পরিনিতি

পরিনিতি

হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে শুয়ে আছে রাশেদ। কয়টা বাঁজে দেখার জন্য বারান্দার দেয়ালে ঝুলানো
ঘড়িটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে ।কিন্তু পারছে না।মাথা টা ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকানোর শক্তি টাও
তার গায়ে এখন নেই। এক সময় অনেক কিছুই ছিলো গায়ে শক্তি, পকেট ভর্তি টাকা আর বুক ভরা অহংকার।
!
তার কাছে এখন প্রতি টা সেকেন্ডের মূল্য অনেক বেশি। তাই ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা টার দিকে তার তাকানোর
খুব দরকার ছিলো। কিন্তু পারছে না। তাই চোখ টা বন্ধ করে তার অতিত নিয়ে একটু ভাবার চেষ্টা করলো সে।
!
“বাবা-মার এক মাত্র ছেলে সে।অনেক আদরে বড়ো হয়েছে। এই অতিরিক্ত আদর টাই তাকে বানিয়ে ফেলে বাবা-মার অবাধ্য সন্তান।
ছোট বেলা থেকেই বাবা মার অবাধ্য হয়ে যায় সে। জড়িয়ে যায় ছোট ছোট অন্যায় কাজ গুলোর সাথে।
তার বাবার ছিলো ব্যাংক ভর্তি টাকা আর ছিলো অঢেল সম্পত্তি । এই সব কিছুই রাশেদের বাবা রাশেদের নামে করে দেয় ।

রাশেদের বাবা যখন বৃদ্ব হয়ে যায় তখন তার বাবার ব্যাবসার দেখাশুনা টা রাশেদ ই করে।”
!
মাথা টা একটু ধরে গেছে রাশেদের তাই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে চোখ টা একটু খুললো। খুব ঘুম
পাচ্ছে তার।কিন্তু সে ঘুমাতে চাচ্ছে না। সে এখন তার অতিত নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে।
চলে গেলো আবারো তার সেই অতিতের ভাবনায়-
!
“আদ্রিতা নামের একটি মেয়ে কে বিয়ে করে সে।
প্রেম করেই বিয়ে করে তাকে।
এই বিয়েতে তার বাবা মার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এতে রাশেদের কিছু যায় আসে নি।ছোট থেকেই সে তার বাবা
মার অবাধ্য। তার কাছে তার বাবা মার ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই। বিয়েতে ইচ্ছে ছিলো না তবু ও তার বাবা- মা আদ্রিতা
কে মেনে নেয়। সংসারে ঢুকেই আদ্রিতা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে সংসারের সব দ্বায়িত্ব নিজের করে নিতে।কিছুদিন যাওয়ার পর
টুকটাক বিষয় নিয়েই রাশেদের বাবা-মার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়া শুরু করে দেয় আদ্রিতা ।আর রাশেদ কে তার
বাবা মার বিরুদ্বে হাজারো অভিযোগ শুনায়। বউয়ের অভিযোগ শুনতে শুনতে একটা পর্যায় রাশেদ তার
বাবা মার প্রতি খুব বেশি বিরক্ত হয়ে যায়। বউয়ের কথা মতো বাবা মা কে বৃদ্বাশ্রমে পাঠাতেও তার মনে বাঁধে না।
!
রাশেদ তার বাবা মা কে পাঠিয়ে দেয় বৃদ্বাশ্রমে। আর তার পরিবারে বিস্তার করতে থাকে তার বউয়ের
আদিপত্য।বাবা-মার সাথে রাশেদ আর কেনো যোগাযোগই রাখে নি।
এদিকে বৃদ্বাশ্রমে তার বয়স্ক বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর একদিন রাশেদের কাছে খবর আসে তার বাবা
মারা গেছে। ঐদিন তার বউয়ের জন্মদিন থাকায় সে নানা কাজে ব্যাস্ত থাকে।
তাই তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ও সে তার মৃত বাবা কে দেখার জন্য বৃদ্বাশ্রমে যায় না।”
!
মাথার যন্ত্রনা টা আরো বেড়ে গেলো রাশেদের। তাই আর ভাবতে পারছে না সে। ব্রেন টিউমার হইছে তার।

তার বাবা-মা কে বৃদ্বাশ্রমে পাঠানোর ছয় মাস পরই তার এই ভয়ানক রোগ টি ধরা পড়ে।
গতো এক মাস ধরে সে হাসপাতালে।ডাক্তার বলেছে দ্রুত অপরেশন করলে সে বেঁচে যেতে পারে।এর জন্য
প্রয়োজন প্রচুর টাকা। রাশেদ জানে তার টাকার কোনো অভাব নাই।ব্যাংকে তার ও তার বাবার জমানো অনেক
টাকা আছে। সে তার বউ কে ঐখান থেকে টাকা এনে তার চিকিৎসা করাতে বলে।
কিন্তু ঐদিনের পর তার বউ আর হাসপাতালেই আসে নি,তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখে নি।

হাসপাতলের বেডে শুয়ে থেকে রাশেদ কিছুদিন তার বউ এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ভাবতে থাকে তার বউ
টাকা নিয়ে এসে তাকে চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হয়ে যাবে। স্বপ্ন দেখে নতুন করে বাঁচার।
কিন্তু তার বউ আর আসে না। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন টা এখন আর সে দেখে না। এখন আর তার বউয়ের টাকা নিয়ে আসার অপেক্ষায়
থাকে না সে।সে বুঝে গেছে আদ্রিতা মেয়েটি তাকে না তার বাবার আর তার টাকা কে ভালোবেসেই তাকে বিয়ে করেছে।
কিছুদিন কেবিন এ থাকার পর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের বারান্দায়।মশা আর এই নোংরার মাঝেই
সে গতো ১৪দিন ধরে পড়ে আছে আর তার অতিতের করাস অন্যায় আর ভুল গুলো নিয়ে ভাবছে।এগুলো ভেবে প্রায়ই

সে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে চায়।কিন্তু পারে না ।চিৎকার দেওয়ার মতো শক্তি যে এখন আর তার গায়ে নেই।সে
কাঁদতে চায় কিন্ত তার চোখ দিয়ে পানি আসে না।হয়তো খারাপ মানুষদের চোখে পানি থাকে না, নয়তো চোখ
দিয়ে পানি বেড় করে কাঁদার ক্ষমতা টা তাদের থাকে না।
!
এখন কেউ ই আর দেখতে আসে না তাকে।তার মা খবর পেলে হয়তো আসতো।সরকারী হাসপাতালের খাবার
খেয়েই সে বেঁচে আছে।হয়তো আর বেশিক্ষন বাঁচবে না। ডাক্তার বলেছে যেকোনো সময়ই মারা যেতে পারে সে।
!
মাথার যন্ত্রনা টা ক্রমশই বাড়ছে তার।কিন্তু সে এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাচ্ছে না।সে তার পাপের পায়শ্চিত্ব
করার জন্য একটা সুযোগ চাচ্ছে।একটা সুযোগ চাচ্ছে তার মা এর পা এ পড়ে ক্ষমা চাওয়ার ।সে মারা যেতে ভয়
পাচ্ছে,সে জানে ওপারে তার বাবা অপেক্ষা করছে তাকে টেনে নিয়ে ওপারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর
জন্য।
!
মাথাটা ঘুরছে রাশেদের, চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। তার বাবার ডাক শুনতে পাচ্ছে সে। সে অনুভব করছে তার
অস্তিত্ব তাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। নি:শ্বাস টা থেমে গেছে রাশেদের।
আর তার মৃত দেহ টা হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে নিথর ভাবে পড়ে আছে।।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত