মিফাকে ওর বয় ফ্রেন্ড পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়ে গেছে।মিফার কোনোই অপরাধ ছিল না।
আসলে ছেলেটির সাথে মিফার বাবার শত্রুতা ছিল।বাবার সম্মান নষ্ট করতেই মিফাকে ফাদে ফেলে ভুলিয়ে ভালিয়ে
এখানে নিয়ে এসে রেখে গেছে।অনেক কান্নাকাটি, চিৎকার চেঁচামেচি করেও কোনো লাভ হয়নি।
মিফা বদ্ধ ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।আর মনে মনে প্রার্থনা করছে আল্লাহর কাছে যাতে এই নরক থেকে মুক্তি পায়।
মিফার আর কান্না আসছে না।এখন এই জায়গা থেকে বের হওয়ার মত উপায় বের করতে হবে।ও শান্ত হয়ে বসে চিন্তা করছে।
এমন সময় একটি মহিলা একটা ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢুকল।
ছেলেটি মিফাকে দেখে কুৎসিত ভাবে হাসলো।
মিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মহিলাটি বলল,মাইয়া তো দেখলা।পরির মত না?
– হু,পরির চাইতেও সুন্দরী!
– হ,তারউপর ভার্জিন। আমারে কিন্তু ৫০০ টাকা বোনাস দিবা কইলাম।
– আচ্ছা,১০০০ টাকা বোনাস দিমু,খুশি তো?
মহিলাটি দাত বের করে হেসে বলল,খুউউউব।
তারপর মিফার কাছে এগিয়ে এসে বলল,খালা তোমারে যা যা কইছে মনে আছে তো? কাস্টমার রে মনখুশি কইরা দিবা,
যা চাইবা তাই পাইবা।আমি গেলাম গা।
কথাটি বলেই মহিলাটি দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিফার সারা শরীর ভয়ে কাটা দিয়ে উঠল। এবার কি হবে!
ভয়ানক চিন্তা গ্রাস করে ফেলল মিফাকে।এই নরক থেকে সে কিভাবে বের হবে? এখান থেকে বের হওয়ার কি কোনো উপায় নেই?
মিফা একমনে আল্লাহ কে স্মরণ করছে,হে আল্লাহ,আমি কখনো কোনো নাফরমানি করিনি।কোনোদিনও বাজে কিছু করিনি।
আমার জীবনের একমাত্র ভুল ছিল রিদয় কে ভালোবাসা।তুমি আমাকে মাফ করে দাও মাবুদ।
এই নরক থেকে বাচার উপায় দেখিয়ে দাও।আমার সম্মান হেফাজত করার তৌফিক দাও।
একমনে আল্লাহকে স্মরণ করছে মিফা।একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ই পারেন এই আজাব থেকে তাকে মুক্তি দিতে।
.
ছেলেটি এগিয়ে এসে মিফার দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে হাসি দিলো।
মিফার কান্না এসে যাচ্ছে।কি করবে বুঝতে পারছে না।শুধু মনে মনে আল্লাহর নাম জপ করছে।
এমন সময় মাথায় একটা ভালো বুদ্ধি এসে গেলো। মিফা ভেবে দেখল,এই একটা উপায় ই এখন পথ দেখিয়ে দিতে পারে।
ও ছেলেটির কাছে এসে বলল,আমি ভাবছিলাম ভয়ংকর কিছু করবো। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার খুব ভালো লেগেছে।
তুমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম।একদম আমার যেমন ছেলে ভালো লাগে,ঠিক তেমন ই।
প্রশংসায় কাজ হয়েছে।ছেলেটি বিগলিত হয়ে বলল,তাই বুঝি?
– জ্বি।আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করে দিবো কিন্তু আমার ইচ্ছামত তোমাকে কাজ করতে হবে।আমার ইচ্ছায় বাধা দিবে না।
– ওকে ওকে দিবো না,সুইট বেবি।
বলেই মিফার গাল ছুঁয়ে দিলো।
মিফার শরীর কাটা দিয়ে উঠল। কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারালো না।
বলল,হু।তুমিও খুব সুইট।একদম আমার মনের মত।আমি আমার ইচ্ছামত তোমাকে ভালোবাসা দিবো, তুমি বাধা দিবে না।ওকে?
ছেলেটি খুশি হয়ে বলল,ওহ হাউ কিউট!! তুমি যা খুশি করো।
– একটা সিগারেট খাবো, সিগারেট এনে দাও।
– সিগারেট খাবে! ওকে,আমার কাছেই আছে।এই নাও।
মিফা সিগারেট হাতে নিয়ে বলল,সিগারেট ধরাবো কি দিয়ে? লাইটার দাও।
ছেলেটি একটা দেশলাই এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নাও।
মিফা সিগারেট টা মুখে নিয়ে বলল,বিছানায় গিয়ে বসো।আমি সিগারেট শেষ করে আসছি।
.
ছেলেটি বিছানায় শুয়ে গান গাইছে।
মিফার খুব রাগ হচ্ছে।এই ছেলেটি তার চেয়েও বয়সে বছর তিনেক ছোট হবে।এরা এসব নোংরা কাজ কেন করে?
চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কিভাবে পরিকল্পনা টাকে কাজে লাগানো যায়?
ভাবতে ভাবতে ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর নিজের ওড়না খুলে ছেলেটির চোখ বেধে দিলো।
ছেলেটি বলল,চোখ বাধলা কেন বেবি?
– কানামাছি খেলবো।
– ওহ,সুইট!
চোখ বাধার পর মিফা খুব আলতো করে ছেলেটির শার্ট খুলে নিলো।
ছেলে তো মহাখুশি।তিড়িংতিড়িং করে নাচতে ইচ্ছে করছে ওর।
মিফা বলল,আমার কাজে বাধা দিবে না।তোমাকে কত আনন্দ দিই দেখো।
– ওকে ওকে।
মিফা আচমকা ছেলেটির মুখ টাও বেধে ফেললো। এবার ওর চোখ ও মুখ দুই টাই বাধা।
ছেলেটি কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না।মুখ বাধা,আর কিছু দেখতে ও পারছে না।
মিফা ওড়নার বাকি অংশ টুকু দিয়ে জোর করে ওর হাত টাও বেধে ফেললো।
হাত বাধতে গিয়ে একটু বেগ পেতে হয়েছে।ইতিমধ্যে ই ছেলেটি বুঝে গিয়েছে যে মিফা ওকে বুদ্ধি করে কুপোকাত করেছে।
কিন্তু হাত,চোখ ও মুখ সবই বাধা।এখন আর ওর কোনো ক্ষমতা ই নেই।
মিফা সিগারেট এ আগুন ধরালো।তারপর জ্বলন্ত সিগারেট টা ছেলেটির হাতের উপরে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ।
ছেলেটা লাফালাফি ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না।মিফার বুদ্ধির কাছে হেরে গেছে সে।
মিফা আশে পাশে তাকিয়ে দুইটা শাড়ি দেখতে পেলো।এবার শাড়ি দুটো নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে একটা দরজার কাছে রাখল,
আরেক টা বিদ্যুতের তারের উপর ছুড়ে মাড়ল।
কাঠের দরজায় আগুন ধরে গেছে।আর বিদ্যুতের তারেও আগুন ছড়িয়ে যেতে লাগল।তার গলে মেঝেতে পড়ে গেলো। পুরো তার দিয়ে আগুন বেড়ে যাচ্ছে।
উপরে ছিল টিনের চাল।কাঠ ও টিনেও আগুন ধরতে শুরু করেছে।
মিফা ঘরের এক কোনে চলে গেলো। টিন ঝলসে নিচে পড়তে পারে।
মনে মনে বলল,ঘরে তো আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ,এখন হয় আমাকে এই আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলো আর নয়ত বের হওয়ার তৌফিক দাও।
.
কিছুক্ষনের মধ্যেই আগুন বেড়ে গেলো। চালের উপর আগুন ধরে গেছে।
পতিতালয়ের কেউই এখনো আগুন ধরার ব্যাপার টা বুঝতে পারেনি।
আগুন বেড়ে ই যাচ্ছে।
মিফা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক টাই পুড়ে গেছে।এখন বের হওয়া যেতে পারে।কিন্তু দরজা দিয়ে আগুন উপরে দাউদাউ করে জ্বলছে।
ও বিছানায় এসে এক ধাক্কায় ছেলেটিকে ফেলে দিলো মেঝেতে।তারপর বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে দরজার কাছে আসলো।
আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে,এখনো কেউ আগুন লাগার ব্যাপার টা জানেনা।আগুন চাল দিয়ে বেড়ে পাশের ঘরের চালেও চলে গেছে।
মিফা বালিশ হাতে নিয়ে এসে বালিশ দিয়ে দরজায় কয়েকবার আঘাত করলো।পুড়ে যাওয়া কিছু অংশ ঝলসে পড়েছে। এখন অনায়াসে বের হওয়া যাবে।
বের হতে গিয়ে মিফা ছেলেটির দিকে তাকালো।ওকে পুরো পুরি বেধে রাখা হয়েছে।ছেলেটি আগুনে পুড়ে ও মরতে পারে।
আগুন যেভাবে বাড়ছে, ওকে সাহায্য করার জন্য কেউ আসবে না।নিজের ক্ষতি করে হলেও মিফা অন্যের বিপদে পাশে থেকেছে।
আজ কিভাবে একে মেরে ফেলবে?
মিফা ছুটে এসে ছেলেটির হাতের বাধন খুলে দিয়ে বলল,পালাও।ঘরে আগুন লেগেছে।
ছেলেটি নিজের চোখের বাধন খুলতে খুলতে মিফা এক ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
তারপর চিৎকার শুরু করে দিলো, আগুন আগুন! বাচাও!
মিফার চিৎকার শুনে পুরো পতিতালয় জেগে উঠল। সবার ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেলো। সবাই নিজের প্রান বাচাতে ব্যস্ত।
মিফা এই সুযোগে কোনোদিকে না তাকিয়ে এক ছুট দিলো।
ছুটতে ছুটতে পতিতালয় থেকে কয়েকশ গজ দূরে এসে থামল।পিছন ফিরে দেখল খুব চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসছে।
আর পিছন ফিরে তাকালো না।আবারো দৌড় শুরু করে দিলো।
ছুটতে ছুটতে হাফিয়ে গেছে মিফা।তবুও ছুটছে।প্রায় দেড় কি.মি. ছুটে আসার পর দাঁড়িয়ে পড়ল।
দাঁড়িয়ে হাফাতে লাগলো।
কিছুক্ষণ হাফানোর পর আবারো ছুটতে লাগলো।
অনেক্ষন ছুটার পর একটা মার্কেটের সামনে এসে দাঁড়াল মিফা।রাত বেশি হয়নি।অনেক দোকান ই এখনো খোলা।
মিফা মার্কেটের ভিতরে ঢুকে মেঝেতে বসে হাফাতে লাগলো। এখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে,কেউ মিফার ক্ষতি করতে পারবে না।
এখন ও সম্পুর্ন বিপদ মুক্ত।
আশেপাশের লোকজন কৌতুহলি হয়ে মিফার দিকে তাকাচ্ছে।
মিফা উঠে এসে একটা কাপড়ের দোকানে বসলো।
দোকানদার জিজ্ঞেস করল,আপা কোনো সমস্যা?
– খুব বিপদে পড়েছিলাম ভাই।আমাকে এক টা ওড়না দিন তো।
দোকানদার ওড়না বের করে দিলো।
ওড়না গায়ে জড়িয়ে মিফা বলল,আপনার ফোন টা একটু দেখি।
দোকানি ফোন এগিয়ে দিলো।
মিফা ওর বাবাকে কল দিয়ে মার্কেটের নাম বলে তাড়াতাড়ি চলে আসতে বলল।
তারপর দোকানেই বসে রইলো।
.
ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই মিফার বাবা এসে গেলেন।
মিফা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।বাবার বুকেই মেয়েদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন,কি হইছে মা?
– এখন বলতে পারবো না।আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। আর এই দোকানে একটা ওড়না কিনেছি, টাকা দিয়ে দাও।
.
এরপর মিফাকে ওর বাবা বাসায় নিয়ে আসলেন।
মায়ের কোলে মাথা রেখে এই ভয়াবহ বিপদের কথা ভেবে শিউরে উঠল মিফা!
সমস্ত ঘটনা খুলে বলল ওর বাবা মাকে।
সব শুনার পর বাবা মা দুজনেই কেঁদে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন হৃদয়কে শায়েস্তা করার।
মা বললেন, আল্লাহর প্রতি লাখ লাখ শোকরিয়া।আজ তুই অনেক বড় বিপদ থেকে বেচে গেছিস মা।
– হুম আম্মু।
মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল মিফা।আজ তার জীবন টা সারাজীবনের মত আধারে ঢেকে যেতে পারত,কিংবা আগুনে পুড়ে মৃত্যু ও হতে পারত।সমস্ত ঘটনার ভয়াবহতার কথা মনে করে আরেকবার শিউরে উঠল মিফা।
(নৈতিক শিক্ষা:
যেকোনো বিপদে নিজের সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখবেন।দিশেহারা হয়ে পড়বেন না,নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে ঠাণ্ডা
মাথায় লড়াই করার চেষ্টা করবেন।আর যেকোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে ছেলের সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিবেন
এবং তার পরিবার সম্পর্কে ধারনা রাখবেন। ধন্যবাদ)