পরিবর্তন

পরিবর্তন

দিপু এলাকায় বখাটে ছেলে হিসেবেই পরিচিত।
.
মেয়েদের বিরক্ত করা, রাস্তায় দাঁড়িয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে সিগারেট ফোঁকা, লোকজনের কাজে বাঁধা দেয়া,

মানুষের সাথে খারাপ ব্যাবহার করাই তার নিত্য দিনের অভ্যাস।
.
দিপু এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তি আদনান সাহেবের ছেলে।
তাই তাকে কেউ কিছু বলতেও পারে না।
যদিও তার অত্যাচারে লোকজনের জীবন ওষ্ঠাগত।
.
প্রতিদিনের মতো সেদিনও দিপু গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের টিজ করছিল।
হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় এক ললনার দিকে।
মেয়েটি তাদের সামনে দিয়ে ঢোকার সময় তার বন্ধুরা কিছু বলতে চায়।
কিন্তু সে তাদের থামিয়ে দেয়।
বন্ধুরা সবাই তো অবাক।
.
সেদিনের মতো ফিরে আসলো দিপু।এরপর থেকে ধ্যানজ্ঞান বলতে ওই মেয়ে।সবসময় শুধু তাকে নিয়ে চিন্তা করেই দিন কাটে।
.
একদিন এক বন্ধুকে বলে ওই মেয়ের সব তথ্য সে যোগাড় করলো।
এরপর থেকে ফোনে কথা বলতে শুরু করে, বিভিন্ন কথায় সে মেয়ের মন পটিয়ে ফেলে।
ওহ বলতে ভুলে গেছি মেয়েটির নাম দিয়া।
.
মেয়েটিও তার  বাবার সম্পদ আর স্মার্টনেস(বখাটেপনা) দেখে তার সাথে প্রেমের অভিনয় করে।
কয়েকমাসে মেয়েটি তার পকেট থেকে ভালো ধরণের টাকা খসায় এবং স্বার্থ ফুরোলে সম্পর্ক ভেঙে চলে যায়।
.
দিপু এমনিতেই মাদকাসক্ত।
এবার আরো বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়লো।সারাক্ষণ নেশায় ডুবে থাকা আর বাসায় পড়ে থাকা।
বাইরের জগৎ থেকে সে এক প্রকার আলাদাই হয়ে যায়।
.
এভাবে কিছুদিন চলার পর।একদিন রাতে সে তার মায়ের সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করে ঘুমোয়ে যায়।
রাতে ঘুমানোর সময় সে হঠাৎ অনুভব করে কেউ একজন তার গলা চেপে ধরেছে, ধরফর করে ঘুম ভেঙে যায় তার।
বুঝতে পারে নেশাটা বেশিই হয়ে গেছে।আর সেকারণেই ঘাড়ের শিরায় টান ধরে যাচ্ছে।মাকে ডাক দিতে গিয়েও পারলো না।
.
পরদিন সকালে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় দিপুকে।
দ্রুতই হসপিটালে নেয়া হয়।
ডাক্তার বলেন অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর মাদক গ্রহণের ফলে উচ্চরক্তচাপ থেকে তার এই অবস্থা।

কিছু ঔষধ লিখে দেয়ার পাশাপাশি তাকে মাদক থেকেও দূরে থাকতে বলে।
.
কয়েকদিন পর হঠাৎ করেই আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার।
মোবাইলে সময় চেয়ে দেখলো সকাল ৪:৪৭।
অনেকদিন নামাজ পড়ে না সে।
হয়তো এখন ভুলেই গেছে।
তবুও কেন যেন উঠে পড়ে।
মায়ের ঘরে গিয়ে দেখে মা নামাজে নিমগ্ন।চুপচাপ দাঁড়িয়ে নামাজের দৃশ্য দেখে দিপু।মনের ভিতর অনেক কিছুই দোল খেয়ে উঠে।
.
কয়েকদিন পর দেখা যায় দিপু নামের ছেলেটা নিয়মিত নামাজ পড়ছে, মুখে লম্বা দাঁড়ি।
আর কোন কুসঙ্গ কিংবা কুকাজে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাবার ব্যবসায় সাহায্যের পাশাপাশি আবারও পরাশুনা শুরু করে দিপু।
.
আজ দিপু একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
যার সততা, ধর্মচিন্তা, মানবতা সকলের নিকটই প্রশংসিত।
.
অন্যদিকে মেয়েটাও আজ বুঝতে পেরেছে ছলনায় সুখ নেই।
সেও নিজের মতো করে একজনকে পেয়েছিল, ধরে রাখতে পারেনি।
ভুল বুঝতে পারে সে।
নিজের অন্যায় কাজ আজ তার নিজেকেই পোড়াচ্ছে দুঃখের আগুনে।
.
দিপু অবশ্য মেয়েটার কাছে কৃতজ্ঞই।
কারণ, সে মনে করে যদি তার জীবনে মেয়েটা না আসতো তাহলে সে হয়তো আগের সেই পাপেই ডুবে থাকতো।
.
ভালো আছে দিপু, ভালো রাখতে চেষ্টা করছে তার চারপাশের মানুষগুলোকে।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত