এক বাদশা নৌকায় চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তার সাথে পারস্য দেশের এক ভৃত্য ছিল। ভৃত্যটি কোনদিন নৌকা দেখেনি, নৌকায় চড়েনি। ভয়ে ভয়ে সে নৌকায় উঠল বটে, কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও সে স্থির হয়ে বসতে পারল না। নৌকা একটু এদিক-ওদিক কাত হলেই সে ভয়ে কাঁদতে শুরু করে এবং বলির পাঠার মত থর থর করে কাঁপতে লাগল। ভৃত্যের এই অস্থিরতা ও চেঁচামেচিতে বাদশা খুব বিরক্তিবোধ করতে লাগলেন। তার শাহী বিলাসী মেজাজের পক্ষে এই ধরনের অযথা উৎপাত সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ল। নৌকা ভ্রমনের আনন্দটা একেবারে মাঠে মারা যাবার পথে।
সবাই তাকে বুঝাতে ও প্রবোধ দিতে লাগলেন যে, নদীপথে নৌকা নিরাপদ যানবহন। ভয়ের কোনই কারন নেই।
কিন্তু কিছুতেই সে নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারল না। আরোহীদের যার মাথায় যত বুদ্ধি ছিল খাটান হলো এবং যার যত কৌশল ছিল, সবই অবলম্বন করা হলো, কিন্তু কিছুতেই তাকে শান্ত করা গেল না।
নৌকায় একজন বিজ্ঞ প্রবীণ লোক ছিলেন। তিনি বাদশাকে বললেনঃ হুজুর যদি অনুমতি দেন তবে ওকে আমি শান্ত করতে পারি। বাদশা খুশি হয়ে বললেনঃ মেহেরবানী করে যদি তা পারেন তাহলে যারপরনাই খুশি হব।
বিজ্ঞ লোকটা এরপর ভৃত্যেকে ধরে নদীতে ফেলে দিলেন। লোকটা সাঁতার জানত না। কয়েকটা চুবনী খেয়ে কিছুক্ষন দাপাদাপি করে যখন সে নিস্তেজ হয়ে গেল এবং ডুবে যাবার উপক্রম হলো, তখন তার চুল ধরে টেনে নৌকার পেছন দিকে এনে হালের সাথে তার দুই হাত এমনভাবে বাঁধলেন যাতে ডুবে মারা যেতে না পারে।
তুফানে ঝাপটায় হাবুডুবু খেয়ে যখন সে খুব কাতর হয়ে পড়ল এবং তাকে নৌকায় উঠাবার জন্য খুব অনুনয় বিনয় করে কাঁদতে শুরু করল, তখন তাকে নৌকায় উঠানো হলো। নৌকায় উঠে সে সুবোধ বালকের মত একপাশে চুপ করে বসল। তার অস্থিরতা প্রকাশ করল না।
বাদশা তাজ্জব হয়ে বললেনঃ কি আশ্চার্য এতগুলো লোকের উপদেশ কার্যকারী হল না, আর এই প্রক্রিয়ায় সে একেবারে শান্তশিষ্ট বনে গেল। এর ভেতর কি রহস্য আছে দয়া করে বুঝিয়ে দিন।
জ্ঞানী লোকটা বললেনঃ হুজুর! পানিতে ডুবে যাওয়ার কার্য সম্বন্ধে তার বাস্তব পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না! সুতরাং নৌকা সে একটা নিরাপদ যানবহন একথা তাকে শুধু যুক্তি উপদেশ দিয়ে বুঝালে সে কি করে বুঝবে? সুস্থতার মূল্য সেই জানে, যে রোগ যাতনা ভোগ করেছে। নৌকার নিরাপত্তা সম্বন্ধে এখন তার বাস্তব জ্ঞান হয়েছে। তাই যে নৌকায় সে এক মুহুর্তের জন্য স্থির হয়ে বসতে পারেনি-সেই নৌকায় ওঠার জন্য এখন সে ব্যাকুল হয়েছে। বাস্তব জ্ঞান ছাড়া যুক্তি কার্যকারী হয় না।
শিক্ষাঃ যার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই তাকে বুঝ দিয়ে লাভ নেই। বাস্তবতাই মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। দুনিয়ার জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিরা যতই জ্ঞান বিতরণ করুক না কেন, বাস্তবতার সান্নিধ্যে না আসলে একজন মানুষ সত্যিকার বিজ্ঞ হতে পারে না।
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প