আমার দিকে কেউ তাকায় না

আমার দিকে কেউ তাকায় না

আমার সব ফ্রেন্ড অনেক সুন্দর। ওরা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটে তখন আশেপাশের সবাই ওদের দিকে তাকায়। আমি কালো। আমার চেহারা সুন্দর না।

আমার দিকে কেউ তাকায় না।”

দীর্ঘশ্বাসের সাথে বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা এই কথাগুলো কি তোমার?

হ্যাঁ, বোন। তাহলে তোমাকেই বলছি।

কেউ যখন তোমার সামনে ওদের কারো প্রশংসা করে তোমার মুখটা কেমন শুকিয়ে যায় আমি দেখেছি। ওদের ছবিতে যখন লাইকের বন্যা বয়ে যায়, তুমি বারবার চেক করার পরও যখন দেখ যে তোমার ছবিতে লাইক পড়ে মাত্র কয়েকটা, তোমার বুকে যে কষ্টটা জমা হয় তা আমি অনুভব করতে পারি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ নিজেকে দেখার পর তোমার দু’চোখ থেকে কিভাবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আমি তা জানি। তুমি সবসময় ভাবো, তোমার প্রতি কেন এমন অবিচার করা হল, তাই না?

বোন, তোমাকে কিছু কথা বলি।

আমি বলব না যে তোমার চেহারাটা কিছু না, তোমার ভেতরের গুণগুলোই আসল। আমি জানি, এসব সান্তনাবাক্য তোমার এখন আর সহ্য হয়না। তোমার গুণের কথা ভেবে দেখার সময় কারো নেই। সবাই তোমার চেহারাটা দেখেই তোমাকে বিচার করে ফেলতে চায়। তোমার দিকে প্রথমবার তাকিয়েই ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে ওঠে ওদের।

বোন, আল্লাহ তোমার প্রতি অবিচার করেননি। ওদের চামড়ার রঙ খুব সুন্দর মনে হয় তোমার কাছে, তাই না? আচ্ছা, তুমি কি কল্পনা করতে পারো, ওরা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে স্বেচ্ছায় নিজেদের চামড়া পোড়াচ্ছে? চামড়া আগুনে পোড়া বীভতস রং ধারণ করছে? আর ওরা খুব আনন্দ পাচ্ছে, গর্ব করছে সেই রঙ নিয়ে? যা তা বলছি না বোন। ওরা আসলেই তাই করছে, বুঝে হোক আর না বুঝে হোক।

তুমি শুধু ফেসবুকে ওদের লাইকের পাহাড়টাই দেখেছ। সাথে সাথে যে গুনাহর পাহাড়টা জমা হয়েছে সেটা তুমি দেখনি। ওরা জেনে বুঝে অথবা না জেনে নিজেদের আস্তে আস্তে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ ওদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। দুদিনের জন্য ওদের তিনি সুন্দর চেহারা দিয়েছেন, ঢেকে রাখতে পারে কিনা পরীক্ষা করার জন্য। এবং ওরা নিজেদের ব্যর্থতা প্রমাণ করে চলেছে।

তোমাকে আল্লাহ সেই পরীক্ষায় ফেলেননি। তোমার পেছনে পাঁচজন ছেলে ঘোরেনা। তোমাকে সেই বেহায়া নেশায় পেয়েও বসেনি, আর বসে থাকলেও আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করছেন। ওদের মত তোমার ছবিতে যদি লাইক পড়ত, তুমি হয়তো কোনদিনও কারো মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়ার সেই ভয়ংকর অশ্লীল নেশা থেকে বের হতে পারতে না। আল্লাহ তোমাকে সুযোগ দিয়েছেন বোন। সুযোগকে কাজে লাগাও।

আর পার্লারে গিয়ে আর ফেয়ার এন্ড লাভলির ছলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় আর হাজার হাজার টাকা নষ্ট করো না। এভাবে নিজের চেহারাকে বদলাতে পারবেনা। সত্যিই যদি চেহারা বদলাতে চাও, টাকাগুলো নষ্ট না করে সাদাকা করে দাও। দ্বীনের পথে ব্যয় কর। আল্লাহ হয়তো জান্নাতে তোমার এই চেহারাটাকেই অনেক অনেক সুন্দর করে দেবেন, তুমি যে সুন্দরের কথা কল্পনাও করতে পারো না।

মানুষ তোমাকে রং দিয়ে বিচার করে কেন জানো? তুমি রং নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগ, সেজন্য। তোমার দিকে যারা বাঁকা চোখে তাকায় তাদের মাঝে এমন একজনকে দেখাতে পারবে যে ইব্রাহীম (আ) এর কৃষ্ণাঙ্গী স্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেনা?

হিজাব তোমাকে পণ্য বানাবে না বোন। তোমাকে লাইকের ভিখারী বানাবে না। আজ যারা তোমাকে তাচ্ছিল্য করে, তারা কাল তোমাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলবে।

একজন মুসলিমাহর সৌন্দর্য তার লজ্জায়, তার অবনত দৃষ্টিতে যে তাকওয়ার নূর ঠিকরে পড়ে, তার দীপ্তি নির্লজ্জ “smoky eye” এর মেকি সৌন্দর্যে তুমি কখনও পাবে না। নিকাব তোমার মুখশ্রীকে অনেক সুন্দর করবে, পার্টি মেক আপ পারবে না। এগুলো তোমাকে শুধু মরীচিকার পেছনেই ছোটাবে।

নিজের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে শেখ, বোন। চাঁদকে ধরা যায়না। আপাদমস্তক সাদামাটা মোটা কাপড়ে আবৃত আমার বোনের দিকে কী করে সমীহ ছাড়া তাকানো যায়?

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত