গ্রাম থেকে শহরে এসেছি এক বছর হতে চললো কিন্তু আমি এখনোও ‘ক্ষ্যাত’ই রয়ে গেলাম। এ নিয়ে বান্ধবীরা নিত্যদিন হাসিতামাশা করে কিন্তু আমি ওসবে পাত্তা দেই না। আমি জানি আসল সত্যটা কী? কেন নারীদের পর্দা করতে হয়। নারী হচ্ছে ঝিনুকের ভিতর মুক্তোর মতো। যার বাইরে আবরন রাখতে হয় যেন সেই মুক্তোর কোন ক্ষতি না হতে পারে। আমার রুমমেট জুথি আপু। আমার এক বছরের সিনিয়র। উনার কথায় মাঝেমাঝে খুব কষ্ট পাই। যদিও সামনাসামনি কিছু বলেন না কিন্তু আড়ালে আমাকে গাঁইয়া বলে ডাকে। অনেক চেষ্টা করেও একটা ভালো সাবলেট পাচ্ছি না যে এটা চেঞ্জ করবো। তাই ওনার বিভিন্ন কথা সহ্য করেই থাকি। টাইট জিন্স আর টিশার্ট পরে যখন উনি বাইরে বের হন তখন আমার খুব কষ্ট লাগে। হায়রে মুসলিম নারী! এ কেমন পোশাক তোমার!
.
রুমে বসে পত্রিকা পড়ছিলাম । পত্রিকা জুড়ে শুধু ধর্ষণ আর ইভটিজিং এর খবর। পড়ছি আর আঁতকে উঠছি! ৩বছরের শিশুরাও আজকাল রেহাই পাচ্ছে না? এর জন্য তো জুথিদের মতো মেয়েদের উগ্র পোশাকই দায়ী।
– বুয়া এসেছিল ?
জুথি আপুর কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম।
– জি আপু। রান্না করে রেখে গেছে খেয়ে নিন।
– নাহ! খাব না। ক্ষিধে নেই।
– বাইরে থেকে খেয়ে এসেছেন আপু?
– নাহ! মেজাজ খারাপ তাই ক্ষিধে নেই। ওফ! অসহ্য ! আজকাল বাইরে বের হওয়াই যাবে না দেখছি। পুরুষগুলো লোভী চোখে চেয়ে থাকে । সুযোগ পেলে হাত দেয় স্পর্শকাতর স্থানে।
আমি এমন একটা দিনেরই অপেক্ষায় ছিলাম। বললাম,
– পুরুষদের তো আমরাই সে সুযোগ দিচ্ছি।
– মানে?
– এই যে আপনি সেজেগুজে শরীর প্রদর্শন করে বাইরে গেলেন। ওরা যদি না তাকায় , সুযোগ পেয়ে গায়ে হাত না দেয় , তাহলে আপনার এতো কষ্ট করে সেজে লাভ কী হলো?
জুথি আপু রেগে গেলো,
– তুমি কী বলছো বুঝতে পারছো? সেজেগুজে যাব না তো কি তোমার মতো চাদর মুড়ি দিয়ে যাব?
আমি হেসে দিয়ে বললাম ,
– এ জন্যই তো কেউ কোনদিন আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।
– তাই বলে তোমার মতো অমন ক্ষ্যাত মার্কা পোষাক পরে বাইরে যাব? উন্নত দেশগুলোতে দেখেছ কেমন ড্রেসআপ?
– পশ্চিমারা মুসলমানদের হেয় করার জন্য পর্দার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায় অথচ দেখুন একজন খ্রীষ্টান ‘নান’ বা ধর্মজাজিকা যখন লম্বা গাউন আর মাথা-ঢাকা পোশাক পড়ে থাকেন তখন তা আর পশ্চাৎপদতা, উন্নয়নের অন্তরায় বা নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের প্রয়াস বলে বিবেচিত হয় না। বরং তা শ্রদ্ধা, ভক্তি বা মাতৃত্বের প্রতীক রূপেই বিবেচিত হয়।
এই যে আজকাল চারদিকে শুধু ধর্ষণের খবর এর জন্য কিন্তু বেপর্দা নারীরাই দায়ী।
-তুমি বলতে চাইছো ধর্ষনের জন্য নারীই দায়ী? পুরুষ নয়?
– পর্দা মুসলিম নারীর সৌন্দর্য, নারীর মানসম্মান, ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। পর্দা নারীদের সৌন্দর্য হলেও তা পালন করা পুরুষদের জন্যও ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে বলেছেন ,
‘(হে নবি! আপনি) মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে, এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।
তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে’।
তাই ধর্ষণের জন্য একমাত্র অন্তরে ঈমানের অভাবই দায়ী। যদি অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে তবে কোন নারী বেপর্দা চলবে না এবং কোন পুরুষও পর নারীর দিকে দৃষ্টি দেবে না। আর এই যে বিয়ের আগে অবাধে মেলামেশা এগুলো সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড যেমন ধর্ষণ, গর্ভপাত, ইত্যাদির সৃষ্টি করছে।
– কিন্তু শিশুরাও তো ধর্ষিত হচ্ছে, ওরা নিশ্চই পর্দার জন্য ধর্ষিত হচ্ছে না?
– একটু চিন্তা করলেই বুঝবেন , একটা বাঘের গল্প পড়েছিলাম , বাঘটা খুবই ক্ষুধার্ত ছিল। কিছু না পেয়ে শেষে একটা টিকটিকিকেই খেতে চাইলো। বেপর্দা নারী আর বিভিন্ন খারাপ ভিডিও দেখে পুরুষরা ক্ষুধার্ত বাঘের চেয়েও বেশি হিংস্র হয়ে যায়।তাই ওদের হিংস্রতার শিকার হয় অবুঝ শিশুরা । মনে রাখবেন আপু, পর্দা পালনকারী নারীরা আল্লাহর রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। তিরমিজি শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নারী গোপনীয় সত্তা, তারা যদি প্রকাশ্যে বের হয় তবে শয়তান তাদের দিকে উঁকি দিয়ে তাকায়। আর যে নারী তার ঘরের মধ্যে অবস্থান করে সে আল্লাহর রহমতের অধিক নিকটবর্তী থাকে।’। বাইরে বের হলে নারীকে এমন পোশাক পড়তে হবে যাতে পুরুষের দৃষ্টি নারীর দিকে না থাকে। অথচ আমরা বাইরে বের হলে খুব করে সাজুগুজু করি । যাতে পুরুষ আকৃষ্ট হয়। যেসব দেশে নারীরা বেপর্দায় চলে সেসব দেশেই কিন্তু ধর্ষণের হার বেশি।
আমার কথা শুনে জুথি আপু একদম চুপসে গেলো।
আমার হাত ধরে বললো ,
-তুমি ঠিকই বলেছো। এতোদিন আমি অন্ধকারে ছিলাম। তুমিই আলোর পথ দেখালে। দাও তোমার বোরখাটা , বাইরে একটা কাজ আছে করে আসি।
.
প্রায় দুই ঘণ্টা পর জুথি আপু ফিরে এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
– তুমি ঠিকই বলতে, নারী হলো মুক্তোর মতো। মুক্তার বাইরে যেমন শক্ত আবরন থাকে ফলে বাইরে থেকে ক্ষতির আশংকা থাকে না তেমনি নারীদের বাইরে একটা আবরন রাখলে কেউ ক্ষতি করতে পারে না। এই যে মার্কেটে গেলাম। কেউই ফিরে তাকালো না। আগে দোকানদাররা কেমন করে লোলুপ দৃষ্টিতে শরীর দেখতো আজকে খালাম্মা বলে সম্মান করে কথা বললো। ইস! আগে তোমার কথা না শুনে অনেক বড় ভুল করেছি। দেখো দুইটা বোরখা এনেছি। এখন থেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে মেনে চলবো। সত্যিই ইসলামকে মেনে চললে তার কখনও বিপদ হয় না। সবাই তাকে সম্মান করে।
আমি আনন্দে জুথি আপুকে জরিয়ে ধরলাম। আলহামদুলিল্লাহ!!
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প