আজ ছোট বোনের জন্য একটা নতুন জামা কিনব বলে ছোট বোন কে কথা দিয়েছি। যদি না কিনি তবে ছোট বোনটা খুব রাগ করবে।
অনেক দিন হলো বলতেছে। কিন্তু আজ কিনে দেব বলে কথা দিয়েছি। কেমন জামা কিনব তাও বলে দিয়েছে।
বলেছে লাল টুকটুকে একটা জামা কিনে দিতে হবে।
বাড়ি থেকে সোজা রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম ঐ মার্কেটে। মার্কেটে গিয়ে হরেক রকম জামা দেখতে ভালোই লাগছিলো।
কিন্তু লাল জামা তো পাচ্ছি না। এমন সময় পিছন থেকে কে যেন আমার শার্ট টানছে। পিছনে তাকিয়েই দেখি।
ছোট একটা মেয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর বললো,,,
– স্যার কিছু দেন না স্যার?
( আমি ঐ পিচ্চি টার দিকে ভালো ভাবে তাকালাম। সেই ছোট্ট মেয়েটির বয়স হয়তো ৭ কি ৮ হবে। চুলগুলো তার ধুলোবালিতে ময়লা যুক্ত।
কালচে থেকে লালচে রং হয়ে গেছে। মুখটা যেন শুকিয়ে গেছে। গায়ে তার পরনে একটা শর্ট হাফ টি শার্ট। তাও আবার ছেড়া।
চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনি কান্না করবে মনে হয়। চোখগুলো পানিতে টলমল করছিলো। দেখতে দেখতে কান্না করে দিলো। আমি বললাম)
– কি হয়েছে তোর?
– স্যার আমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি। পেট টা খা খা করছে।
কিছু দেন না স্যার?
( কান্না করতে করতে বললো। খুব মায়া লাগলো তার এসব কথা শুনে।)
– আচ্ছা তোর নাম কি?
– স্যার মরিয়ম!
– আমি তোকে টাকা দেব না। চল তোকে পেট ভরে খাওয়াবো।
– স্যার সত্যি!
( মুখে তখন মরিয়মের অনেকটা হাসির মায়া ভরা ছায়া দেখলাম আমি। মনে হয় অনেক খুশি হয়েছে। খাওয়াবো বলেছি বলে।)
– হ্যা চল!
– না স্যার আমি যাবো না!
– কেন যাবি না!
– আমার কেউ নেই! আমি আপনার সাথে কোথায় যাবো?
– কেন খেতে যাবি?
– না যদি আমাকে নিয়ে যান?
– আর এ বোকা কোথাও নিয়ে যাবো না। আয় তো। আর আমাকে ভাইয়া বল! স্যার বলতে হবে না।
– আচ্ছা!
( বলেই একটু লাফিয়ে উঠলো খুশিতে। আমার দিকে চেয়ে হাসছে। তখন কান্না টা আর মুখে নেই। দু হাত দিয়ে মুছে ফেলেছে।
কি মায়া ভরা হাসি। এ হাসি যতটা মায়া আছে, তার চেয়ে ক্ষুধার্তের ছায়া টা আরো স্পষ্ট। পাশের হোটেলে নিয়ে গেলাম।
হোটেলে গিয়ে বসতেই, কিছু লোক আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছিলো। তাদের তাকানো দৃষ্টি টা কেমন যেন ঘৃণাকৃত ।
মনে হয় মরিয়ম কে খেতে নিয়ে এসেছি বলে এমন করে তাকাচ্ছে। আমি কিছু অর্ডার দিলাম। ওয়েটার তা দিয়ে গেলো।
ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার সময় ও কেমন করে যেন তাকাচ্ছিলো। মরিয়ম খাচ্ছে । আমি দেখছি তার খাওয়া।
খাচ্ছে আর আমার দিকে চেয়ে হাসছে। তার হাসি দেখে আমি অনেকাই আনন্দ বোধ করছিলাম। এমন হাসি আমি কখন ও দেখিনি!
মরিয়মের সামনের দুটো দাত নেই। মনে হয় পড়ে গেছে। এমন দেখে একটু হাসি পাচ্ছে আমার। আমি ও তার খাওয়া দেখে হাসছি।
ইতিমধ্যে একটা লোক এসে আমাকে বললো—)
– আপনারা কি শুরু করছেন হ্যা! রাস্তা থেকে একে নিয়ে এসে এখানে খাওয়াচ্ছেন। হু!
( লোকটি কথাগুলো বলেই চলে গেলো। লোকটি যখন কথা বলছিলো! অনেকটা মনে হয় রেগে কথা বলছিলো। আমার ওপর।
মরিয়ম খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি মরিয়মের দিকে তাকিয়ে খুব কষ্ট পেলাম। মানুষ এমন কেন!
এদের মতো অসহায় শিশুদের কেন দেখতে পারে না। এমন ভাবতে ভাবতে
মরিয়ম কে খেতে বললাম। মরিয়মের খাওয়া শেষ হলে। হোটেলের বাহিরে এসে, মনের মধ্যে অনেকটা কষ্ট লাগছিলো।
মরিয়ম কে একটা জামা কিনে দিবো কি না ভাবতে লাগলাম। তবে কিনেই দেই। সামনে তো ঈদ আসছে। )
– চল আমার সাথে?
– কোথায় ভাইয়া?
– ঐ মার্কেটে? আমার বোনের জন্য একটা জামা কিনবো। –
– আমিও যাবো!
– হ্যা চল!
– আচ্ছা চলেন!
( তারপর মরিয়ম কে নিয়ে আবার সেই মার্কেটে ঢুকলাম। আমি লাল জামা খুজ ছিলাম। হঠাৎ মরিয়ম বলে উঠলো–)
– ভাইয়া ঐ লাল জামা টা কি সুন্দর!
( আমি সেদিকে তাকাতেই দেখি একটা লাল জামা। জামা টা খুব সুন্দর। আমি বললাম –)
– তুই এটা নিবি?
– না ভাইয়া! আমাকে কেন কিনে দিবেন!
– হ্যা তোকেও কিনে দেব নে এটা।
( আমি দোকান্দারের থেকে দুটো জামা কিনলাম। ঠিক লাল রঙের। একটা মরিয়মের জন্য একটা আমার বোনের জন্য।
মরিয়ম কে একটি জামা তার হাতে দিলাম। মরিয়ম জামাটি হাতে নিয়ে! আবার খুশিতে হাসছে! সেই দাত ছাড়া হাসি! আমার আবার হাসি পাচ্ছিলো।)
– ভাইয়া আপনি অনেক ভালো!
( বলেই হাসছে! আমি মরিয়মের মাথা নেড়ে দিয়ে বললাম–)
– আচ্ছা তুই ও ভালো। তবে জামাটার যত্ন করিস।
– আচ্ছা ভাইয়া!
– আমি তো চলে যাবো। তুই কোথায় যাবি?
– আমি ঐ পাশে একটা বস্তিতে থাকি।
( এই কথা বলেই চলে গেলো। আর বারবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছিলো। আমি ওর দিকে অনেক্ষন চেয়ে রইলাম! তখন সন্ধ্যা হয়েছে।
আমার কাছে টাকাও ফুরিয়ে গেছে । হেটেই বাসায় আসলাম। অনেকটা পথ —– তারপর আমি আমার বোনের জামা নিয়ে বাসায়। ।
জামাটা বোনটাকে দিলাম। আমার পিচ্চি বোন টাও জামা টা দেখে অনেক খুশি। জামা টি নাকি খুব সুন্দর হয়েছে।
,
রাতে মরিয়মের কথা খুব মনে পরছিলো। সেই পিচ্চি মেয়েটা মরিয়ম। আর মনে হচ্ছিলো ঐ লোকগুলোর কথা।
যারা ঘৃণাকৃত চোখে তাকাচ্ছিলো আমার আর মরিয়মের দিকে। তারা কেমন মানুষ!
আচ্ছা ঐ শিশুগুলো ওরাও তো মানুষ। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ওরা। ওদের হয়তো কেউ নেই। রাস্তায় মানুষের কাছে হাত পেতে যা পায়।
তা দিয়ে খেয়ে পরে জীবন কাটায়। মানুষ যদি এই পথ শিশুগুলো কে একটু সহযোগিতা, একটু সাহায্য করে তবে কি মানুষের সম্মান চলে যাবে।
মানুষ মানুষের জন্যই তো। এই পথ শিশুগুলো। আমার, আপনার মতো মানুষের একটুখানি ভালোবাসা, একটুখানি সাহায্য এদের জীবনে আশীর্বাদ।,
,
আসুন আপনি আমি, এই আমরা সবাই এদের মতো পথ শিশুদের পাশে এসে দাড়াই। এতে আপনার সম্মান যাবে না।
এই শিশুগুলোর জীবনে আপনি একটা বটগাছের ছায়ার মতো। এরা এই ছায়ায় বেঁচে থাকতে চায়। এদের কে সেই ছায়ায় বাঁচতে দিন। )