লোভের পরিণতি

লোভের পরিণতি

বনের মধ্যে সব পশু পাখিদের বসবাস হলেও ঠিক সবার মাঝে বন্ধুত্বেও ভাবসাব তেমন লক্ষ্য করা যায়না। আবার কারো কারো মধ্যে ভালো বন্ধত্ব আছে। বনের মধ্যে বাস করে বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া, শিয়াল, হরিণ, জেব্রা, গাধা, মহিষ, গন্ডার, হায়েনা, সাপ সহ আরো কত শত নাম না জানা পশুপাখি। এদের মধ্যে ভাব হলো গাধার সাথে হরিণের। হরিণ একদিন ঘুরতে ঘুরতে দেখা হলো গাধার সাথে, দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তার আদান প্রদান হল। সেই থেকে শুরু। হরিণ যেমন শান্ত শিষ্ট,গাধাও তেমন শান্ত শিষ্ট। গাধার সাথে কারো কোনদিন ঝগড়া হয়েছে তেমন নজির বন মল্লুকে নেই। গাধা চলে গাধার মতোই। কারো সাথে গায়ে পড়ে কথা বলবে, এধরনের ভাবসাব গাধার মনে নেই। হরিণেই নিজ থেকে গাধার সাথে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে এলো। এগিয়ে আসার একটা কারণও আছে। এই বনের মধ্যে হরিণের বসবাস হলেও কখনো কোনখানে নিরাপদ ভাবে চলাফেরা করবে, সেই সাহস করতে পারেনা। সারাক্ষণেই বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। বন জুড়ে রাজত্ব করে বেড়ায় বাঘ সিংহরা। সুযোগ পেলেই শিকার ধরে বসে হরিণকে। হরিণও এটা মাথায় নিয়ে চলাফেরা করে বনের মাঝে। সারাদিন ঘুরে ফিরে লতা পাতা ঘাস খেয়ে ধেয়ে মিলিত হয় গাধা আর হরিণ।

তারা বেছে নিল বনের মধ্যে নিরিবিলি একটি ঝোপ ঝাড়কে। যেখানে বাঘ সিংহের আনাগোনা নেই। ভয় না থাকলেও সব সময় সজাগ থাকে হরিণ। কারণ বাঘ কখনো জানতে পারলে, ঠিকই চলে আসবে বনের এই কোণেই। হরিণ শিকার পছন্দ করে বাঘ সিংহরা। হরিণ আর গাধা যেখানে থাকে সেখানে আছে এক বিশাল বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষের নিচে বেশ ঝোপ ঝাড়ে ভরপুর। গাধা থাকে ঝোপের ঠিক বাইরে,আর হরিণ থাকে ঝোপের আড়ালে। যেন হরিণকে ঘাতক কুলেরা দেখতে না পায়। বটবৃক্ষের শিকড়ের নিচে আবাসস্থল হরিণের। দুবন্ধুর দিন কেটে যাচ্ছে বেশ আনন্দেই।একদিন হরিণের কোলজুড়ে এলো আদরের দুইছানা। দুই ছানাকে নিয়ে খুবই হাসি খুশিতে চলছে দিনযাপন হরিণের। হরিণের ফুটফুটে দুই ছানা দিনে দিনে একটু বড় হলো। বেশি দূর না গেলেও আবাসস্থলের আশে পাশে নাদুস নদুস ছানারা খেলে বেড়ায়। খেলতে খেলতে গড়িয়ে যায় বেলা। মা হরিণ বেশি দূর না যেতে সতর্ক করে দিয়েছে ছানাদের। ছানারাও মায়ের কথা মত বেশি দূর যায় না। একদিন এক দুষ্ট শিয়ালের নজরে পড়ল নাদুস নুদুস হরিণ ছানারা। লোভ হলো শিয়ালের। শিয়াল ফন্দি আঁটছে কিভাবে ছানাগুলোকে ধরে খাওয়া যায়। মা হরিণ থাকা অবস্থায় তো আর ছানাদের ধরা যাবেনা। আর গাধাও থাকে পাহারারত। শিয়াল চাইল গাধার সাথে ভাব জমাতে। শিয়াল এসে যখন গাধার সাথে মিষ্টি সুরে কথা বলতে চাইল, বুঝতে পারল গাধা। গাধা বলল কোন ভাবসাব নেই তো মনে ?

শিয়াল বলল কী বলেন গাধা ভাই। মাঝে মধ্যে একটু আধট ুকথাবার্তা আদান প্রদান করলে মনটা ভালো থাকে এই আর কী। ও আচ্ছা। শিয়াল জানতে চাইল হরিণ ছানাগুলো কোথায় থাকে? এই কথা শুনে শিয়ালের কুমতলবটা গাধার কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল। গাধা বলল কেন, ওদের মায়ের কাছে থাকে। গাধার উত্তর শুনে শিয়াল আর কথা বাড়াল না। কারণ যদি তার কুমতলবটা ঠিকই জেনে ফেলে এই ভাবনায়। শিয়াল আসার খবরটা পৌঁছালো মা হরিণের কানে। শুনে একটা ভয় ভয় কাজ করছে মা হরিণের মনে। কখন আবার দুষ্ট শিয়াল আক্রমণ করে বসে তার ঠিক নেই। হরিণের এই ভয়ার্ত রূপ দেখে গাধা বলল, ভয় পাবার কারণ নেই। আমার গাধার বুদ্ধিতে শায়েস্তা করব দুষ্ট শিয়ালকে। কয়েক দিন পর আবার এলো গাধার কাছে। অনেক মিষ্টি কথা বলছে। সব খবরা খবর নিচ্ছে শিয়াল। কে কে থাকে, কোথায় থাকে সব। গাধা তো বুঝতে পারল শিয়ালের লোভ হরিণ ছানার প্রতি। গাধাও এবার বেশ উৎসুক হয়ে কথাবার্তা বলল। কে কোথায় থাকে, কেমন করে থাকে সবই। শিয়ালও বেশ আগ্রহ ভরে শুনছে। গাধা বলল আমরা এখানে থাকি,আর হরিণরা থাকে ওখানে ঝোপের ভিতর। শিয়াল বলল, চলো বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে ঘুরে বেড়াই। জায়গাটাও দেখে আসি। গাধা যেই ঝোপে কাছে নিয়ে গেল, আসলে সেই ঝোপে হরিণ ছানারা থাকেনা। এটা হচ্ছে গাধার চালাকি। অই ঝোপের ধারে প্রায় সময় মনুষ্য শিকারীরা শিকার ধরতে আসে। দেখে শুনে শিয়াল খুশি মনে চলে গেল। মনে মনে গাধা কে বলল আরে গাধা তুই বুঝলি না আমার মতলব। বুঝবি একদিন শিয়ালের বুদ্ধি কেমন। পরদিন কী করল গাধা, গ্রামে গিয়ে এক শিকারীকে খবর দিল, আমরা যেখানে থাকি ওখানে শিয়ালও থাকে, প্রতিদিন আসে শিয়াল। তুমি চাইলে দুষ্ট শিয়ালকে ধরতে পারবে। শিকারীরা শিয়ালকে সহজে ধরতে পারেনা।

পশুদের মধ্যে শিয়ালের বুদ্ধি খুবই প্রখর। শিকারী জানে গাধারা মিথ্যা বলেনা। শিয়ালকে যেই ঝোপ দেখাল, সেই ঝোপটি শিকারীকে দেখাল। শিকারী ঝোপের মুখেই গোপন ফাঁদ বসাল, পা দেওয়া মাত্রই আঁটকে যাবে। যদি শিয়ালকে ধরতে পারে অনেক কাজে আসবে শিকারীর। একদিন শিকারী ফাঁদ ফেঁতে একটু দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে শিয়াল আজ খুশি মনেই বের হলো। কারণ, হরিণ ছানার তুলতুলে নরম মাংস খাবে। সন্ধ্যা যখন ঘনিয়ে এলো খুশি মনে রওনা দিলো শিয়াল। অপেক্ষায় আছে শিকারী। কখন আসবে শিয়াল। ধীরে ধীরে ঝোপের কাছে এসে পা বাড়াল ঝোপের ভিতর। এক পা দুই পা দেওয়ার পর আঁটকে গেল পা। শিয়াল প্রথমে বুঝতে পারেনি কোথায় আঁটকালো। যখন পা উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়ল শিয়াল, ততক্ষণে শিকারী এসে হাজির। শিকারীর লাঠির আঘাতে লুঠিয়ে পড়ল শিয়াল। এমন সময় গাধাও এলো কাছে। শিয়াল যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তখন গাধা বলল, কীরে শিয়াল বন্ধু তোমার এই দশা কেন? শিয়াল বলল লোভেই আজ আমার এই পরিণতি। উত্তরে গাধা বলল সব গাধাকে গাধা ভেবো না। গাধার মধ্যেও কিছু বুদ্ধি ওয়ালা গাধা থাকে। দেখ গাধার বুদ্ধিতে তুমি চতুর শিয়াল ধরাশায়ী।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত