সকাল থেকেই আমার বাসায় বিভিন্ন চ্যানেল ও বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা আসছে।আজ দুদিন হলো এভারেস্ট থেকে ফিরেছি।
তাই তারা আসছে আমার সাথে কথা বলার জন্য।আমার বাড়ির হল ঘরে সবই বসলাম।পিছন থেকে একজন সাংবাদিক ওঠে বলল স্যার
আপনার অভিযানটি কেমন ছিল? আরেকজন ওঠে বলে সার আপনারা কতজন ছিলেন।আরেকজন বলল সার কোনো সমস্যা হয়েছিল
কিনা আরও কত কি।আমি ওনাদের থামিয়ে বললাম আপনারা যদি এভাবে মাঝখান থেকে প্রশ্ন করেন তাহলে আপনাদের কাছেতো কিছুই
পরিষ্কার হবেনা।তারথেকে বরং আপনারা শান্ত হয়ে বসুন,আমি আপনাদের সব বলছি।ওনারা শান্ত হয়ে বসলেন।আমি আমার অভিযানের
কথা বল শুরু করলাম।
____________এভারেস্টের অভিযান___________
দীর্ঘ ১ মাস ট্রেনিং নিয়ে বাসায় ফিরলাম।সময়টা ছিল ৮ ই জুলাই।ট্রেনিং থেকে এসে নেপালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সাথে কিছু শীতের কাপড় নিলাম।এভারেস্ট সারা বছর বরফে ডাকা থাকে।তাই ওখানে সারা বছরিই প্রচুর ঠান্ডা।
আমার বাসায় তেমন কেউ নেই আমার কাজের ছেলেটা ছাড়া।অবশ্য কাজের ছেলে বললে ভুল হবে।
একবার কামালপুর রেলস্টোশনে রাতে হাটছিলাম।হঠাৎ দেখি একটা ছেলে রাস্তার পাশে শুয়ে আছে।
ওকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওর বাবা মা অনেক আগেই ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
ওকে দেখে খুব মায়া হচ্ছিল।তাই বাসায় নিয়ে আসি।তারপর থেকেই ও আমার কাছে।আমার বাড়িটা দেখাশুনা করে।
আমার মা বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।বাড়িতে আমি একাই থাকি।সবকিছু গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
আজ রাত ২ টায় আমার ফ্লাইট।রাত ১ টার মধ্যে আমি এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম।সবকিছু ঠিকঠাক করে বিমানে উঠলাম।
বিমান আকাশে উড়তে লাগলো।আমি বিমানের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতিটাকে দেখছি।কত সুন্দর প্রকৃতিটা।
সত্যিই ঐ কংক্রিটের শহর থেকে এটা বুঝা যায়না।ওখানে শুধু সারাধিন ধরে মানুষ,গাড়ি,মেশিন সব মিলিয়ে একটা বদ্ধ পরিবেশ।
এইযে ভাইয়া,হঠাৎ একটা মিষ্টি কণ্ঠ শুনে পাশে ফিরলাম।আমার সিটের পাশেই একটা মেয়ে ছিল।ওই আমাকে কথাটা বলেছে।
আমি বললাম জ্বি বলুন।মেয়েটি বলল আপনার নাম কি? আমি বললাম আপনার?
আমি ফারিয়া।তো কোথায় যাচ্ছেন?
জ্বি নেপালে যাচ্ছি।
ওহ।তো কেন যাচ্ছেন নেপালে?
একটা অভিযানে।
অভিযান? কিসের অভিযানে?
