অভিশপ্ত মাদক

অভিশপ্ত মাদক

রাস্তার ধারে একটা লাশ পড়ে আছে! আপাতত বেয়ারিশ লাশ! যতো দূর জানা যায়,

কাল রাতে নাকি চুরি করে পালাবার সময়, রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে!
রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, শান্ত! আর তার চাকুরীর একটা লিখিত পরীক্ষা আছে! ছেলে হিসাবে অনেক ভালো সে, বাবা-মার ছোট ছেলে সে,

সবাই এক দিকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ ও আছে।
শান্ত সচারচর ঝামেলা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকে, তার পর ও সে ভিড় টার কাছে গেলো।।
।।
শান্ত- কি হয়েছে ভাই?
একজন- এক বেজন্মার বাচ্চা রাতে চুরি করে পালাচ্ছিলো, মনে হয় মাল খেয়ে ছিল, তাই সোজা এসে গাড়ীর তলে, মরুক সালারা।।
।।
শান্ত কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করলো! তার পর যা দেখল, তার কেন জানি সব আবছা হয়ে গেলো।

আরে এটা তো রবিন?একজন পুলিশ বলল, কেউ কি ওকে চিনে?
শান্ত হাত তুলে বলল চিনে, তারপর নাম ঠিকানা দিয়ে দিলো, শান্তর বাস চলে এসেছে তাই সে দৌড় দিয়ে বাসে চড়লো।
।।
শান্ত বাসে বসে চিন্তা করতে শুরু করলো।
রবিন! তার বন্ধুর মতো, বয়সে ছোট, কিন্তু শান্তর ২ বাড়ীর পর রবিনদের বাড়ী।।
ছোট থেকে রবিন অনেক মেধাবি ছেলে, বাপ-দাদার ও কম নাই, ছাদ দেওয়া বাড়ী, বাড়ীতে টিভি ফ্রিজ কিছুর কমতি ছিল না।।
বছর ৪ আগে শান্ত জানতে পারে যে রবিন মাদক ব্যাবসায়ীর সাথে ভালো সম্পর্ক।

শান্ত তাকে নিষেধ করে, কিন্তু রবিন বলে, সাদিকুল ভাই ভালো মানুষ, আমার পিছনে দিনে ১০০ টাকা খরচ করে।
।।
শান্ত সহ, অনেকে বলল, কিন্তু রবিন বুঝল না, সাদিকুল আসতে আসতে রবিনকে টাকার লোভ দেখিয়ে হিরোইন টা কতো টা ভালো সেটা টেস্ট করাতো,

কিন্তু এভাবে আসতে আসতে, রবিন এর প্রতি আসক্ত হয়ে যায়।।
।।
কিন্তু এতো দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে!
রবিনের মা- বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর ভালো পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারলো না…।
।।
এই তো কয়েক মাস আগের কথা,
রাস্তাই হটাৎ দেখা রবিনের সাথে,
রবিন-বন্ধু ১০০ টা টাকা দিবি?
শান্ত জানে এই টাকা নিয়ে সে হিরোইন খাবে?
শান্ত- টাকা কি করবি?
রবিন- রাত থেকে কিছু খাই নি রে বন্ধু।
শান্ত- চল, হোটেলে আমি খাওয়াবো।
রবিন কিছুক্ষণ ভেবে বলল, না থাক, তুই টাকা দিয়ে দে, আমি খেয়ে নিবো।
শান্ত- না আমি টাকা দিবো না।
রবিন- তুই বন্ধু হয়েও আমাকে অপমান করলি? ঠিক আছে।।
রবিন চলে গেলো।।
।।
শান্তর কান্না চলে আসলো! রবিন হয়তো সত্যি সকালে কিছু খায় নি।
অনেক দিন আগের কথা যখন শান্ত পড়তো ক্লাশ ৭ এ আর রবিন সিক্সে ।।
শান্ত চা খুব পছন্দ করে কিন্তু সে দিন সকালে প্রাইভেট যাবার সময় শান্তর পকেটে কোন টাকা ছিল না,

রবিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে নাস্তা করায়, সে আজ না আরও অনেক বার শান্ত কে অনেক কিছু খাইয়েছে।।
আর আজ তার মতো এতো ভালো ছেলে মাদক এর জন্য তার জীবন টা শেষ হয়ে গেলো।
।।
কথা গুলো মনে পড়ছে আর সে মাদক ব্যাবসায়ী দের অভিশাপ দিচ্ছে, হয়তো এতক্ষনে রবিনের মা-বাবা জানতে পেরে গেছে।

এক মাত্র ছেলের এভাবে মৃত্যু কোন বাবা- মা মেনে নিবে?
।।
হটাৎ হেল্পার বলে ভাই চলে এসেছি।
শান্ত পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়!
অদ্ভুত ভাবে পরীক্ষার খাতায় একটা রচনা আসে যার নাম, অভিশপ্ত মাদক ও তার প্রতিকার। কারণ চাকুরীটা ছিল মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের।
।।
শান্ত প্রথমেই রচনা টা লিখা শুরু করে।
মাদক! যা অনেক নামে বিখ্যাত। মাদক সম্বন্ধে আমারা অনেক কথা বলি, অনেক ভাষণ দেয় তবে সেটা শুধু কাগজ কলমে।

বাস্তবে এর কোন ফল নাই, আর এর প্রতিকার আছে জড় পর্যন্ত উপড়ে ফেলার ক্ষমতা আছে, কিন্তু কেউ করবে না।।

কারণ মাদক ব্যাবসা করে রাতা রাতি অনেক টাকা পয়সার মালিক হওয়া যায়। কিন্তু এই মাদক যে কি ক্ষতি করছে

সেটা আমারা জেনেও না জানার ভান করছি, আরে আমার ছেলে তো ভালো আছে, আমার ভাই ভালো আছে,

আমার ছেলে তো আমেরিকা চলে গেছে, আমার ভাই তো দুবাইএ থাকে, আমি ব্যাবসা করলে ক্ষতি কি,

আর আমাদের দেশের আইন তো পকেটে, আমার টাকা আছে কে আমাকে ধরবে? পুলিশ? ওকে ১০ লাখ দিয়ে দিবো।।

পরের দুই চালানে ১০ লাখ উঠে যাবে। আচ্ছা পুলিশ না হয় ধরে নিয় গেলো, কোর্ট আছে না? আরে একটা ভালো উকিল ধরতে পারলে

সে দিন কে রাত করে দিবে, ১৫ লাখ টাকা খরচ করলে হিরোইন ও চালের আটা হয়ে যায় আর ইয়াবা হয়ে যায় জন্ম-নিয়ন্ত্রক বড়ি,

এতো কিছুর পর ও যদি এর প্রতিকার চান তবে একটু সাহস আর বুদ্ধি লাগবে।
।।
প্রতিটা থানায় তাদের কাছে যারা এই মাদক ব্যাবসা করে তাদের নামের লিস্ট আছে,

সেটা নিয়ে তার পর আপনার নিজের বিশ্বাস যোগ্য টিম দিয়ে তদন্ত করে, যারা অনেক বড় ব্যাবসাদার তাদের

প্রতি থানা তে ১০-১২ টা করে ক্রস ফায়ার করে দিন, আর বাকী গুলো কে ধরে ক্রস-ফায়ার এর ভয় দেখান, দেখবেন সব ভয়ে বলে দিবে।।
আর যদি এসব করতে ভয় হয়, তবে চুপ করে বসে থাকেন, যখন আপনার ভাই, বা ছেলে বা আমার মতো একটা ভালো বন্ধু

মাদক আসক্ত হয়ে রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকবে তখন বুঝবেন ছোট কালের বন্ধু এভাবে ধ্বংস হয়ে গেলে কি কষ্ট হয়?

