বাবা যখন ডাকু হয়

বাবা যখন ডাকু হয়

অারফিন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শহরের ভালো একটা কোম্পানিতে জব করে।

অারফিন এর বাবা নাই অারফিন ১৭ বছর বয়সে বাবাকে হারায়।

অারফিনরা মোট ২ ভাই ১ বোন, মা মরিয়ম ৩ সন্তানকে লালনপালন করছে অনেক কষ্টে।
.
অারফিন নিজের পছন্দ করা মেয়েকে তার মা বিয়ে করিয়েছে তাকে।

প্রথম প্রথম অারফিন এর বউ শাশুড়ির কথা শুনতো পরে কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে।প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি করে মেঘলা।

একদিন অারফিন এর ছোট ভাই সাজিদ এর সাথে মেঘলার তর্কাতর্কি হয়।মেঘলা দেরি না করে ফোন দিলো অারফিন এর কাছে-
__হ্যালো অারফিন,
__হ্যাঁ বলো-
__আজকে সকালে কি হইছে জানো?
__কি?
>মেঘলা ন্যাকামি করে কাঁদতে কাঁদতে যত মিথ্যা কথা আছে সব অারফিনকে বলে-
__ আজ তোমার ছোটভাই সাজিদ আমার সাথে ঝগড়া করছে। আমাকে গালি দিয়েছে, তোমাকে গালি দিয়েছে।

আমরা নাকি এ ঘরের কেউ না। তোমার মা বসে বসে দেখতেছে কিছু বলে নাই।

আমি আর তাদের সাথে একসাথে খাবো না, হয় আমাকে আলাদা করে দিতে হবে, না হয় আমি বাপের বাড়িত চলে যাবো।
__আচ্ছা মেঘলা আমি তোমার কাছে পরে ফোন করতেছি।
.
অারফিন কিউট বউয়ের সব কথা বিশ্বাস করে ফোন দিলো তার মায়ের কাছে, ফোন করে অারফিন মা’কে বলে-
.
__হ্যালো মা-
__ অারফিন কেমন আছো বাজান?
__ভালো থাকতে দিলা নাকি তোমরা।
__কেন রে বাজান কি হয়েছে?
__তোমার আদরের ছোট ছেলে সাজিদ মেঘলার সাথে ঝগড়া করছে কেন? গালি দিছে কেন তাকে?
__গালি কোথায় দিছে শুধু একটু তর্কাতর্কি হয়েছে।
__ হইছে আর মিথ্যে বলতে হবে না। আমি আর তোমাদের সাথে থাকবো না আমি মেঘলাকে নিয়ে শহরে থাকবো।
>এ বলে ফোনটা রেখে দেয় অরফিন।
.
অারফিন কিছুদিন পরে বাড়িত এসে মেঘলাকে সাথে করে শহরে নিয়ে যায়।সেখানে শুরু হয় তাদের সুখের সংসার।

এর চেয়ে খুশির সংবাদ হলো মেঘলা মা হতে যাচ্ছে।দশমাস দশদিন পরে দুনিয়াতে অাসে মেঘলার সন্তান।

অারফিন মেঘলা তাদের ছেলের নাম রাখে রাহাদ।সে ছোট রাহাদ ধীরেধীরে বড় হতে লাগে।
.
অারফিন প্রায় ৬ বছর বাড়িত যায় না।এমনে মাঝে মাঝে ফোন করে মায়ের কাছে তবে আগের মতো সে ভালোবাসার সম্পর্ক নাই।

মা মরিয়ম অনেকবার বলছে তার নাতি রাহাদ কে নিয়ে গ্রামে আসতে কিন্তু মেঘলা যেতে রাজি হয় না।

সে ছোট ছেলে রাহাদ এর ৬ বছর হয়ে গেলো।

অারফিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছে আর সে গ্রামে যাবে না তাই রাহাদকে শহরের ভালো স্কুলে ভর্তি করাবে।

মেঘলা, অারফিন তার অাদরের রাহদকে নিয়ে গেলো স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।স্কুলের শিক্ষক রাহাদকে বলে-
.
__তোমার নাম কি বাবু?
__রাহাদ-
__তোমার বাবার নাম কি?
__আমার বাবার নাম ডাকু।
__মানে?
__জ্বি স্যার আমার বাবার নাম ডাকু আমার আম্মু বলছে।
>অারফিন ছেলের কথা শুনে বসা অবস্থা দাঁড়ায় যায়, মেঘলা তার ছেলের কথা শুনে অাশ্চার্য হয়ে গেলো।

স্যার আবার ও রাহাদ কে জিজ্ঞেস করে-
__বাবা ডাকু কিভাবে হয়?
>এবার রাহাদ কাঁদতে কাঁদতে বলে-
__জানেন স্যার, আমার আম্মু আমি রাতে ঘুমানোর জন্য গান গায়।আমি আমার আম্মুকে যদি বলি-আম্মু আমার দাদা, দাদী, চাচ্চুদের গল্প বলো।

আমার আম্মু এক কথায় বলে-ঐ ডাকু পরিবারের কথা কখনো মুখে নিবা না।

বিশ্বাস করেন স্যার এ আমার বাবা ডাকু পাশে শুয়ে থেকে রোবট এর মতো শুনে থাকে আমার মাকে কিছুই বলে না।

আমার দাদা দাদীরা যদি ডাকু হতে পারে তাহলে আমার বাবা ও ডাকু।স্যার অাপনি এবার বলেন আমি কি কোনো অপরাধ করেছি।
>স্যার রাহাদকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।রাহাদ স্যার কে বলে-
__স্যার আপনি কেন কান্না করেন। যারা কান্না করার কথা তারা তো কান্না করে না।
__না বাবু তোমার কথা শুনে আমি আমার মা, বাবার কথা মনে পড়ে গেছে।

সে ছোট কালে মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, বাবাও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ২০ বছর বয়সে।আমার খালামণির আমাকে লালনপালন করছে।

এ পৃথিবীতে এখন আমার মা, বাবা হলে আমার খালামণি আছে।
__স্যার আপনি আপনার খালামণিকে মা ডাকেন আর আমার বাবা ডাকু মা থাকার পরেও মা ডাকে না।
.
অারফিন তার ছেলে রাহাদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন কান্না মুখে অারফিন তার ছেলে রাহাদকে বলে-
__রাহাদ তুমি অামার এমন এক পুত্র সন্তান তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো।রাহাদ বাবাকে অার লজ্জা দিও না।

রাহাদ চলো আজকে তোমার গল্পের রাজ্যর মানুষ গুলোকে সরাসরি দেখবা।
__বাবা আপনি কি গ্রামে যাবেন?
__হ্যাঁ রাহাদ এখনই যাবো তোমার দাদুর কাছে।
.
>মেঘলা এগুলো দেখে না পারছে কাঁদতে না পারছে লজ্জা কিছু বলতে।ছোট ছেলে রাহাদ মা, বাবা কিভাবে শিক্ষা দিলো।মেঘলা স্বামীর হাত ধরে বলে-
__তুমি আমাকে মাফ করে দাও।অাসলে আমার জন্য আজ এসব হয়েছে, শুনতে হয়েছে তোমাকে ছেলের কাছে ডাকু বাবা।

সংসার করতে গেলে অনেক কিছু হয় আসলে আমি না বুঝে এগুলো করছি।তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
__আমি মাফ করার কেউ না, আজ ৬ বছর যাদের কষ্ট দিয়েছি তাদের কাছে মাফ চাইবো।
>এ বলে বাসের টিকিট নিয়ে রাতে রওনা দিলো গ্রামে।
.
ফজরের নামাজ অাদায় করে মরিয়ম বিবি বসে আছে।

মরিয়ম বিবির ছোট মেয়ে নুসরাত সকালে নাস্তা বানিয়েছে ছোট ছেলে সাজিদ নাস্তা করে বাজারে গেলো দোকান খুলতে।

মরিয়ম বিবি বসে বসে চা খাইতেছে এদিকে গাছের উপরে সুখ পাখির কিচিমিচি শুরু করলো।মরিয়ম বিবি বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বলে-
_আরে সুখ পাখি আর বুঝি বাড়ি দেখলি না।এ অসুখীর মরিয়ম এর বাড়িতে ডাক দিলেও কখনো সুখ আর ফিরে আসবে না।

মায়ের কথাগুলো নুসরাত শুনতেছে আর দূর থেকে দেখতেছে ঠিকে সুখ পাখি ঘরে আসতেছে।
নুসরাত একটা চিৎকার দিয়ে বলে-
__মা দেখো তোমার সুখ পাখি ঘরে ফিরে আসতেছে, বড়ভাইয়া ভাবী তোমার নাতি রাহাদ আসতেছে।
.
>এ বলে নুসরাত দৌড় দিয়ে গেলো বড়ভাই অারফিন এর কাছে।অারফিন রাহাদকে বলে-
__রাহাদ এ মেয়েটি হলো আমার অাদরের ছোটবোন। আমার এমন আদরের ছোটবোন অাজ ৬ বছর পরে দেখা করতে আসছি এ হলো তোমার ফুফু।
>নুসরাত বড়ভাইর কথা শুনে হাউমাউ করে কান্না শুরে করে দেয়। ভাতীজাকে কোলে নিয়ে মা মরিয়ম এর কাছে আসতেছে।

মা মরিয়ম নাতি রাহাদকে দেখে ৬ বছরের কষ্টের কথা এক নিমিষে ভুলে গেছে।অারফিন মায়ের কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।

__অারফিন বাজান আর কান্না করিস না আমার আদরের সন্তানদের কান্না যে অামার সহ্য হয় না।
__মা ও মা তুমি আমারে মাফ করে দাও আজ আমার কর্মের ফল আমি পেয়েছি।
__বাজান আমার তোর উপরে কোনো দুঃখ নাই তুই ফিরে আইছোত এইতে আমি খুশি।
>>মেঘলা শাশুড়ি আম্মা পা ধরে ক্ষমা চাইতে গেলে। মা মরিয়ম বলে-
__না বউমা পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে না তুমি এ ঘরের বউ। এ ঘরের দেখাশুনা করার দায়িত্ব তোমার।
__আম্মা এ হচ্ছে আপনার নাতি রাহাদ।
>>রাহাদকে জড়িয়ে ধরে দাদীমা কান্না শুরু করে দিলেন।যে রাহাদ এর জন্য আজ এ পরিবারের সুখশান্তি ফিরে আসছে।রাহাদ দাদীমার কান্না করতে দেখে বলে-
__দাদু আর কাঁদতে হবে না আমি এখন থেকে এখানে থাকবো।
__হ্যাঁ দাদুভাই অব্যশই থাকবা, এটা তোমার ঘর।
__দাদু অনেক ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও।
__আসো দাদুভাই আজকে তোমাকে দাদীমা নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।
.
অারফিন আর রাহাদ কে ব্যস্ত শহরে নিয়ে যায় নাই।যে শহরে গাড়ির শব্দ আর এর্লাম এ রাহাদ এর ঘুম ভাঙ্গতো।

আর সে রাহাদ এর এখন পাখির কিচিমিচি ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গে।গ্রামের স্কুলে রাহাদকে ভর্তি করিয়েছে অারফিন ।

রাহাদ যখন সকালে স্কুলে যায় চাচ্চু সাজিদ এর হাত ধরে স্কুলে যায়।

দুপুরবেলা ভাতীজার স্কুল ছুটি হওয়া পর্যন্ত দোকানে বসে থাকে কখন তার অাদরের বড়ভাইর সন্তান রাহাদ আসবে।

আজ সে রাহাদ এর জন্য সাজিদ এর পরিবার অালোকিত হয়েছে।

মা মরিয়ম রাহাদকে কোলে করে সারা গ্রাম রাহাদকে দেখায়, আর মানুষেরা যখন জিজ্ঞেস করে এ ছেলেটা কে?

মা মরিয়ম এক কথায় উওর দেয়-
→ এ হলো আমার রাজা-বাদশা আমার বড়ছেলে অারফিন এর ছেলে রাহাদ, আমার নাতী।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত