সহানুভূতি

সহানুভূতি

সূর্য্যদয় দেখতে দেখতে আমার ঘুম ভাঙ্গলো সেই মধ্য- দুপুরে।আর তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ টুপটাপ শব্দে। আমি বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে আছি।বাড়ির পাশ দিয়েই কাঁচা রাস্তায় মেইন রোড ধরা যায়।বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাঁদা জমে আছে।খালি পায়ে বা হেঁটে মেইন রোড ধরতে গেলে এই এক কিলো. রাস্তায় চার থেকে পাঁচ বার কাঁদার ফাঁদে পড়তে হয়। তাই গ্রামের লোকজন বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে।
এই বৃষ্টির দিনে এরকম একটা রাস্তায় এসে জহির ভাই যেনো প্রায় নিঃস্ব।জহির ভাই একজন ট্রাক চালক।ট্রাক ভর্তি চাউলের বস্তা নিয়ে গাড়িটি এই রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে আবদ্ধ হয়।রাস্তার এক পাশে গর্ত বের হওয়ার কারণে ট্রাকটি দুর্ঘটনায় পড়ে।জহির ভাই ও তার সহযোগী(হেলপার) গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় কিছু কিছু লোক দুর্ঘটনাস্থানের দিকে ক্রমস এগিয়ে যাচ্ছে।আমি তাদের দেখে ১মে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম তারপরের ঘটনাটি দেখে আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম ঐ মানুষরুপী অমানুষদের দিকে।

জহির ভাই আর তার সহযোগী বকুল মিয়া ধান ক্ষেতের আইলে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।আমি শুধু নির্বাক দর্শকরুপে সব দেখে যাচ্ছি।কারণ গত মাসের ২৯ তারিখে আমার শরীরের ডান সাইডের প্রাণশক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি।তাইতো আজ আমি চেয়ারে বসে।অমানুষদের কেউ কেউ ড্রাম ভর্তি করে চাউল নিতে ব্যস্ত
আবার কেউ কেউ জহির এবং বকুলের পকেট হাতাচ্ছে। মোবাইল ফোন,টাকা-পয়সা,চাউল এবং প্রায় সব জিনিস তারা হাতিয়ে নিয়েছে শুধুমাএ জহির ভাই ও বকুলের দেহটা বাদে।
আমি আমার ভাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে জহির ভাই ও বকুলকে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এরকম হাজারও জহির ভাই ও বকুলের মতো মানুষদের রাস্তার
পাশে পড়ে থাকতে দেখি।আমরা তাঁদের দেখেও না দেখার ভান করি,তাঁদের আত্নচিৎকার আমরা শুনেও না শুনার ভান করে অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।
অথচ আমরা যদি দেখি রাস্তার পাশে একটা ১০ টাকা নোট পড়ে আছে,আমরা দশজন মানুষ সেই দশটাকা নিয়ে কাড়াকাড়ি করে থাকি।অবশেষে দেখা যাবে সেই দশটাকা নোটের দশটি অংশ আমাদের দশজনের কাছে।
আমরা কি এরকম সমাজটাকে বদলাতে পারি না ? আমরা কি পারি না,সেই সমস্ত মানুষদের সহানুভূতির চোখে দেখতে,তাঁদের আত্নচিৎকারগুলো শুনতে ? আমরা কি পারি না,সেই দশটাকা নোট নিয়ে কাড়াকাড়ি না করতে ? একজন ভদ্র ব্যক্তির মতো করে দশটাকা নোটটা আমরা মহান আল্লাহ্ তা’ য়ালার ঘর মসজিদে পৌছে
দিতে পারি না ?
হ্যাঁ,আমরা অবশ্যই পারি।আমি পারি,সে পারে তাহলে আপনি কেনো পারবেন না? আপনিও পারবেন শুধু ইচ্ছা আর একটু চেষ্টা।আমার আপনার মাঝে সহানুভূতিবোধ সৃষ্টি করতে হবে।এই আমার আপনার সহানুভূতিই আমাদের সমাজটাকে বদলে দিতে পারে।আমার আপনার ইচ্ছা ও চেষ্টায় এই সমাজটাকে বদলে দিতেপারে।আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই “একটি আর্দশ সমাজ গড়ার”।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত