ঘোড়ার ডিমের কথা বহু শুনেছি, কিন্তু চোখে দেখিনি কখনো। দেখার শখ ছিল তাই অনেক আগে থেকেই।
কখনো কখনো ঘোড়ার ডিম দেখার জন্য ঘোড়ার পেছনে পেছনে ঘুরেও কম সময় কাটেনি আমার।
বহু অপেক্ষার পরও ঘোড়াটি নিরাশ করেই ফেরত পাঠিয়েছে। তখন নিজেকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে,
হাঁস-মুরগিরা তো আর প্রতিদিন ডিম পাড়ে না। তাই হয়তো আজকে ঘোড়ার ডিম পাড়ার সময় হয়নি।
যেদিন হবে সেদিন ঠিকই দেখার সৌভাগ্য আমার হবে। এভাবে দিনের পর দিন কাটতে থাকল কিন্তু সৌভাগ্য হলো না।
ডিম দেখতে না পেলেও নিরাশ হওয়ার মানুষ কিন্তু আমি নই। বন্ধুরা আমার এই কান্ড দেখে কত না ঠাট্টা-মশকরা করেছে।
কেউ কেউ বলেছে, বন্ধু, ঘোড়ার ডিম খেয়ে তোমাকে বিশ্ব রেকর্ড গড়তেই হবে।
হাজার হলেও বন্ধু। ওদের সঙ্গে এই বিষয়ে খুব একটা কথা বলতে যেতাম না।
আমার ইচ্ছা, আমার মধ্যেই থাক। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলো। বন্ধুরা রীতিমতো তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
যখন যে পারছে, সেভাবে আমাকে খেপানোর চেষ্টা করছে।
পাগল। এত সহজে আমি রাগ করি। রাগ করলে আরো নাড়বে; তাই রাগের চ্যাপ্টারটা বহু আগেই জীবনের বই থেকে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।
বন্ধুরা শুধু মজাই করত, কখনো রাগাতে পারত না। আর রাগাতে পারত না বলেই তাদের মজা করার পরিমাণটা ছিল অনেক বেশি।
এরই ফাঁকে হঠাৎ এক দিন দূরে একটি মাইকিং শুনতে পেলাম। যেখানে বলছে, সবার জন্য একটি আশ্চর্যের খবর আছে।
অমক জায়গায় ঘোড়াতে মস্ত বড় বড় ডিম পেড়েছে। মাইকে যে জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয়।
খবরটা শোনামাত্রই আমি ঘর থেকে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। দেখি, বহু মানুষ সাইকেল ও মোটরসাইকেলে করে ছুটছে।
সবার উদ্দেশ্য একঝলক ডিমটিকে দেখা। হাজার হলেও ঘোড়ার ডিম।
আমি অবশ্য যাওয়ার আগেই কল্পনাতে ডিমটিকে দেখার চেষ্টা করলাম। হাঁস-মুরগির ডিম দেখতে দেখতে চোখে বড় ডিম কল্পনা করতে কষ্ট হচ্ছিল।
তারপরও অনেক কষ্টে ডিমের সাইজটা একটু বড় করেই দেখলাম এবং মনে মনে ঠিক করলাম,
ডিম দেখার পর বন্ধুদের মজাটা এবার দেখিয়েই ছাড়ব। এত দিন যেসব বন্ধু আমাকে নিয়ে মজা করেছে তাদের মুখ এবার চিরতরে বন্ধ করব।
ঘাঁস-মুরগির ডিমের চেয়ে অবশ্যই ঘোড়ার ডিমটি অনেক বড়। কারণ কোথায় হাঁস-মুরগির সাইজ আর কোথায় ঘোড়া!
এটা তো খুব সহজেই অনুমান করা যায়। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎই বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তে দেখলাম।
রিমঝিম বৃষ্টি। মেঘটা কদিন ধরে আকাশে উঁকি মারছিল যার দেখা মিলল আজ। তারপরও এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কত মানুষ যে ছুটছে।
এত ছোটাছুটি করার পরও কাউকে ক্লান্ত মনে হচ্ছে না।
যেসব লোক রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, তাদের কারো কারো মুখে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, ঘোড়াটি নাকি গাছের নিচে ডিম পেড়েছে।
মানুষের আনাগোনা এতই বেশি যে, কারো মুখ থেকে সেভাবে পরিষ্কার কিছু শোনাও যাচ্ছে না এবং বোঝাও যাচ্ছে না।
যা হোক, সবার একটাই ইচ্ছা, ঘোড়ার ডিম আজকে দেখে নিজের জীবন সার্থক করবে।
অন্যদের মতো এই রিমঝিম বৃষ্টির মধ্যে আমিও যাত্রা শুরু করলাম। এরই মধ্যে একজনের কাছ থেকে শোনা গেল,
ঘোড়াটি নাকি বটগাছের নিচে ডিম পেড়ে পানিতে ডুুব দিয়েছে। কিন্তু ডুুব দেওয়া ঘোড়াটিকে আর কেউ উঠতে দেখেনি।
তাহলে ঘোড়াটি গেল কোথায়? কেউ বলছে, ঘোড়াটিকে তো ডুুব দিতেও কেউ দেখেনি। একেকজন একেক রকমের কথা বলাবলি করছে।
অনেক মানুষ থাকলে যা হয় আর কি! যে যার মতো করে কথাটা বানিয়ে, সাজিয়ে বলতে পারে।
আমি কারো কথায় কান নিয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এগিয়ে যেতে থাকলাম।
বহুদিনের স্বপ্ন আজ সত্যি হবে। মানুষ যেহেতু অনেক বেশি, তাই ডিম খাওয়ার স্বাদ পূরণ হবে না কিন্তু দেখারটা তো হবে।
নিশ্চয় অনেক বড় লাইন হয়েছে। সিরিয়ালে যেতেও কম সময় লাগবে না। ঘটনাটি বন্ধুদের না বলে আমি একা একাই যেতে থাকলাম।
ঠিক করলাম, দেখার পরে এটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বোঝাপড়া করব।
কিছুদূর যেতে না যেতেই দেখছি, পাড়ার অনেক লোকজন ফিরে আসছে। সবার চেহারা মলিন।
তাদের দেখে মনে হচ্ছে যে কেউই ঘোড়ার ডিম দেখতে পায়নি। কেন দেখতে পায়নি তা জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না।
ভাবলাম, সিরিয়াল হয়তো অনেক বেশি, তাই দেখতে পায়নি। আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম
এবং আসল কথা শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।
একেক জন একেক রকমের কথা বলছে। তাদের কথা শুনে অবশেষে বুঝতে পারলাম যে,
কেউ গুজব রটিয়ে সবার সঙ্গে মজা করেছে। আমি কিছুটা আঁচ করতে পারলাম, এটা কাদের কাজ হতে পারে।
কিন্তু ওদের কাউকে আশপাশে দেখতে পেলাম না। তবে পরদিন সকালে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতেই তাদেরকে মুখ লুকিয়ে হাসতে দেখেছি।
সারমর্ম : গুজবে কান দিয়ে কোনো ধরনের কাজ করা আদৌ ঠিক নয়।