– রাফি ফ্রীজ থেকে পানির বোতল গুলো একটু নামিয়ে রাখ
তো। (রাফি’র বড় বোন)
(রমজান মাস। কানে হেডফোন গুজে ইউটিউবিং করছিলো রাফি)
– পারবো না। ডিস্টার্ব করিস না তো! busy আছি এখন।
রাফি’র ব্যবহার টা ই এরকম হয়ে গেছে ইদানীং। বড়দের সাথে
কর্কশ ভাষায় কথা বলে অথচ বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত হয় না।
কিন্তু একবছর আগে ও সে এমন ছিলো না। একটা ভালো/
আদর্শ ছেলে বলতে যা বোঝায় সব গুনই তার মধ্যে ছিলো।
SSC পাশ করে কলেজে ভর্তি হয় । বিপত্তি টার শুরু সেখান
থেকেই। আস্তে আস্তে খারাপ সঙ্গে মিশে সে ও খারাপ
হয়ে যেতে থাকে। একসময় যে ছেলে রমজান আসলে
কুরআন খতম দিয়ে ফেলতো, সে এখন ফরয নামাজ গুলোই
পড়ে না।
রাফির সবদিক দিয়ে পরিবর্তন হলে ও একটা দিকে এখনও অপরিবর্তি
রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা।
প্রচন্ড ভালোবাসে তার মা’কে।
এইতো, আজকে ও সে মা’কে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে
গিয়েছিল। উচ্চ রক্ত চাপের পেশেন্ট তার মা। রাফির বাবা নেই।
বড় ভাইয়ের উপার্জন আর স্বচ্ছল মামাদের সহযোগীতায় সংসার
চলে। ডাক্তার ওনাকে ভালোভাবে দেখলেন। রাফিকে
একপাশে নিয়ে গিয়ে বললেন বি পি অনেক হাই। যেনো
কোনোমতেই ডিপ্রেসড অর টেনসড না থাকে। সারাক্ষণ হাসি
খুশি রাখতে হবে যেভাবে হোক।
ডাক্তার কাছে যাওয়া-আসার জার্নি’র ফলে রাফি অনেক টায়ার্ড
ছিলো। তাই ইফতারের পরপরই ঘুমিয়ে যায়।
শোরগোল আর কান্নার শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘড়িতে
তখন প্রায় রাত দু’টা। রাফি ভালো করে খেয়াল করে দেখলো,
কান্না’র শব্দটা আসতেছে তার মায়ের রুম থেকে । একদৌড়ে
সে সেখানে গিয়ে দেখে তার বোন এবং পাশের বাসার
কয়েকজন কান্নাকাটি-শোরগোল করছে। অচেতন অবস্থায়
শুয়ে আছে তার মা। মুখ দিয়ে গড় গড় আওয়াজ বের হচ্ছে। বাম
পা কতক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে।গলা’র শিরা গুলো
ফুলে নীল হয়ে আছে। BP 200/120।
হসপিটালাইজড করতে হবে অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল । কিন্তু এত
রাতে অ্যাম্বুলেন্স কোথায় পাবে! তার বড় ভাইয়া ব্যবসায়িক
কাজে বাইরে অবস্থান করছিলো তখন। তাকে ফোন করলো
রাফি। তিনি বললেন, তিনি আসছেন। সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা
করতে।
এদিকে তার মায়ের অবস্থা আরো খারাপ দিকে যাচ্ছিলো। তার
বোনটা কেঁদেই যাচ্ছিলো মা’কে জড়িয়ে ধরে। রাফি তার
বোনকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। কাজ হলো না। বরং কান্নার
শব্দটা আরো দ্বিগুণ হলো। পাশের বাসার মানুষদের ভিড় ও শুধু
বাড়ছে। সাথে শোরগোল ও। কি করবে কিছুই বুঝতে
পারছিলো না রাফি। অসহায় মনে হচ্ছিলো নিজেকে। তার মা ই যে
তার সব। চোখে অন্ধকার দেখছিলো সব…
তখন মসজিদ থেকে ভেসে এলো ফজরের আজানের
সুমধুর ধ্বনি। “আস্সালাতু খাইরুন মিনান্ নাউন”। নাহ এবার আর ভুল
করলো না রাফি। বাসার পাশেই মসজিদ। এত কাছে যে ইমামের
খুতবা ও শুনা যায় বাসা থেকে। অযু করে মসজিদে গিয়ে নামায
পড়লো জামায়াতে সহীত। নফল নামায পড়লো । একটাই চাওয়া,
যেকোনো মূল্যে তার মা’কে যেন আল্লাহ সুস্থ করে
দেয় তওবা করে ক্ষমা চাইলো তার নিজের সব ভুলের।
আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলো যেন তার মা’কে সুস্থ করে
দেয়। সেজদায় পড়ে রইলো অনেকক্ষণ। দুচোখ বেয়ে
পানি গড়িয়ে পড়ছিলো অঝোরে…
রাফির বাসা থেকে ভেসে আসা কান্না আহাজারির শব্দ আস্তে
আস্তে ক্ষীণ হতে হতে বাতাসে মিলিয়ে গেলো।
চারদিকে যেন একটা শীতল শান্তির সমীরণ বইতে শুরু
করলো…
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প