গলফ ক্লাবের সামনে থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম আমরা তিন বন্ধু।আঃ রহমান, সাজিদ আর আমি। বাস মোটামুটি খালিই বলা চলে।
কন্ডাক্টর:ভাড়াডা লন মামা,
সাজিদ :কোন পর্যন্ত যাবে এটা?
-কালশী,আপনারা কই যাবেন?
:পূরবী (কালশী থেকে আরেকটু সামনে)
-ঐদিক দিয়াই পার্কিংয়ে যাইবো গাড়ি।তহন নাইমা যায়েন।তয় ৫ টাকা কইরা বেশী দেন।
.
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে একটা মেয়ে বাসে উঠলো।আমাদের বড় বোনের বয়সী হবে।পোশাকে মোটামুটি শালীনতার ছাপ,তবে পুরো নয়।
.
কন্টাক্টর: আপা কই যাবেন?
মেয়েটা- ডিওএইচ মোড়, আচ্ছা বাস কোন পর্যন্ত যাবে?
:ডিওএইচ যাইবোনা গাড়ি।কালসী মোড়ে নাইমা যাইতে অইবো আপনার।
ভাড়াডা লন; ২০ টাকা।
(ভাড়া নিয়ে চলে গেল কন্টাক্টর)
.
হঠাৎ কইরা জ্যাম।
ঈদের আগের রাতে ঢাকায় তো জ্যাম থাকার কথা নয়।
বললো আঃ রহমান।
কারণ জানতে চাইলে কন্ডাক্টর বললো,কমন সমস্যা হুজুর! ভি.আই.পি আইতাছে মনে অয়।সামনের রোড বন্ধ।
প্রায় ২৫ মিনিট পর ডান পাশের খালি লেন দিয়া ফুড়ুৎ-ফাড়ুৎ কইরা ভি.আই.পি.-রা যাওয়ার আরও ১০ মিনিট পর জ্যাম ছুটলো। প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গেছে।নটা পর্যন্ত ছুটি নিয়ে এসেছিলাম।এখন গিয়ে মাদ্রাসায় ঢুকতেই সমস্যা হবে।দারোয়ানকে কোনভাবে মেনেজ করতে পারলেও ভিতরে ঢুইকা নিশ্চিত দরখাস্ত মঞ্জুর করাইতে হবে।নাহলে কপালে প্যারা আছে।এসব ভাবতে ভাবতে ঝিমুচ্ছিলাম!
খোঁচা দিল সাজিদ।
সামনের দিকে ইশারা করলো,
কন্ডাক্টর আর ড্রাইভার কথা বলছে!
অল্প আওয়াজের কথা বার্তা থেকে স্পষ্ট বুঝলাম, তারা মেয়েটিকে নিয়ে কিছু বলছে।
ফিরে এসে কন্ডাক্টর মেয়েটিকে বললো,
-আপা, আরও দশ টাকা দেন।ডিওএইচ নামায়া দিবো আপনেরে।
.
>দোস্ত, কিছু বুঝলিরে?সাজিদ বললো আমাকে।
মাথা নাড়লাম। চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করা যায়।মেয়েটির সাথে কথা বলতে চাইলাম।ড্রাইভার বারবার পিছনে তাকাচ্ছিলো বলে সম্ভব হলোনা।
.
কথা শেষ করে বাসের জানালাগুলো টেনে দিচ্ছিলো কন্ডাক্টর, আর ড্রাইভার কাউকে ফোন করে মাটিকাটা মোড়ে আসতে বললো।ড্রাইভারের ফোনালাপেও সামথিং রঙ আঁচ করলাম।
(কালসীর একটু আগের এলাকার নাম মাটিকাটা)।
বাস ততক্ষণে ইসিবি মোড় পার হচ্ছে।যাত্রী যে কয়জন ছিলো আগেই নেমে গেছে। এখন বাসে আমরা তিনজন আর মেয়েটা।
.
জানালাগুলো বন্ধ করে কন্ডাক্টর আইসা বললো,
-হুজুর গাড়ী কালসী যাইবনা,মাটিকাটা নাইমা যায়েন।
:কেন?(জিজ্ঞেস করলাম আমি)
-মালিক ফোন দিছিলো,গাড়ী ডিওএইচ নিয়া যাইতে অইবো।
:তাইলে ভাড়া বেশী নিলা কেন?
“মোল্লাগো ভাড়া ঘুড়ায়া দিয়া দে” কেমন জানি একটা বদ কন্ঠে বললো ড্রাইবার।
:না,এটা কোন কথা বললা তুমি? কালসী যাইবানা,তাহলে আগে উঠাইলা কেন?
গাড়ি ব্রেক কষে থামিয়ে,পিছনের দিকে রাগান্বিতভাবে তাকিয়ে বললো,
-গাড়ি যাইবনা আর,আপনারা কেমনে যাইবেন,কথামত নাইমা যান।নাইমা রিক্সা নাইলে অন্য বাস দিয়া যানগা।
:তাহলে আজকে কোথায় যাবে গাড়ি?
-ঐডা জানার কি দরকার আপনাগো?
:দরকার আছে বইলাই ত জিজ্ঞেস করলাম মামা।
-ডিওএইচ অয়া সিরামিক্সে যাইবো গাড়ি।(সিরামিক্স একটা এলাকার নাম)
:আমরাও তাহলে ওখানেই নামবো,যাও!
(এখন আর কিছু বলার নেই ড্রাইভারের,অগত্
যা সে চললো)
মাটিকাটা থেকে কয়েকজন উঠলো,ওরা চালক সমিতির নেতা-টেতা হবে আরকি।
একজন মেয়েটার কাছাকাছি সীটে বসলো,আর দুজন গিয়ে ড্রাইবারের সাথে কি জানি বললো।
“শালার মল্লারা ঝামেলা করতাছে” স্পষ্ট শুনতে পেলাম।
১০০% বিপদের আশংকা।
মেয়েটার দিকে তাকালাম।চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতে চেষ্ঠা করলাম।
আলহামদুলিল্লাহ্, বুঝে নিলো মেয়েটি।
দেরী না করে কন্ডাক্টরকে গাড়ি থামাতে বল্লাম।
“আপু উঠ”
বলেই মেয়েটার ব্যাগ হাতে করে মেয়েটিকে নিয়ে নেমে আসলাম।
.
ভেবে দেখুন তো একটু,
কি হতে যাচ্ছিলো অল্পের জন্য?
হায়তো পরদিন সকালে নিউজে আসতো “রাজধানীতে চলন্ত বাসে ধর্ষনের পর হত্যা”
ভিকটিমের গায়ের জামার কালার দেখে হয়তো সাজিদ আমাকে বলতো,
দোস্ত,
দেখ দেখ!সেই মেয়েটাই না?
কালরাতে আমাদের সাথে বাসে ছিলো যে?
আমি হয়তো মাথা নাড়তাম;শখের বশে লাশটা দেখতে যেতাম।
আপনি ফেসবুকে পোস্ট আপডেট করতেন।
বেপর্দা কিছু নারী বিচারের দাবিতে রাস্তা গরম করতো।
মিডিয়া কিছুদিন মাতামাতি করতো।
এর বেশী কিছু নয়….
.
কিন্তু মেয়েটির বাবা হয়তো স্ট্রোক করতেন খবরটা শুনে।
মা কিছুদিনের জন্য নির্বাক হয়ে যেতেন।
ভাই-বোনরা সারাজীবন লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকতো সমাজে।
.
যাই হোক,
আলহামদুলিল্লাহ্!
আল্লাহর রহমতে এগুলোর কিছুই হলোনা।কারণ,আমরা তিনজন শুধু আমাদের কথা ভেবে নেমে যাইনি।
নিশির যাত্রাপথে অচেনা মেয়ে যাত্রীটিকে বোনের আসনে বসিয়ে ওর কথাও ভেবেছিলাম একটু।
.
আসুন না,
প্রতিজ্ঞা করি;
“কখনো কোন মেয়েকে বাসে একা রেখে নিজের স্টপেজে নেমে যাবোনা”
যেমন নেমে যেতামনা নিজের মা-মেয়ে-বোন কে রেখে।
.
আর আপিরাও বি কেয়ার্ফুল!
“বাসের লাস্ট যাত্রী হওয়ার আগেই নেমে যাবেন”
.
কজ ইজ:-
সব পুরুষই ধর্ষক হওয়ার ক্ষমতায় ক্ষমতাবান।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প