কুলি এই কুলি
জ্বি আপা বলেন।
চারটা ব্যাগ ট্রেন থেকে নামিয়ে স্টেশনের বাইরে গাড়ি পর্যন্ত নিতে হবে।
ঠিক আছে পারবো।
কত দিতে হবে
খুশি মনে দিয়েন যা ভালো মনে হয়।
ঠিক আছে শুরু করেন।
।
বৃদ্ধ বয়সী এক কুলির সাথে আলাপচারিতা হচ্ছিলো ওয়াসিফা নামক তরুণ মেয়েটির।
।
আরে আরে আস্তে নামান পড়ে যাবে তো।
আপা অনেক ভারী তো কষ্ট হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করছি।
ঠিক আছে দ্রুত করেন।
।
ওই মিয়া ওই কাজ ঠিক মত করতে না পারলে কাজ করতে আসো কেন।
বলেই বৃদ্ধের বাম গালে একটা চড় বসিয়ে দিল ওয়াসিফা।
চড় দিয়েও সে সন্তুষ্ট না সাথে যোগ করলো অকথ্য ভাষায় গালি এবং অপমান।
।
লোকটি তার মেয়ের বয়সী কারো হাতে চড় খেয়ে থতমত হয়ে গেলেন। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
বিশ টাকা হাতে ধরিয়ে মেয়েটি অন্য একটি কুলিকে নিয়ে চলে গেল।
।
অনেক কষ্টে নিজের কান্ন রোধ করে বের হয়ে গেলেন স্টেশন থেকে।
রাগ ক্ষোভ কিবা অপমানে নয় কারন তার যে প্রতিদিনই এরকম দু একজন যাত্রীর হাতে চড় থাপ্পর খেতে হয়।
।
দোকানে থেকে এক কেজি চাল আর এক পোয়া ডাল নিয়ে ছুটে গেলেন বাড়ির দিকে।
শেষ মুহূর্তের বিশ টাকা উপার্জন করতে না পারলে সে ডাল কিনার টাকা পেত না। যার কারনে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো।
এদিকে রাত হয়েছে অনেক প্রায় নয়টা। নিম্নবিত্তদের জন্য মধ্যরাত বলা যায়।
।
ফারুক মিয়া মানে বৃদ্ধ লোকের এক ছেলে এক মেয়ে।
ছোট মেয়ের বয়স আঠারোর কাছাকাছি। দেখতে অবিকল মায়ের মত কুৎসিত হওয়ায় বিয়েতে কারো পছন্দ হয় না।
।
ছেলের বয়স উনিশ তবে সে হয়েছে বাবার মত। একেবারে সুদর্শন চেহারার অধিকারী। যখন তার ছেলে কলেজে যায় তখন ফারুক মিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর বলে উচ্চবিত্তের ঘরে জন্ম নিলে হয়তো আমার ছেলে লাখে একটা হতো।
মেয়ের জন্মের সময় তাদের মা মারা যায়। পরিবারের সদস্য বলতে তারা তিনজন।
।
মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে বছর দুয়েক আগেই। কোনো রকম অষ্টম শ্রেণি পার করেছিলো।
।
মেয়ে রান্না শেষ করেই ডাক দিলো বাবা এবং ভাইকে।
তৃপ্তি সহকারে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ছেলে মেয়েরা কিন্তু ফারুক মিয়ার চোখে ঝড়ে পড়ছে এখনো শুকনো জল।
।
গরীব হয়ে জন্ম নিয়েছে বলে ধনীদের পদতলে থাকতে হয় তাও কতক শ্রেণির লোকেরা তাদের সহ্য করতে পারে না।
যাই হোক এসব চিন্তা করলে হবে না কারন তাকে যে তার সন্তানদের মানুষ করে ভবিষ্যত গড়ে দিতে হবে।
।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের পান্তা ভাত খেয়ে কাজে চলে গেলেন ফারুক মিয়া।
।
এভাবেই চলতে থাকে ফারুক মিয়ার পরিবার।
।
প্রায় তিন মাস পরের ঘটনা।
সেই ট্রেন সেই বগির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ফারুক মিয়া।
উদ্দেশ্য কোন যাত্রীর ব্যাগ উঠানো।
।
পিছন থেকে ডাক পড়লো তার ছেলের। বাবা বাবা বলে ডেকে চলছে ছেলেটি।
সে আজ অনেক বড় হয়ে গেছে।
কারন গতকাল রাতে ছেলেটির মনের কথা যে বলেছে তার বাবাকে।
।
তার ছেলে একটি মেয়েকে ভালোবাসে আজ সেই মেয়ের সাথে দেখা করানোর কথা।
কথা গুলো মনে করেই আনন্দে তার চোখে জল এসে পড়ল। তার মানে তার ছেলে নিজের চিন্তাটুকু করতে শিখে গেছে। একজন ছেলের কাছে তার বাবার এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না।
।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা মেয়ে আসতেই তার ছেলে পরিচয় করিয়ে দিলো
বাবা এটাই সেই মেয়ে ওয়াসিফা।
।
মেয়েটা হাসি মুখে ফারুক মিয়ার পায়ে ধরে সালাম করে নিল।
তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সেদিনের ঘটনা কিংবা সেই বৃদ্ধ মানুষটাকে সে চিনতে পারেনি।
কিন্তু ফারুক মিয়া ঠিক চিনতে পেরেছেন কারন সেই ঘটনার জন্য যে তাকে কয়েকটা রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে।
।
এদিকে তার ছেলে মেয়েটির অজস্র গুণাগুন আর প্রশংসার স্বর্ণপাত ঘটাতে লাগলো।
।
।
কিন্তু আসলেই কি সত্যিকারের গুণাবলি অর্জন করতে পেরেছে।
আমি যখন কুলি তখন সে থাপ্পর মারে আর আমি যখন হবু শুশুর তখন সে সালাম করে।
সম্মান কি পরিবর্তনযোগ্য কোনো জিনিস যে অবস্থা ভেদে পরিবর্তন করা যায়।
।
সম্পর্কে যদি সম্মান ছিনেয়ে নিয়ে আসে তাহলে সম্মানটুকু শুধু পরিবারেই থাকবে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে কখনো স্থান করে নিতে পারবে না।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প