জ্বি এভারেস্টের অভিযানে।
কথাটা শুনে মেয়েটা কেমন অবাক হয়ে গেল।এত অবাক হয়েছে যে ওর মুখ দিয়ে কথাই বেড় হচ্ছিলনা।
যখন কিছুটা বিস্ময়ের ঘোর কাটলো তখন আমাকে
বলল….এভারেস্টের
কথা শুনে আমার সামনে থাকা আরেকজন বাঙালি ছেলে এসে আমাকে বলল ভাইয়া
আমি কি আপনার সাথে একটা সেলফি নিতে পারি? আমি আর না করতে
পারলামনা।আমার সাথে ঐ মেয়েটাও সেলফি নিল।হঠাৎ কেনজানি খুব
বাবার কথা মনে পড়ে গেল।বাবা এ এভারেস্টে গিয়েই মারা গেছে।আমি
যখন ছোট তখন একবার নেপালে এসেছিলাম।তখনি আমার বাবা আমাকে
এভারেস্টের কাছে এনে বলেছিল তুই যখন বড় হবি তখন দেখবি তুই এ
এভারেস্টা জয় করবি।সত্যিই বাবার কথাই সত্য হতে যাচ্ছে।
আমি যাচ্ছি ঐ এভারেস্ট জয় করতে। আনমনে বসে বসে কথাগুলো ভাবছি।বাইরের পরিবেশটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।
আমার কাছে আবার প্রকৃতি ভালো লাগে।উপর থেকে আকাশটা কত সুন্দর তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝা যায়না।
আমি নেপাল এসে পৌছালাম।এয়ার পোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় এক বাঙালি অফিসারের সাথে দেখা।
তিনি নেপাল এয়ার্পোর্টের একজন কাস্ঠম অফিসার।আমার এভারেস্টের যাওয়ার কথা শুনে ওনি বললেন সত্যিই
আমাদের বাঙালিরা এখন অনেক অসাধ্যকে সাধন করছে।তারা ভিবিন্ন যায়গায় গিয়েছে যেখানে আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ যায়নি।
সত্যিই তোমার মত ছেলেদের দেখে আমার গর্ববোধ হয়।শুভ কামনা রইলো।ওনার সাথে কথাবার্তা বলে বেড়িয়ে পড়লাম কাঠমুন্ঠুরুর উদ্দেশ্যে।
আমাদের বলে দেওয়া হয়েছিল কাঠমুন্ঠর একটা হোটেলে যেতে যেখানে দলের বাকিরাও থাকবে।আমি সময়মতো হোটেলে পৌছে গেলাম।
ওখানে সবাইকে দদেখতে পেলাম।সবচেয়ে ভালো কথা হলো আমি আরেকজন বাঙালিকে পেয়েছি যিনি আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিবেন।
ওনার নাম রাফি।একজন আর্মি অফিসার।ওনি আরও দুবার এভারেস্টে এসেছেন।তাই ওনার অভিজ্ঞতার জন্যই ওনাকে দল নেতা করা হয়েছে।
এ ধরনের অভিযানে (মৃত্যুর সাথে লরাই করা অভিযান) টিম লিডারকে সতর্কভাবে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হয়।
কারণ এভারেস্টের প্রতিটি পদে পদে মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
নেপালে পৌছার পরদিন সকাল ১০ টা।আমরা সবাই যে যার জিনিসপত্র গুছিয়ে ররওনা দিলাম এভারেস্টের দিকে।
১২ টার মধ্যেই আমরা এভারেস্টের নিচে পৌছে যাই।আমি এভারেস্টের সামনে দাড়িয়ে উপরের দিকে তাকালাম।
উপরে, উপরে আরও উপরে,একটা সময় মমনে হয় আমার ঘাড় ভেঙে যাবে।
তখনি লিডার এসে বলল পারবেতো ৮ কিলোমিটার উচু এ মানুষ খেকো এভারেস্ট জয় করতে? “মানুষ খেকো”! মানে?
লিডার বলল এটাকেতো এ নামেই ডাকা হয়।কত মানুষের প্রাণ নিয়েছে এ মানুষ খেকো এভারেস্ট।
সত্যিইতো! আমার বাবাও এ এভারেস্টে এসে আর ফিরেনি।
লিডার আমাদের আদেশ দিলেন এভারেস্টে উঠার।লিডারসহ আমরা ১৬ জন মিলে এক পা এক পা করে উঠা শুরু করলাম এভারেস্টের উপরে।
আমাদের মোট ৯টা ক্যাম্প পেরুতে হবে এভারেস্টের চূড়োয় উঠতে হলে।আমরা আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠছি।এভাবে প্রায় ২ ঘন্টা চলার পর আমরা পৌছালাম ১ নং ক্যাম্পে।
১ নং ক্যাম্প
এখন প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে।আকাশের সূর্যটা পূর্ব দিকে হেলে পড়েছে।এখান থেকে সূর্যটাকে একটা সোনালি থালার মত লাগছে।
আমরা সবাই তাবু ঘাটলাম।রাতে খাবার খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোরে আমরা সবাই আবার যাত্রা শরু করলাম।যাত্রা শুরুর পর আমি লিডারকে বললাম আচ্ছা আপনার বাসায় আর কে কে আছে?
ওনি বললেন আমার মা,আমার স্ত্রী আর ছোট একটা ছেলে।সবেমাত্র কথা বলতে শুরু করেছে।
লিডার আমাকে বললেন আচ্ছা এত কিছু থাকতে এভারেস্টে এলে কেন?
আমি বললাম বাবার ইচ্ছে পূরনের জন্য।
আমি খেয়াল করে দেখলাম লিডার একটু অবাক হলেন কথা শুনে।তাই আমি ওনাকে সব খুলে বললাম।
আসলে আমার বাবার ইচ্ছে ছিল এভারেস্ট জয় করার।তাই একদিন বেড়িয়ে পড়লেন তার ইচ্ছা পূরণের জন্য।
সেইযে বাবা বেড়িয়েছে আর ফিরেনি।পরে একদিন বাবার লাশ আনা হলো আমাদের বাড়ীতে।
বাবার টিমের একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম বাবা ৯ নং ক্যাম্পে পৌছে তুষারের নিচে পরে মারা যান।
এর কয়েকদিন পড় আমার মাও মারা যান।তারপর থেকে আমি শপথ নিয়েছি এভারেস্ট জয় করার।
তাই আজ এসেছি বাবার হয়ে এভারেস্ট জয় করতে।যেভাবেই হোক আমি বাবার ইচ্ছে পূরণ করবোই।
এভাবেই আমাদের মাঝে কথা চলতে থাকে।একটা সময় আমরা ২ নং ক্যাম্পে পৌছে যাই।
২ নং ক্যাম্প
এখন সূর্য পুরো পুরি ডুবে গেছে।তাই টর্চের আলো দিয়ে দিয়ে আমরা তাবু টানলাম।আমি আর লিডার একসাথে বসে কথা বলছি।
আমি বললাম আচ্ছা আপনি কেন এভারেস্টে এলেন? ওনি বলল এডভেন্জ্ঞারের নেশায়।
ছোট বেলা থেকেই আমি এডভেন্জ্ঞার প্রিয়।
যখন থেকে বড় হয়েছি তখন থেকেই এভারেস্ট আমাকে আকর্ষণ করেছে।আর এরিই জন্য আমি এখানে এসেছি।
লিডারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তাবুতে গেলাম ঘুমোতে………
পরদিন সকাল ১০ টা।আমরা যে যার তাবু আর জিনিসপত্র নিয়ে লিডারের নির্দেশে আবার যাত্রা শুরু করলাম।
যাত্রা শুরুর ৩০ মিনিট পর লিডার আমাকে বললেন সত্যিই তোমার বাবা খুব কাছে গিয়ে হেরে গেছেন।
আমি ওনার সম্পর্কে একটা বইয়ে পড়েছিলাম।কত করুণ মৃত্যু ছিল ওনার।
আমি বললাম জানিনা বাবার সাথে এমন কেন হলো? তবে আমার সাথে যা কিছুই হোক আমি বাবার ইচ্ছে পূরণ করবোই।
শাবাস তুমিই পারবে।এ মানুষখেকো দৈত্যটা তোমার কিছু করতে পারবেনা তোমার অদম্য ইচ্ছা শক্তির জন্য।
আচ্ছা লিডার আপনিতো বলেছিলেন আপনার একটা ছেলে আছে,ও আপনাকে কি বলে ডাকে?
সেটা না হয় আরেকদিন বলবো।
এভাবেই আমাদের মাঝে কথা হচ্ছিল।৪ নং ক্যাম্পে পৌছাতে হলে আর ৫০০ মিটার ইপরে উঠতে হবে।
আমরা খুব মন দিয়ে লিডারের নির্দেশানুয়ায়ি উপরের দিকে উঠছিলাম।আবহাওয়া ভালোই ছিল।
কিন্তু হঠাৎ আমার কাছে চারপাশটা একরকম লাগছে।আমি বুঝতে পারছিলামনা আমি দাড়িয়ে আছি নাকি হাটছি।
সামনে পিছনে উপরে নিচে সবদিকেই শুধু সাদা তুষার।বুঝতে পারলাম আমি তুষার ঝরে পড়েছি।
আর এর ফলেই আমি সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেছি।কোনো রাস্তা না উপায় না পেয়ে আমি ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম।
যখন তুষার ঝড় থামলো তখন সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল।আমি সবকিছু পরিষ্কার দেখছি।
চারদিকে তাকালাম কোথাও আমার দলের কাওকে দেখতে পেলামনা।আমার কম্পাসটা ব্যাগ থেকে বের করে
দিকটা ঠিক করে আবার উপরের দিকে চলা শুরু করলাম।একটা সময় আমি পৌছে গেলাম ৪ নং ক্যাম্পে।
৪নং ক্যাম্প
লিডার আমাকে দেখে কেদে ফেললেন,বললেন আমিতো মনে করেছিলাম তুমি আর ফিরেই আসবেনা।
জানো তোমার কথা ভেবে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল।
আমি বললাম এখনতো এসেগেছি।
তুমি ওখান থেকে আসলে কিভাবে?
ওটা অন্যদিন বলবো।তাছাড়া আপনিতো বলেছিলেন এ মানুষখেকো দৈত্যটা আমার কিছু করতে পারবেনা।
ঐ দিন রাত ১:০০।লিডারের নিদর্েশে আমরা ৪ নং ক্যাম্প ছেড়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম।
আমরা উপরে উঠার মাঝ পথে হঠাৎ এভারেস্টা একটু মৃদু দুলে ইঠলো।তারপরই শুরু হলো ঝাকুনি।
লিডার বললেন ভূমিকম্প হচ্ছে,যসবাই যার যার অবস্থানে থেকে রশি শক্ত করে ধরে রাখ।কাপোনিটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো।
আর আমরা ঝুলে আছি মিটি থেকে ৪ কি.মি. উপরে।হঠাৎ ২ জন ভূমিকম্পের কাপোনিতে রশি থেকে হাত ফসকে নিচে পড়ে গেল।
তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। এত কাছ থেকে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখাটা যে কতটা কষ্টের তা আমি ঐ দিন বুঝেছিলাম।
হঠাৎ আমার হাতটাও ফসকে গেল।পরে যাবার বদলে দেখছি শিতল কিছু একটা আমাকে ধরে রেখেছে।
উপরে তাকিয়ে দেখি লিডার আমাকে ধরে রেখেছে।লিডার আমাকে আস্তে আস্তে উঠালো।তারপর আবার যাত্রা শুরু করলাম।
একটা সময় আমরা ৫ নং ক্যাম্পে পৌছে গেলাম।
৫ নং ক্যাম্প
আমি লিডারকে জরিয়ে ধরে কাদলাম।কারণ তখন যদি লিডার আমাকে না ধরতেন তাহলে আমি ৪ কি.মি. নিচে পড়ে যেতাম।
তখন হয়তো আমার হাড় গুলোও খুজে পাওয়া যেতনা।
পরদিন সকালে।লিডার বললেন যে যার অক্রিজেন মাস্ক পড়ে নিতে।কারণ এখন থেকে যত উপরে উঠবো ততই অক্রিজেন কমে আসবে।
আমরা অক্রিজেন মাস্ক পরে আবার যাত্রা শুরু করলাম।যাত্রা পথে আমাদের কোনো সমস্যা হলনা।তাই নিরাপদেই ৬ নং ক্যাম্পে পৌছে গেলাম।
ক্যাম্প নং ৬
৬ নং ক্যাম্পে আমরা যখন পৌছাই তখন সবাই ক্লান্ত ছিলাম।তাই সবাই তাবু টেনে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন হঠাৎ একটা আর্তনাদ শুনলাম।আমাকে এখান থেকে বের কর,আমাকে বের কর।
গিয়ে দেখি আমাদের দলের একটা ছেলে ছবিতুলতে গিয়ে একটা বরফের ফাটলে আটকে গিয়েছে।
ও এত গভিরে আটকে গিয়েছে যে ওকে বের করার আর কোনো উপায় নেই।
তাছাড়া আমরা আছি মাটি থেকে ৫ কি.মি. উপরে।এত উচ্চতায় আমাদের কাছে তেমন কোনো সরন্জাম নেই।
লিডার নির্দেশ দিলেন যাত্রা শুরু করার জন্য।আমি ওকে ছেড়ে যেতে পারবনা।
দেখ আমাদের আর কিছু করার নেই।আমাদের ওকে রেখেই যেতে হবে।
তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ছেলেটার জন্য।সবাইকে কেমন হাসিখুশি রাখতো ছেলেটা।
এরপর এ মানুষখেকো এভারেস্টের প্রতি আমার ত্রোদ জন্মালো।একে একে আমার কাছের মানুষগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে এ এভারেস্ট।
এরপর আমরা নিরাপদে ৭ ও ৮ নং ক্যাম্পে পৌছে গেলাম।যখন আমরা ৮ নং ক্যাম্প ছেড়ে ৯ নং ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম
তখনি এভারেস্ট বিকট আওয়াজ করে দূলে উঠলো।তারপর শুরু হল তুষার ধ্বস।ঐ তুষার ধ্বনের সময় আরও ৩ জনকে হারাতে হয়।
তাই ঐদিন আর উপরে না উঠে ৮ নং ক্যাম্পেই রয়ে গেলাম।পরদিন আমাদের দলের একটা ছেলের প্রচন্ড ডায়রিয়া হয়
যার কারণে ও একেবারে দূর্বল হয়ে গিয়েছিল।এতটাই দূর্বল যে হাটার শক্তিটাও পাচ্ছিলোনা।
তাই ওকে রেখেই আমাদের চলে যেতে হলো।যাওয়ার সময় আমি ওকে জরিয়ে ধরে বলেছিলাম ভাই পারলে আমাদের মাফ করে দিছ।
একটা সময় আমরা ৯ নং ক্যাম্পে পৌছাই।ওখানে পৌছেই আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল।বাবা এখানেই মারা গিয়েছিল।
লিডার আমাদের বললেন এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা।তাই আবার যাত্রা শুরু করলাম। একটা সময় এভারেস্টের চীড়োয় পৌছে গেলাম।
লিডারের নির্দেশে আমরা যার যার দেশের পতাকা গেথে ছবি তুলে ৫ নং ক্যাম্পের ইদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
যখন ৮ নং ক্যাম্পে আসলাম তখন দেখলাম ঐ ছেলেটা আগের মতই রয়েছে।বেচে আছে মনে করে আমি দৌড়ে কাছে গেলাম।
গিয়ে দেখি একেবারে জমে আছে।আমরা আবার নামা শুরু করি।একটা সময় ৫ নং ক্যামাপ দেখতে পেলাম।
ওখানে আমাদের নেওয়ার জন্য হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে।তখনো ২০০ মিটার বাকি।হঠাৎ এভারেস্ট মৃদু নড়ে তুষার ধ্বস শুরু হলো।
ঐ তুষার ধ্বসে আমিসহ দলের সবাই নিচে ড়ে যাই।আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি বরফের নিচে।
দলের বাকিরা আমাকে উদ্দার করে হেলিকপ্টারে নিলো।আমার হাত পা কেটে ওখান থেকে রক্ত পড়ছে।
আমি লিডারকে খুচ্ছিলাম কিন্তু কোথাও দেখতে পেলামনা।পরে জানতে পারলাম ওনি বরফের নিচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন।
তখন আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল।লিডাের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারলামনা।
আমি লিডারের কফিনকে ধরে বললাম লিডার আপনিতো বললেননা আপনার ছেলে আপনাকে কি বলে ডাকে।
তারপর আমি অনেক কেদেছি।এ দৈত্যটা আমার সব কাছের মানুষগুলোকে কেড়ে নিয়েছ
তারপর আমি এভারেস্টের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম বাবা আমি পেরেছি,আমি এ মানুষ খেকো এভারেস্ট জয় করতে পেরেছি……….
(সমাপ্ত )