আজ অন্যের ছেলে ধ্বংস হয়েছে ওর মা-বাবার অভিশাপে আপনার ছেলে-মেয়েও ধ্বংস হবে,

কারণ আপনার ক্ষমতা থাকা সত্তেও আপনি সেটার ব্যাবহার করেন নি।
।।
যেটা বললাম, খুব কঠিন কাজ না, শুধু একটু সাহস লাগবে।
।।
পরীক্ষা শেষ করে শান্ত বাড়ী ফিরে গেলো।
বিকেলে রবিনের জানাজা শেষ হলো।
।।
কয়েক দিন পরের কথা!
পিয়ন এসে ডাক দিলো।
পিয়ন- ভাই, মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর থেকে আপনার কাছে একটা চিঠি এসেছে,
শান্ত মনে মনে ভয় পেলো, লিখা আবার বেশি হয়ে যায় নি তো।
শান্ত- দেন।
।।
শান্ত চিঠি খুলে দেখলো, ২ দিনের মধ্যেই ঢাকায় ডাক পড়েছে।
।।
শান্ত কিছু বুঝলো না, তার ওপর লিখা আছে সে যেন বিষয় টা কাউকে না জানায়।
পরের দিন শান্ত ঢাকা গেলো।
অফিসে গিয়ে শান্ত পরিচয় দেওয়াতে ওনাকে এক অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো,
পিয়ন- আপনি এখানে অপেক্ষা করেন, স্যার মিটিং এ ব্যাস্ত আছে।
শান্ত- জি আচ্ছা।
।।
আধা ঘণ্টা পর এক বাবার বয়সি মানুষ আসলো।
শান্ত- আসসালামু আলায়কুম… স্যার আমি শান্ত।
অফিসার- শান্ত আহমেদ, খাতায় এসব কি লিখেছেন? আর কাকে লিখেছেন? আপনার তো এই চাকুরী হবে না।
শান্ত- স্যার আমাকে মাফ করবেন, তবে আমি সত্যি কথা লিখেছি। যে দিন এই পরীক্ষা ছিল

সে সকালে আমার ছোট কালের বন্ধু আমার পাশেই বাড়ী, সে দিন ও মারা যায়, সে মাদকে আসক্ত ছিল।

কিন্তু সে তাকে মাদক খাওয়ায় শিখিয়েছে সে এখন সমাজের একজন গণ্য মান্য ব্যাক্তি সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অফিসার- আমি আপনার অনুভূতি কে সম্মান করি, কিন্তু আপনি যেটা বলেছেন সেটা করা সম্ভব না, এতো সোজা না সব কিছু।
শান্ত- স্রোতের বিরুদ্ধে চলা কখনও সোজা হয় না, কিন্তু যারা সৎ কর্ম করে আল্লাহ্‌ তাদের সাহায্য করে।
।।
অফিসার সাহেব, অফিসের একজন কে ফোন করলো,
অফিসার- ওনারা এসেছে? ওদের আমার কাছে পাঠান।
।।
কিছুক্ষনের মধ্যেই কয়েক জন মধ্য বয়সি যুবক প্রবেশ করলো।
অফিসার- শান্ত এখানে বিভিন্ন ডিপারমেন্ট থেকে বাছাই করা কিছু অফিসার আছে। তুমি একটা টিম চেয়েছিলা না?

এটা আমার বিশ্বাস যোগ্য টিম। আজ থেকে এরা সবাই তোমার সাথে কাজ করবে, তবে সেটা খুব গোপনে।
শান্ত- স্যার আমি?
অফিসার- তুমি তো খাতায় লিখেছো, বেশি কষ্ট না শুধু মনে একটু সাহস আর বুদ্ধি লাগবে। এই ১ মাস তোমার ট্রেনিং হবে, তার পর কাজ শুরু।

সব খারাপের এক সময় শেষ আছে, আর সে শেষের শুরু টা হবে তোমার হাত দিয়ে। নীচে একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে,

নাম্বার ড- ৪০২২ ঐ গাড়ীতে গিয়ে বসো, আজ থেকেই তোমার ট্রেনিং শুরু, তোমার বুদ্ধি আমাদের চেষ্টা নিশ্চয় আমারা সফল হবো।

আজ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করবো।
শান্ত- আমিন।।

………………………………………………..সমাপ্ত…………………………………..

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত