রেহানা বেগম আজ অনেকদিন পর শপিং-এ বের হয়েছেন ।
স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে কি আর যখন তখন শপিং করা যায় ! যখন চাকরীর পুরো বেতন টা পেতেন তখন চাইলে হয়ত পারতেন , কিন্তু তখন ত রাফির পড়াশুনার খরচ দিতেই সব টাকা শেষ হয়ে যেত ।
রেহানা বেগমের একটাই ছেলে । এখন আর খরচ দিতে হয় না ।
টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ টা চালিয়ে নেয় । ছোট বোন টার পড়াশুনার খরচও চালায় ।
শপিং করতে এসেছেন নিজের জন্য আর মেয়ের জন্য । স্বামীর
টা ঢাকা থেকে আসার সময় রাফি নিয়ে আসবে । ঈদের তিন চার দিন আগে আসার কথা ছেলেটার ।
মেয়ের টা কেনা হয়ে গেছে । নিজের শাড়ি দেখছেন ।
শাড়ি পছন্দ হচ্ছে , কিন্তু দাম টা পছন্দ হচ্ছে না । তার কাছে যে টাকা আছে তা দিয়ে পছন্দের শাড়িটা কিনতে পারবেন। কিন্তু……..
মার্কেটে ঢোকার সময় হাতের বামে তিন নম্বর দোকান টায় একটা শার্ট ঝুলানো দেখেছিলেন । ছেলেটাকে কতদিন কিছু কিনে দেয়া হয় নি । রেহানা বেগম খুব চেষ্টা করছেন শাড়ি কেনার পরও যেন ঐ শার্টটা কিনতে পারেন ।
-বাপ্পী , আজকে মাসের ১৭ তারিখ ।
-জি স্যার , গত মাসে আমি তিন দিন পড়ি নাই । তার আগের মাসে আমার এক্সাম চলতেছিল । আর দুই দিন আপনি আসেন নাই ।
রাফি বুঝতে পারে না কখন সে দুই দিন আসল না । কিছু বলতেও পারে না। তবে এটা ঠিক বুঝতে পারে এমাসে টিউশনির টাকাটা পাবে না ।
দুইটা টিউশনির একটার টাকা পেয়েছে।
হাতে যে টাকা জমানো ছিল মা আর বোনের কেনাকাটার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে । যা আছে তা দিয়ে বাবার পাঞ্জাবী টা কেনা যাবে ।
রাফির দুইটা শার্ট । একটা নীল , একটা কালো । নীল শার্টের বাম পাশটায় ইঁদুর বাবাজি একটা ছোটখাটব্ল্যাকহোল তৈরী করে দিয়েছে ।
কালো শার্ট টা ভাল করে ধুয়ে ইস্ত্রি করে প্যাক করে নিয়ে যেতে হবে । ও পুরোনো শার্ট পড়ে আছে বুঝতে পারলে বাবা মায়ের মন টা খুব খারাপ হয়ে যাবে । রাফি এটা হতে দিতে চায় না ।
রাফি আজ বাড়ি ফিরছে । বাবা-মা আর ছোট বোনটার হাসিমুখ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে । রাফির হাতে বাবার জন্য কেনা নতুন পাঞ্জাবী , আর নতুনের মত দেখতে সুন্দর করে ইস্ত্রি করা কালো রঙের পুরোনো শার্ট ।
রাফি ভুলে গেছে , রাফির যে দুইটা মাত্র শার্ট সেটা ওর মা জানেন । ভুলে গেছে বলেই রাফির টেনশন হচ্ছে না ।
রেহানা বেগমও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ছেলের জন্য । শাড়িটা কমদামী , বেশি সুন্দরও না । রেহানা বেগমের তাতে কিছু যায়-আসে না । শার্টটা যে খুব সুন্দর । পড়লে খুব মানাবে রাফিকে ।
যখন এই চারটা মানুষ একত্রিত হবে , পৃথিবীতে এমন কিছু কি আছে যা তাদের খুশিকে অতিক্রম করতে পারবে??