হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ) নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এমন একজনের কথা যিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে গেছেন !!
.
গভীর রাতে যিনি পিঠে আটার বস্তা চাপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অভাবী প্রজার ঘরে ছুটে যাচ্ছেন,
সেই মানুষটাই মদ্যপানের অপরাধে নিজ ছেলেকে দোররা মারতে মারতে মেরে ফেলতেও এতোটুকু টললেন না !!
.
যেই মানুষটার ভয়ে সারাবিশ্বের কাফির শাসক থরথর করে কাঁপছে, সেই মানুষটাই রবের সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে চেহারায় দাগ ফেলে দিচ্ছেন !!
.
একটা মাত্র শতছিন্ন জামা কাঁচতে গিয়ে শুকাতে দেরী হলো বলে তিনি জুমুআর নামাযে আসতে দেরী করে ফেললেন অথচ তখন চারপাশ থেকে জলের মতো গণিমতের মাল আসছে !!
.
খেজুর পাতার চাটাইয়ে বসে অর্ধবিশ্ব শাসন করা এই মানুষটাকে নিয়ে কিংবদন্তীর শেষ নাই,
সামনে যেহেতু ঈদ আসেন দেখে নিই আমীরুল মুমেনীনের ঈদের শপিং ক্যামন হইতোঃ
.
হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ) এর খিলাফতের প্রথম দিকে আবু উবাইদা ( রাঃ ) তখন অর্থমন্ত্রী হিসাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার দেখাশুনা করছেন !!
.
ঈদের আগের দিন খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত উমর ফারুক ( রাঃ ) এর স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বললেন-
.
” আমাদের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না হলেও চলবে, কিন্তু ছোট বাচ্চাটি ঈদের নতুন কাপড়ের জন্য কাঁদছে………তার জন্যে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি !!?? ”
.
হযরত উমর ( রাঃ ) জবাব দিলেন- ” আমার তো নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই !! ”
.
খানিক পরে হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ) তাঁর অর্থমন্ত্রী আবু উবাইদা ( রাঃ ) কে একটা চিঠি পাঠালেন………….তাতে অনুরোধ করলেন তাঁকে যেনো এক মাসের বেতন অগ্রীম দেওয়া হয় !!
.
সমগ্র মুসলিম জাহানের যিনি অধিপতি, যিনি সেই সময় প্রায় অর্ধেক পৃথিবী শাসন করছেন..তাঁর এ ধরণের চিঠি পেয়ে আবু উবাইদা ( রাঃ ) চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না !!
.
উম্মতে আমীন আবু উবাইদা ( রাঃ ) চিঠির বাহককে টাকা তো দিলেনই না, বরং চিঠির উত্তরে লিখে পাঠালেন-
.
” আমীরুল মুমিনীন,
.
অগ্রীম বেতন বরাদ্দের জন্য দুটি বিষয়ে আপনাকে ফয়সালা দিতে হবে-
প্রথমত, আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না !!??
.
দ্বিতীয়ত, বেঁচে থাকলেও দেশের জনসাধারণ আপনাকে সেই মেয়াদ পর্যন্ত খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা !!?? ”
.
এখন চিন্তা করে দেখুন তো………….পদমর্যাদায় ঢের উপরে যিনি, নিম্নপদস্থ কারো কাছ থেকে এই ধরণের চিঠি পেলে তাঁর রিঅ্যাকশন কীরকম হতে পারে !!??
.
উচ্চবাচ্চ্য করে ক্ষমতার দাপট দেখানো- ” এতো বড়ো আস্পর্ধা !!?? ” অথবা তাকে পদচ্যুত করা !!
.
কিন্তু হযরত উমার ফারুক ( রাঃ ) কী করলেন !!??
.
চিঠি পাঠ করে তিনি কোনো প্রতি উত্তর তো করলেনই না, বরং এতো বেশি কাঁদলেন যে তাঁর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে গেলো !!
.
তিনি দুই হাত তুলে আবু উবাইদা ( রাঃ ) জন্য দোয়া করলেন- একজন যোগ্য অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত করতে পেরেছেন ভেবে !!
.
আর এখন তো আমাদের আলমারি খুললেই কাপড়চোপড় হুড়মুড় করে গায়ের উপরে এসে পড়ে, এতো এতো নিয়ামত ঘরে রেখে কীভাবে কোনো বাহারী পোশাক কিনতে না পারায় আমাদের মুখ ভার হয় !!??