বাসের টিকিট কেটে নিলাম কিছুক্ষণ পর বাস ও চলে এল।বেশ ভালই হলো বসে থাকতে হবে না। এর আগের বার এসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
ও সরি কখন থেকে বকবক করছি পরিচয় তো দেই নাই। আমি আশিক। ঢাকাতে একটা পাবলিক ভার্সিটিতে এমবিএ করছি। । আমাদের ডিপার্টমেন্ট অফ ছিল
বলে বাড়ি এসেছিলাম ঘুরতে। এখন বাড়ি থেকে যেতে মনটা কেমন যেন করছে আবার কবে যে আসা হবে তার ঠিক নেই। তো বাসে উঠে নিজের ছিট খুজে
বসে পরলাম। জানালার পাশে বসতে বেশ ভাল লাগে আমার তাই টিকেট কাউন্টার থেকে ছিট জানালার পাশেই নিয়েছি। জানালার কাচটা সরায় দিয়ে ভাবলাম
আম্মুকে একটা ফোন দেয়। যেই ভাবা সেই কাজ।
আমি – হ্যালো আম্মু। আমি বাসে উঠে পড়েছি।
আম্মু – ও সাবধানে যাস বাবা। ঠিক মতো পৌছিয়েছে আমারে একটু ফোন দিস।
আমি – ঠিক আছে। দেখেশুনে থাক কেমন। আর আমারে নিয়ে এতো চিন্তা করা লাগবেনা। আমি আর ছোট নাই
আম্মু – তুই আমার কাছে ছোটই আছিস। আর চিন্তা কেন হয় যেদিন নিজে বাবা হবি সেদিন বুঝবি।
আমা – ঠিক আছে আম্মু ঠিক আছে বুঝলাম।
আম্মু – হুমমম। পৌছে ফোন দিস কিন্তু মনে করে।
আমি – হুম ঠিক আছে। মনে থাকবে রাখলাম
আম্মু – ঠিক আছে
কথা শেষ হলে ফোন কেটে দিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম দেখি আমার জানালার পাশে এসে একটা মেয়ে হুইল চেয়ারে বসা। ওর হুইল চেয়ারটা
টানার জন্য একটা মহিলা চেয়ারটার পেছনে দাড়িয়ে আছে। সম্ভত মেয়েটার মা উনি। হঠাৎ মেয়েটা বলল
> ভাইয়া কিছু সাহায্য করেন ভাইয়া। এই অচল বোনটারে কিছু সাহায্য করেন। মেয়েটি ভাইয়া ডাকটা শুনে মনে হলো সত্যি আমার নিজের বোন থাকলে
আমাকে ঠিক এমন করেই ডাকত। খুব মায়া হলো দেখে মেয়েটাকে হুইল চেয়ারে বসে মাথা কাত করে এমন করে বসে আছে।
আমি মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে মেয়েটাকে দিলাম। দেখে মনে হয় আমার ছোট হবে তাই বল্লাম
আমি – আপু তোমার নাম কি.?
