ধরে।

এবার আর কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই দেখা মিললো বিশাল বড় এবং অনেক উচু এক প্রাসাদ গেটের।
গেটের সামনে যেতেই ঘোড়াটি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং আমরা ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে গেটের সংঘর্ষ হয়।
অবাক করা ব্যাপার হলেও সংঘর্ষের সাথে সাথে প্রচন্ড রকমের শব্দ হয় এবং চারদিক থেকে অজস্র প্রহরী আমাদের ঘিরে ফেলে।

রাজকন্যাকে আমাদের সাথে দেখে তারা আবার পিছু হাঁটে।
রাজকন্যার দেখানো পথ অনুযায়ী আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় অতিথি খানায়।

এখানে রাজপুত্রের কাছে সবচেয়ে বেশি রহস্য যা মনে হলো তা হচ্ছে যেই রাজকন্যা তাদের প্রবেশ পথেই বিরোধীতা করেছিলো সেই রাজকন্যা হঠাৎ তাদের এত আপ্যায়ন করতে লাগলো।

কাঁধের উপর বসে থাকা টি পাখিটি হঠাৎ রাজপুত্রের রহস্যের দ্বার খুললেন।
আসলে এই রাজ্যের সকল সদস্যদের জন্য এটা একটা কঠিন নিয়ম যে যদি কেউ শত্রুপক্ষের কাছে পরাজিত হয়ে যায় তাহলে শত্রুপক্ষের দেখাশুনা করার দায়িত্ব সেই পারজিত ব্যক্তির নিজের।

রাজপুত্র খানিকটা মুচকি হাসলেন এই ভেবে যে যতদিন এই রাজ্যে আছেন ততদিন খুব ভালো ভাবেই রাজকন্যাকে পাশে পাবেন।

অতিথি খানা দেখে রীতিমত চমকে গেলেন রাজপুত্র। তাদের পছন্দ সত্যিই প্রশংসনীয়। চমৎকার সব খাবারের আয়োজন তো পাশে থাকছেই।

ফ্রেশ হয়ে রাজপুত্র কিছুটা সময় ঘুমের শহরে পায়চারি করতে চলে গেলেন।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত