ভার্সিটিতে প্রথম যেদিন আসি সেদিনই মেয়েটাকে দেখি। অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটা।আমি এর আগে এত সুন্দর কোন রমনি দেখেছি বলে মনে হয় না।কি মায়াবী চেহারা! যেন হৃদয় কাড়ে! আমি আশ্চর্য হয়ে তাকে দেখি।আমি সত্যিই এত সুন্দর মেয়ে কখনও দেখি নি।আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকে দেখি।সে গোলাপি লিপষ্টিকে মাখা দু’জোড়া ঠোটকে চওড়া করে খিল খিল শব্দ করে হাসে।অদ্ভুত! কারো হাসি এত সুন্দর হয়! আমি সত্যিই জানি না।আমি কাউকে এত সুন্দর করে হাসতে দেখি নি কখনও।হাসিটা কেবল গোলাপি রাঙা দু’ঠোটের মাঝেই সিমাবদ্ধ নয়।তার ফর্সা গালটাও যেন হাসে। নাকটাও! ঘন কালো কাজলে ঘেরা দু’চোখও হাসে।মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হাসে।আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকি। খুব ভালো লাগে দেখতে। আগে কখনও দেখি নি।আমার এ দু’চোখও আগে কখনও দেখি নি এমন মুগ্ধতার দৃশ্য।একটু দেখে নিক না! ক্ষতি কি? তারা একটু শান্তি পাক না! জগতে এমন আরো কত সন্দর দৃশ্য রয়েছে যা আমার মত মানুষ গুলো দেখতে পায় না।আর যদিও ভুলক্রমে একবার দেখতে পায় তাহলে একেবারে মন ভরে দেখে নেয়।ডুব দিয়ে দেখে।কি জানি! আবার দেখতে পাই কি না!
.
কলেজের গন্ডি পেরিয়ে সবে ভার্সিটিতে পদার্পণ করেছি।এসেই যে এতটা মুগ্ধ হতে হবে সে আমার ভাবনার অনুকুলে ছিল না।আরেকটু অবাক হলাম যখন তাকে আমার ক্লাসে দেখলাম। আহঃ! রমনি তাহলে আমার সাথেই পড়ে! একেই বলে কপাল।
আমি ভেবেছিলাম আমার মুগ্ধতা সেখানেই শেষ।সে আমার ক্লাসে পড়ে। তাকে প্রতিদিন দেখি।এক জিনিস বারবার দেখতে ভালো লাগে না।কিন্তু আমার ভাবনায় ছিল বিশাল ভুল।আমি যতবারই দেখি ততবারই মুগ্ধ হই।কেন? আমি মুগ্ধ হই।কেন মুগ্ধ হই জানি না। উত্তর খুজি নি কখনওই।খোঁজার চেষ্টাও করি নি।তাকে দেখি! মুগ্ধ হই।এই শেষ।
.
আমার ধারনা ভুল।এখানেই শেষ না। শুরু মাত্র। আমি আশ্চর্য হই।সে আমার ভাবনাতে এমন ভাবে পদার্পণ করল যে আমি যা কিছু ভাবতেই যাই কেবল তাকে নিয়েই ভাবতে হয়।আমার মস্তিষ্কে, আমার স্নায়ুতন্ত্রে,আমার প্রতিটি শিহরনে সে মিশে যায়।আমার প্রতিটা কোষ যেন তাকেই টানে।আমার কোমল,পবিত্র হৃদয়টাও যেন তাকে চায়।খুব কাছে পেতে চায়।আমার আশ্চর্য হওয়ার মাত্রা আরেকটু বেড়ে যায়।নিজের মাঝে হঠাৎ তুমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করি।নিজের হাত থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা হারিয়ে ফেলি।মনে হয় যেন ভিতর থেকে কেউ একজন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।একি হল আমার!
.
:কি রে? কি এত ভাবছিস? তাড়াতাড়ি উঠ? ঝড় আসছে যে!
হঠাৎ-ই আমার ভাবনা ভেঙে যায়।
ঘভির ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি মায়ের ডাকে।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই।বিব্রত হয়ে বলি,
:কিছু বললে মা!
:ওমা সেকি! তুই শুনিস নি।বলছি যে ঝড় আসছে।বই খাতা সব টেবিল থেকে নামা।নয়ত আগেরবারের সব গুলো ভিজে যাবে।
আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।কান পেতে শুনি।দক্ষিণ দিক থেকে গুম গুম আওয়া করে কিছু একটা আমাদের দিকে তেড়ে আসছে।আমি তাড়াতাড়ি টেবিল থেকে উঠে যাই।পড়তে পড়তে কখন যে ভাবনায় গুলিয়ে গেলাম!টেরই পেলাম না। আমি জলদি করে উঠে বই গুলো একটা বস্তায় ঢুকাতে শুরু করি।সেবার বাবার কত গুলো টাকা খরচ হল আমার জন্যে।একটু তাড়াতাড়ি করে বই সরালে সেদিন এতগুলো বই ভিজত না।বাবারও এত টাকা ধার করতে হত না।ক্লান্ত দিনের শেষে আমি যখন বাবার মুখটা দেখি আমার খুব মায়া হয়।এই বুড়ো বয়সে আর কত।বই গুলো ঢুকিয়ে একপাশ করে রাখলাম।ঝড় এল! ভাগ্য ভালো আমাদের ঘরের টিনের ছালাটা উড়ে যায় নি।খোদার মেহেরবান! তবে টিনের ছিদ্র দিয়ে আমার টেবিলটা ভিজে ছুপসে গেল।যেন সেখানে বন্য বয়ে গেল।আমার বিছানার তোশকটা আমি উল্টিয়ে ভাঁজ করে দিয়েছি।খাটের কাঠ একেবারে ভিজে গেছে।তোশক না সরালে তোশকটাও ভিজে যেত।মাকে দেখলাম এদিক ওদিক ছুটে যাচ্ছে।এখানে ওখানে একটা একটা পাতিল কিংবা গামলা দিচ্ছেন।বাবাকে দেখলাম নির্বিকার হয়ে মায়ের তাড়াহুড়ো দেখছে।কিছু বলছে না।কেবল তাকয়েই রইল।চোখে মুখে একরাশ বিষন্নতার কালো ছায়া।ঝড় কিংবা জোরালো বৃষ্টি এলে আমাদের ঘরের এমন কান্ড এর আর নতুন কি!
.
আমি পড়ালিখা করতাম।একটু বাড়িয়ে বললে যথেষ্ট ভালো ছাত্রও আমি।মেয়েটাও পড়ালিখায় বেশ ভালো। মারাত্মক ভালো সে।নাম মিম। শুনেছি যথেচ্ছ বড় লোকও তারা।ঢের টাকাপয়সার মালিক তার বাবা।সে যেদিন আমার কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালো আমি কিছুটা আশ্চর্য হলাম।আমি এতটা আশ্চর্য আগে কখনও হই নি।আমি একটুও ভনিতা করলাম না।সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।তেলে আর জলে মিল খাওয়াতেই হবে।আর ওমন সুন্দরি মেয়ে যদি আপনার কাছে এসে বন্ধুত্বের জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে কি আপনি তাকে এড়িয়ে চলতে পারবেন?
.
মাসুদ,রাফি,কনক,আরাফাত, মিশু, সাথি, মিম আর আমি মিলে গড়ে উঠল একটা ফ্রেন্ড সার্কেল। খুব শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ আমরা সবাই।ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের মাঠের ঘন সবুজ ঘাস গুলোর উপর পাঁ মেলে বসে আড্ডা শুরু হত আমাদের। একেক দিন একেক টপিক।আমরা হাসতাম। হাসতে হাসতে কেঁদে দিতাম।হাসির কারনটা কখনও আমি ছিলাম কখনও বা অন্য কেউ।তবে সবাইকে হাসানোর দায়িত্ব ছিল আমার।নিজে হাসতাম আবার অন্যকেও হাসাতাম।কেউ যেন বুঝতে না পারে আমার ভেতরে কি চলছে।কাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে আমার দু’চোখ সেটা যেন কেউ দেখতে না পায়।আমি আড়াল হয়ে, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি মিমকে।এরা সবাই ভালো ঘরের ছেলে মেয়ে। উচ্চবিত্ত ঘরের! এদের সাথে থেকে এদের হাসাতে পারি এটা আমার কাছে অনেক। অনেক বড় পাওয়া। আমি গরিব বলে এরা আমাকে কখন দূরে ঠেলে দেয় নি।ভালোবেসে কাছে টেনেছে।আচ্ছা আজ যদি আমি পড়ালিখায় খারাপ হতাম তাহলে কি এরা আমাকে এদের সাথে রাখত? এত ভালোবাসা পেতাম?
.
আবেগটা মাথায় চড়ে বসে।মাথা থেকে কোন ভাবেই মিমকে সরাতে পারছি না।সে আমার রক্তে মিশে গেছে।তাকে সরাতে হলে আমার সব গুলো রক্ত শরির থেকে সরিয়ে নিতে হবে।কিন্তু সেটা একদমই সম্ভব নয়।আচ্ছা আমি মিমকে সরাতে পারছি না কেন? সে কেন আমার ভিতর প্রবেশ করল! সে আমার চেতনে, অবচেতনে কিভাবে প্রবেশ করল? সে কিভাবে আমার স্বপ্নে প্রবেশ করল? সে কিভাবে আমার আমিতে পরিনত হল? সে কিভাবে আমার হৃদয় গহ্বরে প্রবেশ করল? আমি জানি না! আমি সত্যিই জানি না।আচ্ছা আমি কি তাকে ভালোবাসি? ভালোবাসা! এ তো পাপ! আমাদের মত মানুষদের জন্যে এটা পাপ।নেহাত বোকামি ছাড়া কিছুই না।এ অভিশাপ! যে অভিশাপ আমার দুই ভাইকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।তারা যদি আজ আমাদের সাথে থাকত তাহলে হয়ত আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত না।আমরাও বড় লোক হতাম।নিজেকে বড় লোকের ছেলে বলে দাবি করতাম।কিন্তু সেটা হচ্ছে না।তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছে।এমন ভাঙা ঘরে তারা থাকতে পারবে না।তারউপর কোন কাজই তারা করতে পারত না।মাকেই করত হত সব।রোগ লেগে থাকত সারা বছর তাদের।এতে মায়ের কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে যায়।তারাও সইতে পারে না।দু ভাই দুই দিকে চলে যায় তাদের প্রেয়সীকে নিয়ে।পিছন ফিরে তাকায় না আর। আচ্ছা ভালোবাসায় যদি সেক্রিফাইজ না থাকে তাহলে সেটা কি ভালোবাসা?
আমি ভালোবাসা নামক অভিশাপে আবিষ্ট হতে চাই না।আমি আমার দুখিনী মা-বাবাকে ছেড়ে যেতে চাই না।কিন্তু আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি।অনেক দেরি। মিমের ভুত ধরেছে আমায়।আমি ছাড়াতেই পারছি না।কোন ভাবেই ছাড়াতে পারছি না।মিমকে বুঝিয়ে বলব।ওকে সেক্রিফাইজ করতে শিখাব।আমার ভালোবাসায় ভরিয়ে দেব।
.
সেদিন একটু সেজে গুঁজে পার্কে যাই।মিমকে যেভাবেই হোক বলতে হবে।”আমি তোমাকে ভালোবাসি “বলব! যে করেই হোক আজ ওকে বলতেই হবে।সে মেরুন কালারের একটা শাড়ি পরে আসে।আমি তাকে দেখে মুগ্ধ হই।ভিষন মুগ্ধ হই।শান্তির শিহরন বয়ে যায় হৃদয়ে। নিজেকে যেন শান্তির জগতে আবিষ্কার করি আমি।তার গায়ের মাতাল করা গন্ধ আমার মুগ্ধতা বাড়িয়ে দেয়।আমাকে আকৃষ্ট করে তার প্রতি।ভালোবাসা জাগায় হৃদয়ে। নতুন করে ভালোবাসতে শিখায়।আমি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে বলি,
“কিভাবে প্রবেশ করলি জানি না।কিভাবে আমার হৃদয় মন্দিরে তোর স্থান হল আমি জানি না মিম।আমার ভাবনায়, স্বপ্নে,চেতনে,অবচেতনে আমি তোর ছায়া পাই ।তোকে খুঁজে পাই আমি আমার ভিতর। কিভাবে তুই আমাকে তোর করে নিলি মিম!”
সে আশ্চর্য হয়।আশ্চর্য হয়ে শুনে আমার কথা। চোখের দিকে তাকায়।বুঝে আমি সিরিয়াস। তারপর চিকুন মধুর কন্ঠটা কঠরে পরিনত হয়। বলে,
“আমি তো যাই নি।ইচ্ছে করেও যাই নি।তুই আমাকে তোর ভেতর ঢুকিয়েছিই।আমি ঢুকি নি।আমার ঢুকার ইচ্ছে নেই।ছিলাও না।আর থাকবেও না।”
কথা গুলো একেবারে বুকে লাগে।বলি,
“আমি জানি না কি হচ্ছে আমার সাথে।তবে এটা জানি আমি তোকে ভালোবাসি মিম।প্রচন্ড ভালোবাসি।”
সে আমাকে ভিষন হেয় করে।এটা আমার থেকে আশা করে নি সে।আমাকে বন্ধু ভাবে।এর চেয়ে বেশি কিছু না।সে ভালোবাসায় জড়াতে চায় না।কেরিয়ার নিয়ে চিন্তিত।আমি কথা বাড়াই না।বুকের কষ্ট বুকে নিয়ে ক্লান্ত কাকের ন্যায় বাড়ি ফিরে আসি।আমি আজ ক্ষুদার্ত। কেউ আমাকে খাওয়া দেয় নি।না খেয়েই বাড়ি ফিরি।এমন অবস্থা আমার।আমি ভালোবাসার ক্ষুদার্ত। সে আমাকে ভালোবাসা দেয় নি।ভালোবাসা না পেয়েই বাড়ি ফিরে আসি।
বালিশে মুখ চেপে কাঁদি।কেউ দেখে না।একটু শব্দও হয় না।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে থাকি।সে এখনো আমার কল্পনায়। কল্পনায় ভাসে আমার।চোখে ভেসে উঠে তার মুগ্ধ করা সে হাসি।আমি মুগ্ধ হই।আনমনে হাসি।কেউ দেখে না সে হাসি।সেও দেখল না।তার জন্যে এখানে এক বুক ভালোবাসা রক্ষিত আছে পরম মায়ায়।সে জানে না তাকে কতখানি ভালোবাসি আমি।কষ্ট হয় ভিষন। বুকের মাঝে শুন্যতা টের পাই।কাউকে না পাওয়ার শুন্যতা। কালো ভালোবাসা না পাওয়ার শূন্যতা।যা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।অবাধ্য কিছু কষ্ট সময় পেলেই ভেসে উঠে।ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় পেলেই সে নাড়া দিয়ে উঠে।বলে “আমি কষ্ট। আছি তোমার সাথে। ” সবাই চলে যায়।কেবল সে থেকে যায়।ছোট্ট, পবিত্র হৃদয় খানিতে।চুপচাপ বসে থাকে।সময় পেলে খোঁচায়।কষ্ট হয় আমার।চোখ দিয়ে পানি পড়ে গাল বেয়ে। কেউ সেটা মুছে দেয় না।আমি নিজেই মুছি। গরিবদের নিজেদের কষ্ট নিজেদেরই মুছতে হয়। কেউ আগ বাড়িয়ে এসে মুছে দেয় না।
.
এর কিছুদিন পরেই আমি টের পাই সে কেন আমার ভালোবাসা গ্রহন করে নি।সেদিন মিথ্যা বলেছিল। সে কেরিয়ার নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত ছিল না।সে চেয়েছিল টাকাওয়ালা কাউকে।এবং পেয়েও যায়।রাফি! সে রাফিকে ভালোবাসে।আমি জানি না সেটা কেমন ভালোবাসা! টাকার ভালোবাসা? নাকি প্রকৃত। প্রমাণ পেয়ে যাই তার কাছেই।সে নিজেই বলে। আমাকে আড়াল করে বলে রাফির ধন-সম্পদের কথা।আমি কেবল শুনে যাই।একটা কথাও বলি না।কথা বলতে পারি না।ভেতরটা যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।বুকের বা’পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা করে।চোখ গুলো ঝাপসা হতে চায়।আমি হতে দেই না।শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
আমরা গরিব। আমাদের প্রতিকূল মূহুর্তেও এমন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে তার কাছ থেকে বিদায় নেই।এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ফিরে আসি।আমরা গরিব।আমাদের ভালোবাসতে নেই।এটা পাপ! এটা অভিশাপ আমাদের জন্যে! মা-বাবা দিকে তাকাই।তারা আমার জন্যে কত কষ্ট করে। আমি যদি ভালোবেসে কাউকে বিয়ে করি তাহলে সে যে আমার বাবা মাকে খুশি রাখবে তার গ্যারান্টি কি? ভালো হয়েছে মিম আমার হয় নি।বড় লোকের মেয়ে কখনই গরিবের ঘরে থাকতে পারে না।অন্তত আমাদের ক্ষেত্রে।সত্যিই তেলে আর জলে মিশ খায় না।মা ঠিক বুঝতে পারে।আমার ভেতরে কি হচ্ছে তা মা কিছুটা আঁচ করতে পারে।আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কাছে টেনে নেয় আমায় পরম মায়ায়।নিজের কোলে মাথা রাখতে দেয়।আমি মায়ের কোলে মাথা গুঁজে রাখি।মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আমি যেন এক অতৃপ্ত স্বাদ পাই।কখনও ভোলা যায় না যে স্বাদের কথা।আমি স্বাদ পাবার জন্যে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকি।মা বলে,
:শুন খোকা!একটা কাক! খুব ক্লান্ত।নদীর মাঝখানে সে।সে উড়তে পারছে না আর।অবসাদ গ্রাস করছে তাকে।হঠাৎই দেখতে পেল একটা নৌকা। সে নৌকার পালে একটু বসতে চাইল।কিন্তু নৌকার মালিক তাকে বসতে দিল না।কারন কালো কাক তার পছন্দ না।সে কাককে তাড়িয়ে দিল। কাকটা ক্লান্ত ডৃষ্টিতে সামনে তাকায়।তীর আসতে যে বহু দেরি!কাকটা ভয় পায় না।ক্লান্ত ডানা গুলো ঝাপটে ঝাপটে সে তীরের দিকে যায়।সে হাল ছাড়ে না।খোকা তোকেও ডানা ঝাপটে যেতে হবে।যতক্ষণ না তীর না আসে।সকল বাধা অতিক্রম করে হলেও।
তোকে পারতে হবে খোকা!
আমি মায়ের কথা শুনে স্তম্ভিত হই।মাকে জড়িয়ে ধরি। এখানেই আমার অনুপ্রেরণা। আমি আর পিছ পা হই না। ডানা ঝাপটে উড়তে শুরু করি।যতক্ষণ না তীরের দেখা পাই।আমি ডানা ঝাপটে যাই।আমাকে যেতেই হবে।
আমাকে তীরটা খুঁজে বের করতেই হবে।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প