মেয়েটা – আমার নাম ঝর্না। আপনের অনেক ভাল হোক ভাইয়া বলে মেয়েটা চলে গেল। হয়তো অন্য কোথাও গিয়ে মিষ্টি ভাবে বলবে ভাইয়া আমাকে কিছু
সাহায্য করেন। ততোক্ষনে বাস ছেড়ে দিয়েছে
বাস চলে যাচ্ছে নিজের আপন গতিতে। বাইরে তাকিয়ে দেখছি প্রকৃতি। সব কিছুকে পিছনে ফেলে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে বাসটি। বাইরের তাকিয়ে
থাকতে থাকতে বাইরের সুন্দর বাতসে কখন যে ঘুমায় পড়ছি মনে নাই। হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে দেখি বাস একটি জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
বাইরে তাকিয়ে দেখলাম যে এটা কোন কাউন্টার না তাহলে বাস কেন থেমে আছে। বিষয়টা দেখার জন্য বাস থেকে নেমে আসলাম। দেখলাম বাস থেকে
কিছুদুর দুরে রাস্তার মাঝে কিছু লোক জড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। বিষয়টা দেখার জন্য সামনে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম একটা ছেলে রাস্তার উপর পরে আছে
মাথা মনে হচ্ছে পুরা থেতলে গেছে। মাথার খুলি ফেটে রাস্তার উপর ছিটিয়ে পড়েছে। দেখেই ভয় লাগতেছে। বয়স কত হবে ২০ – ২২ বছর। লাশটার পাশেই
একটা দামি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। একজন লোককে জিগাইলাম কিভাবে ঘটল ঘটনাটা। উনি বল্লেন জোরে নাকি গাড়ি চালাতে ছিল। রাস্তার একপাশ
দিয়ে ট্রাক আর অন্যপাশ দিয়ে একটি ট্রাক আসতে ছিল কন্ট্রোল করতে পারে নাই। পিছলে পরে গেছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের গাড়ি আসল এম্বুলেন্স এ করে
লাশটা নিয়ে গেল। রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিল। এতোক্ষন রাস্তা বন্ধ ছিল আবার শুরু হলো যানবাহন চলাচল। আমি বাসে উঠে পরলাম। দের ঘন্টা পর নিজের
গন্তব্য পৌছে গেলাম। রুমে পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গছে। নিজের রুম এসে ফ্রেস হয়ে বিছানা ঠিকঠাক করলাম। যেহেতু ব্যাচেলার একা থাকি তাই নিজের
ই করা লাগল। বিছানা ঠিক করে। ভাবলাম আম্মুকে জানাই যে পৌছে গেছি
আমি- হ্যালো আম্মু আমি পৌছে গেছি।
আম্মু – কখন গেছ। রুমে চলে গেছ কি..?
আমি – হ্যা আম্মু। এখন রাখি কেমন ট্রায়াড লাগছে অনেক পরে ফোন দিবনে।
আম্মু – আচ্ছা ঠিক আছে। কিছু খেয়েছ তো না খেয়ে ঘুমিয়ো না।
আমি – ঠিক আছে আম্মু রাখলাম। কথা শেষ হলে রেখে দিলাম ফোনটা। এখন কি খাব সেটাই ভাবছি। এখন রান্না করতে পারব না। এদিকে পেটের মধ্যে যুদ্ধ
লাগছে কি করা যায় ভাবছি হঠাৎ মনে হলো ব্যাগের মধ্যে বিস্কুটের একটা প্যাকেট আছে। ব্যাগ থেকে প্যাকেটটা বের করে ওটা খেয়ে পানি খেলাম। পেট শান্তি
তো সব শান্তি। আর কোন কাজ নাই তাই
শুয়ে পরলাম। ভাবতে লাগলাম আজকের দিনটার কথা। জীবন কখনো থেমে থাকে না। এটাই বাস্তব প্রমান। যারা রাস্তায় রাস্তায় সাহায্য নিয়ে বেড়াই। টাকা
না থাকা স্বত্তেও তারা সুখী। সারাদিনের টাকা দিয়ে ডাল ভাত খেয়েও তারা বেচে থাকে আল্লাহ এর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। কিন্তু বর্তমান সমাজে আমরা
দেখি কিছু মানুষ আছে যাদের অর্থ সম্পদের অভাব নেই সেই সমাজের মানুষগুলো অন্যর মেরে আরও কিভাবে বড় হওয়া যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে। আর
সেই সমস্ত ঘরের ছেলেরা বাপের মারা টাকার জোরে ফুটানি করতে করতে দিন চলে যায়। পকেটে টাকা কাছে দামি একটা গাড়ি গলায় একটা ডিএসএলআর।
সেই ছেলেটি ফুটানি মেরে হাইওয়েতে জোরে গাড়ি চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মরে। মানুষের জীবনে চাওয়ার সীমা নেই। কোথাই যেন পড়েছিলাম “যে যত পাই
সে তত চাই” কথাটা সত্যই তাই। এগুলো ভাবতে ভাবতে সারাদিন এর ক্লান্তিতে চোখটা বুজে আসছিল। তাই আর দেরি না করে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।