এক বনের ধারে ছিল বিরাট একটি গাছ। তার শিকড় যেমন মাটির অনেক গভীরে পৌঁছেছিল তেমনি ডালপালাও চারপাশের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়েছিল। গাছটির ঘন পাতার রাশি সূর্যের আলো প্রতিরোধ করে মানুষকে ছায়া দিত। গাছটিতে অসংখ্য পাখি বাস করত। মানুষ ও পাখির সমাগমে গাছটির চারপাশের এলাকা মুখরিত থাকত।
এই বিরাট গাছের নিচে একটি গাছের চারা গজিয়ে ওঠে। এটি ছিল একটি নমনীয় ও নাজুক হলদি গাছ। সামান্য একটু বাতাসেই তা নুয়ে পড়ত। একদিন দুই প্রতিবেশী কথা বলছিল।
হলদি গাছকে লক্ষ্য করে বড় গাছটি বলল– ওহে আমার খুদে প্রতিবেশী, তুমি তোমার শিকড়গুলো মাটির আরো গভীরে প্রবেশ করাও না কেন? কেন আমার মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াও না?
হলদি গাছ মৃদু হেসে বলল– তার কোনো প্রয়োজন দেখি না। আসলে এ ভাবেই আমি নিরাপদ আছি।
বড় গাছ বলল: নিরাপদ! তুমি কি মনে করো যে তুমি আমার চেয়ে নিরাপদ আছো? তুমি কি জানো আমার শিকড় কত গভীরে প্রবেশ করেছে? আমার কাণ্ড কত মোটা ও শক্ত? এমনকি দু’জন লোক মিলেও আমার কাণ্ডের বেড় পাবে না। আমার শিকড় উৎপাটিত করবে ও আমাকে ধরাশায়ী করবে– এমন কী কেউ আছে?
গাছটি হলদি গাছের দিক থেকে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। এরপর একদিন সন্ধ্যায় ওই এলাকার ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। ঘূর্ণিঝড়ে শিকড়সহ বহু গাছ উপড়ে পড়ে।
ঝড়ের পর গ্রামবাসী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে বের হয়। তারা দেখে, আকাশচুম্বী গাছগুলোর অবস্থা একেবারে শোচনীয়। সেগুলো হয় উপড়ে পড়েছে অথবা ভেঙে চুরে শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম সবার নজর কাড়ে। তা হলো সেই হলদি গাছ। ঝড় শেষ হয়ে যাবার পর সে আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার অহংকারী বিরাট প্রতিবেশী গাছটি তার পাশেই কঙ্কালের মতো পড়ে রয়েছে।
উপদেশ: অহংকার পতনের মূল।