২০০১ সালে ৯/১১ এর বিধ্বংসী সেই টুইন টাওয়ার হামলা করে আমেরিকার অহঙ্কার চূর্ণ করা এবং ২০০৫ সালে বিশ্বের ভয়াবহ সুনামির ভবিষ্যৎ বাণী আগেই করেছিলেন এক অন্ধ নারী! আর তা বরাবরই ফলে যাওয়া সম্ভব কি করে হয়! জানা গেছে ২০১৬ সাল নিয়ে সে নারী করে গেছেন ভয়াবহ ভবিষ্যৎ বাণী!
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব যে ভয়ে বেশ তটস্থ হয়ে থাকে সেই সবচেয়ে বড় জঙ্গি সংগঠনের নাম ইসলামিক স্টেট (আইএস) । হামলা, নৃশংসতা আর শক্তির কারণে গত ২ বছরে সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছে এরা। বিশেষ করে ২০১৪ সালে মসুল হামলার পর বৃহৎ আকারে নজরে আসে আইএস। আর একদিন যে এই আইএস-এর অভূতপূর্ব উত্থান ঘটবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল প্রায় এক দশক আগেই!
যারা এসব ভবিষ্যৎ বাণী কিংবা জ্যোতিষ বাণীতে বিশ্বাস করেন তাদের জন্য এটি খুব দুশ্চিান্তার সংবাদই বটে। সম্প্রতি বিশ্ব মিডিয়ায় একটি সংবাদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মহা আলোড়ন।
বুলগেরিয়ার ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভায় জন্ম নেন বাবা ভাঙ্গা। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত অন্য সবার মতো সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত তথ্য থেকে জানা যায়, এরপর একটি বিরাট ঝড় বা টর্নেডোতে রহস্যজনকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন বাবা ভাঙ্গা।
বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে যেসব গল্প প্রচলিত আছে সেখানে বলা হয়, ঝড় বা টর্নেডোর বেশ কয়েকদিন পর তাঁকে খুঁজে পায় পরিবারের সদস্যরা। তবে সে সময় তার চোখের পাতা পুরোপুরি লাগানো ছিল এবং তার ওপরে ছিল ধুলো আর ময়লার পুরু আস্তরণ। এই ঘটনার পর থেকে তাঁকে মানুষের রোগ সারানোর এবং ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাবা ভাঙ্গা।
ধীরে ধীরে বাবা ভাঙ্গার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে কয়েকজন নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে বাবা ভাঙ্গাকে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
তবে বাবা ভাঙ্গার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে যে তিনি বুলগেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে সেসব তথ্য ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে জানিয়ে বিভ্রান্ত করতেন।
৫০ বছরের পেশাজীবনে শতাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভাঙ্গা। যিনি আবার বলকানের জোতিষী হিসেবেও পরিচিত। তিনি বলেন, একধরনের অদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেন তিনি। আর এই প্রাণীরাই তাঁকে মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে একবার তিনি বলেছিলেন ‘ভয়, ভয়! লোহার পাখির আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইয়েরা ভেঙে পড়বে। দুটি নেকড়ের গর্জনে নিরীহদের রক্ত ঝরবে।’ আর তা ঘটলো কিনা ২০০১ এর সেই ৯/১১ এর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার! যেখানে হাজারো নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল দু’টি জঙ্গি বিমান হামলায়!
বাবা ভাঙ্গার অনুসারীরা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। ‘ঠান্ডা অঞ্চল উষ্ণ হয়ে উঠবে…এবং আগ্নেয়গিরি জাগ্রত হবে। একটা বড় ঢেউ শহর এবং মানুকে ঢেকে ফেলবে। সবকিছু পানির তলদেশে নিমজ্জিত হবে। বরফের মতো সবকিছু গলে যাবে।’ তা ঘটে গেল ২০০৪ সালে সুনামিতে! তলিয়ে গেল জাপান সহ ইউরোপের বেশ কয়েকটা শহর।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট যে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হবেন সেটিও আগে থেকেই বলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে, তিনিই হবেন শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিশ্বের মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বাবা ভাঙ্গা বলেছিলেন, “ইউরোপে হানা দেবে মুসলমানরা। হবে ‘মহা মুসলিম যুদ্ধ’। আর ২০৪৩ সালে ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। রোম হবে ইসলামিক খেলাফতের উপকেন্দ্র।” এর সাথে মেলাতে গেলে পাওয়া যাবে ঠিক এই মুহূর্তে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর কর্মকাণ্ড, শক্তি প্রদর্শন, হত্যা-ধর্ষণ ও আর দখলের ঘটনাগুলোকে বাবা ভাঙ্গার সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে মসুল হামলার পর বৃহৎ আকারে নজরে আসে আইএস। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, একদিন যে আইএস-এর অভূতপূর্ব উত্থান ঘটবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল প্রায় এক দশক আগেই! ফলে ‘মহা মুসলিম যুদ্ধ’ হওয়ার আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে।
বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ হবে। আর এর মাধ্যমে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে ইউরোপ। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের মধ্যে চীন বিশ্বের ‘সুপ্রীম পাওয়ার’ লাভ করবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি। তবে বাবা ভাঙ্গা এও জানিয়েছেন ২০৬৬ সালে মুসলিম অধ্যুষিত ইউরোপকে আবার অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে খিস্টানরা ইউরোপ আয়ত্ব করবে এবং রোমকে পুণরুদ্ধার করবে।
সমাজতন্ত্র নিয়ে বাবা ভাঙ্গা বলেছেন, ২০৭৬ সালে ইউরোপে সমাজতন্ত্র ফিরে আসবে এবং রাজত্ব করবে সারা বিশ্ব।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এই জ্যোতিষীর বক্তব্য হচ্ছে, ২১৩০ সালের মধ্যে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনরা পানির নিচে সভ্যতা তৈরি করতে সাহায্য করবে।
সেই সঙ্গে ৩০০৫ সালে মঙ্গল গ্রহে একটি যুদ্ধ হবে বলেও বাণী দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ৩৭৯৭ সালের মধ্যে পৃথিবীতে কেউ জীবিত থাকবে না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এসব ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গেছে। বিধ্বংসী ও ভয়াবহ এতোসব ভবিষ্যৎ বাণী আদৌ কি বাস্তবে ঘটবে নাকি শুধু বাণীতেই রয়ে যাবে তা এবার দেখার বিষয়।