ক্রিং ক্রিং ফোনটা বেজেই চলছে, কিন্তু জয় ঘুমে বিভোর।হঠাৎ উপলব্ধি করতে পারলো ফোনে কেউ কল দিচ্ছে।
এত রাতে ঘুমের মধ্যে ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্ধটা অনেকটা রাগ বারিয়ে দিয়েছে।ইচ্ছে না থাকা সত্তেও ফোনটা রিসিভ করলো জয়।
-কি ব্যাপার এত বার কল দিচ্ছি তোমার কোন উত্তর পাচ্ছিলাম না।কি করছিলে এতক্ষন?
-প্রিয়া তুমি!! এত রাতে কল দিলে কেনো? তোমার যায়গাতে অন্যকেউ হলে তো এখন এত্তগুলো বকা দিতাম।
-আচ্ছা বকা-বকি পরে হবে।কাল সকালে একবার ক্যান্টিনে এসো,খুব জরুরি কথা আছে।
-আচ্ছা আসবো।
-ওকে, গুড নাইট।
কল কেটে দিলো প্রিয়া, জয় খুব টেনশানে পড়ে গেলো সকালে কি এমন কথা বলার জন্য এত রাতে কল দিতে জরুরি তলব করলো?
মাথায় টেনশান এর পাহাড় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
সকাল ঠিক ৯টায় ক্যান্টিনে এসে প্রিয়ার অপেক্ষা করছে জয়।কিন্তু এখনো প্রিয়ার আসার কোন খবর নেই।
অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর প্রিয়ার আগমন।
-কেমন আছ?
-ভালো, এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
-কই না তো, আমি ঠিক আছি।
-এত জরুরি ভাবে ক্যান্টিনে দেখা করার জন্য বললে কেনো?
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।চলো ক্যান্টিনের বাহিরে বসে কথা বলি।
-হুম, চলো।
.
ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে মাঠের এক কোনে বসলো প্রিয়া এবং জয়।
-হ্যা কি জেনো বলবে বলো।
-কাল হঠাৎ করে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আগামি সপ্তাহে বাবার পছন্দের ছেলের সাথে আমার বিয়ে।
আমি আমার বাবা-মাকে কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবো না।আমাকে ক্ষমা করে দিও।
-মানে!! কি বলছো এসব? প্রিয়া তুমি আমাকে ভালবাসো, আমিও তোমাকে ভালবাসি,
এই ভাবে আমাদের ভালবাসা শেষ করে দিতে পারনা তুমি।
-দেখো আমি আমাদের ভালবাসা অস্বিকার করছি না।কিন্তু সবার আগে আমার মা-বাবার সম্মান আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
-আমি তাহলে আজ তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।আমাদের ভালবাসার জন্য আমি সব করতে রাজি আছি।
-না।তুমি আমার মা-বাবার কাছে কিছু বলবে না।আমার জন্য বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে, আমি এখন যাই।
-প্রিয়া শুনো।
-আর কিছু শুনার মতো,বলার মতো আমার কিছুই নেই।
প্রিয়া চলে যাচ্ছে, জয়ের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ছে।দুই চোখে বইছে শ্রাবনের ধারা।
.
কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা জয়।
৫বছর এর ভালবাসার মিষ্টি মধুর সম্পর্ক আজ এই ভাবে শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু এখানে কারো হাত নেই সব নিয়তির নির্মম পরিহাস।
কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলো না।
হঠাৎ মনে পরলো, সবাই তো কষ্ট পেলে সিগারেট খায়, আমিও খাবো, আজ আমিও যে সুখের বিনিময়ে এক বুক কষ্ট পেলাম।
.
দোকানে গিয়ে ১০টাকা একটা নোট দিয়ে বললো ভাই আমাকে একটা সিগারেট দেন।
জয়ের মতো ছেলের মুখে গিগারেট এর কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে গেলো।
যে ছেলে দোকানে এক কাপ চা পর্যন্ত খায়না, আজ সেই ছেলে সিগারেট এর কথা বলছে?
-কি হলো মামা! সিগারেট দেন।
-এই নাও সিগারেট, ম্যাচ লাগবে?
-হুম, একটা ম্যাচ দাও।
দোকানি থেকে সিগারেট আর ম্যাচ নিয়ে বেরিয়ে গেলো ।ভাবতে লাগলো কোথায় বসে নিরিবিলি সিগারেট খাওয়া যায়?
হাটতে হাটতে একটা বট গাছের নিচে বসলো।
.
পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে নিয়ে ম্যাচের আগুনে সিগারেট জ্বালাবে ঠিক তখনি হঠাৎ “মন” প্রশ্ন করলো।
জয় তুমি সিগারেট খাবে আজ? একটা মেয়ের জন্য সিগারেট এর বিষাক্ত নিকোটিনে জিবনটা শেষ করে দেবে?
যে মা-বাবা তোমাকে জন্ম দিয়েছে।
তোমাকে লেলে পেলে বড় করেছে তাদের কথা একটু ভাববে না?
.
সিগারেট টা মুখ থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো ।ঠিকিতো আমি কেনো অন্য একজনের জন্য নিজের জিবন শেষ করবো?
আমি সিগারেট খাবো না কক্ষনো না।
মনটা অনেক ফ্রেশ হয়ে গেলো জয়ের, ইস অল্পের জন্য কি একটা ভুল করেই ফেলছিলাম।
আর কখনো সিগারেট এর ধারে কাছেও যাবো না।বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলো জয়।
আজ থেকে প্রিয়া বিহীন নতুন করে নিজেকে নিজের মতো করে বাঁচতে শিখবে।।
.
বিঃদ্রঃ অনেকেই আছে প্রেমে বিচ্ছেদ এর পর সিগারেট, নেশা, ড্রাগস গ্রহন করে নিজের জিবন তিল তিল করে শেষ করে দিচ্ছে।
একটি বার কি ভেবে দেখেছেন??
আপনার জিবন একান্তই আপনার অন্য কারো জন্য কেনো নিজের জীবনটা সিগারেট এর ধোয়াতে অন্ধকার করে দেবেন?
সে যদি আপনাকে ছাড়া সুখি হতে পারে তাহলে আপনিও তাকে ছাড়া সুখি হওয়ার চেষ্টা করুন।