সদর হাসপাতাল মানেই লোক জনের অভাব নাই, আমিও বন্ধুদের কথায় সদর হাসপাতালেই আসলাম।
আজ প্রথম সদর হাসপাতালে, লোক জন দেখে আমার ব্যাথা টা আরও বেরে গেলো বললেই চলে, আমার বুকটা কয়েক দিন ধরেই ব্যাথা করছে, আমার বাসার পাশেই এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে কয়েক দিন ঔষধ খেলাম।
কিন্তু ব্যাথা কমা তো দুরের কথা, ব্যাথা আরও বেরেই চলেছে।
তাই আজ আর হাতুড়ে ডাক্তার দেখানো নয় একটু বড় সরো ডাক্তার দেখানোর ইচ্ছা হলো, আর সেই জন্যেই সদর হাসপাতালে।
.
আমি জরুরী বিভাগেই ঢুকে পড়লাম, সেখানে গিয়ে নাকি একটা ২০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট নিতে হবে।
আমি একটা টিকিট নিয়ে ওরা বললো ২য় তলায় ১৬ নাম্বার রুমে যান।
আমি ২য় তলায় গেলাম, রুম খুঁজতেছি, তারপর দেখলাম একটা গেটের সামনে বিশাল এক লাইন, সকাল ১০ টা বাজেও এত্ত বড় লাইন কিভাবে সম্ভব।
আমি সব চিন্তা বাদ দিয়ে লাইনের কাছে গেলাম, আর লাইনে সবার কাতারেই দাঁড়িয়ে গেলাম।
.
কিন্তু লাইনেই দাঁড়িয়ে একটা জায়গায় চোখ আটকে গেলো আমার, আমি শুধু চেয়েই রইছি।
আমি দেখলাম ১৬ বছর বয়সী একটা মেয়ের কোলে ২ বছর বয়সী একটা বাচ্চা।
আমি ভাবছি এত কম বয়সে কিভাবে সম্ভব, হায় রে পিতামাতা।
মেয়েরা এমনি অপরাধী যে তাদেরকে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই মনে হয় তারা বেচে যায়।
কিন্তু তারা এক বারও বুঝে না কম বয়সে মেয়ে বিয়ে দেওয়া একটা ভয়ংকর কাজ।
.
আমার সামনেই মেয়েটি সেই সকাল থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও লাইনে দাঁড়াইয়া বুঝতে পারলাম, আসলেই ঠিক, থাকবে না কেন।
কয়েক জন লুচ্চা ছেলে মেয়ে গায়ে একটা করে সাদা শার্ট দিয়ে, হাতে একটা করে টিকিট নিয়ে ঢুকতেছে আবার বাইরাইতেছে।
আমি এসব দেখে মেয়েটিকে বললাম,
– আচ্ছা তুমি এখানে কতক্ষণ ধরে লাইনে আছো?
– ভাইয়া প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেলো, সামনে থেকে একটা লোকও জায় না।
আমি ছেলে টাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এখনো আমাদের সিরিয়াল আসেনি, (বলেই কেঁদে দিলো)
– আরে কেদো না আমি দেখছি বেপার টা।
.
আমি অই রুমের ভেতরে গেলাম, গিয়ে দেখি দু জন ডাক্তার আর দুটা লুচ্চা নার্স বসে বসে হাসা হাসি করছে।
আমাকে দেখেই, তারা একটু নরে সরে বসে বলল,
– কে আপনি?
– এ সি পি রাজ (মিথ্যা পরিচয়)
ওরা ভয়ে ভয়ে বললো,
– জি স্যার বলেন?
– আপনারা এভাবে রুমের ভেতরে আড্ডা দিবেন আর বাহিরে লোকজন তাদের সমস্যা নিয়ে সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে, পরিবারকে শান্তনা দেয়ার জন্যে বলবে, আজও সিরিয়াল মিলেনি?
– না স্যার,
– তো আপনারা কি করছেন রুমে বসে থেকে?
– এই তো স্যার দেখছি সবাইকেই।
– আমি আসছি ৩০ মিনিট পার হইছে, এখনো লাইনের কেউ রুমে আসলো না।
– সরি স্যার,
– কাজ করুন!
– জি স্যার।
.
পরে আমি মেয়েটির টিকিট নিয়ে রুমে গিয়ে একটা স্বাক্ষর নিয়ে এসে মেয়েটিকে নিয়ে নিচে আসলাম।
মেয়েটির উপর আমার মায়া বসে গিয়েছিল, কারণ ভাইয়া ডাকটা আমার অনেক প্রিয় আর সেই নামেই ডাকলো আমাকে।
আর যাইহোক, তাকে নিয়ে ৩নং ওয়ার্ডে নিয়ে আসলাম।
এবং তার ছেলেটিকে সেখানে ভর্তি করালাম।
আজ আর ডাক্তার আসবে নাহ, আগামীকাল দুপুর ১২ টার পর আসবেন।
আমি আর নিজের খেয়াল না করেই, আমি তাদের প্রতি গুরুত্ব দিলাম।
আমি এসব কাজ করার পর মেয়েটি আমাকে বলছে,
– ধন্যবাদ ভাইয়,
– আরে ধন্যবাদ দেওয়ার কি আছে? ভাইয়া বলে যখন ডাকছো, ভাইয়া মনে করতে পারও।
– হুম ভাইয়া, (বলেই আবার কান্না শুরু করে দিলো)
– কান্না করছো কেন? তোমার স্বামী কই?
– ভাইয়া আসলে আমার স্বামী একটা কাজে খুব ব্যাস্ত।
– অহ, ওকে।
রাতে আসবে…?
– হুম, (বলেই মুখে আচল টা টেনে দিলো)
– ওকে তাহলে আমি আজ এখব গেলাম, আগামীকাল সকালে আবার আসবো।
– হুম ভাইয়া!
.
আমি হাসপাতাল থেকে চলে আসলাম, আমার ব্যাথার কথা মনে নাই।
আর এখন গোসল করে খেয়ে নিলাম, আগামীকাল আবার যেতে হবে হাসপাতালে, আমার জন্যে নয় তাদের জন্যে।
.
পরের দিন, সকাল ১০ টায় হাসপাতালে গেলাম।
আমাকে দেখেই মেয়েটা অনেক খুশি।
আমি বললাম,
– কি খবর ভালো আছো না?
– হুম ভাইয়া,
– বাচ্চার স্যালাইন শেষ হওয়ার পর আর কিছু ঔষুধ দিছিলো?
– না ভাইয়া, তারা বলছে আজ দুপুরে ডাক্তার আসার আসার পর দেখবে তারপর দিবে।
– অহ আচ্ছা!
– হুম,
– আচ্ছা বাবুর আব্বু আসে নি?
– না, ভাইয়া।
– কেন?
– জানি না ভাইয়া,
– কিন্তু কেন?
– আর বলেন না ভাইয়া ওর বাবা একটা মাতাল, আর এসবের পেছনে তার কোনো নজর নেই,
– আর তুমি লেখা পড়া কত দূর?
– আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছিলাম।
– তারপর আমার বিয়ে হয়ে গেলো, এর পর আর পড়া হলো না কেন?
.
এসব কথা বলতে বলতে দুপুর হয়ে আসছে, ডাক্তার এসে চিকিৎসা করে সব কিছু লিখে দিয়ে বললেন।
এই ওষুধ গুলো খাওয়ান।
আমি সব ওষুধ নিয়ে আসলাম ফার্মেসী থেকে।
.
২ দিন পর বাচ্চা প্রায় সুস্থ, আমি নিয়ে আসলাম আমার বাসায়।
আম্মু বলছে,
– রাজ কে এটা বাবা?
– আম্মু আমার বোন বলতে পারো।
– অহ তাইনাকি,
– হ্যা আম্মু!
.
আম্মু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো
– নাম কি তোমার?
– রিয়া
– অহ অনেক সুন্দর নাম তোমার!
রিয়া আর কিচ্ছু না বলে চুপ করেই আছে।
আমি রাতে রিয়াকে প্রশ্ন করলাম,
– আচ্ছা তুমি এত কম পড়া লেখা করলে কেন?
– আমি ক্লাস ফাইভে থাকতে আমার আম্মু মারা যায়, আব্বু একবছর পর বিয়ে করে পরে সৎ মা এসে আমাকে দেখতেই পারে না, কথায় কথায় বকাবকি করে।
একটু কিছু ভুল করলেই আমার মাথার চুল ধরে টানে, নতুন আম্মুর ভয়ে বাবাও কিছু বলতে পারে না। আর এভাবেই আমার কষ্ট না দেখার জন্যে বাবা আমাকে বিয়ে দেয়।
বিয়ের পরে জানতে পারলাম, আমার স্বামী একটা মাতাল।
কাজ কাম কিচ্ছু করে না, খালি সব সময় নেশায় ডুবে থাকে।
বাচ্চাটা অসুস্থ তবুও তার কোনো মাথা বেথা নেই।
আব্বুও জানে না এসব, আর জানলেও আসতে দিতো না অই ডাইনি।
ছেলেকে বাচানোর জন্যে, আমি আমার কানের এক জোড়া দুল বিক্রি করেই হাসপাতালে আসছিলাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আজ থেকে আমাদের বাসায় থাকবে,
– কিন্তু আমার স্বামী?
– কয়েক দিন যাক তোমার স্বামী কে নিয়ে এসে আমাদের অফিসে একটা কাজ দিবো।
– হুম ভাইয়া।
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন ফ্রেস হয়ে নাও, খাওয়া দাওয়া করো হুম?
– হুম ভাইয়া…
.
মেয়েটি এসব কথা শুনে অনেক খুশি, যেনো সে আবার নতুন করে বাচার স্বপ্ন পেলো।
…………………………………..সমাপ্ত………………………………….